Banner Advertiser

Monday, May 20, 2013

[mukto-mona] [Mukto-Mona Writers' Corner] TITLE

Mukto-Mona Writers' Corner has posted a new item, 'Shahbag movement - Rebuilding
Bengali Identity (by Asif Mohiuddin)'

[ Moderator's Note: Asif Mohiuddin who is currently in prison,  considered as
one of the most outspoken atheist and humanist bloggers of Bangladesh. His
writing—which was heavily critical of religious dogma, bigotry and
superstition—and his political activism including the Jagannath University
protests angered the government, as well as marked the beginning of the threats
he [...]

You may view the latest post at
http://mukto-mona.com/wordpress/?p=2243

You received this e-mail because you asked to be notified when new updates are
posted.
Best regards,
Mukto-Mona Writers' Corner
charbak_bd@yahoo.com



------------------------------------

****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190Yahoo! Groups Links

<*> To visit your group on the web, go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/

<*> Your email settings:
Individual Email | Traditional

<*> To change settings online go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/join
(Yahoo! ID required)

<*> To change settings via email:
mukto-mona-digest@yahoogroups.com
mukto-mona-fullfeatured@yahoogroups.com

<*> To unsubscribe from this group, send an email to:
mukto-mona-unsubscribe@yahoogroups.com

<*> Your use of Yahoo! Groups is subject to:
http://docs.yahoo.com/info/terms/

Re: [mukto-mona] Re: বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও জঙ্গিত্ব : যোগসূত্র কোথায় ?



"Those who equate secularism with lack of religiosity are idiots of high order."
I think, they do it intentionally. These scoundrels love secularism only in infidel countries! The motive is obvious of course.
-SD

 
"I speak for the trees, for the trees have no tongues."
-Seuss



From: Kamal Das <kamalctgu@gmail.com>
To: mukto-mona@yahoogroups.com
Sent: Monday, May 20, 2013 9:23 PM
Subject: Re: [mukto-mona] Re: বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও জঙ্গিত্ব : যোগসূত্র কোথায় ?

 
Those who equate secularism with lack of religiosity are idiots of high order.  Mahbubullah a closet reactionary in the leftist garb is no exception.  The Govt. of Bangladesh at Theater Road was coerced by Delhi to accept Secularism and Socialism in their future constitution as precondition to support for liberation.  The ruling circle in Bangladesh never accepted these principles.  The elite in this land was a product of the two nation theory.  In spite of the so called liberation, the civil and military bureaucracy remained Pakistani in nature generating all of the following political crisis.


2013/5/20 Shah Deeldar <shahdeeldar@gmail.com>
 
"আমাদের আপত্তি অবশ্য এই কথায় যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম নিজেদের ধর্মহীন করার চেতনা নিয়ে। তাদের ওই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে 'ধর্মহীনতা', সর্বৈব মিথ্যা এবং একটি অসত্ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা করেছি, তারা কি ভুল দেখেছি বা করেছি? আজ পর্যন্ত কোনো সেক্টর কমান্ডারকে বলতেও শুনিনি যে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন দেশকে সেক্যুলার বা ধর্মহীন করতে।"

Why bring this issue when the man knows he is only spinning the issue to muddy the water? As if somebody is imposing something very draconian on the majority Bangladeshis? Islam is about to vanish if country constitutionally becomes a secular country? Well, Christianity has not disappeared from the US or EU. Moreover, Bangladeshis love to settle in those infidel countries if they had a faintest chance. So much love for the religion and country? Please stop this nonsense! Insult us no more!

If every citizen get their equal rights irrespective to their birth and religions, why this should be a concern for our fundamentalists? As far as I can see, the concern is pretty much bogus. When I see these Bangladeshi religious scoundrels are voting for secular Democrats for their equal rights in the US, they love to forget that there are minorities in Bangladesh who might be expecting the similar treatment from their state too. If Mr. Hussaini would love to have an Islamic state in Bangladesh, would not he be voting for Christian Rights in the US? Ironically, he does not! Isn't that hypocritical paradox? Good for goose but not so good for gander?
-SD  


2013/5/19 Rakhal Bandho <rakhalbandho@gmail.com>
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই ধর্মহীনতা ছিল না


By: শাহাদাত এইচ সোহরাওয়ার্দী




»
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই ধর্মহীনতা ছিল না এবং কখনোই তা হওয়ারও নয়। বাংলাদেশের আপামর জনগণ অবশ্যই সেজন্য যুদ্ধ করেনি। এদেশের এক শতভাগ মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে অর্থাত্ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান সবাই যার যার ধর্মে বিশ্বাসী। দেশের নব্বইভাগ মুসলমান, ১০ ভাগ অন্য সম্প্রদায়ের। এ দেশটির ৯৮ ভাগ নাগরিক বাংলায় কথা বলে; আর দুইভাগ বলে অন্য ভাষায়। জাতীয়তায় ১০০ ভাগ মানুষই বাংলাদেশী। এখানে সবাই ধর্মপরায়ণ, অসাম্প্রদায়িক, উদার, সংগ্রামী ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন। যুগ যুগ ধরে রাখা এই গুণাবলীগুলো শুধু ধারণ ও লালনই করেনি, সব সময় তা ইতিহাসের ক্রান্তিকালে সমুন্নত রেখেছে এবং তার প্রমাণও দিয়েছে সত্যনিষ্ঠভাবে। এ হাজার বছরের ইতিহাস। প্রখ্যাত সাংবাদিক এরশাদ মজুমদারের উদ্ধৃতি এখানে প্রণিধানযোগ্য হবে বলে মনে করি। তিনি তার ঐতিহাসিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের আলোকে বলেন, 'জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে আমাদের বায়া দলিলকে সমুন্নত রাখতে হবে; এই দলিল বিকৃত হওয়ার দলিল নয়। আসল দলিল ছাড়া নকল বা বিকৃত দলিল দিয়ে নিজেদের চেতনা কেন, অস্তিত্বই রক্ষা করতে পারব না।'


সুতরাং আজকাল অনেকেই যারা বলছেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল দেশে 'ধর্মহীনতা' আনয়ন করা, তারা মিথ্যে বলছেন। যারা এসব কথা বলছেন তারা ১৯৭১ সালের আগেও ধর্মকে মুক্তমনের ও প্রগতির বিরোধী মনে করতেন এবং এখনও তাই মনে করেন ও লালন করেন। তাদের সংখ্যা কম হলেও বেশ শক্তিশালী। তাদের এ ধারণাকে বিদেশি একটি চক্র ভাষা ও কৃষ্টির মিষ্টি কথা বলে ও সহানুভূতির দৃষ্টি দিয়ে আমাদের ওই সব ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তা তারা করুন, আমাদের তাতে আপত্তি করার সুযোগ নেই।


আমাদের আপত্তি অবশ্য এই কথায় যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম নিজেদের ধর্মহীন করার চেতনা নিয়ে। তাদের ওই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে 'ধর্মহীনতা', সর্বৈব মিথ্যা এবং একটি অসত্ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা করেছি, তারা কি ভুল দেখেছি বা করেছি? আজ পর্যন্ত কোনো সেক্টর কমান্ডারকে বলতেও শুনিনি যে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন দেশকে সেক্যুলার বা ধর্মহীন করতে। যদিওবা বর্তমানে ওদের কয়েকজন দলীয় বৃত্তের আবরণের কারণে অস্ফুট স্বরে তা বলে থাকেন। যারা সেক্যুলার বা ধর্মহীন, তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবে দেখেন এবং সবার ওপর তা চাপিয়ে দিতে চান। তাদের সংখ্যা এখন এই ৪২ বছরে কিছুটা বাড়লেও সে সংখ্যা ১৯৭১ সালে ছিল অত্যন্ত নগণ্য। গত ৪২ বছরে তাদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কিছুটা বেড়েছে শুধু শহুরে বিত্তবান যুবক যুবতীর মাঝে বিদেশি চক্র ও তাদের দালালদের জোর প্রপাগান্ডার কারণে। তাও আবার ১৯৯০ সালের পর থেকে এর আধিক্য বেশি দেখা যায়।


মুক্তিযুদ্ধ কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে সেক্যুলার বানানোর যুদ্ধ ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ধর্মহীন বা ধর্মবিরোধী ছিল না। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে কিছু সংখ্যক বাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বলে আসছেন 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'। এরা মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই ধর্মহীন ছিল বিধায় 'ধর্মহীনতাকেই' মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন চেতনা বানাতে যুগপত্ভাবে কসরত করে যাচ্ছেন, মিথ্যার বেসাতি দিয়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কোনো প্লান প্রোগ্রাম করে শুরু হয়নি। আর যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ প্লান প্রোগ্রাম করে শুরু হয়নি তাদের অভিব্যক্তি সর্বৈব উদ্দেশ্যও ভীষণ অযৌক্তিক।


১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কয়েক বছরের মধ্যেই অসাধু/অশুভ নেতৃত্ব যার মাঝে আমাদের দেশীয় কিছু কুসন্তান পাকিস্তানের গদ্দিনশীন হন তারা পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলাকে বৈমাত্রেয়সুলভ ব্যবহার ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলের জনগণের মনে ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং স্বায়ত্তশাসনের কথা উঠতে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম বলিষ্ঠভাবে স্বায়ত্ত শাসনের কথা ওঠে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি ও নেজামে ইসলাম পার্টির সমন্বয়ে, ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি-দাওয়া নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিল। ২১ দফাতেই পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসনের কথা বলা হয়েছিল তখনকার অনির্বাচিত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে। দুঃখের বিষয় সেই সময় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জন্য। যুক্তফ্রন্ট মাত্র কিছুদিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। যুক্তফ্রন্টের মৃত্যু হলেও ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রেও শাসনভার পেয়েছিল তখনকার রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন করে। আওয়ামী লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় প্রথমবারের মতো পাকিস্তান একটি সংবিধানও পায়। সেই সংবিধান দেয়ার পরই আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন পূর্ববাংলা বা পূর্বপাকিস্তান শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেছে। কিন্তু পূর্ববাংলার লোক তা বিশ্বাস করেনি এবং তা পায়ওনি। তারপর ধীরে ধীরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি বেশ জোরালো হতে থাকে। তবে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব কর্তৃক ছয় দফা দাবি তোলার পর সমগ্র বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসনের প্রতি একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।


