জাতিসংঘের 'গণহত্যা রোধ ও এই অপরাধে শাস্তি' নামে গৃহীত আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশনে গণহত্যার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে: 'কোনো জাতিগত, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণভিত্তিক বা ধর্মভিত্তিক জাতিগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা অংশত ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক কার্যকলাপ গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে:
ক. উপরিউক্ত যেকোনো নাগরিক গ্রুপের সদস্যদের হত্যা; খ. তাদের শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত; গ. উপরিউক্ত যেকোনো গ্রুপের সম্পূর্ণ বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ; ঘ. উপরিউক্ত কোনো নাগরিক গ্রুপের সদস্যদের সন্তান জন্মগ্রহণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপ ও ঙ. এসব গ্রুপের সদস্যদের ছেলেমেয়েদের জোরপূর্বক তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্য গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্তির চেষ্টা।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সামরিক প্রশাসন গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত তালিকাভুক্ত প্রতিটি কর্মকাণ্ডের জন্য অপরাধী। একাত্তরে তাদের সে গণহত্যা এখন ব্যাপকভাবে নথিবদ্ধ ও প্রমাণিত। পাকিস্তান নিজে কোথাও তাদের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকার করেনি, তবে সে দেশের সরকারি হামুদুর রহমান কমিশন এ কথা মেনে নিয়েছে যে, ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী 'বোধগম্যের অতীত' এমন হত্যাকাণ্ড ও লুটতরাজ, সুনির্বাচিতভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন ও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীর ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো, যাঁর নির্দেশে একটি কপি ছাড়া এই প্রতিবেদনের সব কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়, তিনিও স্বীকার করেছেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ৬০ হাজারের মতো বাঙালি নিহত হয়।
১৯৭১-এর গণহত্যা বিষয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবশ্য কোনো বিতর্ক নেই। বাঙালি নিজে সে গণহত্যার সাক্ষী, সে গণহত্যার ক্ষত তারা এখনো বহন করে চলেছে। এমন অপরাধ বিনা বিচারে মেনে নেওয়া যায় না, সে কথা মাথায় রেখে স্বাধীনতার পর আইন পরিষদে গৃহীত জাতীয় সংবিধানে গণহত্যার অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এসবই জানা কথা, তবু সে পাঁচালি পারতে হচ্ছে, কারণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের চলতি ঘটনাবলিকে 'গণহত্যা' বলে চিহ্নিত করেছেন এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে তার জন্য দায়ী বলে দাবি করেছেন। কথাটা তিনি আবেগের বশে বলে ফেলেছেন বা এ নিয়ে খুব একটা ভাবনাচিন্তা করেননি, তা বলা যাবে না। তিনি একটি লিখিত বিবৃতিতে এই অভিযোগ তোলেন। তাঁর দলের নেতারা সে বিবৃতিকে এই সময়ের সবচেয়ে সেরা ও সর্বাপেক্ষা যুগোপযোগী পথনির্দেশনা হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্য কথায়, কাজটি করা হয়েছে আগ-পাছ বিবেচনা করে, দলের পাঁচ মাথা এক করে।
অনুমান করি, গণহত্যা শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হলেও সে শব্দের সংজ্ঞা খালেদা জিয়া জানেন না। এই শব্দের গুরুত্বও তাঁর জানা নেই। এর পেছনে যে ইতিহাস সে সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান নেই। আমার এই অনুমান সত্য হলে প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন একজন কী করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন অথবা দেশনেত্রী হিসেবে তাঁর দলের সদস্যরা কীভাবে মেনে নেন। এই দলে একাধিক ব্যারিস্টার রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন, সাংবাদিকও আছেন। তাঁরা কেউই গণহত্যার বিষয়ে কিছু জানেন না, তা বিশ্বাস করা কঠিন। অতএব, অধিক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে খালেদা জিয়া সবই জানেন এবং জেনেশুনেই একাত্তরের গণহত্যাকে এমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। ইতিহাসকে বিকৃত করাই তাঁর এ বক্তব্যের একমাত্র লক্ষ্য।
