বাংলা নাট্য-সাহিত্যে শেক্সপিয়রের প্রভাব
ড. মুকিদ চৌধুরী
শেক্সপিয়রের সঙ্গে বাঙালির মানস-সংযোগ এবং প্রাথমিক পরিচয় ঘটে প্রধানত বিদ্যাশালা এবং নাট্যশালার মাধ্যমে। হিন্দু কলেজ (১৮১৭ ) এবং স্কুল সোসাইটি (১৮১৮)-র ইংরেজি সাহিত্য পঠনপাঠনে স্বভাবতই শেক্সপিয়রের স্থান ছিল সবার উপরে; অধ্যাপক রিচার্ডসনই এই কাজটি মূলত করেন। অন্যদিকে, ক্যালকাটা থিয়েটার (১৭৭৬), মিসেস ব্রিস্টোর থিয়েটার (১৭৮৯), বেঙ্গলী থিয়েটার (১৭৯৫), চৌরঙ্গী থিয়েটার (১৮১৩), সাঁসুসি থিয়েটার (১৮৩৯) প্রভৃতি নাট্যলাশায় শেক্সপিয়রের নাটক প্রধানত অভিনীত হতে শুরু করে। এমনকি ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বাঙালির উদ্যোগে স্থাপিত প্রথম নাট্যশালা 'হিন্দু থিয়েটার'-এর উদ্বোধন হয় প্রসন্ন কুমার ঠাকুরের অনূদিত ভবভূতি রচিত সংস্কৃত নাটক 'উত্তররামচরিত' ও শেক্সপিয়রের ইংরেজি নাটক 'জুলিয়াস সিজার' মাধ্যমে। ডেভিড হেয়ার একাডেমি ও ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে দুটো রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হলে সেখানেও শেক্সপিয়রের নাটকই অভিনীত হতে থাকে। তবে শেক্সপিয়রের নাটকের প্রথম অনুবাদক হচ্ছেন নাট্যকার হরচন্দ্র ঘোষ (১৮১৭-১৮৮৪)। তিনিই সর্বপ্রথম প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্য রীতির সংমিশ্রণে আধুনিক নাট্যরীতি প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। তারই রচিত 'দি মার্চেন্ট অব ভেনিস' অবলম্বনে 'ভানুমতী-চিত্তবিলাস' (১৮৫৩) ও 'রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট' অবলম্বনে 'চারুমুখ-চিত্তহরা' (১৮৬৪)। 'ভানুমতী-চিত্তবিলাস'-এ গদ্য ও পদ্য উভয় ধারাই ব্যবহার করা হয়েছে। এ অবিকল অনুবাদ নয়, বরং ভাবানুবাদ; দেশীয় রুচি-অনুযায়ী মূল নাটকে অলদ-বলদ করে মূল কোনও কোনও চরিত্রকে নূতনভাবে উপস্থাপনসহ দু-একটি নূতন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। 'চারুমুখ-চিত্তহরা' নাটকেও নাম, ঘটনা, স্থান প্রভৃতি নূতনভাবে পরিবেশিত হয়েছে। হরচন্দ্র ঘোষের অবশিষ্ট নাটকের মধ্যে পুরাণ অবলম্বনে রচিত 'কৌরব বিয়োগ' (১৮৫৮) হচ্ছে একটি মৌলিক নাটক।
শেক্সপিয়রের 'দি কমেডি অব এরোরস' অবলম্বনে ঈশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০-২৯ জুলাই ১৮৯১) 'ভ্রান্তিবিলাস' নাটকটি রচনা করেন। তিনি ছিলেন ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি লাভ করেন 'বিদ্যাসাগর' উপাধি। বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তুলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তিনিই 'ভ্রান্তিবিলাস' নাটকে মূল পাত্র-পাত্রীদের নাম পরিবর্তনের রীতি অবলম্বন করেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজ বাঙালি লেখক, সংগীত-স্রষ্টা ও ভাষাবিদ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনূদিত শেক্সপেরিয়রের 'সিমবেলিন' নাটকটি হচ্ছে 'সুশীলা-বীরসিংহ' (১৮৬৭)। কবি এবং আইনজীবী হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯০৩) অনুবাদ করেন শেক্সপিয়রের 'দি টেম্পেস্ট' অবলম্বনে 'নলিনী বসন্ত' (১৮৭০) ও 'রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট' নাটকের ছায়াবলম্বনে 'রোমিও-জুলিয়েট' (১৮৯৫)। শেক্সপিয়রের 'জুলিয়াস সিজার' নাটকটি দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরও অনুবাদ করেন। নাট্যকার, নাট্যপরিচালক, মঞ্চাভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২) শেক্সপিয়রের 'ম্যাকবেথ' পদ্যে বঙ্গানুবাদ করেন। তারপর সাত মাস মহড়া দিয়ে মহাসমারোহে 'ম্যাকবেথ' মঞ্চস্থ করেন মিনার্ভা থিয়েটার (১৮৯৩)-এ। এছাড়া তার 'চণ্ড', 'সিরাজদ্দৌলা' প্রভৃতি সম্পূর্ণভাবে শেক্সপিয়রীয় নাট্যরীতি, চরিত্রসৃষ্টি, নাট্যদ্ব›দ্বরূপায়ণ প্রভৃতির প্রভাবে রচিত। দেবেন্দ্রনাথ বসু (১২৬৭-১৩৪৫ বঙ্গাব্দ) সেক্সপিয়রের 'ওথেলো' এবং 'ক্লিওপেট্রা' নাটক বঙ্গানুবাদ করেন।
শেক্সপিয়রের প্রভাব মৌলিক বাংলা নাট্য-সাহিত্যের উপরও পড়েছে, যার সূচনাকাল ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ। পৌরাণিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক ধারার মধ্যে ঐতিহাসিক রোমান্টিক নাটকের মধ্যেই শেক্সপিয়রের প্রভাব সর্বাপেক্ষায় দেখা যায়। শেক্সপিয়রের নাটকের উদাত্তগম্ভীর পরিবেশ, চরিত্রের পৌরুষদীপ্ত বলিষ্ঠতা, উচ্চাঙ্গের ভাবকল্পনা, বিয়োগান্তক বেদনার সীমাহীন গভীরতা ও মর্মবিদারী বেদনাময়তা বাংলা ঐতিহাসিক নাটকে সর্বাপেক্ষা ও সার্থক ভাবে পরিস্ফুটিত। ১৮৫২-তে বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম মৌলিক নাটক যোগেশচন্দ্র গুপ্তের 'কীর্তিবিলাস' (প্রথম বিয়োগান্তক) ও তারাচরণ শিকদারের 'ভদ্রার্জুন' (পরিণতি মিলনান্তক) শেক্সপিয়রীয় রীতিতে রচিত। পঞ্চাঙ্কের নাটক 'কীর্তিবিলাস' নাটকের ভাষা, রচনা ও অলঙ্কারে সংস্কৃত দ্বারা আড়ষ্ট। দুঃখের সার্থক রূপায়ণই এই নাটকে পরিস্ফুটিত। 'ভদ্রার্জুন'-এ অর্জুন কর্তৃক সুভদ্রা-হরণই এর বর্ণনীয় বিষয়বস্তু। কাহিনীর সুসংহত ক্রিয়াশিলগতি, নাটকীয় কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার আর সংলাপের আড়ম্বরহীর স্বাভাবিক ছন্দে বাঁধা। সমাজ-সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে রচিত উমেশচন্দ্র মিত্রের 'বিধবা-বিবাহ' (বিয়োগান্তক)-ও শেক্সপিয়রের নাট্যরস দ্বারা প্রভাবিত।
প্রথম আধুনিক নাটক রচনার কৃতিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্তেরই। তিনি পাশ্চাত্ত্য নাট্যরীতি অনুসরণ করে রচনা করেন 'শর্মিষ্ঠা' (১৮৫৯), 'পদ্মাবতী', 'কৃষ্ণকুমারী' প্রভৃতি। মহাভারতের শর্মিষ্ঠা-দেবযানী-যযাতি উপাখ্যান অবলম্বনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচিত 'শর্মিষ্ঠা' আধুনিক বাংলা নাট্য-সাহিত্যের পথপ্রদর্শক, এ নাট্যরীতিরূপই বাংলা নাট্য-সাহিত্যে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। 