স্বায়ত্তশাসনের প্রচারণার সময় কখনও আওযামী লীগ নেতার (শেখ মুজিব) কাছ থেকে বা অন্য কোনো জাতীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে যেমন মওলানা ভাসানী, মুজাফফর আহমদের কাছ থেকে একবারের জন্য হলেও সেক্যুলার বা ধর্মহীনতার কথা শোনা যায়নি। তখনও মুষ্টিমেয় বাম যারা ছিলেন, এমত পোষণ করলেও মুখে একবারও তা আনয়ন করেননি। তবে বামদের প্রতি জনগণর আস্থা ছিল একেবারে শূন্য। সেই সময়ের পত্রপত্রিকার সঙ্গে যাদের সম্পর্কে ছিল তারা সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করবেন। আর এই কথা আমি হলফ করে বলতে পারি।  বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহাসিকভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে ছয় দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আশায় বুক বেঁধেছিল এবং তার বাস্তবায়ন দেখতে নির্বাচনের সময় তা প্রকাশ করেছিল। তারা তখনকার আঙ্গিকে দেশকে সমতার দেশ হিসেবে দেখতে ও পেতে চেয়েছিল। রায় পাওয়ার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ বিধি ছিল বাম। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে ক্ষমতায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বেদনায় এবং সর্বোপরি ১৯৭১-এর মার্চে পাক-বাহিনীর বিধ্বংসী আক্রমণ যা তাদের সম্পূর্ণরূপে খতম করার বাসনা নিয়ে শুরু হয়েছিল তা প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে। একটা কথা আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, যদি সেই দিন অর্থাত্ ২৫ মার্চে সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচনে জয়ী নেতার (শেখ মুজিবের) কাছে ইয়াহিয়া শাসনভার ছেড়ে দিতেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না এবং এখন যে চেতনার কথা গায়ের জোর দিয়ে বলা হচ্ছে সেটা অর্থহীন হয়ে যেত। বিশ্বাস করুন, শেখ মুজিব অত্যন্ত উদার ও আনন্দচিত্তে দেশের শাসনভার গ্রহণ করতেন। কারণ তিনি দেশদ্রোহী ছিলেন না এবং দেশদ্রোহী হতে চাইতেন না। যুদ্ধকালীন সময়ের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যখন মার্চের পঁচিশ তারিখ রাতে তার কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা চাইতে গিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, 'তোরা কি আমাকে দেশদ্রোহী বানাতে চাস?' কারণ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সব নেতাই পাকিস্তানের কাঠামোর ও ইসলামের কাঠামোর বাইরে বা বিপরীতে গিয়ে কিছুই করবেন না, নির্বাচনের আগে এটাই ছিল বজ্র শপথ এবং দেশের আপামর জনতাও এ জন্যই তাদের প্রতি রায় দিয়েছিলেন।


শাসনক্ষমতা পাওয়ার পর শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের অন্য প্রদেশের নেতাদের সঙ্গে মিলে দেশের সব প্রদেশকে স্বায়ত্ত শাসন দিতেন এবং বাংলাদেশের জন্যও নিতেন। এটাই ছিল নির্বাচনের প্রতিজ্ঞা।  ২৫ মার্চ পর্যন্ত ত্রিপক্ষীয় যে আলোচনা চলেছিল ১৪ মার্চ থেকে, সেখানে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশে নির্বাচনে জয়ী ভুট্টো সাহেব ছিলেন খুবই কর্তৃত্ব পরায়ণ। এখানে বলে রাখা সমীচীন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদিও পাকিস্তানের ৩০০শ' আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়েছিলেন, তা শুধু তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে আলোচনার মধ্যে একটি তৃতীয় শক্তি অর্থাত্ সেনাবাহিনীর আবির্ভাব হয়। তৃতীয় শক্তির কঠিন অনমনীয়তাই সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ করে দেয়। আমরা যারা সেদিন যুবক ছিলাম, ১৯৭১ সালের মার্চকে সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন ও পর্যবেক্ষণ করেছি অত্যন্ত সুচারুভাবে, তাদের ধারণা যুগপত্ভাবে এ রকমই। ২৫ মার্চ দুপুর পর্যন্ত শেখ সাহেব সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি ২৬ মার্চের জন্য শান্তিপূর্ণ হরতালও ডেকেছিলেন ২৪ মার্চে, যাতে তখনকার উত্তাল জনতা শান্ত থাকে। জেনারেল ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সারল্যের সঙ্গে বেঈমানী করে পূর্ব বাংলার নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে ইসলামাবাদ চলে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের রাতেই ভুট্টোও ঢাকা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।


তখন স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা ছিল না। দেশের সেই ক্রান্তিকালে যখন সব রাজনৈতিক নেতারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মেজর জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ২৬ মার্চে। মেজর জিয়ার ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশবাসী জানতে পারেনি, পূর্ববাংলার ভাগ্যে কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। শেখ মুজিবকে সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাত ১২টার দিকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ নেতারা কোনো উপায় না দেখে দিশেহারা হয়ে ভারতের দিকে চলে যান। কারণ পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীর বর্বরতায় দেশের জনগণের ও নেতাদের আর কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে নির্বিচারে সারা ঢাকায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। জিয়ার ঘোষণার পর দেশবাসীর বুকে সাহস আসে, তারা আস্থা পায়। বুঝতে পারে যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করা শুরু হয়ে গেছে। শুরু হলো সাধারণ মানুষের মনে মুক্তিযুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় মূলত মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই। প্রথমে অসংগঠিতভাবে এবং পরে প্রবাসী সরকার গঠিত হওয়ার পর পুরো মাত্রায় সুসংগঠিতভাবে। এখানে অবশ্য বলতে হবে যে ওই মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল উসমানী। তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতাও ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা, সেক্টর কমান্ডাদের নেতৃত্বে ৭-৮ মাসের মাথায় পাকিস্তানি হানাদারদের কাবু করে ফেলে। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়। লাখ লাখ বাঙালি তাদের অমূল্য জীবন দেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। অপরদিকে ভারত যুদ্ধ শুরু করে ৩ ডিসেম্বর থেকে, পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ১৬ ডিসেম্বর।


যা হোক, বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। আমাদের দেশ স্বাধীন। এটা সত্য যে এই দেশকে স্বাধীন করতে এই দেশেরই কিছু সন্তান বাধা দিয়েছে। কোনো স্বাধীনতার লড়াইতে পুরো দেশ একত্রে কাজ করে না। ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন কি ভারতের সব জনগণ এর সঙ্গে ছিল? সংখ্যায় কম হলেও ইংরেজদের শাসন বজায় রাখতে একটা মহল সচেষ্ট ছিল। পাকিস্তানের তদানীন্তন ভূখণ্ডের সব মানুষ কি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? অবশ্যই নয়? আমাদের এই প্রান্তের অনেক সন্তানই তখন মুসলিম লীগকে সমর্থন না দিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান হিন্দুস্তান হওয়ার পর সবাই যার যার মতো করে পাকিস্তানি বা হিন্দুস্তানি হয়ে গেছেন। স্বাধীনতার বিজয় সবাই আনে না, বরং কেউ কেউ বাধা দেয়। কিন্তু স্বাধীনতার বিজয় সবাই উপভোগ করে। এটাই নিয়ম, এটাই সর্বজনীন।


পরিশেষে উপসংহারে আমি দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো কাল্পনিক চেতনার যুদ্ধ ছিল না। ছিল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, স্বাধিকার অর্জনের যুদ্ধ, ছিল সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ, ছিল আপামর অসাম্প্রদায়িক জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধ। ওই সব চেতনার অনেকটুকুই এখনও আমাদের করতলগত হয়নি শুধু ভৌগোলিক সীমা-রেখা ছাড়া। শুধু ভৌগোলিক সীমা-রেখা থাকা, একটা সরকার থাকা ও একটা পতাকা থাকাতেই স্বাধীন হয়েছি এবং চেতনা পেয়েছি বলা যায় না, যদি না সেই দেশের সব জনগণ ধর্ম, বর্ণ, মত ও ভাষা নির্বিশেষে একটি মেল্টিং পটে রূপান্তরিত হয়। আমাদের ব্যর্থ করতে আমাদের চারপাশে শকুনিরা লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এবং সূক্ষ্মভাবে চেতনার ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট আছে— তাদেরই এজেন্ট দিয়ে। ভেদাভেদ ও কাল্পনিক চেতনা পরিহার করে চলুন সবাই বাংলাদেশী হই 'বায়া দলিল' মোতাবেক। অর্থাত্ আমার এক সময়ের রাজনৈতিক গুরু, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব উল্লাহ সাহেবের কথায়, 'আমাদের সবাইকে দল, মত নির্বিশেষে বাংলাদেশপন্থী হতে হবে, এখানে যে যে ধর্মের, বর্ণের, ও ভাষারই হইনা কেন, ধর্মহীন হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই।' এতেই আমাদের সবার মঙ্গল নিহিত। চলুন এগিয়ে চলি সামনের দিকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে।


লেখক : ওয়াশিংটন প্রবাসী রাজনৈতিক বিশ্লেষক


Source link: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/03/14/191905#.UUEQzVdtY5M 



2013/5/19 Suhas Barua <suhasboston@gmail.com>
বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও জঙ্গিত্ব : যোগসূত্র কোথায় ?
: অধ্যাপক আবুল বারকাত
http://www.somewhereinblog.net/blog/mazharsircar207/29646900

