জামায়াত ও সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ আমার পছন্দ হয়নি - Prothom-Alo
www.prothom-alo.com › বাংলাদেশ › রাজনীতি
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1023811/জামায়াত-ও-সেনাবাহিনীর-প্রসঙ্গ-আমার-পছন্দ-হয়নি
রফিক–উল হকের সাক্ষাৎকার
জামায়াত ও সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ আমার পছন্দ হয়নি
নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণ বিষয়ে আয়োজিত বিএনপির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বিএনপির প্রস্তাব বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত কিছু মত তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুজ্জামান ওরিয়াদুল করিম
প্রথম আলো: নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণে বিএনপির প্রস্তাবগুলো উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে আপনি গিয়েছিলেন। এসব প্রস্তাব কতটা যৌক্তিক বা গ্রহণযোগ্য মনে করেন?
রফিক-উল হক: হেডিংটা ভালোই দিয়েছে
'নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণ: বিএনপির প্রস্তাবাবলী'। তাদের প্রস্তাবে অনেকগুলো ভালো বিষয় আছে, যা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জরুরি। আবার এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো অবাস্তব ও ভিত্তিহীন।
প্রথম আলো: এসব প্রস্তাবের মধ্যে বড় দাগে আপনার পছন্দ ও অপছন্দের কোনো বিষয় আছে?
রফিক-উল হক: প্রস্তাবে জামায়াত ও সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গগুলো আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। জামায়াতকে কোনোভাবে আনা যাবে না। আর সেনাবাহিনী তার নিজের কাজ করবে। তাদের রাজনীতির মধ্যে আনতে হবে কেন?
প্রথম আলো: সেনাবাহিনীর কোন প্রসঙ্গ আপনার অপছন্দ হয়েছে?
রফিক-উল হক: বিএনপির অনুষ্ঠানে দেওয়া পুস্তিকার আট পৃষ্ঠা দেখুন। সেখানে নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে করণীয় বিষয়গুলোর শুরুতেই বলা হয়েছে, আরপিওর ডেফিনেশন ক্লজে 'ল এনফোর্সিং এজেন্সি' হিসেবে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে 'ডিফেন্স সার্ভিসেস অব বাংলাদেশ' পুনঃস্থাপন করতে হবে।
আবার ১১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান করে সব নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোটকেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আমি চাই, ইলেকশন কমিশন শুড বি ভেরি স্ট্রং এবং দেয়ার শুড বি ইলেকশন, নো মার্শাল ল। আর্মি আর্মির কাজ করবে। আর্মি এখানে আসবে না। আর জামায়াতকে আনার কোনো প্রশ্ন আসে না। ইনডাইরেক্টলি তারা (বিএনপি) জামায়াতকে এনেছে।
প্রথম আলো: জামায়াত তো বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে আছে। বিএনপি কি জামায়াতকে বাদ দিয়ে কিছু করবে বলে মনে হয়?
রফিক-উল হক: আমি বলব, জামায়াতকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা ঠিক নয়। আমরা আলোচনা ও সমঝোতার কথা বলব। কিন্তু যে জামায়াতকে নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক, তাদের রাখতে হবে কেন?
প্রথম আলো: রাজনীতিতে ও দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতার কথা আপনি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। সেই সম্ভাবনা দেখতে পান কি?
রফিক-উল হক: আমি তো বলেই আসছি, কিন্তু সমঝোতার কিছু দেখি না। বিএনপি এক্সট্রিম প্রপোজাল দিয়েছে। জামায়াতকে আনলে আর্মিকে আনলে কেউ সহ্য করবে না। এরা প্রপোজাল দিয়েছে, এখন দেখা যাক অন্য পার্টি কী বলে।
একটা গল্প বলি। শেরেবাংলা রাতে হয় শ্যামা প্রসাদের বাড়িতে যেতেন, না হলে শ্যামা প্রসাদ শেরেবাংলার বাড়িতে যেতেন। একসঙ্গে খেতেন। এটা এখন কল্পনা করা যায়—শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া একসঙ্গে খাচ্ছেন? তবে একদিন না একদিন এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তা-ই আশা করি।
রফিক-উল হক: আমি কোনো রাজনীতি করি না। নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করি বলে হয়তো অনেকে পছন্দ করে বা খাতির করে। এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি বলব, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। এ জন্য আলোচনা ও সমঝোতা দরকার। বিএনপি একটি প্রস্তাব দিয়েছে, আদার পার্টি শুড রেসপন্স।
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, খালেদা জিয়ার ফর্মুলা অন্তঃসারশূন্য। তিনি জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন। তাঁর সংলাপের আহ্বান হাস্যকর। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
রফিক-উল হক: সরকারি দল সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমি বলব, এটা ভালো লক্ষণ। আমি মনে করি, ওবায়দুল কাদের রিজনেবল রাজনীতিবিদ। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠন করবেন, তাঁর এ বক্তব্য সত্য। কিন্তু যখন আলোচনা ও সমঝোতার প্রসঙ্গ আসে, তখন অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
প্রথম আলো: বিএনপির এসব প্রস্তাব সরকার মানবে বলে মনে হয় আপনার?
