Banner Advertiser

Thursday, August 31, 2017

[mukto-mona] ভারত : ‘ঈশ্বরের’ অধঃপতন ও গণতন্ত্রের মাধুর্য




ভারত

'ঈশ্বরের' অধঃপতন ও গণতন্ত্রের মাধুর্য

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৫
প্রিন্ট সংস্করণ

পালিত কন্যার সঙ্গে রাম রহিম সিংমাত্র কদিনের ব্যবধানে পরপর দুটি রায় নিয়ে আপামর ভারতবাসী এখনো আবেশে বুঁদ। একটা চমৎকার কনসার্ট অথবা খুব ভালো একটা সিনেমা কিংবা ধুন্ধুমার একটা খেলার রেশ যেমন অনেকক্ষণ ধরে জেগে থাকে, এই রায় দুটিও ঠিক সেই রকম। দিনভর এখনো শুধু এরই চর্চা।

প্রথম রায়টা সুপ্রিম কোর্টের, তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করা নিয়ে। দ্বিতীয় রায় দিয়েছে ভারতের তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, যাকে গোটা দেশ সিবিআই নামে জানে। এই রায় এমন একজনের বিরুদ্ধে, যাঁর বয়স ৫০, যিনি 'সচ ডেরা সওদা' নামে এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দীক্ষাগুরু এবং হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লিতে যাঁর লাখ লাখ ভক্ত। শুধু ভারত নয়, ভারতের খোঁজখবর বিদেশে যাঁরাই রাখেন, প্রত্যেকেই জানেন, এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু ১৫ বছর আগে তাঁরই আশ্রিতা দুই ভক্তকে ধর্ষণ করেছিলেন। তাঁদের একজন আবার সেই সময় ছিলেন নাবালিকা। সেই অপরাধে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত তাঁকে দোষী ঠাওরেছে। ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও বিপুল অর্থ জরিমানা হয়েছে সেই দুশ্চরিত্রের, সর্বধর্ম সমন্বয়ের বিজ্ঞাপনের মতো যিনি নিজেকে 'রাম রহিম ইনসান' বলে পরিচিত করেছেন। তিনি নাকি পৃথিবীর এই অংশে 'ঈশ্বরের দূত'। নিজের হাতে একটা বালায় তা খোদাই করেও রেখেছেন। 'মেসেঞ্জার অব গড', সংক্ষেপে 'এমএসজি'।

হায়, স্বঘোষিত ঈশ্বরের এমন অধঃপতনও হয়!

তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলাদেশিদের কাছে অবশ্যই এক শ্লাঘার কারণ হতে পারে। হওয়ারই কথা। কেননা, সেই কোনকালে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত। ১৯৬১-৬২ সাল। সেনাশাসক আইয়ুব খান গোটা দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ করে দিলেন। তার ১০ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। সাড়ে চার দশক কেটে গেছে। অনেক উথাল-পাতাল দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সে দেশের কোনো সরকারই আজ পর্যন্ত সেই ফরমান পাল্টে দেয়নি।তালাক পেতে গেলে সে দেশের নারী-পুরুষদের আজও নিয়মমতো নোটিশ পাঠাতে হয়, ৯০ দিনের মেয়াদ পেরোনোর আগে যা কখনোই কার্যকর হয় না।

মানবসম্পদ উন্নয়নের নানা মানদণ্ডের মতো এই ক্ষেত্রেও ভারতকে বহু পেছনে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশ জয়ীর হাসি হাসছে। শ্লাঘা তাদের হওয়ারই কথা। সত্যি বলতে কি, তিন তালাক নিয়ে ভারতের প্রগতিশীল মুসলমানেরা যখন উল্লসিত, নারী আন্দোলনের নেত্রীরা যখন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছেন, মানবাধিকারকর্মীরা যখন কোমর বাঁধছেন আরও বড় লড়াইয়ের জন্য, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পাঁচকুলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের অনামী বিচারপতি জগদীপ সিং তখনই সাহসে ভর দিয়ে রাম রহিম ইনসানকে ঈশ্বরের আসন থেকে একটানে ধুলোয় নামিয়ে আনলেন। সরকারকে হতবাক করে হরিয়ানার লাখ লাখ ভক্ত ততক্ষণে জায়গায় জায়গায় কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিয়েছে। ক্ষোভ যে কী ভীষণ হিংস্র হতে পারে, ভারতের মানুষ তা আরও একবার প্রত্যক্ষ করল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু ঘটল, আহত হলেন প্রায় আড়াই শ, জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেল কয়েক শ কোটি টাকার সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অতঃপর রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ানো শুরু করল সেনাবাহিনী।