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বহির্প্রকাশ বহুমুখী : অর্থনীতির দুর্বৃত্তরা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান এমনভাবে দখল করেন যেখানে সংবিধানের বিধি মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালন অসম্ভব। তারা মূলধারার ক্ষমতার রাজনীতি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিকে ফান্ড করেন; তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন; তারা রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ নির্ধারণ ও ভোগ করার বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করেন; তারা লুট করেন সবকিছু জমি, পানি, বাতাস এমনকি বিচারের রায়; তারা ধর্মের লেবাস যত্রতত্র ব্যবহার করেন স্বধার্মিকতা প্রদর্শনে হেন কাজ নেই যা করেন না; জাতীয় সংসদের আসন কিনে ফেলেন তারা জানেন স্থানভেদে ২ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জাতীয় সংসদের একটি আসন ক্রয়/দখল সম্ভব এবং সেটা তারা প্রাকটিস করেন (ব্যবসায়ীরা ছিল ১৯৫৪ -এর সংসদে ৪% আর এখনকার সংসদে ৮৪%, অবশ্য 'ব্যবসাটা' যে কি তা নির্বাচন কমিশনও সঠিক জানে না)। অর্থনীতি ও রাজনীতির এসব দুর্বৃত্তদের প্রতি মানুষের আত্মার গভীরে অনাস্থা আছে; মানুষের সামনে এখন আর রাজনৈতিক বলে কিছু নেই এসব প্রবণতা যে হতাশা-নিরাশা সৃষ্টি করেছে সেগুলোই হয়ে দাঁড়িয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের সংগঠন বিস্তৃতির সহায়ক উপাদান।
প্রধানত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে মানুষ তথাকথিত গণতন্ত্রী রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন/হারিয়েছেন, আর প্রগতির ধারাও সেই সাথে তাল মিলিয়ে বিকশিত হয়নি/হচ্ছে না। মানুষ যখন ক্রমাগত বিপন্ন হতে থাকেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারান এবং আস্থাহীনতা যখন নিয়মে পরিণত হয় তখন ব্যাপক সাধারণ জনমানুষ উত্তরোত্তর অধিক হারে নিয়তি নির্ভর হতে বাধ্য হন। আর এ নিয়তি নির্ভরতা বাড়ছে কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে যেখানে ৬০ ভাগ কৃষকই এখন ভূমিহীন, যে কৃষি ভিত্তির উপরই এদেশে বিকশিত হয়েছে ধর্ম। এ ভ্যাকুয়াম-টাই ব্যবহার করছে মৌলবাদী রাজনীতি। তারা চোখের সামনে দেখেছেন কেমন করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এমনকি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকাল গণতন্ত্র চর্চার স্থান ভারতেও দু'চারটে সংসদ আসন দখল করে ১০/১৫ বছর পরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। অন্যান্য অনেক উদাহরণসহ এটাও বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণে তাদের স্বপ্নকে বাস্তব করবে বলে তারা মনে করে। আর তারা স্পষ্ট জানে যে দলীয় রাজনীতিকে স্বয়ম্ভর করতে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্ত ভীত প্রয়োজন। অন্যথায় ক্যাডারভিত্তিক দল গঠন ও পরিচালন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মডেল চর্চা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে এখন ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির সহায়তায় মৌলবাদ যেসব আর্থ-রাজনৈতিক মডেলের তুলনামূলক কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তার মধ্যে ১২-টি বৃহৎ বর্গ হল নিম্নরূপ : আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঔষধ শিল্প ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ধর্ম প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ-পরিবহন ব্যবস্থা সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট, সংবাদমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুুক্তি, স্থানীয় সরকার, বেসরকারী সংস্থা, বাংলাভাই জাতীয় প্রকল্পভিত্তিক কার্যক্রম এবং কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সমিতির কর্মকা- কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান (ছক ১ দ্রষ্টব্য)। এসব প্রতিষ্ঠানের সব মুনাফা অর্জনযোগ্য প্রতিষ্ঠান নয় (যেমন স্থানীয় সরকার ও পেশাজীবী সমিতি)-এক্ষেত্রে ক্রস-ভর্তুকি দেয়া হয় এবং সেই সাথে মুনাফা-অযোগ্য প্রতিষ্ঠানেও তারা উচ্চ মুনাফা করেন (যেমন বাংলাভাই জাতীয় প্রকল্প যেখানে ভূমি খাজনা, চাঁদাবাজি প্রতিষ্ঠা করা হয়; এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে মাদ্রাসাতেও অত্যুচ্চ মুনাফা অর্থাৎ বছর শেষে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হয়)। মানুষের ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে মুনাফা অযোগ্য প্রতিষ্ঠানে মুনাফা সৃষ্টির তুলনামূলক সুবিধা তাদের আছে।
মৌলবাদের অর্থনীতির উল্লিখিত মডেলসমূহের ব্যবস্থাপনা-পরিচালন কৌশল সাধারণ ব্যবসায়ের নীতি-কৌশল থেকে অনেক দিক থেকে ভিন্ন। তাদের অর্থনৈতিক মডেল পরিচালন কৌশলের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ: (১) প্রতিটি মডেলই রাজনৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ উচ্চমানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কর্তৃক রাজনৈতিক লক্ষ্যার্জনে নিয়োজিত; (২) প্রতিটি মডেলে বহুস্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যেখানে নির্দিষ্ট স্তরের মূল নীতি-নির্ধারণী কর্মকা- রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনস্থ; (৩) বিভিন্ন মডেলের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন থাকলেও উচ্চস্তরের কো-অর্ডিনেটরদের পরস্পর পরিচিতি যথেষ্ট গোপন রাখা হয় (এক ধরণের গেরিলা যুদ্ধের রণনীতি বলা চলে); (৪) প্রতিটি মডেলই সুসংবদ্ধ-সুশৃংখল (সামরিক শৃংখলার আদলে) ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠান; (৫) যে কোনো মডেল যখনই আর্থ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে অধিক ফলপ্রদ মনে করা হয় তা যথাসাধ্য দ্রুত অন্যস্থানে বাস্তবায়িত (ৎবঢ়ষরপধঃব) করা হয়। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে মৌলবাদীরা তাদের অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়নে "রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে" রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ সচেতন এবং তা বাস্তবায়নে বিজ্ঞানকে তারা তাদের মত করে ঢেলে সাজাতে সচেষ্ট। এ থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে মৌলবাদীর মূলে আছে ভীতি ও আবেগ। আর এ আবেগ আসে ক্রমবর্ধমান অসমতা থেকে তথাপি এসব আবেগানুভূতি কেবল সেকেলে এবং পিছুটান নয় বরং তারা সৃজনশীল এবং 'আধুনিকতা'র ধারক বাহকও।মৌলবাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্ণয়ের সর্বোত্তম 'বিকল্প মানদ-' হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকা-ে ধর্মীয় উগ্রবাদের সম্পৃক্ততা ও ব্যাপকতাকে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। বিগত ১৯৯৯-২০০৫ সময়কালে বাংলাদেশে এ ধরনের ধর্মীয় উগ্রবাদী কর্মকা-ের বিশ্লেষণে দেখা যায় ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীল এক চিত্র। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'লুক্কায়িত থেকে প্রকাশ্য' পদ্ধতি, 'একমুখী হাতিয়ারের পরিবর্তে বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার।' এসবের বিশ্লেষণে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সুদূরপ্রসারী কিছু উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে :
১. রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দখলের লক্ষ্যে সংস্কৃতি ধারায় পরিবর্তন আনা যা তাদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু সরকারি প্রশাসন যন্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ (যেমন : জেলা প্রশাসক), ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন সাংস্কৃতিক কর্মকা- যেমন থিয়েটার, প্রক্ষাগৃহ, জনসমাবেশ, কমিউনিটি সেন্টার, সুফি-সমাধিস্থল, লাইব্রেরীসহ বিচার বিভাগ (আদালত)।
১. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার আসীন থাকলে এ ধরনের সন্ত্রাসী প্রবণতা হ্রাস পায়।
২. ডানপন্থী বা ধর্মনির্ভর দলের সরকার ক্ষমতাসীন হলে বিস্তার ঘটে এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা।
৩. তাদের এ অপতৎপরতা বাধাগ্রস্ত না হলে সন্ত্রাসী কর্মকা- উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাদের ভূমিকা না থাকলেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কোনো সরকার যদি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, উগ্রবাদীরা তখন তাদের 'শক্তি সামর্থ্যকে শাণিত করে।'

উৎস : মিডিয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লেখক কর্তৃক সংকলিত। বিস্তারিত দেখুন: সংবাদ ৭,৮ মার্চ ১৯৯৯, ইত্তেফাক ৯ অক্টোবর ১৯৯৯; সংবাদ ২১ জানুয়ারী ২০০১ এবং জনকণ্ঠ ২২ জানুয়ারি ২০০১; প্রথম আলো ১৫ এপ্রিল এবং যুগান্তর ১৬ এপ্রিল ২০০১; ইত্তেফাক ৪ জুন এবং সংবাদ ৫ জুন ২০০০; আজকের কাগজ এবং ভোরের কাগজ ১৭ জুন ২০০১; জনকণ্ঠ ১৭ নভেম্বর ২০০১; জনকণ্ঠ ২২ এপ্রিল ২০০২; ডেইলি স্টার এবং বাংলাদেশ অবজারভার ৮ ডিসেম্বর ২০০২; ডেইলি স্টার ১৮ জানুয়ারি ২০০৩; ডেইলি স্টার ১৩ জানুয়ারি ২০০৪; ইত্তেফাক ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৪; প্রথম আলো এবং যুগান্তর ২২ মে ২০০৪; ইত্তেফাক, প্রথম আলো , যুগান্তর, জনকণ্ঠ ২২ আগস্ট ২০০৪; আজকের কাগজ, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ ২৮ জানুয়ারি ২০০৫, সংবাদ, ভোরের কাগজ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৫; ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ অবজারভার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং সকল প্রধান দৈনিক ১৮-১৯ আগস্ট ২০০৫; জনকণ্ঠ ৪,৫ অক্টোবর ২০০৫; সংবাদ ১৫ নভেম্বর ২০০৫, ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ভোরের কাগজ ৩০ নভেম্বর ২০০৪; জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, যুগান্তর ২ ডিসেম্বর ২০০৫; সংবাদ, জনকণ্ঠ, যুগান্তর ৯-১০ ডিসেম্বর ২০০৫।

বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট রাজনীতির বিস্তৃৃতি ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা বলা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে স্বাধীনতার বিজয় নিয়ে আমরা যথেষ্ট মাত্রায় আত্মতুষ্ট ছিলাম। সঙ্গত কারণও ছিল। জাতি হিসেবে আমরা এইই প্রথম দেখলাম যে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাÑ এ চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশগঠন ও রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। মূল স্রোতের ধর্মীয় চেতনা যদি উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী হয়ে থাকে এবং তা বংশপরম্পরা মানস-কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র গঠনের ঐ চার মূলনীতিও আমাদের সুপ্ত আকাঙ্খার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। আমাদের আত্মতুষ্টির কারণ এও হতে পারে যে সম্ভবত তৃতীয় বিশ্বে এবং বিশেষত মুসলিম প্রধান দেশসমূহের মধ্যে আমরাই প্রথম, যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে ( ধর্মহীনতা নয়) সংবিধানে (১৯৭২-এর) অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম (অবশ্য পরে তা বাতিল হতে হতে 'ইসলাম হইবে রাষ্ট্রধর্ম'-তে রূপান্তরিত হয়েছে)। আমাদের সুপ্ত ইচ্ছা-আকাঙ্খার কাগুজে প্রকাশ-এ আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম।

