শত শত কোরআন পোড়াল ওরা! নিজস্ব প্রতিবেদক
'হেফাজতের কিছু লোক আইসাই আমার বইয়ের দোকানডা লাত্থাইতে থাকে। হেরপর চিল্লাইয়া কইতে থায়ে আগুন দে, আগুন লাগা। হের পরই ধরাইয়া দেয়।' হাহাকার ধ্বনি তুলে এ বর্ণনা দেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পাশে কোরআন শরিফ-হাদিস ও নানা ধরনের ইসলামী বইয়ের বিক্রেতা চাঁদপুরের হাইমচরের মো. মূসা। হেফাজতে ইসলামের হিংস্রতার আরো বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, 'আমার দোকানে অন্তত ৫০টি কোরআন শরিফ ছিল। হাদিসের বইও ছিল অনেক। আরো ধর্মীয় কিতাব ছিল। মুহূর্তের মধ্যে সব পুড়ে যায়। কয়েকটি পুরো পোড়েনি। সেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।'
গতকাল সোমবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে মূসা জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে এ ব্যবসা করেই চলছিল তাঁর সংসার। দোকানে অন্তত এক লাখ টাকার বই ছিল। সবই ইসলামী বই। এখন কী করবেন, কিভাবে সংসার চলবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
কেবল মূসারই নয়, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু করে পল্টন মোড় পর্যন্ত যত বইয়ের দোকান ছিল, সবটিতেই আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজতের উগ্র কর্মীরা। দেশের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে হওয়ায় এসব দোকানে বেশির ভাগই ইসলামী বই, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন শরিফ, হাদিস, বোখারি শরিফ- এ ধরনের বই বেশি বিক্রি হতো। সব দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুয়েকজন মুসল্লি আগুনে জ্বলতে থাকা কোরআন শরিফগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা হাত দিয়ে আগুন নিভিয়ে কোরআন শরিফ ও হাদিসের বইয়ে চুমু খান।
হাহাকার করে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু পরমহূর্তে হেফাজতের কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্র্শীরা জানায়, রবিবার হেফাজতিরা একের পর এক বই-টুপি-আতর-জায়নামাজের দোকানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে থাকে। হেফাজতের আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যায় আল্লাহর বাণীসংবলিত শত শত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
গতকাল সোমবার বায়তুল মোকাররম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পোড়া, অর্ধপোড়া বইগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দোয়া-দরুদ ও মোনাজাত, কোরআন শরিফ, হাদিস প্রভৃতি বইয়ের পোড়া, অর্ধপোড়া পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে স্তূপের ভেতরে। অনেকে সেই দৃশ্য মোবাইল সেটের ক্যামেরায় ধারণ করছে। কেউ কেউ কোরআনের পাতাগুলো হাতে নিয়ে দেখছে। পাশ দিয়ে গেলেই নাকে ঢোকে পোড়া গন্ধ।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মসজিদ ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওদের বাহ্যিক কাণ্ড দেখে মুসলমান বলা মুশকিল। তবে এ কাজ যে একজন মুসলমানের না, একমাত্র ইসলামবিদ্বেষীরাই এটা করতে পারে, সেটা নিশ্চিত।' তিনি বলেন, 'আলেম-ওলামারা কখনোই এটা করতে পারে না।' উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'অবিভক্ত পাকিস্তানের শেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় জামায়াত লাহোরে কোরআন শরিফ জ্বালিয়ে পিপিপির ওপর দোষ চাপিয়েছিল। আমাদের দেশেও ঊনসত্তর সালে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ খচিত ব্যানার পদদলিত করে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। আমার মনে হয় হেফাজতের নামে জামায়াত-শিবিরই এটা করেছে। তবে যারাই করুক, এ জন্য আমার মনে অনেক ব্যথা।'