একাত্তরের গণহত্যা তুলনীয় হলোকস্ট নামে পরিচিত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধনযজ্ঞের সঙ্গে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত ১২ বছরে হিটলার বাহিনীর হাতে ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়। হিটলারের চেষ্টা ছিল পুরো ইহুদি জাতিকে নির্মূল করা। সারা বিশ্বের প্রতিটি ইহুদি এবং সব বিবেকবান মানুষ নিরন্তর চেষ্টায় রত হলোকস্টের স্মৃতি মানুষের বিবেকের আয়নায় ধরে রাখতে। এমন ঘটনা একবার ঘটেছিল, তা আবারও ঘটতে পারে। সে সম্ভাবনা রোধ করতেই প্রয়োজন প্রতিনিয়ত তাকে মনে রাখা ও ঘৃণা করা। ১৯৭১-এ বাংলাদেশেও ঘটেছিল আরেক হলোকস্ট। মাত্র নয় মাসে নিহত হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।
দেশের ভেতরে বা বাইরে যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন একাত্তরের গণহত্যাকে অবলীলাক্রমে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়, তার জবাবে কেবল নিন্দা করাই কর্তব্য নয়। আমাদের কর্তব্য এমন সব চেষ্টার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করা। সেই বোধ ও চেতনা থেকে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের নিন্দা করছি ও তা প্রত্যাখ্যান করছি। ১৯৭১-এ নিহত প্রতিটি মানুষের নামে শপথ নিয়ে বলছি, তাঁদের স্মৃতিকে অশুচিগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টাকে আমরা প্রতিহত করব।
গণহত্যা বিষয়ে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে সংঘটিত সহিংসতার সূত্র ধরে। একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে, তাকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তাকে গণহত্যা বলা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করে একদল লোক সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, পুলিশ ফাঁড়ির ওপর চড়াও হয়েছে, চোরাগোপ্তা গুলিবর্ষণে সাধারণ নাগরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। এসব ঘটনা ঘটেছে দেশের আটটি জেলায়। একটি ঘটনায় ছয়জন পুলিশকে হয় পিটিয়ে, নয় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশ পত্রপত্রিকায় এ ঘটনার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের দায়ী করা হয়েছে। কোনো কোনো সহিংসতায় বিএনপির সমর্থকেরাও অংশ নেয় বলে পত্রপত্রিকায় অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা এক শ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কমবেশি আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
যেকোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক, বিশেষত নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু। আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বদলে অথবা সে রায়ের প্রতিবাদে আইনসম্মত পথ অনুসরণের বদলে সম্পূর্ণ নিরপরাধ নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ ও তাদের হত্যার পথ বেছে নেওয়ায় জামায়াত ও তার সমমনা সব দল ও গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিন্দনীয়।
লক্ষণীয় যে, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে, একাত্তরের সঙ্গে তার এক জায়গায় মিল রয়েছে। একাত্তরের মতো এবারও দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এই আক্রমণের শিকার হয়েছে। সিলেট, বরিশাল ও নোয়াখালী থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে আমরা জেনেছি, জামায়াত ও তার সমর্থকদের আক্রমণে এসব জেলায় একাধিক হিন্দু গ্রাম জ্বলে-পুড়ে খাক হয়েছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ধ্বংস করা হয়েছে পূজামন্দির, লাঞ্ছিত হয়েছে দেবীমূর্তি। গাজীপুর, কাশিমপুর, গৌরনদীতেও মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, দুর্গা প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে সিলেটের বামনডাঙ্গা ও সুনামগঞ্জে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানত জামায়াত-সমর্থকদের হাতেই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ধরে নিই, তাঁরা সাঈদীর ফাঁসির রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু সে জন্য হিন্দুর মন্দির আক্রমণ করতে হবে কেন? হিন্দু গ্রাম কেন ভস্মীভূত হবে? আমরা জানি, একাত্তরের হিন্দু হত্যাকে পাকিস্তানিরা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করত। নাদির আলী নামের একজন পাকিস্তানি কর্নেল তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, সেনা কমান্ডারের নির্দেশ ছিল ফরিদপুরে, বঙ্গবন্ধুর প্রভাবিত এলাকায়, হিন্দু দেখলেই তাকে হত্যা করা। 