ধর্মীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি (যাদের ক্ষমা করে আমরা ইসলাম ধর্মের মূল স্রোতের বাহক পরিগণিত হতে পারি) পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল যে রাষ্ট্র যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাতে মানুষের জীবনে মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটবে না; তারা ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ করতে পেরেছিল যে এ মানুষই কয়েক বছরের মধ্যে চলমান নেতৃত্বের প্রতি মোহহীন হবে, আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তাদের (মুক্তিসংগ্রামে পরাজিতদের) বিজয় নিশ্চিত হবে। সমসাময়িককালে প্রগতির গতি এগুলো ঢিমে তালে আর তারা লক্ষ্যার্জনে জোরকদমে অথচ বেশ গোপনে এগুবার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করল (যেমন গ্রাম থেকে শহর দখল; কর্মক্ষেত্রে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিচিতি গোপন রাখা ইত্যাদি)। যে প্রস্তুতির ফলশ্রুতিই হলো গ্রাম দখল (ডিপ টিউবওয়েলকেন্দ্রিক সমিতি, কৃষক সমিতি, মসজিদ-মাদ্রাসা মাধ্যম যাই হোক না কেন), ধর্ম প্রতিষ্ঠানে একচ্ছত্র অবস্থান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, অর্থনৈতিক কর্মকা-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান দখল, আর বেসরকারি সংস্থার নামে ব্যাপকভাবে গ্রাম ও শহরের স্বল্পবিত্ত-দরিদ্র মানুষের মধ্যে অবস্থান গ্রহণ ও তা সুদৃঢ়করণ। এ কৌশল কার্যকর করতে মৌলবাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে তেমনি এ কৌশল অবলম্বনের ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানও শক্তিশালী হয়েছে। এ নিরিখে ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতৃত্ব যত না ভাববাদী তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বাস্তববাদী—বস্তুবাদী। গত অর্ধ শতাব্দীর এ প্রক্রিয়ায় এখন তাদের অর্জনটা এমন যে একদিকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ আসনে তারা গড়ে ১৫,০০০ ভোট সংগ্রহে সক্ষম আর অন্যদিকে নির্বাচনে কোটি টাকার কালো টাকা ও প্রয়োজনীয় পেশী শক্তি সরবরাহের ক্ষমতাও তাদের এখন আছে। আর অন্যদিকে তারা এখন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই অতি উচ্চমাত্রার সেনা-সূক্ষ্মতাসহ সারাদেশে সশস্ত্র কর্মকা- পরিচালনে এবং কল্পনাতীত হত্যাযজ্ঞ সাধনে সক্ষম। জনগণ বাধা না দিলে তারা তা অবশ্যই করবে, তার পুনরাবৃত্তি হবে এবং এসবের তীব্রতা ও ক্ষতিমাত্রা বাড়তে থাকবে। এ কোনো দুর্বল প্রতিপক্ষ নয়। এ প্রতিপক্ষ বিভিন্নভাবে আন্তঃসম্পর্কিত ও কৌশলিক সুসংগঠিত (ছক ২ দ্রষ্টব্য)। এ প্রতিপক্ষ আসলে ত্রিভুজাকৃতির আন্তঃসম্পর্কিত তিন বাহুর সমাহার মাত্র : উপরের বাহুতে আছে 'ইসলাম' নামাঙ্কিত মূল ধারার রাজনৈতিক দল (যারা প্রকাশ্যে সংগঠিত), আর নিচের এক বাহুতে আছে ১২৫টি চিহ্নিত জঙ্গী সংগঠন (যারা মূলত গোপনে কর্মকা- পরিচালিত করে, ) আর অন্য বাহুতে আছে মৌলবাদের অর্থনীতিসহ ২৩১টি বেসরকারী সংস্থা ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র জঙ্গীবাদ। এ জঙ্গীবাদ অতীতে তাদের জঙ্গিত্ব প্রকাশ করেছে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে। আর এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে তা অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং যথেষ্ট কৌশলিক; ইতোমধ্যে তারা তাদের সশস্ত্র শক্তি প্রদর্শন করে অনেক নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে; তাদের বোমায় ইতোমধ্যে বহু নিরীহ মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ প্রক্রিয়ায় আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে যাদের ব্যবহার করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার মানুষ এবং প্রায় সকলেই আনুষ্ঠানিক মাদ্রাসা শিক্ষালয় থেকে এসেছেন এবং প্রায় সকলেই একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অনুসারী।
উগ্র জঙ্গীবাদ যে 'আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতি' চালু করেছে তার ফলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ-উদ্ভূত পরিকল্পিত বিপন্নতার কিছু নতুন মাত্রা লক্ষণীয় : (১) এ জঙ্গিত্ব দেশের উৎপাদনশীল খাতসমূহের 'সরবরাহ চেন' ভেঙ্গে ফেলে উৎপাদন-বণ্টন-পরিভোগ-এর স্বাভাবিক সিস্টেমকেই ভেঙ্গে ফেলার সুদূরপ্রসারী-অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট। (২) এ জঙ্গিত্ব এখন দেশের গ্রামাঞ্চল, ক্ষুদ্র শহর ও শহরতলীতে তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করছে- যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল ইঞ্জিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের কর্মকা- বিনষ্টের মাধ্যমে পুরো অর্থনীতিকে নিচে থেকে ভেঙ্গে ফেলতে চায়। (৩) এ জঙ্গিত্ব তাদের কমর্কা- দিয়ে এমন এক ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে যখন গ্রামের হাটবাজার সন্ধ্যার পরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলত গ্রামের বাজারে সন্ধ্যার পরে সার, ডিজেল, বীজসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ হয়ে যাবে, যার ফলে আশঙ্কা করা যায় যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মজুতদারী বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি রুদ্ধ হবে। এ আশঙ্কা অমূলক নয় যে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে কালোবাজারী-মজুতদারী বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে জনজীবন অধিকতর দুর্বিষহ হবে, আর অন্যদিকে এ অবস্থাকেই আবার জঙ্গীরা তাদের জঙ্গিত্ব আরো বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করবে। (৪) এ জঙ্গিত্ব সমগ্র দেশে ভয়-ভীতি প্রদর্শন থেকে শুরু করে যে হারে আত্মঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে এবং করবে তাতে দেশজ বিনিয়োগ অনুৎসাহিত হবে।

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২৮ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
--
--
* Disclaimer: You received this message because you had subscribed to the Google Groups "Bangladeshi-Americans Living in New England". Any posting to this group is solely the opinion of the author of the messages to BangladeshiAmericans@googlegroups.com who is responsible for the accuracy of his/her information and the conformance of his/her material with applicable copyright and other laws where applicable. The act of posting to the group indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator(s). To post to this group, send email to BangladeshiAmericans@googlegroups.com.
To unsubscribe from this group, send email to BangladeshiAmericans-unsubscribe@googlegroups.com
For more options, visit this group at http://groups-beta.google.com/group/BangladeshiAmericans?hl=en ].
 
---
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "Bangladeshi-Americans Living in New England" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to bangladeshiamericans+unsubscribe@googlegroups.com.

For more options, visit https://groups.google.com/groups/opt_out.
 
 



--
রাখাল বন্ধু 
--
--
Disclaimer: All content provided on this discussion forum is for informational purposes only. The owner of this forum makes no representations as to the accuracy or completeness of any information on this site or found by following any link on this site. The owner will not be liable for any errors or omissions in this information nor for the availability of this information. The owner will not be liable for any losses, injuries, or damages from the display or use of this information.
This policy is subject to change at anytime.
 
---
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "Bangladesh Progressives" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to bangladesh-progressives+unsubscribe@googlegroups.com.
For more options, visit https://groups.google.com/groups/opt_out.
 
 



--
"I speak for the trees, for the trees have no tongues." - Dr. Seuss





__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___

[mukto-mona] কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ॥ ঠাণ্ডা মাথায় খুন




মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ॥ ঠাণ্ডা মাথায় খুন
০ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগেই জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে মনস্থির করেন
০ জিয়া জীবিত নেই তাই তাঁর বিচার সম্ভব নয়
০ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে
আরাফাত মুন্না ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএ তাহের বীর উত্তমসহ অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের অভিমতে আদালত বলে, 'কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড একটি হত্যাকা-, কারণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিষয়ে মনস্থির করেন।' রায়ে বলা হয়, যেহেতু জেনারেল জিয়া জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। এর পরও সরকারের উচিত হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে, তাঁকে খুজে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা।
১৯৮ পৃষ্ঠার এই রায়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরেন আদালত। হাইকোর্টের রায়ে কর্নেল তাহেরকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের গৌরব বলে আখ্যায়িক করেছেন। তার হত্যাকাণ্ডকে আদালত দেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায় বলে উল্লেখ করে। রায়ে কর্নেল তাহেরের ফাঁসিকে নিরঙ্কুশ খুন বলে আখ্যায়িত করেছে আদালত। এ ছাড়া দ-িত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে রিট আবেদনকারীদের নাম মুছে ফেলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। এ দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কর্নেল তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত।
এর আগে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচরপতি মোঃ জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১১ সালের ২২ মার্চ এ রায় ঘোষণা করেন। সোমবার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন এই দুই বিচারপতি। এ ছাড়া সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। পরে সোমবার দুপুরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তিনি রায়টি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।
রায়ে বলা হয়, যে অপরাধের জন্য তাহেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই অপরাধে মৃত্যুদ-ের কোন বিধান ছিল না। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-ের বিধান ছিল। তথাকথিত বিচারকে কোন অবস্থাতেই বিচার বলে বিবেচনা করা যায় না। বিচারকরা যে রায় দিয়েছেন, তা ছিল নেহাতই প্রভুদের কণ্ঠস্বর। রায়ে আদালত বলে, এখানে আসামিদের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ। এমনকি সাক্ষীদের জেরা করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। রায়ে আদালত আরও বলে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা-ও শোনানো হয়নি। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা য়নি, তাঁরা দোষ স্বীকার করেন কি-না। তাঁদের সাফাই সাক্ষীরও সুযোগ দেয়া হয়নি। আত্মীয়-পরিজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি এফআইআর ও অভিযোগপত্রের কপি। ফৌজদারি মামলায় যেসব প্রক্রিয়ার অনুসরণ করার কথা ছিল, তার কোনটাই অনুসরণ করা হয়নি। 
রায়ে আদালত মেজর জিয়াউদ্দিন, কর্পোলার সামসুল হক, হাবিলদার আব্দুল হাই মজুমদার ও মোঃ আব্দুল মজিদকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাঁরা পূর্ণ মেয়াদে চাকরিতে বহাল ছিলেন বলে গণ্য করার নির্দেশ দেন এবং তাদের সমস্ত বকেয়া বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধাদী ও পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালত রায়ে বলে, যেদিন সামরিক বিধি জারি করা হয় তার পরদিনই ট্রাইব্যুনাল তথাকথিত বিচারকার্য শুরু করে। এছাড়া আদালত রায়ে উল্লেখ করে, পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলার রায়ের পর এটি অত্যন্ত পরিষ্কার, যে সামরিক আদালত এই বিচার করেছে সেই আদালতের আদৌ কোন বিচারিক এখতিয়ার ছিল না।
আদালত রায়ে বলে, এ মামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মি. লরেন্স লিফসুল্্স নামক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক মার্কিন সাংবাদিকের সাক্ষ্য এবং বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লিখিত বইয়ে এ বিচার নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর 'ডেমোক্র্যাসি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ' বইয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয় মনস্থির করেছিলেন। জেনারেল মঞ্জুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফস্কল্্সও একই বক্তব্য তাঁর সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। আদালত এ বিষয়ে রায়ে উল্লেখ করে, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জেনারেল জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে পারে না। রায়ে আদালত উল্লেখ করে, এই মামলার শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে আদালত তাঁর লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখা তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই শুনেছেন। এছাড়া তৎকালীন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্টেট ড. এমএম শওকত আলীর এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের লিখিত দাবিসহ আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছে, কর্নেল তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুর মূল আসামি জেনারেল জিয়াউর রহমান।
আদালত এই মামলার আরও একটি বৈশিষ্ট্য রায়ে উল্লেখ করে, তাহলো এই মামলার এফআইআর, চার্জশীট ও রায়ের কপিসহ সমস্ত নথিপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে। সে কারণে আদালত বাধ্য হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করতে। ভারতীয় সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন রায়ের নজির ও হাইকোর্ট রুলের কথা উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলে, রিট মামলায়ও বিশেষ ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
আদালত রায়ে বলে, এই মামলায় দেশের খ্যাতিমান আইনজীবিগণ আদালতের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম, ড. এম জহির, এম আই ফারুকী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, এ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহউদ্দিন, আব্দুল মতিন খসরু, ইফসুফ হোসেন হুমায়ুন, জেডআই খান পান্না ও ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। তাঁরা সকলেই তাঁদের দীর্ঘ শুনানির বক্তব্যে কর্নেল তাহেরের ফাঁসিকে নিছক হত্যাকা- ও বিচারকে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে উল্লেখ করেন। আদালত রায়ে বলে, শুনানির সময় কয়েক আইনজীবী মত প্রকাশ করেন, তাহের হত্যার জন্য ইতিহাস জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কখনও ক্ষমা করবে না, যেমন ক্ষমা করেননি অলিভার ক্রমওয়েলকে।
রায়ের শেষে আদালত প্রখ্যাত উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমদের কিছু কথা উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যা পরে তার দেয়াল উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রহসনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। কর্নেল তাহেরসহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইফনুফ হায়দার। মামলা চলাকালে একপর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেন, আমি জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখেছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।
সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা ॥ কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার পরিবারের সদস্যদের ও অন্যদের রিটের ওপর শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ আদালত রায় ঘোষণা করে। রায়ে তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল লোক দেখানো ও প্রহসনের নাটক। এটা কোন বিচার হয়নি। তাই বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার-প্রক্রিয়া ও সাজা ছিল অবৈধ। বিচার ও সাজা বাতিল করা হলো। আদালত অভিমতে বলে, ওই বিচার প্রথম থেকেই অবৈধ, আর পুরো বিচারটি ছিল একটি বিয়োগান্তক নাটক ও বানানো বিচার।
বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি দেয়ার ঘটনা ঠা-া মাথার হত্যাকা-। ওই বিচার ও হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। একই সঙ্গে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি কথিত ওই সামরিক আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা করে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৬ সালের ১৪ জুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৭ জুলাই তাহেরকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। কিন্তু তাহেরকে যে আইনে বিচার করে মৃত্যুদ- দেয়া হয়, সেই আইনে ওই সময় মৃত্যুদ-ের কোন বিধান ছিল না। মৃত্যুদ- কার্যকরের পর ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুদ-ের বিধান করা হয়। তাই আইনগতভাবে ওই দ- ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই আদালতের বিচারক আবদুল আলী ও অন্যরা বলেছেন, বিচারের সময় তাঁদের সামনে কোন কাগজ বা নথিপত্র ছিল না। এ ছাড়া আসামিরা জানতেন না যে, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোন আইনজীবীও দেয়া হয়নি। এসব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল ও এর কার্যক্রম ছিল অবৈধ। তথাকথিত ওই বিচার সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার পরিপন্থী।
তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, তাহেরের তথাকথিত বিচার ও ফাঁসি ছিল ঠা-া মাথার হত্যাকা-। ওই বিচার ও হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্যজনক হলো, জিয়া আজ আর জীবিত নেই। তবে ওই বিচারে জড়িত ও সহযোগী অন্তত একজন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল আলী এখনও জীবিত আছেন। ওপরের নির্দেশে ও প্রয়োজনের তাগিদে ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে এমন যুক্তি খাটে না। আবদুল আলীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা করার কথাও বলে আদালত।
জিয়া জড়িত ॥ রায়ে লিফসুল্্্জ ও অন্যদের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে, যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা এ মামলার বিচার্য বিষয় নয়। ওই সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক ইতিহাস ও সত্যের খাতিরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটা খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তা যাচাই করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলো। সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয় আদেশে।
তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের কর্মকা-ে স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জয় বাংলা সেøাগান মুছে ফেলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের স্থান রেসকোর্স ময়দানকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে পরিণত করেন এবং সেখানে শিশুপার্ক স্থাপন করেন।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানকে দেন মন্ত্রীর পদ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের উচ্চপদে আসীন করেন তিনি।
কর্নেল তাহেরকে শহীদের মর্যাদা ॥ ইতিহাস ও বিভিন্ন নথিপত্র থেকে ওই প্রহসনের বিচার এবং দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত তাহেরসহ অন্যদের নাম বাদ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, তাহেরসহ অন্যরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষোভের শিকার ছিলেন বলেই মৃত্যুবরণ ও কারাবরণ করেছিলেন। তাঁরা জিয়ার স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পাশে না থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাহেরকে দেশদ্রোহের অভিযোগ মুছে দিয়ে মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করে শহীদের মর্যাদা দিতে নির্দেশ দেয়া হলো। কথিত বিচারের মুখোমুখি হাসানুল হক ইনু, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জিয়াউদ্দিনসহ অন্যদের দেশপ্রেমিক হিসেবে মর্যাদা দেয়ার কথাও রায়ে বলা হয়।
ফিরে দেখা ॥ কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোরে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুতফা তাহের এবং সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ সম্মিলিতভাবে ২০১০ সালের আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের শুরুতে ওই সময় গোপন বিচারের মুখোমুখি অন্য ছয় ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করে। এই ছয় ব্যক্তি হলেনÑ হাসানুল হক ইনু, রবিউল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদ।
রিটের শুনানিকালে ১৪ মার্চ মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুল্্জ, এর আগে ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমএম শওকত আলী, রায় ঘোষণার সময়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মহিবুল হক, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন এবং মৃত্যুদ- কার্যকরের সময় উপস্থিত তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ফজলুর রহমানও আদালতে বক্তব্য দেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম। তাহেরের সঙ্গে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি কয়েকজনও আদালতে বক্তব্য দেন। চূড়ান্ত শুনানিতে সুপ্রীমকোর্টের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে বক্তব্য রাখেন।
একনজরে কর্নেল তাহের ॥ কর্নেল এমএ তাহের ১৯৩৮ সালের ১৪ নবেম্বর ভারতের অসমের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পাস শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন ১৯৬০ সালে। ওই বছর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে কর্নেল তাহের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। ১১ নম্বর সেক্টরের তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। জামালপুরে পাকিস্তানী সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনার সময় আহত হন। পরবর্তী সময়ে 'বীর উত্তম' খেতাব পান তিনি। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর তিনি সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ নবেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয়টি জিয়া আগেই স্থির করে রেখেছিলেন
রায়ে মওদুদের বই উদ্ধৃত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ 'কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড একটি হত্যাকাণ্ড, কারণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদ- প্রদানের বিষয়ে মনস্থির করেন।' সোমবার প্রকাশিত কর্নেল এমএ তাহের বীর উত্তমসহ অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়টি উঠে এসেছে। আর হাইকোর্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বইকে এ রায়ে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। 
আদালত রায়ে বলেন, এ মামলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মি. লরেন্স লিফসুল্্জ নামক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন মার্কিন সাংবাদিকের সাক্ষ্য এবং বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লিখিত বইয়ে এ বিচার নিয়ে লেখা বিবেচনায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার 'ডেমোক্রেসি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল এ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেশন ইন বাংলাদেশ' বইয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার বিষয়ে মনস্থির করেছিলেন। জেনারেল মঞ্জুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফসুল্জও একই বক্তব্য তার সাক্ষ্যে প্রতিধ্বনিত করেন। 
আদালত এ বিষয়ে রায়ে উল্লেখ করেন, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ জেনারেল জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে পারে না। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, এই মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে আদালত তাঁর লেখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখা তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই শুনেছেন।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএ তাহেরসহ (বীর উত্তম) অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০১১ সালের ২২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন এ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান। পরে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টিও সাংবাদিকদের জানান এবং পূর্ণাঙ্গ রায়টি পড়ে শোনান।