রফিক-উল হক: যেসব প্রপোজাল দিয়েছে, এগুলো কমপ্লিট করতে হলে তো আমার জীবদ্দশায় আর হবে না। বিএনপির প্রপোজাল পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে বহু দিন লাগবে। কথা হচ্ছে, বিএনপি প্রপোজাল দিয়েছে, আওয়ামী লীগের এগিয়ে আসা দরকার। তবে আমি কোনো আশা দেখি না।
প্রথম আলো: নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে যে প্রক্রিয়ায় বাছাই কমিটি করার প্রস্তাব বিএনপির চেয়ারপারসন করেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটি বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব?
রফিক-উল হক: যে যা-ই বলুক, তারা একটা প্রপোজাল দিয়েছে। এটা তো আর ফাইনাল না। আমি মনে করি, বাছাই কমিটির পাঁচ সদস্যের যেসব যোগ্যতার কথা বিএনপি বলেছে, তা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।
প্রথম আলো: সরকার তাদের প্রস্তাব না মানলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে মনে করেন?
রফিক-উল হক: যে ভুল বিএনপি করেছে, তা আবার করবে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলো: আপনি তাহলে মনে করেন যে গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে?
রফিক-উল হক: অবশ্যই ভুল করেছে। নইলে এ অবস্থা হতো না।
প্রথম আলো: আগামী নির্বাচন কেমন হবে বলে মনে হয়?
রফিক-উল হক: নির্বাচন হতে আরও দুই বছর বাকি আছে। এর মধ্যে আরও অনেক পানি গড়াবে। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তাহলে এ দেশেও অনেক কিছুই হতে পারে। সারা পৃথিবী একটা চেঞ্জের মধ্যে আছে। আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে চাই একটা সুষ্ঠু ইলেকশন হোক। বিএনপি শুড পার্টিসিপেটেড ইন ইলেকশন। ইলেকশন বয়কট করে কোনো লাভ নেই। এখন তো আর তারেক রহমানের নির্বাচন করার উপায় নেই। হি হ্যাজ বিন কনভিকটেড। হিজ ওয়াইফ মে কনটেস্ট।
প্রথম আলো: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, সরকারের নির্দেশেই আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন। আপনি এটা কীভাবে দেখেন?
রফিক-উল হক: উনি আদালতে যাননি, এ জন্য আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইউ মাস্ট রেসপেক্ট কোর্ট অর্ডার।
প্রথম আলো: আগামী নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ারও কি শাস্তি হতে পারে?
রফিক-উল হক: হ্যাঁ, হতে পারে।
প্রথম আলো: আপিল করার সুযোগ তো থাকবে সে ক্ষেত্রে?
রফিক-উল হক: আপিল করতে করতে আমি তো মরে যাব, তোমরাও মরে যেতে পারো। তাঁর জন্মদিন নিয়ে এখন কত কেস হয় দেখো না! কোন কুক্ষণে উনি (খালেদা জিয়া) তাঁর জন্মদিন জুন থেকে ১৫ আগস্ট করলেন, কার বুদ্ধিতে? যিনি জন্মদিন বদলে ফেলেন, তিনি প্রাইম মিনিস্টার হবেন? সত্য কথা বলতে, আমি মনে করি না যে আমরা একটা সভ্য দেশে আছি। যেভাবে আমরা বিহেভ করছি, কোনো সভ্য দেশে তা করে না।
প্রথম আলো: জন্মদিন পরিবর্তন করায় আরও মামলা হতে পারে?
রফিক-উল হক: তা তো হতেই পারে। দেখো না, উনি জন্মদিন পরিবর্তন করলেন। আবার মামলাও হয়ে গেল, এরপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আমি বলব, জন্মদিন পরিবর্তন করা ও মামলা করা—দুটোই খারাপ কাজ হয়েছে।
প্রথম আলো: বর্তমান সিইসি ভালো আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সিইসি হয়ে তিনি যথেষ্ট বিতর্কিত হয়েছেন। কেন এমনটি হলো বলে মনে হয়?
রফিক-উল হক: দুঃখজনক।
প্রথম আলো: দুই নেত্রীর পর দলে বা দেশে নেতৃত্ব দেবেন কারা?
রফিক-উল হক: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নেক্সট প্রাইম মিনিস্টার হবেন সজীব ওয়াজেদ জয় (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র)। তারপরে প্রাইম মিনিস্টার হবেন তারেক রহমানের ওয়াইফ (জোবায়দা রহমান)। এটা আমার ব্যক্তিগত রিডিং।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
রফিক-উল হক: তোমাদেরও ধন্যবাদ।
__._,_.___