Banner Advertiser

Monday, October 31, 2016

[mukto-mona] পাকিস্তানের সূচনা এবং পতন



সূচনা এবং পতন
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
Published : Monday, 31 October, 2016 at 12:21 PM
  
সূচনা এবং পতন
পাকিস্তানের সূচনা এই ঢাকাতেই, পতনও এই শহরেই। সূচনা ১৯০৬ সালে যখন সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা করা হয়। পতন ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানকে 'রক্ষাকারী' সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। কেবল ঢাকাতেই যে সূচনা ও পতন তা নয়, ঢাকা শহরের একই এলাকাতেই ওই দুটি পরস্পরবিরোধী ঘটনা ঘটল। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই, এখন যেখানে মধুর ক্যান্টিন সেখানকার একটি ঘরেই, ওটি ছিল তখন ঢাকার নবাবদের বাগানবাড়ির অংশ। আর পতন ওরই কাছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এক সময় যেটা ঘোড়দৌড়ের মাঠ ছিল।
কিন্তু কেন ঘটল এমন উত্থান এবং সেটাও একই শহরে, ঢাকাতেই? সে প্রশ্নের জবাবটা জরুরি বৈকি, আমাদের ইতিহাস জানার জন্য যেমন যে রাষ্ট্রটির পতন ঘটেছে এবং পরে যেটি আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি তাদের জানার ও বোঝার জন্য তেমনি। প্রথমে দেখা যাক ঢাকায় কেন ঘটল ঘটনাটা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য হয় রাজনৈতিক তৎপরতা, তার সূচনা যে ঢাকায় হয়েছে তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকত্ব নেই। ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে একত্র করে যে নতুন প্রদেশ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার রাজধানী ছিল এ ঢাকাতেই। ১৯১১ পর্যন্ত ওই প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালুও ছিল। কিন্তু বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে যে প্রবল আন্দোলন হয় তার মুখে ওই বিভাজন বাতিল হয়ে যায়। আন্দোলনের প্রধান শক্তি ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ঢাকা যাতে রাজধানী থাকে এবং নতুন প্রদেশ যাতে বাতিল না হয়ে যায় তার জন্য তখনকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ব্যক্তিদের একটা চেষ্টা ছিল। সেই চেষ্টায় উৎসাহ জোগান বড়লাট মিণ্টো। লাট, বড়লাটদের আশা ছিল একটা সাম্প্রদায়িক বিভেদ যদি তৈরি করা যায় তবে ভারতশাসনে সুবিধা হবে। মুসলিম নেতারা তার সঙ্গে দেখা করেন এবং মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান। মিণ্টো সে দাবিকে সমর্থন করবেন এটাই ছিল স্বাভাবিক এবং ঠিক সেটাই তিনি করেন। এই ঘটনা ১৯০৬ সালের; বড়লাটের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে মুসলিম নেতারা ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর আহ্বানে ঢাকা শহরে একটি শিক্ষা সম্মেলনে মিলিত হন এবং সেই সম্মেলনেই সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই মুসলিম লীগই পরে পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে দেশভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান কায়েম হয়ে যায়। আবার এই ঢাকাতেই যে পাকিস্তানের পতন হবে সেটাও স্বাভাবিক ছিল। পাকিস্তানের বাসিন্দাদের শতকরা ৫৬ জনই ছিল বাঙালি। কিন্তু তারা তাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া তো দূরের কথা নানাভাবে বঞ্চিত ও শোষিত হচ্ছিল। ১৯৪৮ সালেই মোহাম্মদ আলী সূচনা এবং পতনজিন্নাহ যখন ঘোষণা করেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, পূর্ববঙ্গের মানুষ তখনই বুঝে ফেলেছে যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাদের জন্য ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। তাই আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং স্বভাবতই ঢাকাই ছিল আন্দোলনের কেন্দ্র। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এসব স্তর পার হয়ে বাঙালি যখন স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতাই দাবি করল তখন পাকিস্তানের রক্ষক সামরিক বাহিনী জাতিহত্যার এক নারকীয় অভিযান শুরু করে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে পাকিস্তান শেষ হয়ে যায় জাতিহত্যা শুরুর রাতেই, একাত্তরের পঁচিশে মার্চেই, ষোলোই ডিসেম্বর তার দৈহিক পতন ঘটে মাত্র। আর সেই পতন ঢাকাতেই যে ঘটবে সেটাও তো স্বাভাবিক ছিল। ঢাকা দাঁড়িয়েছিল ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে, সেজন্য যা ঘটার ঢাকাতেই ঘটার কথা এবং তাই ঘটেছে।