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৩, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
যুগান্তকারী রায় ॥ ড. আনোয়ার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর্নেল তাহের হত্যার বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তার ভাই ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা একটা যুগান্তকারী রায়। জেনারেল জিয়ার আমলে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওইসময় ছিল অন্ধকারে ঢাকা। এখন সময়ে এসেছে ওইসব কর্মকা- প্রকাশের।
তিনি বলেন, আজকের এই দিন আমাদের পবিবারের কাছে সবচেয়ে মহান। প্রায় ২০০ পৃষ্ঠায় এই পূর্ণ রায় ঘোষিত হলো। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য, কেবল তৃতীয় বিশ্বের জন্য নয়- পুরো বিশ্বের জন্য যুগান্তকারী একটা মাইলফলক বিচার হিসেবে পরিগণিত হবে। শত শত বছর ধরে এবং এই বিচারিক যে ইতিহাস রচিত হবে- এই পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সেখানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এই রায়ে আরও উল্লেখ আছে, কর্নেল তাহের কোন দেশদ্রোহী ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক। তিনি আরও বলেন, এই যে কালো অধ্যায় ছিল, যে সময় শত শত হত্যাকা- হয়েছে। যেগুলোর কথা কেউ জানে না। অনেকেরই কারান্তরালে মৃত্যু হয়েছে। জিয়া যেসব হত্যাকা- করেছেন, তাঁদের অনেকের লাশ পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে বর্তমান সরকারের কাছে সুযোগ এসেছে। যে রায়ের মাধ্যমে সরকার যদি চায় তাহলে একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে পারেন, তাহলে সেই অন্ধকারের ইতিহাস উন্মুক্ত করা যাবে। এই রায় সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুতফা তাহের তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যই মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করে তাঁরা একটি দেশ নিয়ে এসেছেন। সেই দেশে জিয়াউর রহমান তাহেরকে হত্যা করেছেন। এর প্রতিকার চেয়ে এসেছি। আজ এই রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত।


MONDAY, MAY 20, 2013

Col Taher execution an absolute killing: HC

STAR ONLINE REPORT


                                                    Col Abu Taher in 1972. File photo.

http://www.thedailystar.net/beta2/news/col-taher-execution-an-absolute-killing-hc/


Colonel Abu Taher and the Special Military Tribunal (part 1)


Colonel Abu Taher and the Special Military Tribunal (part 2)


The Testimony of Colonel Taher


SAMPLE FILM ON COL TAHER



Taher execution illegal, murder: HC - New Age | Newspaper

Mar 22, 2011 – ... sentenced war of independence hero lieutenantcolonel Abu Taher to death ... The court observed that Taher's trial, which was held inside the Dhaka ... all records and documents relating to the secret military trial of Taher.




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___

Re: [mukto-mona] Re: বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও জঙ্গিত্ব : যোগসূত্র কোথায় ?



Those who equate secularism with lack of religiosity are idiots of high order.  Mahbubullah a closet reactionary in the leftist garb is no exception.  The Govt. of Bangladesh at Theater Road was coerced by Delhi to accept Secularism and Socialism in their future constitution as precondition to support for liberation.  The ruling circle in Bangladesh never accepted these principles.  The elite in this land was a product of the two nation theory.  In spite of the so called liberation, the civil and military bureaucracy remained Pakistani in nature generating all of the following political crisis.


2013/5/20 Shah Deeldar <shahdeeldar@gmail.com>
 

"আমাদের আপত্তি অবশ্য এই কথায় যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম নিজেদের ধর্মহীন করার চেতনা নিয়ে। তাদের ওই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে 'ধর্মহীনতা', সর্বৈব মিথ্যা এবং একটি অসত্ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা করেছি, তারা কি ভুল দেখেছি বা করেছি? আজ পর্যন্ত কোনো সেক্টর কমান্ডারকে বলতেও শুনিনি যে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন দেশকে সেক্যুলার বা ধর্মহীন করতে।"

Why bring this issue when the man knows he is only spinning the issue to muddy the water? As if somebody is imposing something very draconian on the majority Bangladeshis? Islam is about to vanish if country constitutionally becomes a secular country? Well, Christianity has not disappeared from the US or EU. Moreover, Bangladeshis love to settle in those infidel countries if they had a faintest chance. So much love for the religion and country? Please stop this nonsense! Insult us no more!