'কিল অ্যাজ মেনি বাস্টার্ডস অ্যাজ ইউ ক্যান।' বিস্মিত হয়ে নাদির আলী পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, 'নিরস্ত্র মানুষকেও হত্যা করব?' অফিসার নির্বিকারভাবে জবাব দিলেন, 'কিল দি হিন্দুস। ইট ইজ অ্যান অর্ডার ফর এভরিওয়ান।' অন্য এক কমান্ডার হিন্দু হত্যার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, হিন্দুরা ইসলামের শত্রু। যত হিন্দু নির্মূল হবে, ইসলামের জন্য তা ততই নিরাপদ।
আশ্চর্য, এমন এক ধর্মের নামে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, যা বরাবর জোর দিয়ে এসেছে, যেকোনো মূল্যে, যেভাবে সম্ভব, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করো। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অনুসারীদের এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যাঁরা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে অথবা তাদের অধিকার হরণ করে, শেষ বিচারের দিন তিনি নিজে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। তিনি বলেছিলেন, 'মনে রাখবে, সংখ্যালঘুদের যারা আঘাত করে, তারা আমাকেও আঘাত করে।'
ঘাতক-দালালদের বিচারের প্রতিবাদে যারা আজ সহিংসতায় লিপ্ত, তাদের কাজ আর একাত্তরে পাকিস্তানি ঘাতকদের মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। একাত্তরের গণহত্যা ও ২০১৩-এর রাজনৈতিক সংঘর্ষকে যাঁরা এক চোখে দেখেন, তাঁরা মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা মনে রাখবেন, সে কথা ভাবাও বোধ হয় বাতুলতা।
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-06/news/334184
www.genocidebangladesh.org/
An online archive of chronology of events, documentations, audio, video, images, media reports and eyewitness accounts of the1971 Genocide in Bangladesh ...
The term genocide, defined as violence against a national, ethnic, racial or religious group with the intent to destroy it, entered common usage after World War II.
Definition: The word "genocide" was coined in 1943 by international human rights activists Raphael Lemkin, who felt that a new term was needed to describe the ... Dec 15, 2009 - Uploaded by BriTTo1sT
This Vedio Footage is From NBC news during liberation war of Bangladesh 1971 -NBC News report from 3/29 ... Dec 15, 2012 - Uploaded by smtanvirdu
Genocide Bangladesh 1971 in Memories Desh TV News. Jan 7, 2009 - Uploaded by yeezychris
The Bangladesh genocide in 1971 Some schoolwork.... i apologize for my voice (its not that shit normally :D ... Dec 15, 2009 - Uploaded by BriTTo1sT
This Vedio Footage is From NBC news during liberation war of Bangladesh 1971. -ABC News report from 11 ... Dec 15, 2012 - Uploaded by SockoTUBE
Looking back at Bangladesh Genocide (1971) More Info: http://www.genocidebangladesh.org/ http ... Dec 15, 2009 - Uploaded by BriTTo1sT
This Footage is From NBC news during liberation war of Bangladesh 1971. -CBS News report from 2/2/1972 ... Dec 15, 2009 - Uploaded by BriTTo1sT
This Footage is From NBC news during liberation war of Bangladesh 1971. -NBC News report from 1/7/1972 ... Apr 28, 2011 - Uploaded by bappy900
Bangladesh War of Liberation's 1971 Real Documentary . part - 02.flvby antuhin 1,052 views · 5:41. Watch ... Aug 23, 2009 - Uploaded by ShopnilBangla
For more visit http://www.shopnil.com )It all started with Operation Searchlight, a planned military pacification ...