'পদ্মাবতী'-র মধ্যে শেক্সপিয়রীয় রীতি শধুমাত্র বহিরঙ্গেই প্রবর্তিত। অন্তর্দ্বন্দ্বে ও বিয়োগান্তক বেদনায় মধুসূদনের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক 'কৃষ্ণকুমারী'-তে শেক্সপিয়রীয় নাটকের ধর্ম অতি সার্থকভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। এর শেষ অংশে 'কিং লিয়ার'-এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত। ঘটনার তীব্র বেগ, প্রবল নাট্যোৎকণ্ঠা, চরিত্রসৃষ্টি, বলিষ্ঠ বিয়োগান্তক বেদনা, বহির্দ্বন্দ্বের সঙ্গে কঠোর অন্তর্দ্বন্দ্বের সমাবেশ, পদ্য-সংলাপ প্রভৃতির দিক থেকে শেক্সপিয়রের প্রভাব সার্থকভাবে পরিস্ফুটিত দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের 'তারাবাই', 'নুরজাহান', 'সাজাহান' ঐতিহাসিক নাটকসমূহে। 'তারাবাই' নাটকের সূর্যমল ও তমসা শেক্সপিয়রের 'ম্যাকবেথ' নাটকের রাজ্যলাভের উচ্চাশা পোষণকারী ম্যাকবেথ ও লেডি ম্যাকবেথের প্রভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। লেডি ম্যাকবেথের মতো নুরজাহানের নারী-সত্তা (করুণা ও মমতা)-র সঙ্গে অশুভ-সত্তা (ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা)-র তীব্র লড়াই দেখা যায় 'নুরজাহান' নাটকে। 'কিং লিয়ার'-এর মতো 'সাজাহান'। রাজা ও সাজাহান উভয়ই একদিকে নিষ্ঠুর, উৎপীড়ক, কূটনৈতিক-বুদ্ধিসম্পন্ন, অন্যদিকে স্নেহহীন ও যুক্তিহীন নন। কর্ডেলিয়ার মতো জাহানারা চরিত্রটিও পিতার প্রতি স্নেহশীলা, মমতাময়ী। শেক্সপিয়রের যেকোনও নাটকে সাধারণত তিন ভাগ করা যায় : (এক) নাট্য-ঘটনার উপস্থাপনা, (দুই) বিবর্তন, তীব্রতা ও জটিলতা, (তিন) পরিসমাপ্তি। প্রথম অঙ্কে উপস্থাপনা এবং নাট্য-সংঘাতের সূচনা; দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ অঙ্ক জুড়ে (কোনও কোনও ক্ষেত্রে পঞ্চম অঙ্কের কিছু অংশ জুড়ে) বিবর্তন, তীব্রতা ও জটিলতা; পঞ্চম অঙ্কে পরিসমাপ্তি। এসবেরই প্রভাব পড়েছে 'নুরজাহান' নাটকেও; প্রথম অঙ্গে নাট্য-ঘটনার উপস্থাপনা; দ্বিতীয়-তৃতীয় অঙ্কে সংঘাতের শুরু (বিবর্তন, তীব্রতা ও জটিলতা), চতুর্থ অঙ্কে শক্তির প্রাধান্যের সূচনা ও পতনের আভাস; পঞ্চম অঙ্কে পরিসমাপ্তি- শোচনীয় পতন। দীনবন্ধু মিত্রের বিখ্যাত নাটক 'নীল দর্পণ' (১৮৬০)-এ শেক্সপিয়রীয় তিন অংশ দেখা যায়; প্রথম অঙ্কে উপস্থাপনা; দ্বিতীয়-তৃতীয় অঙ্কে বিবর্তন, তীব্রতা ও জটিলতা; চতুর্থ অঙ্কে তীব্রতা ও জটিলতার গতি হ্রাস, শ্লথগতি; পঞ্চম অঙ্কে দুঃখজনক পরিসমাপ্তি ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজা ও রানী' ও 'বিসর্জন' পুরোপুরি শেক্সপিয়রের প্রভাবে রচিত। শেক্সপিয়রের প্রণয়রস ও কৌতুকরসের সঙ্গম সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চিরকুমার সভা' ও 'শেষরক্ষা' নাটকে।
পরিশেষে একথা অবশ্যি স্বীকার করতে হয় যে, শেক্সপিয়রের প্রভাব আমার রচিত নাটকগুলোতেও পড়েছে, যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চিত্রাঙ্গদা'র অজুন-চিত্রাঙ্গদার না-বলা কাহিনী নিয়ে ও 'এ্য মিডসামার নাইট'স ড্রিম'-এর ছায়াতলে রচিত 'একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন' (পরিবেশনায়: মুজাইজ-লন্ডন ও শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটার-হবিগঞ্জ), বিজয় সিংহের শ্রীলঙ্কাকে জয় করার ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ও 'দি টেম্পেস্ট'-এর ভাবার্থ ধারন করে রচিত 'অচিন দ্বীপের উপাখ্যান' (পরিবেশনায়: প্রতীক থিয়েটার), 'হ্যামলেট'-এর ছায়াতলে রচিত 'অশোকানন্দ' (ডাকাতিয়া থিয়েটার ও অনীক