If every citizen get their equal rights irrespective to their birth and religions, why this should be a concern for our fundamentalists? As far as I can see, the concern is pretty much bogus. When I see these Bangladeshi religious scoundrels are voting for secular Democrats for their equal rights in the US, they love to forget that there are minorities in Bangladesh who might be expecting the similar treatment from their state too. If Mr. Hussaini would love to have an Islamic state in Bangladesh, would not he be voting for Christian Rights in the US? Ironically, he does not! Isn't that hypocritical paradox? Good for goose but not so good for gander?
-SD  


2013/5/19 Rakhal Bandho <rakhalbandho@gmail.com>
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই ধর্মহীনতা ছিল না


By: শাহাদাত এইচ সোহরাওয়ার্দী




»
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কখনোই ধর্মহীনতা ছিল না এবং কখনোই তা হওয়ারও নয়। বাংলাদেশের আপামর জনগণ অবশ্যই সেজন্য যুদ্ধ করেনি। এদেশের এক শতভাগ মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে অর্থাত্ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান সবাই যার যার ধর্মে বিশ্বাসী। দেশের নব্বইভাগ মুসলমান, ১০ ভাগ অন্য সম্প্রদায়ের। এ দেশটির ৯৮ ভাগ নাগরিক বাংলায় কথা বলে; আর দুইভাগ বলে অন্য ভাষায়। জাতীয়তায় ১০০ ভাগ মানুষই বাংলাদেশী। এখানে সবাই ধর্মপরায়ণ, অসাম্প্রদায়িক, উদার, সংগ্রামী ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন। যুগ যুগ ধরে রাখা এই গুণাবলীগুলো শুধু ধারণ ও লালনই করেনি, সব সময় তা ইতিহাসের ক্রান্তিকালে সমুন্নত রেখেছে এবং তার প্রমাণও দিয়েছে সত্যনিষ্ঠভাবে। এ হাজার বছরের ইতিহাস। প্রখ্যাত সাংবাদিক এরশাদ মজুমদারের উদ্ধৃতি এখানে প্রণিধানযোগ্য হবে বলে মনে করি। তিনি তার ঐতিহাসিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের আলোকে বলেন, 'জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে আমাদের বায়া দলিলকে সমুন্নত রাখতে হবে; এই দলিল বিকৃত হওয়ার দলিল নয়। আসল দলিল ছাড়া নকল বা বিকৃত দলিল দিয়ে নিজেদের চেতনা কেন, অস্তিত্বই রক্ষা করতে পারব না।'


সুতরাং আজকাল অনেকেই যারা বলছেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল দেশে 'ধর্মহীনতা' আনয়ন করা, তারা মিথ্যে বলছেন। যারা এসব কথা বলছেন তারা ১৯৭১ সালের আগেও ধর্মকে মুক্তমনের ও প্রগতির বিরোধী মনে করতেন এবং এখনও তাই মনে করেন ও লালন করেন। তাদের সংখ্যা কম হলেও বেশ শক্তিশালী। তাদের এ ধারণাকে বিদেশি একটি চক্র ভাষা ও কৃষ্টির মিষ্টি কথা বলে ও সহানুভূতির দৃষ্টি দিয়ে আমাদের ওই সব ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তা তারা করুন, আমাদের তাতে আপত্তি করার সুযোগ নেই।


আমাদের আপত্তি অবশ্য এই কথায় যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম নিজেদের ধর্মহীন করার চেতনা নিয়ে। তাদের ওই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে 'ধর্মহীনতা', সর্বৈব মিথ্যা এবং একটি অসত্ উদ্দেশ্যে কাজ করছে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বা করেছি, তারা কি ভুল দেখেছি বা করেছি? আজ পর্যন্ত কোনো সেক্টর কমান্ডারকে বলতেও শুনিনি যে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন দেশকে সেক্যুলার বা ধর্মহীন করতে। যদিওবা বর্তমানে ওদের কয়েকজন দলীয় বৃত্তের আবরণের কারণে অস্ফুট স্বরে তা বলে থাকেন। যারা সেক্যুলার বা ধর্মহীন, তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবে দেখেন এবং সবার ওপর তা চাপিয়ে দিতে চান। তাদের সংখ্যা এখন এই ৪২ বছরে কিছুটা বাড়লেও সে সংখ্যা ১৯৭১ সালে ছিল অত্যন্ত নগণ্য। গত ৪২ বছরে তাদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কিছুটা বেড়েছে শুধু শহুরে বিত্তবান যুবক যুবতীর মাঝে বিদেশি চক্র ও তাদের দালালদের জোর প্রপাগান্ডার কারণে। তাও আবার ১৯৯০ সালের পর থেকে এর আধিক্য বেশি দেখা যায়।


মুক্তিযুদ্ধ কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে সেক্যুলার বানানোর যুদ্ধ ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ধর্মহীন বা ধর্মবিরোধী ছিল না। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে কিছু সংখ্যক বাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বলে আসছেন 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'। এরা মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই ধর্মহীন ছিল বিধায় 'ধর্মহীনতাকেই' মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন চেতনা বানাতে যুগপত্ভাবে কসরত করে যাচ্ছেন, মিথ্যার বেসাতি দিয়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কোনো প্লান প্রোগ্রাম করে শুরু হয়নি। আর যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ প্লান প্রোগ্রাম করে শুরু হয়নি তাদের অভিব্যক্তি সর্বৈব উদ্দেশ্যও ভীষণ অযৌক্তিক।


১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কয়েক বছরের মধ্যেই অসাধু/অশুভ নেতৃত্ব যার মাঝে আমাদের দেশীয় কিছু কুসন্তান পাকিস্তানের গদ্দিনশীন হন তারা পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববাংলাকে বৈমাত্রেয়সুলভ ব্যবহার ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলের জনগণের মনে ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং স্বায়ত্তশাসনের কথা উঠতে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম বলিষ্ঠভাবে স্বায়ত্ত শাসনের কথা ওঠে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি ও নেজামে ইসলাম পার্টির সমন্বয়ে, ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি-দাওয়া নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিল। ২১ দফাতেই পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসনের কথা বলা হয়েছিল তখনকার অনির্বাচিত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে। দুঃখের বিষয় সেই সময় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জন্য। যুক্তফ্রন্ট মাত্র কিছুদিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। যুক্তফ্রন্টের মৃত্যু হলেও ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রেও শাসনভার পেয়েছিল তখনকার রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন করে। আওয়ামী লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় প্রথমবারের মতো পাকিস্তান একটি সংবিধানও পায়। সেই সংবিধান দেয়ার পরই আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন পূর্ববাংলা বা পূর্বপাকিস্তান শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন পেয়ে গেছে। কিন্তু পূর্ববাংলার লোক তা বিশ্বাস করেনি এবং তা পায়ওনি। তারপর ধীরে ধীরে স্বায়ত্তশাসনের দাবি বেশ জোরালো হতে থাকে। তবে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব কর্তৃক ছয় দফা দাবি তোলার পর সমগ্র বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসনের প্রতি একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।


স্বায়ত্তশাসনের প্রচারণার সময় কখনও আওযামী লীগ নেতার (শেখ মুজিব) কাছ থেকে বা অন্য কোনো জাতীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে যেমন মওলানা ভাসানী, মুজাফফর আহমদের কাছ থেকে একবারের জন্য হলেও সেক্যুলার বা ধর্মহীনতার কথা শোনা যায়নি। তখনও মুষ্টিমেয় বাম যারা ছিলেন, এমত পোষণ করলেও মুখে একবারও তা আনয়ন করেননি। তবে বামদের প্রতি জনগণর আস্থা ছিল একেবারে শূন্য। সেই সময়ের পত্রপত্রিকার সঙ্গে যাদের সম্পর্কে ছিল তারা সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করবেন। আর এই কথা আমি হলফ করে বলতে পারি।  বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহাসিকভাবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে ছয় দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আশায় বুক বেঁধেছিল এবং তার বাস্তবায়ন দেখতে নির্বাচনের সময় তা প্রকাশ করেছিল। তারা তখনকার আঙ্গিকে দেশকে সমতার দেশ হিসেবে দেখতে ও পেতে চেয়েছিল। রায় পাওয়ার পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ বিধি ছিল বাম। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে ক্ষমতায় উত্তীর্ণ হতে না পারার বেদনায় এবং সর্বোপরি ১৯৭১-এর মার্চে পাক-বাহিনীর বিধ্বংসী আক্রমণ যা তাদের সম্পূর্ণরূপে খতম করার বাসনা নিয়ে শুরু হয়েছিল তা প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে। একটা কথা আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, যদি সেই দিন অর্থাত্ ২৫ মার্চে সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচনে জয়ী নেতার (শেখ মুজিবের) কাছে ইয়াহিয়া শাসনভার ছেড়ে দিতেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না এবং এখন যে চেতনার কথা গায়ের জোর দিয়ে বলা হচ্ছে সেটা অর্থহীন হয়ে যেত। বিশ্বাস করুন, শেখ মুজিব অত্যন্ত উদার ও আনন্দচিত্তে দেশের শাসনভার গ্রহণ করতেন। কারণ তিনি দেশদ্রোহী ছিলেন না এবং দেশদ্রোহী হতে চাইতেন না। যুদ্ধকালীন সময়ের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যখন মার্চের পঁচিশ তারিখ রাতে তার কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা চাইতে গিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, 'তোরা কি আমাকে দেশদ্রোহী বানাতে চাস?' কারণ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সব নেতাই পাকিস্তানের কাঠামোর ও ইসলামের কাঠামোর বাইরে বা বিপরীতে গিয়ে কিছুই করবেন না, নির্বাচনের আগে এটাই ছিল বজ্র শপথ এবং দেশের আপামর জনতাও এ জন্যই তাদের প্রতি রায় দিয়েছিলেন।


শাসনক্ষমতা পাওয়ার পর শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের অন্য প্রদেশের নেতাদের সঙ্গে মিলে দেশের সব প্রদেশকে স্বায়ত্ত শাসন দিতেন এবং বাংলাদেশের জন্যও নিতেন। এটাই ছিল নির্বাচনের প্রতিজ্ঞা।  ২৫ মার্চ পর্যন্ত ত্রিপক্ষীয় যে আলোচনা চলেছিল ১৪ মার্চ থেকে, সেখানে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশে নির্বাচনে জয়ী ভুট্টো সাহেব ছিলেন খুবই কর্তৃত্ব পরায়ণ। এখানে বলে রাখা সমীচীন, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদিও পাকিস্তানের ৩০০শ' আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়েছিলেন, তা শুধু তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে আলোচনার মধ্যে একটি তৃতীয় শক্তি অর্থাত্ সেনাবাহিনীর আবির্ভাব হয়। তৃতীয় শক্তির কঠিন অনমনীয়তাই সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ করে দেয়। আমরা যারা সেদিন যুবক ছিলাম, ১৯৭১ সালের মার্চকে সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন ও পর্যবেক্ষণ করেছি অত্যন্ত সুচারুভাবে, তাদের ধারণা যুগপত্ভাবে এ রকমই। ২৫ মার্চ দুপুর পর্যন্ত শেখ সাহেব সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি ২৬ মার্চের জন্য শান্তিপূর্ণ হরতালও ডেকেছিলেন ২৪ মার্চে, যাতে তখনকার উত্তাল জনতা শান্ত থাকে। জেনারেল ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সারল্যের সঙ্গে বেঈমানী করে পূর্ব বাংলার নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে ইসলামাবাদ চলে গিয়েছিলেন। ২৫ মার্চের রাতেই ভুট্টোও ঢাকা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।


তখন স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা ছিল না। দেশের সেই ক্রান্তিকালে যখন সব রাজনৈতিক নেতারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মেজর জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ২৬ মার্চে। মেজর জিয়ার ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশবাসী জানতে পারেনি, পূর্ববাংলার ভাগ্যে কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। শেখ মুজিবকে সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাত ১২টার দিকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ নেতারা কোনো উপায় না দেখে দিশেহারা হয়ে ভারতের দিকে চলে যান। কারণ পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীর বর্বরতায় দেশের জনগণের ও নেতাদের আর কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে নির্বিচারে সারা ঢাকায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। জিয়ার ঘোষণার পর দেশবাসীর বুকে সাহস আসে, তারা আস্থা পায়। বুঝতে পারে যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করা শুরু হয়ে গেছে। শুরু হলো সাধারণ মানুষের মনে মুক্তিযুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় মূলত মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই। প্রথমে অসংগঠিতভাবে এবং পরে প্রবাসী সরকার গঠিত হওয়ার পর পুরো মাত্রায় সুসংগঠিতভাবে। এখানে অবশ্য বলতে হবে যে ওই মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল উসমানী। তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতাও ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা, সেক্টর কমান্ডাদের নেতৃত্বে ৭-৮ মাসের মাথায় পাকিস্তানি হানাদারদের কাবু করে ফেলে। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়। লাখ লাখ বাঙালি তাদের অমূল্য জীবন দেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। অপরদিকে ভারত যুদ্ধ শুরু করে ৩ ডিসেম্বর থেকে, পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ১৬ ডিসেম্বর।