কিন্তু কেন ঘটল পাকিস্তানের এই পতন? ঘটল ঠিক সেই কারণেই, যে কারণে এর প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল। আর সেটা হলো বৈষম্য এবং তার সঙ্গে জড়িত ভীতি। ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা বৈষম্য ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে হিন্দু সম্প্রদায় শিক্ষা ও সম্পত্তি উভয় বিবেচনাতেই মুসলমান সম্প্রদায়ের তুলনায় এগিয়ে ছিল। পৃথক নির্বাচনের দাবিটি ছিল হিন্দু বিত্তবান ও মধ্যবিত্তের হাতে মুসলিম বিত্তবান ও উঠতি মধ্যবিত্ত জব্দ হবে এ ভয় থেকেই। আর ওই যে পৃথক নির্বাচনের দাবি এবং ১৯০৯ সালে ভারতশাসন আইনে তার ব্যবস্থা, এর ভেতরেই কিন্তু নিহিত ছিল পাকিস্তানের অঙ্কুর। ওই অঙ্কুরই পরে মহীরুহরূপে বিকশিত হয় এবং রক্তপাতের ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা সম্ভব করে তোলে।
পৃথক নির্বাচন দুই সম্প্রদায়কে পৃথক করল। এই পার্থক্যের ব্যাপারটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দাবি করা হলো হিন্দু ও মুসলমান আসলে দুটি সম্প্রদায় নয়। প্রকৃত প্রস্তাবে তারা দুটি স্বতন্ত্র জাতি; সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য তাই স্বতন্ত্র বাসভূমি দরকার। ১৯৩৭ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার ফলাফলের ভিত্তিতে সুযোগ এসেছিল বাংলায় ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে একত্র হয়ে একটি বঙ্গীয় যুক্ত মন্ত্রিসভা গঠন করা। সেটা করা গেলে সম্ভাবনা ছিল যে, সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে ইহজাগতিক সমস্যাগুলো সামনে চলে আসবে এবং দুই সম্প্রদায়ের নেতারা একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কংগ্রেস তাতে রাজি হয়নি। বঙ্গীয় কংগ্রেস রাজি ছিল, বাধাটা এসেছিল ভারতীয় কংগ্রেসের কাছ থেকেই। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফজলুল হক মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মেলালেন, যারা তাকে কাছে টেনে নিয়ে মহোৎসাহে 'শেরেবাংলা' উপাধি দিলেন এবং লাহোরে ডেকে নিয়ে তাকে দিয়ে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবির প্রস্তাব উপস্থাপন করিয়ে নিলেন। ওই প্রস্তাবই পরে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিত হয়েছে। পরে মুসলিম লীগ ফজলুল হককে পরিত্যাগ করল এবং স্বাধীন ভারতে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলমানদের অর্থনৈতিক তো অবশ্যই ধর্মীয় স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে, এ ভয়ের কথা শুনিয়ে এগিয়ে গেল।
তার পরে এলো আরেক নির্বাচন, ১৯৪৬-এর। এই নির্বাচনে মুসলমান আসনগুলোতে মুসলিম লীগ হয়ে উঠল একচ্ছত্র। যেমন কংগ্রেস এলো হিন্দু আসনে। বাংলায় তখন শতকরা বায়ান্নজন বাসিন্দা যেহেতু ছিল মুসলিম সম্পদায়ের, তাই আইন পরিষদে তারাই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিম লীগই মন্ত্রিসভা গঠন করল। হিন্দু মধ্যবিত্তের একাংশ ভয় পেয়ে গেল, ভাবল স্থায়ীভাবেই তাদের মুসলমানদের অধীনে থাকতে হবে। বাংলাকে ভাগ করার জন্য তারা তাই তৎপর হয়ে উঠল। ব্রিটিশের উস্কানি ছিল অবশ্যই কিন্তু সেটা কার্যকর হতো না হিন্দু মধ্যবিত্ত ওভাবে সাড়া না দিলে। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ হয়ে গেলে পরিত্যক্ত পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে সে নিয়ে তাদের মোটেই উদ্বিগ্ন মনে হলো না। কেবল নিজেদের ভবিষ্যৎই দেখল, অন্য সবার ভবিষ্যৎকে অবজ্ঞা করে।
আর মুসলমানরা যে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছে সেটাও একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা থেকে নয়, শোষণ থেকে মুক্তি পাবে এই আশাতেই। ব্রিটিশের নিপীড়ন তো ছিলই, প্রত্যক্ষ ছিল জমিদার ও মহাজনদের শোষণ আর অগ্রসর হিন্দু মধ্যবিত্ত অনগ্রসর মুসলমান মধ্যবিত্তকে যে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত সেটাও সত্য। শোষণ ও উত্ত্যক্তকারীরা সম্প্রদায়গত পরিচয়ে হিন্দু, তাদের ওই সম্প্রদায়িক পরিচয়টাকেই মুখ্য করে তোলা হয়েছিল শ্রেণিগত পরিচয়টিকে অস্পষ্ট করে দিয়ে। কিন্তু পাকিস্তান বাঙালি মুসলমানকে যে তার কাক্সিক্ষত মুক্তি দিতে ব্যর্থ হবে সেটা তো শুরুতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
শুরুতেই তাই পতনের সূচনা এবং তার কারণ বৈষম্য। সব ক্ষমতা অবাঙালিদের হাতে, বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকবে এটা মেনে নিতে অসম্মতির কারণেই পূর্ববঙ্গের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেল এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের পতন ঘটল। হিন্দু-মুসলমানে বৈষম্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কারণ, একইভাবে পাকিস্তানি শাসক ও পূর্ববঙ্গের মানুষের ভেতরে বৈষম্যই পাকিস্তানের পতনের জন্য দায়ী। ভৌগোলিক দূরত্ব ক্ষমতার বৈষম্যকে বৃদ্ধির ব্যাপারে সাহায্য করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশেও তো বৈষম্য আছে এবং কমেনি। যেগুলো কেবল সংকটের নয়, বিপদেরও লক্ষণ বটে।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক
মানবকণ্ঠ/আরএস

সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬, ১৬ কার্তিক ১৪২৩, ২৯ মহরম ১৪৩৮




__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___