http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/09/06/105840.php
'রামপাল সরকার বিরোধী এক্সপ্রেস ট্রেনে ম্যাডাম জিয়া'
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রথমেই মিলিয়ন ডলার প্রশ্নটি হচ্ছে, এই চুক্তিটি যদি ভারতের সাথে না হয়ে চীনের সাথে হতো তাহলে কি এমন হৈচৈ দেখা যেতো? উত্তর একদম সোজা, না। পরবর্তী প্রশ্ন হলো: শেখ হাসিনা না হয়ে অন্য কেউ এ প্রকল্প হাতে নিলে কি কোন টু-শব্দ হতো? উত্তর: না। রামপাল নয়, সুন্দরবন বা বাঘও নয়, সবদোষ 'নন্দঘোষ' ভারত এবং শেখ হাসিনার। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রামপাল বিরোধীরা প্রায় সবাই পরিচিত, মুখচেনা চিহ্নিত মহল। প্রায় সবাই এন্টি-ভারত, স্বাধীনতার বিপক্ষ এবং উন্নয়ন বিরোধী। সাধারণ মানুষ কিছু আছেন, তাদের উল্টো বোঝানো হয়েছে; যেমন ধর্ম সম্পর্কে উল্টো বুঝিয়ে জঙ্গী বানানো হচ্ছে, ঠিক তেমনই। এই কাফেলায় সর্বশেষ সংযোজন ম্যাডাম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এটা গণবিরোধী। রাজনৈতিক জোয়ারে রামপাল নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তলিয়ে যাচ্ছে। এখন যারা লাফঝাফ দিচ্ছেনা, তারা 'দুইদিনের বৈরাগী'।
এদের তথাকথিত আন্দোলনে 'কাঁদুনে গ্যাস' ছেড়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বেশ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে না। তিনি দেশ-বিদেশের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বলেছেন, কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সাধারণত: বনাঞ্চলে হয় যাতে পরিবেশের ক্ষতি নাহয়। আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আধুনিক এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুন উল্লেখ করে তিনি জানান, কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। একইসাথে তিনি জানান: চিমনির উচ্চতা থাকবে উচ্চতা ২৭৫ মিটার। এ থেকে যে কার্বন-ডাই অক্সাইড বের হবে তা ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তথ্যগুলো এক্সপার্টদের কাছ থেকে নেয়া এবং জনগণ তাতে আস্থা রাখতে পারেন।
মনে রাখতে হবে ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতাসীন হন দেশ তখন অর্ধেক অন্ধকারে ছিলো। তিনিই দেশকে আবার আলোকিত করেছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিরন্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে নেন রামপাল আধুনিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। রামপাল দেশকে আলোকিত করবে। এটি সুন্দরবন থেকে ১৪কিলোমিটার দূরে। রামপাল নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা আছে। ওটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইপিজেড আছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের বিস্তীর্ন অঞ্চলে উন্নতির ছোয়া লাগবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টুকটাক বিরূপ প্রতিক্রিয়া নাই একথা কিন্তু কেউ বলছেনা। কিন্তু রংতুলি দিয়ে যেভাবে গেল গেল রব তোলা হচ্ছে বিষয়টি মোটেও তা নয়। শুধু শুধু জনগণকে বোকা বানানোর কোন মানে হয়না। একজন রুগীকে যখন ডাক্তার এন্টিবায়োটিক দেন, তখন এর কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে এবং সেটা জেনেও মানুষ ওষুধ খায়। কারণ ক্ষতির চাইতে লাভ বেশি। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে লাভ অনেক বেশি। এটি বাংলাদেশের জন্যে নুতন দিগন্তের সূচনা করবে।
যেকোন সরকার যখন কোন বৃহৎ প্রকল্প যখন হাতে নেন তখন বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিবিধ প্রতিবন্ধকতা বা এর প্রতিকার ব্যবস্থার বিষয়টিও থাকে। যারা রামপালের বিরোধিতা করছেন তারা মায়াকান্না করছেন। মানিনা, মানব না ব্যাড দিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলে সরকারকে দিন। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হোক। পরামর্শ দিন যাতে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। দেশের উন্নতি সবাই চায়, বিদ্যুৎ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। বাতি জ্বললে সবার ঘরেই জ্বলবে। সুতরাং, 'লেট্ দেয়ার বি লাইট'। সমস্যা হলো রামপাল ইস্যুতে অযথা জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। রামপাল পার্টি লাইনে বিভক্ত হয়ে গেছে। আরো স্পষ্টভাবে বললে, স্বাধীনতা বা উন্নয়নের পক্ষে -বিপক্ষে ভাগ হয়ে গেছে। এযাবৎ রামপাল নিয়ে বিপক্ষের কথাবার্তাই বেশি শোনা গেছে। অথচ এদের মুখে কিন্তু বাংলাদেশে পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে আন্দোলনের কথা শোনা যায়না।
সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে এবং এই শতকেই বাংলাদেশের বিশাল অংশ তলিয়ে যেতে পারে, এনিয়ে রামপালওয়ালাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ কি? কারণ হচ্ছে, ওরমধ্যে ভারত বা শেখ হাসিনা নেই। ভারত বা জননেত্রী না থাকলে বাংলাদেশ সমুদ্রে ডুবে গেলেও ওরা 'হুঁ কেয়ারস'। অথচ রামপাল নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এতকাল এতে নেতৃত্ব দেন বামরা, এখন যুক্ত হয়ে ডানপন্থীরা। বাংলাদেশে ডানবাম-দের ইতিহাস ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসের কলংকময় ইতিহাস। এরা এতদিন সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষা এবং ভারত ঠেকানোর লম্বা লম্বা লেকচার দিয়ে বেড়িয়েছেন। আর এবিষয়ে একজন চৈনিকবনধু আনু মোহাম্মদ 'একাই একশ'। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডানপন্থীরা এনিয়ে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে গেছে। মোটকথা 'রামপাল সরকারবিরোধী এক্সপ্রেস ট্রেনটি' ভালোই ছুটছিলো।
ডানপন্থীদের 'নয়নের মনি' ম্যাডাম জিয়া এতে আন্দোলনের পদধ্বনি শুনলেন এবং আর দেরি না করে দ্রুত ট্রেনে উঠে পড়লেন। তারমনে ভয় ছিলো নির্বাচনী ট্রেনের মত রামপাল এক্সপ্রেস না মিস করে বসেন। তিনি উঠলেন বটে ট্রেনে, তবে শেষ বগিতে। এরপর তার কথা শোনার মত আর লোক থাকবেনা। একই বগিতে ট্রেনের হ্যান্ডেল ধরে উঠলেন ফখরুল। তার কান্না থেমে গেছে, তিনি হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের স্বার্থে'। জননেত্রী শেখ হাসিনাও সুযোগ পেয়ে গেলেন, প্রেস-কনফারেন্স করে বলে দিলেন, বিদ্যুৎ না চাইলে অন্ধকারে থাকেন। ধারণা করি মানুষ এখন বুঝবো। রামপাল এক্সপ্রেস লোকাল হয়ে যাবে। তারপর হয়তো বিকল। রামপাল বিরোধিতার মূল লক্ষ্য ভারত, শেখ হাসিনা এবং বর্তমান সরকার। এ তিনটেই তাদের ব্যাপক অপছন্দের! তাই সুন্দরবন বাঁচানোর নামে কিছুলোক হা-হুতাশ করছেন! তারা 'চিলে কান নিয়ে গেছে বলে চিলের পেছনে ছুটছেন', কানে হাত দিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করছেন না!
সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের নামে এরা সরকার বিরোধী একটি ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছেন। এদের মূলদল বিএনপি এক্ষণে অতিশয় দুর্বল, একে যেনতেন প্রকারে সাহায্য করা সুন্দরবন রক্ষাওয়ালাদের মূল দায়িত্ব। চৈনিক বামরা এই আন্দোলনের সামনে থাকলেও পেছনে আছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং জামাত। ওরা যেনতেন প্রকারে রাস্তায় নামার সুযোগ খুঁজছে। হয়তো একারণে বিএনপি এই আন্দোলনের সাথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। স্বাধীনতার পরে যেমন জাসদের কোলে মৌলবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধীরা আশ্রয় নিয়েছিলো; এসময়ে চীনপন্থীদের কোলে আশ্রয় নিচ্ছে জামাত ও মৌলবাদীরা। এই সরকারের সাথে যেহেতু ভারতের সু-সম্পর্ক বিদ্যমান, তাই 'এক ঢিলে দুই পাখী মারতে' নুতন প্রজেক্ট 'সুন্দরবন' রক্ষার নামে এরা কাজে নেমে পড়েছে। ফারাক্কা আন্দোলনের সময়ও কিন্তু মানুষ একই চিত্র দেখেছে। জাতি কিন্তু রামপাল নিয়ে ফারাক্কার ঘোলা রাজনীতি দেখতে চায়না।
রামপাল নিয়ে বিরোধীরা যে সব প্রশ্ন তুলেছে তার জবাবও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়লা নির্ভর প্রকল্পের বিতর্কের উত্তর এসেছে এভাবে যে, পৃথিবীর অনেক আধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো কয়লানির্ভর। আবার কয়লা নদীর ওপর দিয়ে যাবে, যদি দুর্ঘটনায় জাহাজ ডুবে যায়, তাহলে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে তানিয়েও বাঘবাঁচানোওয়ালাদের ঘুম নাই! তারা কবে একটি তেলবাহী জাহাজ ডুবেছিলোঁ সেই হিসাব দিচ্ছে। আর কয়লার ছাই নিয়ে তো এরা মহা সমস্যায় আছে। যারা প্রকল্প বানায় তারা কি এতটাই আহম্মক যে, এসব নিয়ে মোটেও ভাবেনি? বলা হচ্ছে, ভারতের বিনিয়োগ এখানে প্রায় ৮৫% (৭০%ব্যাংক লোন, বাকিটা ১৫% করে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের), ভারত উদ্দেশ্য ছাড়া এতটাকা বিনিয়োগ করবে কেন ইত্যাদি? এও বলা হচ্ছে, ভারত বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে! এসব খোঁড়া যুক্তি। ইংরেজীতে একটি কথা আছে, যার বাংলা হলো, "বৃষ্টি হলে রংধনু দেখুন, আর অন্ধকার হলে তারা'। অর্থাৎ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি মহতী উদ্যোগ, এই দৃষ্টভঙ্গী কোথায়?
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
২৮শে আগস্ট ২০১৬।
Sitanggshu Guha ৬৪৬-৬৯৬-৫৫৬৯Sitanggshu Guha
__._,_.___