Banner Advertiser

Tuesday, October 25, 2016

[mukto-mona] মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শন - ড. হারুন-অর-রশিদ




                                    মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শন

  • ড. হারুন-অর-রশিদ

'৭১ বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অধ্যায় বা চূড়ান্ত পরিণতি। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এর অর্জন। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর জাতি গঠনের এক ঐতিহাসিক পথপরিক্রমা শেষে বাঙালিকে সেখানে পৌঁছাতে হয়েছে। যাঁর নেতৃত্বে আমাদের এ অর্জন, তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল, বাঙালির সার্বিক জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা। তবে এর প্রকৃতি ছিল রাজনৈতিক। রাজনৈতিক নেতৃত্বের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই এবং তাদের দ্বারা এ মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত ও পরিচালিত হয়। বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তা (বাঙালি জাতীয়তাবাদ), ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও শাসন প্রক্রিয়ায় অংশীদারিত্ব (গণতন্ত্র), শোষণমুক্তি (সমাজতন্ত্র) ও ধর্মের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বৈষম্যহীন আচরণ (ধর্মনিরপেক্ষতা), এ ছিল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শন, যা যুদ্ধোত্তর ১৯৭২ সালের নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাঙালির দীর্ঘ জাতীয় মুক্তির লড়াই-সংগ্রাম ও জাতি গঠনের ধারায় এ রাজনৈতিক দর্শনের সৃষ্টি।

বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর (আদি-অস্ট্রেলীয়, মঙ্গোলীয়) 'পাঁচ মিশালি জাতি' বাঙালি। প্রাচীনকালে পূর্ব ভারতের যে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এদের বসবাস, আজকের বাংলাদেশ তার একটি অংশ মাত্র। বিভিন্ন কৌম সমাজ বা স্বতন্ত্র জনপদে বিভক্ত ছিল সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও এর মানুষ। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে একটি ভৌগোলিক ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করে সেখানে কালক্রমে বঙ্গ থেকে বঙ্গাল বা বাঙ্গালা বা বাংলা, সুবে বাংলা, নিজামত, বেঙ্গল, পূর্ব বাংলা, পূর্ব পাকিস্তান, পরিশেষে, স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অভ্যুদয়।

অষ্টম শতাব্দীতে পাল বংশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বাঙালির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা মূর্ত হয় উঠলেও, বিভিন্ন বিজাতীয় বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শক্তির আগমন ও হস্তক্ষেপের ফলে এর স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব হয়নি। তখন থেকে বাংলা যাদের শাসনাধীনে আসে তারা হচ্ছে : পাল বংশ (অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি), দাক্ষিণাত্যের কর্ণাট থেকে আগত সেন বংশ (একাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে এয়োদশ শতাব্দীর শুরু), তুর্কি এবং আফগান সুলতানী শাসন (১২০৪-১৫৭৫), মুঘল সুবাদারী এবং নবাবী শাসন (১৫৭৬-১৭৫৬), ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন (১৭৫৭-১৮৫৭), ব্রিটিশ শাসন (১৮৫৮-১৯৪৭) এবং, সর্বশেষে, পাকিস্তানী শাসন (১৯৪৭-১৯৭১)।

বাংলার মধ্যযুগ ছিল বহিরাগত মুসলমান শাসন কাল, যা সাড়ে পাঁচ শ' বছরব্যাপী বিস্তৃত ছিল।

মুসলমান শাসন আমলের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় শাসকবর্গের, বিশেষ করে সুলতানী শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা দান। এছাড়া, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত বিভিন্ন অঞ্চলকে তারা একই ভৌগোলিক সত্তায় নিয়ে এসে একে একটি নির্দিষ্ট রূপ দান করেন।

বাঙালির মানস গঠনে বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ্য ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব পূর্বাপর লক্ষ্য করা গেলেও, এ সময়ে মুসলমান সুফী-সাধকদের উদার ইসলামী দর্শন বা সুফীবাদ এবং শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩০), কবীর, নানক প্রমুখের বৈষ্ণববাদ, ভক্তিবাদ মিলে বাঙালির জীবনে জন্ম নেয় একটি সহনশীল ও সংশ্লেষণাত্মক সংস্কৃতি, পরবর্তীকালে অসাম্প্রদায়িকতা যার উত্তরাধিকার। মুসলমান শাসন আমলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, দিল্লীভিত্তিক কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বাংলার শাসক-নৃপতিদের বিভিন্ন সময় স্বাধীনতা ঘোষণা। পরোক্ষভাবে হলেও, এ ঘটনা বাঙালির পরবর্তী মুক্তিসংগ্রামে প্রভাব ফেলে।