যা হোক, বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। আমাদের দেশ স্বাধীন। এটা সত্য যে এই দেশকে স্বাধীন করতে এই দেশেরই কিছু সন্তান বাধা দিয়েছে। কোনো স্বাধীনতার লড়াইতে পুরো দেশ একত্রে কাজ করে না। ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন কি ভারতের সব জনগণ এর সঙ্গে ছিল? সংখ্যায় কম হলেও ইংরেজদের শাসন বজায় রাখতে একটা মহল সচেষ্ট ছিল। পাকিস্তানের তদানীন্তন ভূখণ্ডের সব মানুষ কি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? অবশ্যই নয়? আমাদের এই প্রান্তের অনেক সন্তানই তখন মুসলিম লীগকে সমর্থন না দিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান হিন্দুস্তান হওয়ার পর সবাই যার যার মতো করে পাকিস্তানি বা হিন্দুস্তানি হয়ে গেছেন। স্বাধীনতার বিজয় সবাই আনে না, বরং কেউ কেউ বাধা দেয়। কিন্তু স্বাধীনতার বিজয় সবাই উপভোগ করে। এটাই নিয়ম, এটাই সর্বজনীন।


পরিশেষে উপসংহারে আমি দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো কাল্পনিক চেতনার যুদ্ধ ছিল না। ছিল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, স্বাধিকার অর্জনের যুদ্ধ, ছিল সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধ, ছিল আপামর অসাম্প্রদায়িক জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধ। ওই সব চেতনার অনেকটুকুই এখনও আমাদের করতলগত হয়নি শুধু ভৌগোলিক সীমা-রেখা ছাড়া। শুধু ভৌগোলিক সীমা-রেখা থাকা, একটা সরকার থাকা ও একটা পতাকা থাকাতেই স্বাধীন হয়েছি এবং চেতনা পেয়েছি বলা যায় না, যদি না সেই দেশের সব জনগণ ধর্ম, বর্ণ, মত ও ভাষা নির্বিশেষে একটি মেল্টিং পটে রূপান্তরিত হয়। আমাদের ব্যর্থ করতে আমাদের চারপাশে শকুনিরা লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এবং সূক্ষ্মভাবে চেতনার ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট আছে— তাদেরই এজেন্ট দিয়ে। ভেদাভেদ ও কাল্পনিক চেতনা পরিহার করে চলুন সবাই বাংলাদেশী হই 'বায়া দলিল' মোতাবেক। অর্থাত্ আমার এক সময়ের রাজনৈতিক গুরু, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব উল্লাহ সাহেবের কথায়, 'আমাদের সবাইকে দল, মত নির্বিশেষে বাংলাদেশপন্থী হতে হবে, এখানে যে যে ধর্মের, বর্ণের, ও ভাষারই হইনা কেন, ধর্মহীন হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই।' এতেই আমাদের সবার মঙ্গল নিহিত। চলুন এগিয়ে চলি সামনের দিকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে।


লেখক : ওয়াশিংটন প্রবাসী রাজনৈতিক বিশ্লেষক


Source link: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/03/14/191905#.UUEQzVdtY5M 



2013/5/19 Suhas Barua <suhasboston@gmail.com>
বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও জঙ্গিত্ব : যোগসূত্র কোথায় ?
: অধ্যাপক আবুল বারকাত
http://www.somewhereinblog.net/blog/mazharsircar207/29646900

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বহির্প্রকাশ বহুমুখী : অর্থনীতির দুর্বৃত্তরা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান এমনভাবে দখল করেন যেখানে সংবিধানের বিধি মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালন অসম্ভব। তারা মূলধারার ক্ষমতার রাজনীতি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিকে ফান্ড করেন; তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন; তারা রাষ্ট্রীয় বাজেট বরাদ্দ নির্ধারণ ও ভোগ করার বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করেন; তারা লুট করেন সবকিছু জমি, পানি, বাতাস এমনকি বিচারের রায়; তারা ধর্মের লেবাস যত্রতত্র ব্যবহার করেন স্বধার্মিকতা প্রদর্শনে হেন কাজ নেই যা করেন না; জাতীয় সংসদের আসন কিনে ফেলেন তারা জানেন স্থানভেদে ২ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জাতীয় সংসদের একটি আসন ক্রয়/দখল সম্ভব এবং সেটা তারা প্রাকটিস করেন (ব্যবসায়ীরা ছিল ১৯৫৪ -এর সংসদে ৪% আর এখনকার সংসদে ৮৪%, অবশ্য 'ব্যবসাটা' যে কি তা নির্বাচন কমিশনও সঠিক জানে না)। অর্থনীতি ও রাজনীতির এসব দুর্বৃত্তদের প্রতি মানুষের আত্মার গভীরে অনাস্থা আছে; মানুষের সামনে এখন আর রাজনৈতিক বলে কিছু নেই এসব প্রবণতা যে হতাশা-নিরাশা সৃষ্টি করেছে সেগুলোই হয়ে দাঁড়িয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের সংগঠন বিস্তৃতির সহায়ক উপাদান।
প্রধানত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে মানুষ তথাকথিত গণতন্ত্রী রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন/হারিয়েছেন, আর প্রগতির ধারাও সেই সাথে তাল মিলিয়ে বিকশিত হয়নি/হচ্ছে না। মানুষ যখন ক্রমাগত বিপন্ন হতে থাকেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারান এবং আস্থাহীনতা যখন নিয়মে পরিণত হয় তখন ব্যাপক সাধারণ জনমানুষ উত্তরোত্তর অধিক হারে নিয়তি নির্ভর হতে বাধ্য হন। আর এ নিয়তি নির্ভরতা বাড়ছে কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে যেখানে ৬০ ভাগ কৃষকই এখন ভূমিহীন, যে কৃষি ভিত্তির উপরই এদেশে বিকশিত হয়েছে ধর্ম। এ ভ্যাকুয়াম-টাই ব্যবহার করছে মৌলবাদী রাজনীতি। তারা চোখের সামনে দেখেছেন কেমন করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এমনকি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকাল গণতন্ত্র চর্চার স্থান ভারতেও দু'চারটে সংসদ আসন দখল করে ১০/১৫ বছর পরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। অন্যান্য অনেক উদাহরণসহ এটাও বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণে তাদের স্বপ্নকে বাস্তব করবে বলে তারা মনে করে। আর তারা স্পষ্ট জানে যে দলীয় রাজনীতিকে স্বয়ম্ভর করতে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্ত ভীত প্রয়োজন। অন্যথায় ক্যাডারভিত্তিক দল গঠন ও পরিচালন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মডেল চর্চা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে এখন ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির সহায়তায় মৌলবাদ যেসব আর্থ-রাজনৈতিক মডেলের তুলনামূলক কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তার মধ্যে ১২-টি বৃহৎ বর্গ হল নিম্নরূপ : আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঔষধ শিল্প ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ধর্ম প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ-পরিবহন ব্যবস্থা সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট, সংবাদমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুুক্তি, স্থানীয় সরকার, বেসরকারী সংস্থা, বাংলাভাই জাতীয় প্রকল্পভিত্তিক কার্যক্রম এবং কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সমিতির কর্মকা- কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান (ছক ১ দ্রষ্টব্য)। এসব প্রতিষ্ঠানের সব মুনাফা অর্জনযোগ্য প্রতিষ্ঠান নয় (যেমন স্থানীয় সরকার ও পেশাজীবী সমিতি)-এক্ষেত্রে ক্রস-ভর্তুকি দেয়া হয় এবং সেই সাথে মুনাফা-অযোগ্য প্রতিষ্ঠানেও তারা উচ্চ মুনাফা করেন (যেমন বাংলাভাই জাতীয় প্রকল্প যেখানে ভূমি খাজনা, চাঁদাবাজি প্রতিষ্ঠা করা হয়; এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে মাদ্রাসাতেও অত্যুচ্চ মুনাফা অর্থাৎ বছর শেষে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হয়)। মানুষের ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে মুনাফা অযোগ্য প্রতিষ্ঠানে মুনাফা সৃষ্টির তুলনামূলক সুবিধা তাদের আছে।
মৌলবাদের অর্থনীতির উল্লিখিত মডেলসমূহের ব্যবস্থাপনা-পরিচালন কৌশল সাধারণ ব্যবসায়ের নীতি-কৌশল থেকে অনেক দিক থেকে ভিন্ন। তাদের অর্থনৈতিক মডেল পরিচালন কৌশলের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ: (১) প্রতিটি মডেলই রাজনৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ উচ্চমানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কর্তৃক রাজনৈতিক লক্ষ্যার্জনে নিয়োজিত; (২) প্রতিটি মডেলে বহুস্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যেখানে নির্দিষ্ট স্তরের মূল নীতি-নির্ধারণী কর্মকা- রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনস্থ; (৩) বিভিন্ন মডেলের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন থাকলেও উচ্চস্তরের কো-অর্ডিনেটরদের পরস্পর পরিচিতি যথেষ্ট গোপন রাখা হয় (এক ধরণের গেরিলা যুদ্ধের রণনীতি বলা চলে); (৪) প্রতিটি মডেলই সুসংবদ্ধ-সুশৃংখল (সামরিক শৃংখলার আদলে) ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠান; (৫) যে কোনো মডেল যখনই আর্থ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে অধিক ফলপ্রদ মনে করা হয় তা যথাসাধ্য দ্রুত অন্যস্থানে বাস্তবায়িত (ৎবঢ়ষরপধঃব) করা হয়। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে মৌলবাদীরা তাদের অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়নে "রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে" রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ সচেতন এবং তা বাস্তবায়নে বিজ্ঞানকে তারা তাদের মত করে ঢেলে সাজাতে সচেষ্ট। এ থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে মৌলবাদীর মূলে আছে ভীতি ও আবেগ। আর এ আবেগ আসে ক্রমবর্ধমান অসমতা থেকে তথাপি এসব আবেগানুভূতি কেবল সেকেলে এবং পিছুটান নয় বরং তারা সৃজনশীল এবং 'আধুনিকতা'র ধারক বাহকও।মৌলবাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্ণয়ের সর্বোত্তম 'বিকল্প মানদ-' হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকা-ে ধর্মীয় উগ্রবাদের সম্পৃক্ততা ও ব্যাপকতাকে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। বিগত ১৯৯৯-২০০৫ সময়কালে বাংলাদেশে এ ধরনের ধর্মীয় উগ্রবাদী কর্মকা-ের বিশ্লেষণে দেখা যায় ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীল এক চিত্র। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'লুক্কায়িত থেকে প্রকাশ্য' পদ্ধতি, 'একমুখী হাতিয়ারের পরিবর্তে বিধ্বংসী বোমা ব্যবহার।' এসবের বিশ্লেষণে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সুদূরপ্রসারী কিছু উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে :
১. রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দখলের লক্ষ্যে সংস্কৃতি ধারায় পরিবর্তন আনা যা তাদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু সরকারি প্রশাসন যন্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ (যেমন : জেলা প্রশাসক), ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন সাংস্কৃতিক কর্মকা- যেমন থিয়েটার, প্রক্ষাগৃহ, জনসমাবেশ, কমিউনিটি সেন্টার, সুফি-সমাধিস্থল, লাইব্রেরীসহ বিচার বিভাগ (আদালত)।
১. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার আসীন থাকলে এ ধরনের সন্ত্রাসী প্রবণতা হ্রাস পায়।
২. ডানপন্থী বা ধর্মনির্ভর দলের সরকার ক্ষমতাসীন হলে বিস্তার ঘটে এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা।
৩. তাদের এ অপতৎপরতা বাধাগ্রস্ত না হলে সন্ত্রাসী কর্মকা- উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাদের ভূমিকা না থাকলেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কোনো সরকার যদি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, উগ্রবাদীরা তখন তাদের 'শক্তি সামর্থ্যকে শাণিত করে।'

