'ঢাবি উপাচার্যের নির্লোভ চরিত্রে সবাই মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত'
সমাজে অনেক মানুষ যেখানে যেনতেনভাবে বিত্তবান হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে শামিল, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকার সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ না করে সমাজে নির্লোভ ও নির্মোহ ব্যক্তিত্বের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে লোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের আচরণে হতাশ তরুণ প্রজন্মের সামনে ঢাবি উপাচার্য সততার যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তাতে বাংলাদেশের সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার কাজে নতুন করে প্রেরণা পাবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকট দূরীকরণকে সহজতর করতে নিজের প্রাপ্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকার সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ না করে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে গত সাত বছর ধরে কোনো ধরনের সভা থেকে সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ অর্থ গ্রহণ করেননি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক। উপাচার্যের এই বিরল ত্যাগের বিষয়টি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে সবার সামনে তুলে ধরেন।
অধিবেশনের লিখিত বাজেট বক্তৃতায় ঢাবি কোষাধ্যক্ষ বলেন, 'একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না যে, এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নরেশ সেনগুপ্তের মতো ত্যাগী অধ্যাপক শিক্ষক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সবাই বিভিন্ন পর্যায়ের সভাসমূহের জন্য 'সিটিং অ্যালাউন্স' অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র আমাদের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কোনো সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ করেননি। আমার হিসাবে গত সাত বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করেছেন। উচ্চ নৈতিকতার জন্য এটা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নয় কি?'
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিয়োগ পান ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে প্রথম মেয়াদ এ বছর আগস্টে শেষ করবেন।
কোটি টাকার উপরে নিজের বৈধ এবং প্রাপ্য বিল গ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করায় অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক এর সহকর্মী, বর্তমান, সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের মুগ্ধতা কাটছে না। প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ফেসবুকে লিখেছেন, 'খবরটা দেখে মুগ্ধ হলাম। আমাদের আরেফিন স্যার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই যুগের উপাচার্যরা যখন নিজের সব প্রাপ্য টাকা নিয়ে উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপ্যায়ন ভাতা, বৈশাখী ভাতা এই ভাতা সেই ভাতা আত্মসাৎ করেন তখন আমাদের আরেফিন স্যার গত সাত বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিলেও প্রাপ্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা নেননি। আবার স্যার কাউকে এই খবরটা ঘুণাক্ষরে জানাতেও দেননি। ...আমি জানি না অতীতে কোনোদিন কোন উপাচার্য এমনটা করেছেন কী না! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কতোটা ভালোবাসা থাকলে একজন উপাচার্য এটা করেন ভাবি আমি। শুধু তাই নয়, ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রধান পরীক্ষক হিসেবেও উপাচার্য কোনো ভাতা গ্রহণ করেননি। তিনি প্রথম থেকে এই বিষয়টির চর্চা করে আসছেন'।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক এর ছাত্র, বর্তমানে সহকর্মী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মফিজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'এমন বিশাল একটি ত্যাগ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এর মতো নির্লোভ, নির্মোহ ব্যক্তিত্বের পক্ষেই সম্ভব। সমাজে কত মানুষ বিত্তবান হতে গিয়ে নিজের নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছে, সেখানে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক কোটি টাকার ওপর বৈধ বিল বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে দিয়েছেন! আরেকটি বড় বিষয় হলো, এই মহান ব্যক্তি এত দীর্ঘ সময় বিষয়টি গোপন রেখেছেন। প্রচার বিমুখতা স্যারের অন্যতম গুণ।'
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের আরেক সাবেক ছাত্র, সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক আসাদুজ্জামান কাজল ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আরেফিন স্যার এর আলোয় পুরো সমাজ আজ আলোকিত। সমাজের উল্টো স্রোতে গিয়ে স্যার এমন এক নজির স্থাপন করলেন তাতে তরুণ সমাজ সৎ, নিষ্ঠাবান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও সমাজ গড়ার লড়াইয়ে নিয়োজিত হতে অনুপ্রাণিত হবে।'
(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসএএফ/জেবি)
http://www.dhakatimes24.com/2017/06/22/38000/ঢাবি-উপাচার্যের-নির্লোভ-চরিত্রে-সবাই-মুগ্ধ-অনুপ্রাণিত
দুঃখিত স্যার আরেফিন সিদ্দিক, খবরটা ভুয়া মনে হয়েছিল
কোটি টাকার অ্যালাউন্স নেননি ঢাবি উপাচার্য!
__._,_.___