প্রায় দু'শ' বছর ধরে বাংলা ও ভারতে ব্রিটিশ শাসন ছিল খুবই ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ। জীবন, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভাষা ও সাহিত্য সর্বক্ষেত্রে এ সময়ে ঘটেছিল আধুনিকায়ন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অভিঘাতে দ্রুত চিরায়ত প্রায় স্বনির্ভর ও স্বনিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ সমাজ ভেঙ্গে পড়ছিল।

ব্রিটিশ শাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক দিক হলো, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা জগতে বিস্ফোরণ ও এর অভূতপূর্ব প্রসার। বিভিন্ন সংস্কার, প্রধানত ইংরেজী শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এক শ্রেণীর মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটে। এই নেতৃত্ব রাজনীতি, সংগঠন, সমাজ-সংস্কার, চাকরি,ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিস্তৃতি লাভ করে।

ব্রিটিশ শাসনের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হলো, প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলের সহনশীল ও সংশ্লেষণাত্মক সংস্কৃতির ধারাকে দ্রুত পাল্টিয়ে দিয়ে তদ্স্থলে সাম্প্রদায়িক চিন্তা-ভাবনার সৃষ্টি ও এ ধারাকে প্রবল করে তোলা। কিন্তু এর ভেতরও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারা মুক্ত হিন্দু ও মুসলমানের মিলিত প্রয়াসে প্রচ্ছন্ন আকারে হলেও বাঙালি জাতিসত্তাভিত্তিক রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে।

৪০-এর দশকে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র-ভাবনা একটি রূপ নেয়। ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব ছিল এর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবে এই অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত না হয়ে ৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশ বিভাগের প্রাক্কালে যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, লাহোর প্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শংকর রায়, আবুল হাসিম প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে 'অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র' গঠনের প্রয়াস নেন। কিন্তু ধর্ম-নির্বিশেষে বাঙালি জাতিসত্তা তখনো স্পষ্ট রূপ নেয়নি, বরং 'দ্বিজাতিতত্ত্বের' বিভ্রান্তির দোলাচালে দুলতে থাকে এবং ঐ উদ্যোগ সফল হতে পারেনি।

বাঙালিদের বিপুল সমর্থন ও ভোটদান ব্যতীত যেখানে পাকিস্তান রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠালাভ করত না, সেই রাষ্ট্রে শুরু থেকেই তাদের ওপর নেমে আসে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঔপনিবেশিক ধাঁচের শাসন-শোষণ, জাতি নিপীড়ন। বাঙালিরা পরিণত হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে। ১৯৪৭-১৯৭১ বা পাকিস্তানী আমলটি ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় বা পর্ব। সংগ্রামের এ পর্বের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয় রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে (১৯৪৮, ১৯৫২)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন ভাষা-আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দিদের অন্যতম। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পাকিস্তানী শাসন পর্বে ভাষার প্রশ্ন ব্যতীত আরো যেসব বিষয় মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়, তা ছিল- গণতন্ত্রের সংগ্রাম, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, পাকিস্তানের দু' অংশের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ ও শোষণমুক্তি। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। ফজলুল হক, সোহ্রাওয়ার্দী ও ভাসানী এঁদের জীবদ্দশায়ও মুজিব ছিলেন সকল আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যমণি।

৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর শেরে বাংলার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের কারণে তা মাত্র ৫৬ দিনের বেশি ক্ষমতাসীন থাকতে পারেনি। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক সামরিক-বেসামরিক আমলা চক্রের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করা, যা তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের (ইধংরপ উবসড়পৎধপু) মোড়কে এক দশক ধরে অব্যাহত থাকে। ফলে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব দূরে থাকুক, রাষ্ট্র পরিচালনায় বাঙালিদের কোনরূপ অংশ গ্রহণের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়।