উৎস : মিডিয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লেখক কর্তৃক সংকলিত। বিস্তারিত দেখুন: সংবাদ ৭,৮ মার্চ ১৯৯৯, ইত্তেফাক ৯ অক্টোবর ১৯৯৯; সংবাদ ২১ জানুয়ারী ২০০১ এবং জনকণ্ঠ ২২ জানুয়ারি ২০০১; প্রথম আলো ১৫ এপ্রিল এবং যুগান্তর ১৬ এপ্রিল ২০০১; ইত্তেফাক ৪ জুন এবং সংবাদ ৫ জুন ২০০০; আজকের কাগজ এবং ভোরের কাগজ ১৭ জুন ২০০১; জনকণ্ঠ ১৭ নভেম্বর ২০০১; জনকণ্ঠ ২২ এপ্রিল ২০০২; ডেইলি স্টার এবং বাংলাদেশ অবজারভার ৮ ডিসেম্বর ২০০২; ডেইলি স্টার ১৮ জানুয়ারি ২০০৩; ডেইলি স্টার ১৩ জানুয়ারি ২০০৪; ইত্তেফাক ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৪; প্রথম আলো এবং যুগান্তর ২২ মে ২০০৪; ইত্তেফাক, প্রথম আলো , যুগান্তর, জনকণ্ঠ ২২ আগস্ট ২০০৪; আজকের কাগজ, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ ২৮ জানুয়ারি ২০০৫, সংবাদ, ভোরের কাগজ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৫; ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ অবজারভার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং সকল প্রধান দৈনিক ১৮-১৯ আগস্ট ২০০৫; জনকণ্ঠ ৪,৫ অক্টোবর ২০০৫; সংবাদ ১৫ নভেম্বর ২০০৫, ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ভোরের কাগজ ৩০ নভেম্বর ২০০৪; জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, যুগান্তর ২ ডিসেম্বর ২০০৫; সংবাদ, জনকণ্ঠ, যুগান্তর ৯-১০ ডিসেম্বর ২০০৫।

বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট রাজনীতির বিস্তৃৃতি ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা বলা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে স্বাধীনতার বিজয় নিয়ে আমরা যথেষ্ট মাত্রায় আত্মতুষ্ট ছিলাম। সঙ্গত কারণও ছিল। জাতি হিসেবে আমরা এইই প্রথম দেখলাম যে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাÑ এ চার মূলনীতির ভিত্তিতে দেশগঠন ও রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। মূল স্রোতের ধর্মীয় চেতনা যদি উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী হয়ে থাকে এবং তা বংশপরম্পরা মানস-কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র গঠনের ঐ চার মূলনীতিও আমাদের সুপ্ত আকাঙ্খার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ ছিল। আমাদের আত্মতুষ্টির কারণ এও হতে পারে যে সম্ভবত তৃতীয় বিশ্বে এবং বিশেষত মুসলিম প্রধান দেশসমূহের মধ্যে আমরাই প্রথম, যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে ( ধর্মহীনতা নয়) সংবিধানে (১৯৭২-এর) অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম (অবশ্য পরে তা বাতিল হতে হতে 'ইসলাম হইবে রাষ্ট্রধর্ম'-তে রূপান্তরিত হয়েছে)। আমাদের সুপ্ত ইচ্ছা-আকাঙ্খার কাগুজে প্রকাশ-এ আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম।

ধর্মীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি (যাদের ক্ষমা করে আমরা ইসলাম ধর্মের মূল স্রোতের বাহক পরিগণিত হতে পারি) পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল যে রাষ্ট্র যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাতে মানুষের জীবনে মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটবে না; তারা ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ করতে পেরেছিল যে এ মানুষই কয়েক বছরের মধ্যে চলমান নেতৃত্বের প্রতি মোহহীন হবে, আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তাদের (মুক্তিসংগ্রামে পরাজিতদের) বিজয় নিশ্চিত হবে। সমসাময়িককালে প্রগতির গতি এগুলো ঢিমে তালে আর তারা লক্ষ্যার্জনে জোরকদমে অথচ বেশ গোপনে এগুবার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করল (যেমন গ্রাম থেকে শহর দখল; কর্মক্ষেত্রে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিচিতি গোপন রাখা ইত্যাদি)। যে প্রস্তুতির ফলশ্রুতিই হলো গ্রাম দখল (ডিপ টিউবওয়েলকেন্দ্রিক সমিতি, কৃষক সমিতি, মসজিদ-মাদ্রাসা মাধ্যম যাই হোক না কেন), ধর্ম প্রতিষ্ঠানে একচ্ছত্র অবস্থান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, অর্থনৈতিক কর্মকা-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান দখল, আর বেসরকারি সংস্থার নামে ব্যাপকভাবে গ্রাম ও শহরের স্বল্পবিত্ত-দরিদ্র মানুষের মধ্যে অবস্থান গ্রহণ ও তা সুদৃঢ়করণ। এ কৌশল কার্যকর করতে মৌলবাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে তেমনি এ কৌশল অবলম্বনের ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানও শক্তিশালী হয়েছে। এ নিরিখে ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতৃত্ব যত না ভাববাদী তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বাস্তববাদী—বস্তুবাদী। গত অর্ধ শতাব্দীর এ প্রক্রিয়ায় এখন তাদের অর্জনটা এমন যে একদিকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ আসনে তারা গড়ে ১৫,০০০ ভোট সংগ্রহে সক্ষম আর অন্যদিকে নির্বাচনে কোটি টাকার কালো টাকা ও প্রয়োজনীয় পেশী শক্তি সরবরাহের ক্ষমতাও তাদের এখন আছে। আর অন্যদিকে তারা এখন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই অতি উচ্চমাত্রার সেনা-সূক্ষ্মতাসহ সারাদেশে সশস্ত্র কর্মকা- পরিচালনে এবং কল্পনাতীত হত্যাযজ্ঞ সাধনে সক্ষম। জনগণ বাধা না দিলে তারা তা অবশ্যই করবে, তার পুনরাবৃত্তি হবে এবং এসবের তীব্রতা ও ক্ষতিমাত্রা বাড়তে থাকবে। এ কোনো দুর্বল প্রতিপক্ষ নয়। এ প্রতিপক্ষ বিভিন্নভাবে আন্তঃসম্পর্কিত ও কৌশলিক সুসংগঠিত (ছক ২ দ্রষ্টব্য)। এ প্রতিপক্ষ আসলে ত্রিভুজাকৃতির আন্তঃসম্পর্কিত তিন বাহুর সমাহার মাত্র : উপরের বাহুতে আছে 'ইসলাম' নামাঙ্কিত মূল ধারার রাজনৈতিক দল (যারা প্রকাশ্যে সংগঠিত), আর নিচের এক বাহুতে আছে ১২৫টি চিহ্নিত জঙ্গী সংগঠন (যারা মূলত গোপনে কর্মকা- পরিচালিত করে, ) আর অন্য বাহুতে আছে মৌলবাদের অর্থনীতিসহ ২৩১টি বেসরকারী সংস্থা ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র জঙ্গীবাদ। এ জঙ্গীবাদ অতীতে তাদের জঙ্গিত্ব প্রকাশ করেছে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে। আর এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে তা অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং যথেষ্ট কৌশলিক; ইতোমধ্যে তারা তাদের সশস্ত্র শক্তি প্রদর্শন করে অনেক নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে; তাদের বোমায় ইতোমধ্যে বহু নিরীহ মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ প্রক্রিয়ায় আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে যাদের ব্যবহার করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার মানুষ এবং প্রায় সকলেই আনুষ্ঠানিক মাদ্রাসা শিক্ষালয় থেকে এসেছেন এবং প্রায় সকলেই একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অনুসারী।
উগ্র জঙ্গীবাদ যে 'আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতি' চালু করেছে তার ফলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ-উদ্ভূত পরিকল্পিত বিপন্নতার কিছু নতুন মাত্রা লক্ষণীয় : (১) এ জঙ্গিত্ব দেশের উৎপাদনশীল খাতসমূহের 'সরবরাহ চেন' ভেঙ্গে ফেলে উৎপাদন-বণ্টন-পরিভোগ-এর স্বাভাবিক সিস্টেমকেই ভেঙ্গে ফেলার সুদূরপ্রসারী-অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট। (২) এ জঙ্গিত্ব এখন দেশের গ্রামাঞ্চল, ক্ষুদ্র শহর ও শহরতলীতে তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করছে- যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল ইঞ্জিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের কর্মকা- বিনষ্টের মাধ্যমে পুরো অর্থনীতিকে নিচে থেকে ভেঙ্গে ফেলতে চায়। (৩) এ জঙ্গিত্ব তাদের কমর্কা- দিয়ে এমন এক ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে যখন গ্রামের হাটবাজার সন্ধ্যার পরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলত গ্রামের বাজারে সন্ধ্যার পরে সার, ডিজেল, বীজসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ হয়ে যাবে, যার ফলে আশঙ্কা করা যায় যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মজুতদারী বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি রুদ্ধ হবে। এ আশঙ্কা অমূলক নয় যে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে কালোবাজারী-মজুতদারী বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে জনজীবন অধিকতর দুর্বিষহ হবে, আর অন্যদিকে এ অবস্থাকেই আবার জঙ্গীরা তাদের জঙ্গিত্ব আরো বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করবে। (৪) এ জঙ্গিত্ব সমগ্র দেশে ভয়-ভীতি প্রদর্শন থেকে শুরু করে যে হারে আত্মঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে এবং করবে তাতে দেশজ বিনিয়োগ অনুৎসাহিত হবে।

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২৮ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

--
--
* Disclaimer: You received this message because you had subscribed to the Google Groups "Bangladeshi-Americans Living in New England". Any posting to this group is solely the opinion of the author of the messages to BangladeshiAmericans@googlegroups.com who is responsible for the accuracy of his/her information and the conformance of his/her material with applicable copyright and other laws where applicable. The act of posting to the group indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator(s). To post to this group, send email to BangladeshiAmericans@googlegroups.com.
To unsubscribe from this group, send email to BangladeshiAmericans-unsubscribe@googlegroups.com
For more options, visit this group at http://groups-beta.google.com/group/BangladeshiAmericans?hl=en ].
 
---
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "Bangladeshi-Americans Living in New England" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to bangladeshiamericans+unsubscribe@googlegroups.com.

For more options, visit https://groups.google.com/groups/opt_out.
 
 



--
রাখাল বন্ধু 

--
--
Disclaimer: All content provided on this discussion forum is for informational purposes only. The owner of this forum makes no representations as to the accuracy or completeness of any information on this site or found by following any link on this site. The owner will not be liable for any errors or omissions in this information nor for the availability of this information. The owner will not be liable for any losses, injuries, or damages from the display or use of this information.
This policy is subject to change at anytime.
 
---
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "Bangladesh Progressives" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to bangladesh-progressives+unsubscribe@googlegroups.com.
For more options, visit https://groups.google.com/groups/opt_out.
 
 



--
"I speak for the trees, for the trees have no tongues." - Dr. Seuss




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___