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মারুফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এরা যে আদৌ ইসলামের কোনো কাজ করছে না, এর প্রমাণ নিজেরাই রাখল। তারা ইসলামের কাজ করলে মসজিদে হামলা করত না, গাড়ি পোড়াত না, পুলিশের ওপর হামলা করত না। প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। তারা যেটা করেছে, সেটা ইসলামের তো নয়ই, শরিয়তবিরোধী, দেশের আইনবিরোধী। এ আচরণ কোনো আলেমের কাজ হতে পারে না। তারা উভয় দৃষ্টিতেই অপরাধী। ইসলামের মমতা নিয়ে তাদের দিকে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।'
মাওলানা মারুফুল ইসলাম আরো বলেন, ইসলামের কথা বলে বাতিল ফেরকা খারিজিরা মহানবী (সা.)-এর অনেক সাহাবিকে হত্যা করেছে। এভাবে যুগে যুগে ইসলামের কথা বলে অনেক সহিংস কাজ করেছে এই গোষ্ঠী। এটা জঙ্গিবাদেরই আরেক রূপ। তারা মসজিদে হামলা করে, কোরআন শরিফ পোড়ায়। এরা মোনাফিক। এই মোনাফিকরা যখন গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসেছে, তখন এরা আর ইসলামের অনুসারী নেই।'
গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সর্বস্ব খোয়ানো বই-তসবির দোকানিরা বায়তুল মোকাররমের মসজিদের সিঁড়িতে বসে আহাজারি করছেন। দোকানি আবদুর রশিদ জানান, ১৯৯২ সাল থেকে ছেলে হাফেজ জাহিদ ইকবালকে নিয়ে ইসলামী গ্রন্থ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলছে। দোকানে ২৫০ কপি কোরআন শরিফ ছিল। হাদিস ছিল শ খানেক। ছিল আরো অনেক ধর্মীয় বই। দুই-আড়াই লাখ টাকার মাল ছিল দোকানে। আগুন নেভার পর কোনো বইই অক্ষত নেই। তিনি জানান, মৌচাকে পাঁচ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন। এখন বাসা ভাড়া কিভাবে দেবেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, 'আমাদের মতো নুন আনতে পান্তা ফুরানো লোককে নিঃস্ব করে দিয়ে হেফাজতে ইসলাম কী করতে চায় একমাত্র আল্লাহই বলতে পারবেন। ওরা তো মুখে বলে কোরআনের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। তাহলে কোরআনে আগুন দিল কেন?'
গোপীবাগের ভাড়াটিয়া ও দক্ষিণ গেটে টুপি-আতর বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম একটি পোড়া আতরের কাচের বোতল দেখিয়ে বলেন, আতরগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে। টুপিগুলো সব শেষ।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দাউদখালি গ্রামের বাসিন্দা ও আতর-তসবি-জায়নামাজের দোকানি তৈয়বুর রহমান বলেন, 'আশপাশের কয়েকটি দোকানে পাইকারি দরে মাল বিক্রি করতাম। চার-পাঁচটি দোকানোর কাছে ১৫-২০ হাজার টাকর মাল বাকিতে দিয়েছিলাম। আমার দোকানেও দুই-তিন লাখ টাকার মাল ছিল। ওরা সব পুড়িয়ে দিয়েছে।' তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরের মণিপুর এলাকায় থাকতাম। এ ব্যবসার ওপরই সংসার চলে। কিন্তু আজ সকালে এসে একটি আতরের বোতলের মুখা ছাড়া কিছুই পাইনি।'