১৯৬৪ সালে হঠাৎ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিলে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে 'পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও' আহ্বানে সর্বত্র দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতায় আস্থাশীল বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল, ধর্মের নামে রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে কোনরূপ বৈষম্য সৃষ্টি না করুক এবং ধর্ম, কর্ম, বর্ণ, গোত্র, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হোক।

পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র-কাঠামো ভেঙ্গে বাঙালির সার্বিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর সম্মুখে 'আমাদের বাঁচার দাবি ৬-দফা কর্মসূচী' তুলে ধরেন। এ কর্মসূচী ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তি সনদ। ৬-দফাভিত্তিক বাঙালির জাতীয় মুক্তির আন্দোলন চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ১৯৬৮ সালে 'আগরতলা মামলা' দায়ের করে। এর ফলে এক বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। রচিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়লাভ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় মেনে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে সামরিক শক্তি বলে বাঙালির মুক্তির স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাত করতে উদ্যত হয়। প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনে ৭১-এর মার্চ মাসের অধিকাংশ সময়জুড়ে আলোচনার নামে তারা কালক্ষেপণ করতে থাকে। অপরদিকে, ২ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চ তাঁর জাতির উদ্দেশে এক দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য নিয়ে তিনি হাজির হলেন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সভায়। ৭ মার্চের সেই মহাস্মরণীয় ভাষণ, যা গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৮৬৩ সালের বিখ্যাত গেটিসবার্গ বক্তৃতার সঙ্গে তুলনীয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ ভাষণে পাকিস্তানী রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ ব্যাখ্যা, অসহযোগ আন্দোলনের বিস্তারিত কর্মসূচী ঘোষণা, সারা বাংলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ, প্রতিরোধ সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়ার ইঙ্গিত, শত্রুর মোকাবেলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন, যে কোন উস্কানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার পরামর্শ, ইত্যাদি কিছুর পর ঘোষণা করেন :

"...ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা-কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে. . . এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।"

২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচার আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু মধ্যরাতের কিছু পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এবার সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ন' মাস ব্যাপী এক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের শেষে হানাদারমুক্ত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

আমাদের অতীত কৃষক বিদ্রোহ ও কৃষক আন্দোলনের গণচেতনা, শরিয়তউল্লাহ, তিতুমীর, ক্ষুদিরাম ও মাস্টার দা সূর্যসেনের সাহসী প্রত্যয় ও প্রতিরোধ সংগ্রাম, মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের (১৬০০-১৬৭০) 'যে জন বঙ্গে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে জন জন্ম কার নির্ণয় ন জানি'Ñ এ উক্তির মধ্যে প্রকাশিত দেশাত্মবোধ ও ভাষাপ্রীতি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশের দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের সাহিত্য চেতনা, মধ্যযুগের সংশ্লেষণাত্মক সংস্কৃতি, সুফিবাদ-ভক্তিবাদ, দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারা, পাকিস্তান আন্দোলনের পেছনে বাঙালি কৃষক-প্রজা সাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন, সর্বোপরি, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষা, এ সবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শনের মর্মমূলে ও বঙ্গবন্ধু মুজিবের উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির এ ধারাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একে পূর্ণ রূপ দেন। স্বাধীন বাংলাদেশ যার মূর্ত প্রকাশ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শন বা বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল ভিত্তি জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠী বাংলাদেশকে পাকিস্তানী সাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। ৭৫ থেকে দীর্ঘ সেনা শাসন ও সেনা শাসকদের দ্বারা সৃষ্ট পাকিস্তানী ভাবাদর্শের দলীয় শাসনের সময়জুড়ে (১৯৭৫-১৯৯৬) তা অব্যাহত থাকে। ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন, আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের সুযোগ লাভ ছিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত ঐ আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দর্শন বা চেতনার পুনঃপ্রত্যাবর্তন শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতা আর বৈরী অবস্থা সত্ত্বেও তা অব্যাহত রয়েছে। সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পাঠ্যপুস্তক পুনঃলিখন, নারীর ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্র কর্তৃক প্রান্তিক ও অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান এরই স্বাক্ষরবাহী।

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫








__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___