Banner Advertiser

Friday, March 24, 2017

[mukto-mona] গণতন্ত্র, জেনোসাইড ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়



"গণতন্ত্র, জেনোসাইড ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়"
২৫ মার্চ
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

যে কোনো নতুন রাষ্ট্রের আবির্ভাবের পেছনে দর্শন থাকে, ইতিহাস থাকে; একাধিক বড় ঘটনা থাকে। এমনকি ব্রিটেন ভারতবর্ষ থেকে ১৯৪৭ সালে বিদায় নেওয়ার পর যখন দুটি রাষ্ট্র গঠিত হলো, তার পেছনেও কাজ করেছে দর্শন, ইতিহাস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা জওয়াহেরলাল নেহরু ১৫ আগস্ট বলেছিলেন, অ ঃৎুংঃ রিঃয ফবংঃরহু. পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, আজ থেকে হিন্দু বা মুসলিম নয়; সবাই পাকিস্তানি। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি রাষ্ট্র্রকেই তৈরি করে দেয় ইতিহাস, ঘটনা। অনেকেই মনে করেন, আমাদের স্বাধীনতার পেছনে জাতীয়তাবাদ কাজ করেছে। তাহলে তো এটা আগেও হতে পারত? কেন ১৯৭১-এ এলো স্বাধীনতা? বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের বারবার সাবধান করে দিয়েছেন, জাতীয়তাবাদের খপ্পরে যেন না পড়ি। ইউরোপে সে সময়ে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থান ঘটেছিল। এশিয়ার জাপানেও তার প্রভাব পড়েছিল। এ ধরনের জাতীয়তাবাদ মানেই ধ্বংস ও মৃত্যু।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে মূল দর্শন ছিল গণতন্ত্র। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ভাষা বাংলাকে স্বীকার করতে চাননি। সে সময়ে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার অভিমত ছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে উপেক্ষা করা যাবে না। এই গণতন্ত্রের জন্যই ষাটের দশকে একের পর এক আন্দোলন হয়েছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সেটাই ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক নির্বাচন। ১৯৬৯ সালে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সংসদীয় পদ্ধতির শাসন প্রশ্নে সম্মত হয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে ইয়াহিয়া খানও বলেছিলেন, সংসদীয় শাসন চালু হবে। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সংখ্যালঘিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে পরামর্শ করে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। এর প্রতিবাদ হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি এলাকা থেকে। শহর-বন্দর-গ্রাম মুহূর্তে যেন রাজপথে নেমে আসে। ১ মার্চ দুপুরের দিকে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেন। সে সময়ে ঢাকার পল্টনের স্টেডিয়ামে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা চলছিল। হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিল পাকিস্তান দলকে সমর্থন করার জন্য। ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের রায় উপেক্ষা করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শমতো জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেছেন- সে বার্তা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও পেঁৗছে যায় এবং পাকিস্তানকে সমর্থন করতে যাওয়া দর্শকরা মুহূর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থকে পরিণত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল স্বাধীনতার চেতনা স্ফুরণের স্থান। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবিতে আহূত হরতালে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানের আমতলা থেকেই ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে মিছিল বের হয়েছিল। এ মিছিলে গুলি হয় এবং তার প্রতিক্রিয়ায় রচিত হয় অমর গাথা 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি...', যা বাঙালি ভুলবে না। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলাতেই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ-সোনালি রঙের পতাকা। এর মাত্র দেড় মাস পর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আম্রকাননে এ পতাকাই স্বীকৃত হয় জাতীয় পতাকা হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি স্পষ্ট করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি; কিন্তু তার ইঙ্গিত ছিল। যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলা হয়, কী করণীয় সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কথাও বলেছিলেন। এ জন্য দিয়েছিলেন চার দফা। এর পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় আসেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকরা সামরিক প্রস্তুতি চালাতে থাকে। আরও সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে আসা হয়।