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাসিন্দা ও বই বিক্রেতা শাহাদাত পোড়া ধর্মীয় বইগুলোর স্তূপ দেখিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ওরা ইসলামের কথা বলে কোরআন শরিফ-হাদিসে আগুন দিল। ওরা যদি মুসলমান হতো তাহলে কি এটা করতে পারত? তিনি বলেন, ওরা মুসলমান নয়, ওরা ইসলামের শত্রু। আল্লাহ ও নবী (সা.)-এর শত্রু।
বই ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওরা এত দিন শাহবাগীদের নাস্তিক ও ইসলামের শত্রু বলে ফাঁসির দাবি করেছে। এখন মনে হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এই হেফাজতিরাই ইসলামের আসল শত্রু।
মেসওয়াকের দোকানি মো. সাক্কু বলেন, 'আমার দোকানের প্রতিটি জিনিসই ছিল মুসল্লিদের প্রয়োজনীয়। আগুন দেওয়ার আগে ওদের অনুরোধ করেছিলাম। ওরা আমাকে গজারি লাঠি উঁচিয়ে ধাওয়া দেয়।' বইয়ের দোকানি নুরুল আমিন বলেন, 'মহাজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকার কোরআন-হাদিস বাকিতে এনেছিলাম। এখন এই টাকা কিভাবে পরিশোধ করব কিছুই বুঝতে পারছি না।'
বরিশালের মানিক বলেন, দোকানের তসবি-জায়নামাজ সব পুড়ে গেছে। মোটা জায়নামাজ কয়েকটা আধা পোড়া হয়ে আছে। ওগুলো আর কোনো কাজে লাগানো যাবে না।
সিপিবি পার্টি অফিসের সামনের বই দোকানি জাকির বলেন, 'আমার কাছে নানা ধরনের বই ছিল। এখানে কোরআন-হাদিসও ভালো বিক্রি হয় বলে সেগুলোও রাখতাম। এখন সব শেষ।'
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি আজিজ, মকবুল, মানিক, ফারুক, ইউসুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'হেফাজতের ওপরের নেতারা নির্দেশ না দিলে কর্মীরা কখনোই এ ধরনের কাজ করতে পারত না। আমরা হুজুর না হলেও কোরআন ছোঁয়ার আগে অজু করি। কিন্তু ওরা তো হুজুর, ওরা কিভাবে কোরআনে আগুন দিল? ওরা কেমন মুসলমান?'
গতকাল সোমবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে মূসা জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে এ ব্যবসা করেই চলছিল তাঁর সংসার। দোকানে অন্তত এক লাখ টাকার বই ছিল। সবই ইসলামী বই। এখন কী করবেন, কিভাবে সংসার চলবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
কেবল মূসারই নয়, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু করে পল্টন মোড় পর্যন্ত যত বইয়ের দোকান ছিল, সবটিতেই আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজতের উগ্র কর্মীরা। দেশের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে হওয়ায় এসব দোকানে বেশির ভাগই ইসলামী বই, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন শরিফ, হাদিস, বোখারি শরিফ- এ ধরনের বই বেশি বিক্রি হতো। সব দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুয়েকজন মুসল্লি আগুনে জ্বলতে থাকা কোরআন শরিফগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা হাত দিয়ে আগুন নিভিয়ে কোরআন শরিফ ও হাদিসের বইয়ে চুমু খান।
হাহাকার করে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু পরমহূর্তে হেফাজতের কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্র্শীরা জানায়, রবিবার হেফাজতিরা একের পর এক বই-টুপি-আতর-জায়নামাজের দোকানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে থাকে। হেফাজতের আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যায় আল্লাহর বাণীসংবলিত শত শত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