দেশবাসী এই সময়েই জেনে গেল, এই লোকটার ভক্তকুলের সমর্থনের দিকে চাতক পাখির দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকা এ দেশের রাজনীতিকেরা বারবার তাঁকে তোয়াজ করেছেন। কখনো কংগ্রেস, কখনো বিজেপি, কখনোবা লোক দলের পান্ডারা ভোটের সময় মোসাহেবির দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। 'ধর্মগুরুও' সমর্থনের হাঁক পেড়ে গুছিয়ে নিয়েছেন নিজের আখের। রাজনীতিকদের তিনি ভৃত্য করে রেখেছিলেন। নইলে ধর্ষণ ও খুনের খাঁড়া ঘাড়ে নিয়ে এতগুলো বছর এমন নির্ভাবনায় কেউ কাটাতে পারতেন না! তিনি জানতেন, তাঁর হাতে রয়েছে ভোটের এক বিশাল সিন্দুক, যা যেকোনো দলকে তরাতে বা কাঁদাতে পারে।

ভারতের গো-বলয়ের রাজনীতিতে জাতপাত একটা বিরাট ব্যাপার। রাম রহিম ইনসানের উত্থান ও রমরমা অবস্থার পেছনেও রয়েছে সেই জাতপাতের এক নিপুণ সমীকরণ। ডেরা সচ সওদার 'শোকেসে' যা যা রয়েছে, তার ফিরিস্তি বেশ লম্বা। সব কটাই সেবামূলক। তারা বহু জায়গায় দাতব্য চিকিৎসালয় চালায়, বছরভর রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে, বিনা পয়সায় গরিব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করায়, নেশামুক্তি কেন্দ্রে ছেলেমেয়েদের রেখে নেশা ছাড়ায়, যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দান করে, বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে রোজগারের ব্যবস্থা করে দেয়।

রাম রহিমের অনুগামীরা যে 'সমাজ' নামক মইটার একেবারে প্রথম ধাপের বাসিন্দা, তা তাঁদের আর্থসামাজিক চেহারায় স্পষ্ট। উত্তর প্রদেশের এই জনতা কোল পেতে দিয়েছে দলিতকন্যা মায়াবতীকে। হরিয়ানায় দলিতকুল কিন্তু মায়াবতীর মায়ায় আবিষ্ট হয়নি। তারা মাথায় করে রেখেছে 'দলিত ভগবান' রাম রহিমকে। তিনিও ইচ্ছেমতো কৃপা বিলিয়েছেন কখনো কংগ্রেসকে, কখনো বিজেপিকে, কখনো-বা লোক দলকে। যে দল যখন ক্ষমতায় এসেছে, রাম রহিমের ইশারায় গোলামের মতো আচরণ করেছে তারা। তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত দলিত সমাজও কখনো মানতে চায়নি ভগবানের দূত অন্যায় কিছু করতে পারেন বলে। অথচ সেই ভগবান দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন আশ্রমে আশ্রিতা পছন্দের নারীদের, ইচ্ছেমতো খুন করিয়েছেন অবাধ্য লোকেদের এবং ধর্মের আড়ালে চালিয়ে গেছেন যাবতীয় অনৈতিক কাজ!

এটাও কিন্তু একধরনের ক্ষমতায়ন। ফুলেফেঁপে ওঠা মায়াবতীর বৈভবে উত্তর প্রদেশের দলিত সমাজ যেমন গর্ববোধ করে, হরিয়ানার দলিত সমাজও তেমনই গর্বিত থেকেছে রাম রহিমকে নিয়ে। হাকুচ দারিদ্র্য দেখা মায়াবতী রাজনীতিতে এসে রাতারাতি ক্রোড়পতি হয়ে গিয়ে যখন জনসভায় ঘোষণা করেন, 'একজন দলিতকন্যা ক্রোড়পতি হয়েছেন বলে ব্রাহ্মণ-ঠাকুরদের চোখ টাটাচ্ছে', আপামর দলিত তখন মায়াবতীর সেই ক্ষমতায়নকে নিজেদের জয় বলেই মনে করেছিল। দলিতদের সামাজিক মানসিকতায় সেই সদর্প ঘোষণা প্রবল নাড়া দিয়েছিল। সেই ঝাঁকুনি এই বিশ্বাস অর্জনে সাহস জোগায় যে দলিতরাও ধনী হতে পারে। সেই স্বপ্ন তাদের শ্লাঘার সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