২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে গণহত্যা বা জেনোসাইড শুরু করে তার এপিসেন্টার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর কারণ সহজেই বোধগম্য। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করায় এ প্রতিষ্ঠানের অনন্য ভূমিকার কারণেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী ও সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষোভ-রোষ ছিল প্রবল এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২৫ মার্চ। এই জেনোসাইডই পাকিস্তান ভেঙে ফেলল। ২৫ মার্চকে যথাযথ উপলব্ধি ছাড়া আমাদের রাষ্ট্র গঠনের যে দাবি, সেটা বুঝতে পারব না। বিশ্বের অনেক স্থানে জেনোসাইড হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র চাওয়ায় কোথাও জেনোসাইড হয়নি। জার্মানিতে হিটলার ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন। রুয়ান্ডায় গণহত্যা হয়েছে হুতি ও তুতসি সম্প্রদায়ের বিরোধের কারণে। কম্বোডিয়ায় পলপট 'শ্রেণিশত্রু' খতমের নামে গণহত্যা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এটাও মনে রাখা দরকার, জেনোসাইডে কত লোককে হত্যা করা হয়েছে, সেই সংখ্যা বড় বিষয় নয়। এ সংখ্যা ২০ জনও হতে পারে, ৩ লাখ বা ৩০ লাখও হতে পারে। এর আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা সূত্রবদ্ধ আছে। এ ক্ষেত্রে অভিপ্রায়টাই মুখ্য- কেন হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। তারা জগন্নাথ হলে ঘুমন্ত ছাত্রদের হত্যা করে। কারণ এ হলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা থাকত। তারা সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেও হত্যাকাণ্ড চালায়। কারণ এ হলটি ছিল ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। তারা মধুর ক্যান্টিনের মালিক মধুসূধন দে'কে পরিবারের সদস্যদেরসহ হত্যা করে। কারণ এই চা-শিঙ্গাড়া বিক্রেতার ক্যান্টিনে ছাত্রনেতা-কর্মীরা তাদের পরিকল্পনা-কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দারোয়ান-মালী-ঝাড়ূদার- কাউকে তারা রেহাই দেয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা বিস্তৃত করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সর্বত্র, যে কারণে প্রায় এক কোটি নারী-পুরুষ-শিশু প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই জেনোসাইড বুঝতে না পারলে কেন বাংলাদেশ স্বাধীন, সেটা বুঝতে পারব না।

আগেই বলেছি, গণহত্যার এপিসেন্টার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই গণহত্যার চিত্র দেশ-বিদেশে তুলে ধরায় এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব। কেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের চার দশক পর এ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ- সে প্রশ্ন করাই যায়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরপরই এ উদ্যোগ নেওয়া হলে তথ্য-উপাত্ত-প্রমাণ সংগ্রহ সহজ হতো। কিন্তু এটাও ভুললে চলবে না, এখনও মুক্তিযুদ্ধকাল ১৯৭১ সালের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা জানা অনেক অনেক লোক রয়েছেন আমাদের মাঝে। জেনোসাইড স্টাডিজ ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে। স্কয়ার শিল্পগোষ্ঠীর সহায়তায় ফেলোশিপ শুরু হয়েছে। তাদের মতো আরও স্পন্সরের সহযোগিতায় নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে। গত বছর মার্চ মাসে আমরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছি। এ বছর বিজয় দিবস সামনে রেখে আরও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার উদ্যোগ চলছে। জাতিসংঘ যেন এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়- সে জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় সংসদ এ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অটোমান সাম্রাজ্যের সময়ে আর্মেনিয়ায় যে গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল, তার স্বীকৃতি আদায়ে বহু বছর সময় লেগেছে। এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ যেন আর কোথাও না ঘটে, সে জন্যই বিশ্ব-সমাজের স্বীকৃতি প্রয়োজন। আমাদের দেশে যে জেনোসাইড পরিচালিত হয়েছে, তার জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার উপেক্ষার পেছনে রাজনীতিও কম দায়ী নয়। ২৫ মার্চ ও পরের মাসগুলোতে এখানে যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার পেছনে ছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। তাদের পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছে; রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে। সে সময়ের চীনা নেতৃত্বও ছিল পাকিস্তানের জান্তার পাশে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হত্যাকাণ্ড শুরুর পর থেকেই ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক আর্চার ব্লাড তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, 'সিলেকটিভ জেনোসাইড' শুরু হয়েছে। কিন্তু তার নোট উপেক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রস্তাব এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নমুখী উদ্যোগ ও পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটের কারণে এখন এ প্রত্যাশা জোরদার হয়েছে যে, দিবসটি বিশ্ব-সমাজে স্বীকৃত হবে। আমরা গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে জড়িতদের বিচারের পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। গণহত্যায় সরাসরি জড়িত পাকিস্তানি কমান্ডের সদস্যদের বিচারের দাবিও জোরালো হচ্ছে। বিশ্বের আর কোথাও যেন এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার দুঃসাহস না পায়, সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমাদের এ উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।


 



__._,_.___

Posted by: Farida Majid <farida_majid@hotmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___