গতকাল সোমবার বায়তুল মোকাররম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পোড়া, অর্ধপোড়া বইগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দোয়া-দরুদ ও মোনাজাত, কোরআন শরিফ, হাদিস প্রভৃতি বইয়ের পোড়া, অর্ধপোড়া পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে স্তূপের ভেতরে। অনেকে সেই দৃশ্য মোবাইল সেটের ক্যামেরায় ধারণ করছে। কেউ কেউ কোরআনের পাতাগুলো হাতে নিয়ে দেখছে। পাশ দিয়ে গেলেই নাকে ঢোকে পোড়া গন্ধ।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মসজিদ ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওদের বাহ্যিক কাণ্ড দেখে মুসলমান বলা মুশকিল। তবে এ কাজ যে একজন মুসলমানের না, একমাত্র ইসলামবিদ্বেষীরাই এটা করতে পারে, সেটা নিশ্চিত।' তিনি বলেন, 'আলেম-ওলামারা কখনোই এটা করতে পারে না।' উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'অবিভক্ত পাকিস্তানের শেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় জামায়াত লাহোরে কোরআন শরিফ জ্বালিয়ে পিপিপির ওপর দোষ চাপিয়েছিল। আমাদের দেশেও ঊনসত্তর সালে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ খচিত ব্যানার পদদলিত করে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। আমার মনে হয় হেফাজতের নামে জামায়াত-শিবিরই এটা করেছে। তবে যারাই করুক, এ জন্য আমার মনে অনেক ব্যথা।'
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মারুফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এরা যে আদৌ ইসলামের কোনো কাজ করছে না, এর প্রমাণ নিজেরাই রাখল। তারা ইসলামের কাজ করলে মসজিদে হামলা করত না, গাড়ি পোড়াত না, পুলিশের ওপর হামলা করত না। প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। তারা যেটা করেছে, সেটা ইসলামের তো নয়ই, শরিয়তবিরোধী, দেশের আইনবিরোধী। এ আচরণ কোনো আলেমের কাজ হতে পারে না। তারা উভয় দৃষ্টিতেই অপরাধী। ইসলামের মমতা নিয়ে তাদের দিকে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।'
মাওলানা মারুফুল ইসলাম আরো বলেন, ইসলামের কথা বলে বাতিল ফেরকা খারিজিরা মহানবী (সা.)-এর অনেক সাহাবিকে হত্যা করেছে। এভাবে যুগে যুগে ইসলামের কথা বলে অনেক সহিংস কাজ করেছে এই গোষ্ঠী। এটা জঙ্গিবাদেরই আরেক রূপ। তারা মসজিদে হামলা করে, কোরআন শরিফ পোড়ায়। এরা মোনাফিক। এই মোনাফিকরা যখন গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসেছে, তখন এরা আর ইসলামের অনুসারী নেই।'
গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সর্বস্ব খোয়ানো বই-তসবির দোকানিরা বায়তুল মোকাররমের মসজিদের সিঁড়িতে বসে আহাজারি করছেন। দোকানি আবদুর রশিদ জানান, ১৯৯২ সাল থেকে ছেলে হাফেজ জাহিদ ইকবালকে নিয়ে ইসলামী গ্রন্থ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলছে। দোকানে ২৫০ কপি কোরআন শরিফ ছিল। হাদিস ছিল শ খানেক। ছিল আরো অনেক ধর্মীয় বই। দুই-আড়াই লাখ টাকার মাল ছিল দোকানে। আগুন নেভার পর কোনো বইই অক্ষত নেই। তিনি জানান, মৌচাকে পাঁচ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন। এখন বাসা ভাড়া কিভাবে দেবেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, 'আমাদের মতো নুন আনতে পান্তা ফুরানো লোককে নিঃস্ব করে দিয়ে হেফাজতে ইসলাম কী করতে চায় একমাত্র আল্লাহই বলতে পারবেন। ওরা তো মুখে বলে কোরআনের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। তাহলে কোরআনে আগুন দিল কেন?'