থিয়েটার-ভারত), 'কিং লিয়ার'-এর কিছু অংশের প্রভাবে রচিত 'গোমোতীর উপাখ্যান' (ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার) ও 'ম্যাকবেথ'-এর ছায়াতলে রচিত 'যোদ্ধা' (অনীক থিয়েটার); তবে অবিকলভাবে শেক্সপিয়রের নাট্যরূপ ধারণ করিনি; কারণ, বাঙালির সামাজিক ও পারিবারিক জীবনরূপ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূলবোধ, পরিবেশ ও প্রকৃতির বিশিষ্ঠ প্রভাব সুসমঞ্জস করেই বাঙালির জীবন-ইতিহাস-পরিবেশ-প্রকৃতি-চিত্ত-প্রবণতার প্রকাশ ঘটাতে হয়েছে। কোথাও সমান কাহিনী রক্ষা করা হয়নি, বরং মৌলিক ও নূতন কাহিনী সৃষ্টি হয়েছে, তবে সবগুলোই পঞ্চাঙ্কে রচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় 'অশোকানন্দ'-এর কথা। এই নাটকে ইতিহাস, পটভূমি, চরিত্র, বিষয় ইত্যাদি সংগ্রহণ করা হয়েছে বঙ্গমগধ থেকে। ধর্মের রাজনৈতিক আর্যপুরাণে যে জাতিকে ইতিহাস গড়ার কাজে নির্বাচন করেনি 'অশোকানন্দ' সেই জাতিকে গুরুত্ব দিয়েছে। আর্যপুরাণের পক্সখীর সঙ্গে তুলনা করে কয়েকটি পংক্তি খরচ করা এই উপেক্ষিত জাতি 'অশোকানন্দ'-এর কেন্দ্রবিন্দু; কারণ তারা ইতিহাসেরই অন্তর্গত। তাই 'অশোকানন্দ'-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা এর দৃষ্টিকোণ, এই অঞ্চলের মানুষ আর মহারাজাধিরাজরা। এই আখ্যানের নায়কই অশোকানন্দ, বাঙালি রাজপুত্র। আশোকানন্দ শুধু পিতৃশোকে বিহবল ও বিপদগ্রস্ত তরুণের প্রতিশোধ-স্পৃহা-তাড়িত এক ট্যাজেডি নয়। বস্তুত নায়কের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি পরিণত হয় সমাজ ও জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া বিবিধ নৈতিক প্রশ্ন ও সংঘাতের এক সংক্ষুব্ধ উৎস-স্থল; এক নিকৃষ্ট প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বলি। ষড়যন্ত্রের এই বিষাক্ত পরিবেশ পরিণামে তাকে নিমজ্জিত করে এমন এক অস্তিত্ব সংকটে, যাতে সে ভাবতে বাধ্য হয় 'বেঁচে থাকাটাই বৃথা'। ফলে দিশাহীন সময়ে সমগ্র জাতি তার কাছে হয়ে ওঠে ষড়যন্ত্রে ভরা এক ভণ্ডামি ও হিংসার কারাগার। তাই মন্ত্রী-কন্যা অপরাজিতার সঙ্গে তার মধুর প্রেমও বলিপ্রাপ্ত হয়। কখনো-বা স্বনির্দেশিত নাটকের মাধ্যমে আসল সত্যকে তুলে ধরে পিতার হত্যাকারী রাজা (চন্দ্রগুপ্ত) ও ছলনাময়ী মাতা (কস্তুরী)-কে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। ঘটনার রসদ দানকারী মন্ত্রীকে এক রাতে খুন করে অশোকানন্দ। একদিকে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, আর অন্যদিকে প্রেমিককে বেছে নিতে না পেরে অপরাজিতা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এক পর্যায়ে মন্ত্রীর (চানৈক্যের) অপরাধ ছিল জেনে তার পুত্র (ঐক্যলভ্য) শান্ত হয়। কিন্তু অশোকানন্দের বুকের জ্বালা শান্ত হয় না, যতক্ষণ তার পিতৃহত্যাকারী বেঁচে আছে। অবশেষে সত্যের জয় হয়, অশোকানন্দেরও। শুধু যে মাতাকে অশোকানন্দ ছলনাময়ী ভেবেছিল, পরিশেষে তাকে সে চিনতে পারে। সে বুঝতে পারে, নারীরা শুধুই পদভার অলঙ্কৃত করে। তারা থাকে সময় আর ক্ষমতার দাস হয়ে। এজন্যই দেবর চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে কস্তুরীর সংসার যাপন করতে হয়েছে।