উত্তর প্রদেশের মায়াবতী ও হরিয়ানার রাম রহিম সেই অর্থে এক ও অভিন্ন। মায়াবতী পরিচিতি রাজনীতির পোশাকে, রাম রহিম ভগবানের রংচঙে জোব্বায়। পার্থক্য এইটুকুই।

রাম রহিমের পদস্খলনের কারণগুলো জনসমক্ষে আনার কৃতিত্ব যাঁর, তাঁর নাম রামচন্দ্র ছত্রপতি। একদা অনামী এই সাংবাদিকের নাম আজ ভারতের ঘরে ঘরে। 'ভগবানের' মুখোশ খোলার সাহস দেখানো ও নৈতিকভাবে বিক্রি না-হওয়ার মাশুল তিনি প্রাণ দিয়ে গুনেছেন। অন্যজন অবশ্যই বিচারপতি জগদীপ সিং। মামলা লঘু করে দেখার জন্য রাজনৈতিক চাপ তাঁর ওপর কম আসেনি। তিনি কিন্তু টলেননি। এই কদিন ধরে কাগজে কাগজে এঁদের কথা পড়তে পড়তে বারবার মনে হয়েছে, শেষ বিচারে এটা ভারতীয় গণতন্ত্রেরই জয়। গণতন্ত্রের বিকাশ ও গুরুত্বও এখানেই। আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। অনেক কমজোরিও আমরা। কিন্তু গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে যা কিছু আমরা এতকাল ধরে জেনে ও শুনে এসেছি, রাম রহিমের অধঃপতনের কাহিনি সেই স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও ভয়হীন সংবাদপত্রকেই 'গ্লোরিফাই' করল। কলমের ধার কেন তলোয়ারের চেয়ে বেশি, কেন ভারতের বিচার বিভাগের ওপর ভরসা ও আস্থা রাখতে মানুষ এখনো ভালোবাসে, জোর করে তা বোঝানোর প্রয়োজন আর নেই। ভারতের গণতন্ত্রের মাধুর্য এটাই।

প্রাণিজগতের মধ্যে চটজলদি রং বদলানোর জন্য গিরগিটি অনন্য। রাম রহিম উপাখ্যান কিন্তু প্রমাণ করল, রাজনীতিকদের কাছে গিরগিটি ডাহা হারবে। ভগবানের দূতের কৃপা ও করুণা যাঁরা ভিক্ষা করে এসেছেন, আজ তাঁরাই রাতারাতি রং বদলে দিয়েছেন! কি কংগ্রেস, কি বিজেপি, শুরু হয়েছে চোখ ওলটানো ও ভগবানকে জেলে পোরার কৃতিত্ব দাবির প্রতিযোগিতা! এটাও ভারতীয় গণতন্ত্রের আর এক অনন্য রূপ!

রাম রহিমের জেলযাত্রার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সমাজে 'বাবাতন্ত্রের রমরমা' কিন্তু কমবে না। জোব্বার আড়ালে ধর্মগুরুদের একাংশের ভণ্ডামিরও শেষ হবে না। পি কে সিনেমায় আমির খান তো এই রকমই একটা ছবি এঁকেছিলেন! বহু মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা যাঁরা ধরেন, তাঁদের আঙিনায় রাজনীতির ব্যাপারীদের আনাগোনাও অব্যাহত থাকবে। একটা সময় পর রাম রহিম চলে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে। নতুন ঘটনা মলিন করে দেবে পুরোনো স্মৃতিকে।

তার আগে আমি দেখতে চাই, বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই খবরের কাগজটা, যার নাম পুরা সচ, যেখানে রাম রহিমের অপকর্ম ফলাও করে ছাপানোয় খুন হতে হয়েছিল আদর্শবাদী সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে, সেই কাগজটার পুনর্জন্ম ঘটেছে। উন্নয়নশীল ও তৃতীয় বিশ্বের সৎ সাংবাদিকদের কাছে সেটাই হবে এক বিরাট শ্লাঘা ও গর্ব।

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি।

 

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/1309651/'ঈশ্বরের'-অধঃপতন-ও-গণতন্ত্রের-মাধুর্য

০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭


সম্পর্কিত বিষয় :



মারাত্মক ছক রাম রহিমের, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর পরিকল্পনা ফাঁস
বাবার কাণ্ড কম নয়। বিচারে বড় সাজা যে হবে তা আগেই বুঝে গিয়েছিলেন। আর তা বুঝেই পালানোর 

















                                                        




__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___