গোপীবাগের ভাড়াটিয়া ও দক্ষিণ গেটে টুপি-আতর বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম একটি পোড়া আতরের কাচের বোতল দেখিয়ে বলেন, আতরগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে। টুপিগুলো সব শেষ।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দাউদখালি গ্রামের বাসিন্দা ও আতর-তসবি-জায়নামাজের দোকানি তৈয়বুর রহমান বলেন, 'আশপাশের কয়েকটি দোকানে পাইকারি দরে মাল বিক্রি করতাম। চার-পাঁচটি দোকানোর কাছে ১৫-২০ হাজার টাকর মাল বাকিতে দিয়েছিলাম। আমার দোকানেও দুই-তিন লাখ টাকার মাল ছিল। ওরা সব পুড়িয়ে দিয়েছে।' তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরের মণিপুর এলাকায় থাকতাম। এ ব্যবসার ওপরই সংসার চলে। কিন্তু আজ সকালে এসে একটি আতরের বোতলের মুখা ছাড়া কিছুই পাইনি।'
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাসিন্দা ও বই বিক্রেতা শাহাদাত পোড়া ধর্মীয় বইগুলোর স্তূপ দেখিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ওরা ইসলামের কথা বলে কোরআন শরিফ-হাদিসে আগুন দিল। ওরা যদি মুসলমান হতো তাহলে কি এটা করতে পারত? তিনি বলেন, ওরা মুসলমান নয়, ওরা ইসলামের শত্রু। আল্লাহ ও নবী (সা.)-এর শত্রু।
বই ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওরা এত দিন শাহবাগীদের নাস্তিক ও ইসলামের শত্রু বলে ফাঁসির দাবি করেছে। এখন মনে হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এই হেফাজতিরাই ইসলামের আসল শত্রু।
মেসওয়াকের দোকানি মো. সাক্কু বলেন, 'আমার দোকানের প্রতিটি জিনিসই ছিল মুসল্লিদের প্রয়োজনীয়। আগুন দেওয়ার আগে ওদের অনুরোধ করেছিলাম। ওরা আমাকে গজারি লাঠি উঁচিয়ে ধাওয়া দেয়।' বইয়ের দোকানি নুরুল আমিন বলেন, 'মহাজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকার কোরআন-হাদিস বাকিতে এনেছিলাম। এখন এই টাকা কিভাবে পরিশোধ করব কিছুই বুঝতে পারছি না।'
বরিশালের মানিক বলেন, দোকানের তসবি-জায়নামাজ সব পুড়ে গেছে। মোটা জায়নামাজ কয়েকটা আধা পোড়া হয়ে আছে। ওগুলো আর কোনো কাজে লাগানো যাবে না।
সিপিবি পার্টি অফিসের সামনের বই দোকানি জাকির বলেন, 'আমার কাছে নানা ধরনের বই ছিল। এখানে কোরআন-হাদিসও ভালো বিক্রি হয় বলে সেগুলোও রাখতাম। এখন সব শেষ।'
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি আজিজ, মকবুল, মানিক, ফারুক, ইউসুফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'হেফাজতের ওপরের নেতারা নির্দেশ না দিলে কর্মীরা কখনোই এ ধরনের কাজ করতে পারত না। আমরা হুজুর না হলেও কোরআন ছোঁয়ার আগে অজু করি। কিন্তু ওরা তো হুজুর, ওরা কিভাবে কোরআনে আগুন দিল? ওরা কেমন মুসলমান?'
মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৩, ২৪ বৈশাখ ১৪২০
গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো পবিত্র কোরান
বায়তুল মোকাররমে হেফাজতী তাণ্ডবে মানুষ হতবাক
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-05-07&ni=134505মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৩, ২৪ বৈশাখ ১৪২০
Also Read:
'কুরআন-হাদিস দেখেও আগুন দিয়েছে তারা'
'কুরআন-হাদিস দেখেও আগুন দিয়েছে তারা'
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৬-০৫-২০১৩
হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞ :পুড়িয়ে দেওয়া বইবাজারে জীবনের আর্তনাদহেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞ : কোরান-হাদিসের ৮২ দোকান ছাই হেফাজতি তাণ্ডব, নিহত ১১ মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি রোববার রাতেও সংলগ্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় আহমদ শফীর হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের তাণ্ডব: মতিঝিলের সর্বত্র ধ্বংসের স্বাক্ষরস্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম মতিঝিলে চলছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান বাংলানিউজ টিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম মতিঝিল এখন হেফাজত শূন্য বাংলানিউজ টিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম মুহূর্তেই ফাঁকা শাপলা চত্বরস্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে প্রস্থান
কো-অর্ডিনেশন এডিটর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হেফাজতের নিরাপত্তা ব্যুহ টিকলনাইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হেফাজতের পাশে থাকার আহবান খালেদারস্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হেফাজতি তাণ্ডব চলছেই, নিহত ৩ | exclusive-lead-news | Samakal Online ... 16 hours ago – মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি সংলগ্ন এলাকায় তাণ্ডবচালিয়েই যাচ্ছে আহমদ শফীর হেফাজতে ইসলাম। |
__._,_.___