জামায়াতকে আন্দোলন করার টাকা দিয়েছে ভারতের সারদা গ্রুপ
ঢাকা: ভারতের সারদা গ্রুপ শুধু ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকেই নয়, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনকে অর্থ জুগিয়েছে। সারদা গ্রুপের চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেন ভারতের এক প্রভাবশালী নেতার (বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য) মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ওই সংগঠনগুলোকে কয়েক শ কোটি টাকা দিয়েছেন।
ভারতের তদন্ত সংস্থা সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে ওই দেশটির নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় 'সারদা মানি ফ্যান্ড বাংলা ফ্লেইমস' শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সোমবার কলকাতায় গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় রাজ্যসভা সদস্য আহমেদ হাসান ওরফে ইমরান। তিনি কলকাতার দৈনিক কলকাতা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের পাশাপাশি এ দেশের নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দারা সারদা কেলেঙ্কারির বিষয়ে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে কাজ করছেন। ওই তথ্য থেকে তারা ধারনা করছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সুদীপ্ত সেন বড় অঙ্কের নগদ অর্থ ঢেলেছেন। আর সেগুলো তিনি পাঠিয়েছেন এমন একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের মাধ্যমে, যিনি বর্তমানে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিবিআই ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, রাজ্যসভার ওই সদস্যের বিষয়ে রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি কয়েক দশক ধরেই রয়েছে। ওই সংস্থাগুলোর সবাই রাজ্যসভার ওই সদস্যের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ইসলামপন্থী কট্টর বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে অবগত। ভারতের ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সিমির শীর্ষস্থানীয় নেতাও ছিলেন ওই রাজনীতিক।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিবিআই ও ইডি জানতে পেরেছে যে সারদার চিট ফান্ড স্কিমের আওতায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কেন্দ্রীয়ভাবে কলকাতার সল্ট লেকে সারদা গ্রুপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা করা হতো। এরপর হিসাব-নিকাশের পর কয়েক শ কোটি টাকা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কয়েকটি কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। নগদ টাকা বড় আকারের ব্যাগে ভরে সারদা গ্রুপের অ্যাম্বুল্যান্সে করে সরানো হতো। সীমান্তবর্তী এলাকায় গোপনে ভারতীয় মুদ্রা (রুপি) বাংলাদেশি মুদ্রা (টাকা) ও ইউরোপীয় মুদ্রায় পরিবর্তন করা হতো। মুদ্রা পরিবর্তনের কাজটি করা হতো কলকাতার এক ব্যক্তির বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্রে। এরপর রাতের আঁধারে ওই টাকা ও মুদ্রা কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা পাচার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, সুদীপ্ত সেন মূলত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো কট্টর দলকে অর্থায়ন করতেন। তবে এর বাইরে বড় অঙ্কের অর্থ যেত বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন স্থানে। ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওই অর্থ পাঠানো হতো ওই দলগুলোর নেতাদের জন্য।
গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন, ভারতীয় নাগরিকদের কাছ থেকে সারদা গ্রুপের সংগ্রহ করা কয়েক হাজার কোটি টাকা 'বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো'র কাছে পৌঁছেছে। এর বাইরে অতীতে বাংলাদেশে যাদের তৎপরতা ছিল, এমন আরো কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে সারদার অর্থ পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিবিআই ও ইডি রাজ্যসভার ওই সদস্যের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে গোয়েন্দা ব্যুরোর সাবেক অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশে মুদ্রা পাচারের বিষয়ে তারা জানতেন না। রাজ্যসভার ওই সদস্যের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরোর সাবেক বিশেষ পরিচালক দানেশ চন্দ্র নাথ বলেছেন, ওই ব্যক্তি কে তা আমরা সবাই জানি। এটা দুঃখজনক যে অতীতের কর্মকাণ্ড জানার পরও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহমেদ হাসান ওরফে ইমরান নামের ওই ব্যক্তিকে নির্বাচনে জিতিয়ে এনে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন। ২০০১ সালে যখন সিমি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে সিমির নেতার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার (মমতা) জানার কথা। ক্ষমতার সর্বোচ্চ ও পবিত্রতম স্থানে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিদের পরিকল্পিতভাবে বসানো উদ্বেগের।
