প্রধান বিচারপতি বললেন
রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না
ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, 'ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। ধর্ম মানবতার। '
গতকাল বুধবার বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীর সবুজবাগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে 'বৌদ্ধধর্মের আলোকে বিশ্বশান্তি' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ সব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'সকল মানুষের রক্তই লাল, তাহলে কেন ধর্ম নিয়ে এত বিভেদ, হানাহানি? আজকে কেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করি? প্রতিটি ধর্মই শান্তির কথা বলে। আমি সবাইকে আহ্বান জানাই, আপনারা যার যার ধর্মের মর্মবাণী প্রচার করুন। যারা বিপথে গেছে তাদেরকে বোঝান। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তা বোঝা যায় আজকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে দুর্গাপূজায়ও ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের অনুষ্ঠানে যেমন মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষ আসে, আমরাও তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই। ধর্মকে আমরা কোনো সীমার মধ্যে রাখতে চাই না। ধর্ম মানুষের জন্য। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'পৃথিবীর সব ধর্মের ক্ষেত্রেই একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি, স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজেদের মতো করে ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে। তাদের কারণেই পৃথিবীতে এত সংঘাত-হানাহানি। এর সুবিধা নিয়ে সুকৌশলে কায়েমি শাসক শ্রেণি লাভবান হচ্ছে। '
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, 'বৌদ্ধ দর্শন বিশ্ববাসীর কাছে কেবল একটি মানবতাবাদী দর্শন নয়, মানব মুক্তির অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে এ দর্শন স্বীকৃতি পেয়েছে। সমাজ পরিবর্তন বা নতুন সমাজ, সভ্যতা বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব এবং ভূমিকা অনন্য ও সুদূরপ্রসারী। এক বিরাট জনগোষ্ঠী একে অনুসরণ করছে। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'ছোটবেলা থেকে ধর্মকে যেভাবে দেখে আসছি এবং যেভাবে বিভিন্ন মানুষকে ধর্ম পালন করতে দেখেছি এবং সেটা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান যারা যেভাবে বিশ্বাস করে আসছে প্রত্যেকের মধ্যে একটা মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে হয়েছে; যেটা থাকা কোনোমতেই উচিত নয়। গভীরভাবে এ ধর্মগুলোকে নিয়ে চিন্তা করলে আমার মনে হয় এগুলোকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে, এগুলো যথাযথ তথ্যনির্ভর নয়, বরং মতবাদমূলক। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আমরা প্রতিটি ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, এতে মানুষের কল্যাণ, জীবনের সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করে চলার কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা যদি সারা পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার দিকে আলোকপাত করি তাহলে সব জায়গাতে যে দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, বিগ্রহ এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পাই তার প্রায় প্রতিটির পেছনেই রয়েছে ধর্মীয় কারণ। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আমার মনে হয় বিভিন্ন ধর্মীয় যে মতবাদ সেগুলো বিজ্ঞানের পরিপন্থী। বাহ্যিকভাবে দেখলে বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে কিছুটা জাদুবিদ্যার সংমিশ্রণ, অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস, ছিদ্রান্বেষী প্রবণতা উপলব্ধি হয়। এটা সত্য যে, ধর্ম বেশির ভাগ মানুষকেই আকৃষ্ট করেছে, গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই ধর্মীয় মতবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। ধর্মের ওপর ভিত্তি করেই পৃথিবীতে অনেক মহান ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। ' তিনি বলেন, 'পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো মানব সমাজকে নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার নির্দেশনা দিলেও এ মূল্যবোধ আজ প্রায়ই প্রয়োগ করতে দেখা যায় না। '
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'শাক্যরাজ শুদ্ধধনের পুত্র সিদ্ধার্থ জীবন ও জগতের সমুদয় দুঃখ, দুঃখ হতে মুক্তির তাগিদে যে মহান ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে জ্ঞানের নিরলস সাধনার অবিরাম চর্চা করেছেন সেটাই এক কথায় বৌদ্ধ দর্শন। গৌতম বুদ্ধ তাঁর জীবদ্দশায় জাগতিক সমস্ত দুঃখ মুক্তির লক্ষ্যে প্রথাগত চেতনার বিরুদ্ধে অনন্য বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাই এ দর্শনকে দুঃখ মুক্তির দর্শন বলা হয়। এই দর্শনের মূল সুর, যা প্রয়োগের ভিত্তিতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী দর্শনের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ। মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাঁর মুক্তির দর্শন বা সাধনায় ধর্ম শব্দটি ব্যবহার করেছেন। '
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথেরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত ইয়াসোজা গুনাসেকেরা, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ট্রানভান খোয়া, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, আওয়ামী লীগ নেতা নূহ-উল-আলম লেনিন উপস্থিত ছিলেন।
http://www.kalerkantho.com/
বৃহস্পতিবার। ১১ মে ২০১৭ । ২৮ বৈশাখ ১৪২৪। ১৪ শাবান ১৪৩৮।
ধর্মের রাষ্ট্রীয় সীমানা থাকতে পারে না: প্রধান বিচারপতি -
See more at: http://bangla.samakal.net/
__._,_.___