দানেশ চন্দ্র নাথ কলকাতার সাবসিডিয়ারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (এসআইবি) যুগ্ম পরিচালক হিসেবে ছয় বছর কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, আহমেদ হাসান ওরফে ইমরান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই সিমির সঙ্গে যুক্ত হন। পরে তাকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি ভারতের পূর্বাঞ্চলে জামায়াতে ইসলামীর আমির-ই-হল্ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি কলকাতার ১৯ দরগা রোড থেকে কলম নামের একটি বাংলা ম্যাগাজিন প্রকাশ শুরু করেন। পরে তা ৪৫ ইলিয়ট রোডে স্থানান্তর করা হয়। দরগা রোডে ওই ম্যাগাজিনের কার্যালয়টি সিমির অতিথিশালায় পরিণত হয়েছিল।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিমির সঙ্গে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) যোগসূত্র ছিল। নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে আইডিবির সদর দপ্তর আবুধাবিতে বলা হলেও এটি আসলে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতের পূর্বাঞ্চলে আইডিবির শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন আহমেদ হাসান ওরফে ইমরান। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে মামুল আল-আযম ছিলেন আইডিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইমরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কলম ম্যাগাজিন দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরের পর সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ইমরানের যোগাযোগ হয়। তিনি পত্রিকাটি সারদা গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দিলেও সম্পাদক পদে থেকে যান। সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ইমরানের পরিচয় করিয়ে দেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষ। তিনিও একজন সাংবাদিক। সারদা গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা হিসেবে তিনি কাজ করতেন। গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
দৈনিক কলম পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি কলম পত্রিকার 'সাংবাদিকতার নীতির প্রশংসা' করেছিলেন।
সারদা গ্রুপের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইমরানকে দুই দফা নোটিশ পাঠিয়েছিল। তবে তিনি তা অগ্রাহ্য করে বলেছিলেন, রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় সদস্য হিসেবে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তিনি খুব ব্যস্ত আছেন। এরপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাকে কড়া ভাষায় গতকালের মধ্যে তাদের অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকালই তিনি কলকাতার সল্টলেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিন মাস আগে ইডি তাকে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য আজ এসেছেন।
একই সঙ্গে ইমরানের আরও দাবি, কলম পত্রিকা সাপ্তাহিক ছিল। ওটা দৈনিক করার জন্য সারদার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। চিট ফান্ডের কোনো টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয় তিনি জানতেন না।
আহমেদ হাসান ইমরানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা তৃণমূল শীর্ষ নেতানেত্রীসহ অনেককেই নতুন করে ভাবাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এর আগে ইডির জেরার মুখে পড়েছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী অপর্ণা সেনসহ বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যক্তি।
দুই দিন আগে কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত সরকারসহ আরো দুজনকে গেফতার করেছে সিবিআই। প্রতিদিন সারদা-কাণ্ডে নতুন তথ্য উঠে আসছে বলে জানা যাচ্ছে। সিবিআই যেকোনো দিন বড় কোনো তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাতে পারে বলেও জোর জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ/এসআইএস
Also read:
RvgvqvZ‡K UvKv w`‡q‡Q fvi‡Zi mvi`v MÖæc
Avgv‡`i mgq.Kg : 25/08/2014
আওয়ামী লীগ সরকারের weiæ‡× Av‡›`vjb M‡o †ZvjvB wQj j¶¨ //
http://www.amadershomoys.com/newsite/2014/08/25/87505.htm#.U_pYwMVdU-0
Saradha Money Fanned Bangla Flames
Posted on August 24, 2014 in Top News__._,_.___