রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৪, ২৯ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (চতুর্থ কিস্তি)
মুনতাসীর মামুন
অন্তত অনেকের প্রিয় আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদের কাছে একটি বক্তব্য আশা করেছিলাম এর নিন্দা জানিয়ে, কেননা তিনি অলোকিত মানুষ গড়তে চান। তিনি কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আলো হাতে ঘুরতে ঘুরতে? সময় বোধ হয় করতে পারেননি রাজাকারদের বিরুদ্ধে কিছু বলার। সরকারকে স্বৈরাচারী বলার সময় অবশ্য তিনি পেরেছেন। এ হচ্ছে আমাদের সুশীল সমাজ, যারা এখন যথার্থ কারণেই সুশীল বাটপাড় হিসেবে পরিচিত।
আর এই হচ্ছে ১৮ দলের প্রধান দুই দল বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃতি। অবশ্য তাদের দোষ দেয়া যায় না। ঐতিহাসিকভাবে তারা ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী। ১৯৭১ সালে জামায়াতের আল বদর রাজাকাররা কী করেছিল তা আমাদের জানা। জিয়াউর রহমান কর্তৃক পুনর্বাসিত হওয়ার পর জামায়াত বিরোধীদের ধরে হাত-পায়ের রগ কেটে দিত যাতে বিরোধী ব্যক্তি মারা যায় বা পঙ্গু হয়ে যায়। রগকাটা রাজনীতি নামে এটি পরিচিত হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকার জন্য কমপক্ষে এক হাজার সেনা ও সেনাকর্মকর্তাকে খুন করেছিলেন 'দ-' দিয়ে। বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসে তখন এক গ্রেনেড হামলায়ই মেরে ফেলেছিল প্রয় ৩০ জন। পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন তারচেয়েও বেশি। ক্ষমতায় আসার পর পর তারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আর সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছিল তা নজিরবিহীন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এবং কিছুদিন আগে থেকেই মন্দির পোড়ানো, সংখ্যালঘুদের প্রাণ ও সম্পত্তিনাশ চলছিল। ক্ষমতায় থাকতে ১০ জন হিন্দুকে পুড়িয়ে মেরেছিল বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচনের দিন এবং পরে যে এমনটি ঘটবে তাও সবার অজানা ছিল না। এ ছাড়া খালেদা জিয়া সেদিন তার ভাষায় 'আন্দোলন' ও আমাদের ভাষায় সন্ত্রাস চালাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশে চাঙ্গা হয়ে আবার সুনির্দিষ্টভাবে নৌকার সমর্থক ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এমনও শোনা গেছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিল তাদেরও কিছুটা খুশি করে গিয়েছিল হামলাকারীরা।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলোÑ এরপর বিএনপির নেতৃবৃন্দ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরকম শঠতা তারা না করলেই পারতেন। এখন আবার মিডিয়া এই ঘটনায় হামলে পড়েছে। দুঃখ ইত্যাদি প্রকাশ করেছে। কিন্তু মিডিয়ার একাংশের উস্কানি যে ছিল তা কি অস্বীকার করা যাবে? নির্বাচন যে কোন মূল্যে স্থগিতের প্রচারণা তো তারাই বেশি করেছে। তবে, আমরা সৌভাগ্যবান বলতে হবে, মিডিয়ার একটি অংশ বিএনপি-জামায়াতের হঠকারিতাও তুলে ধরেছিল।
এই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃতি, একেবারে শ্বাপদের মতো। ক্ষমতায় না যেয়ে তারা যা করেছে এবং করছে ক্ষমতায় গেলে তারা যে কী করবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সাধারণ মানুষ যদি এখনও তাদের না চিনে থাকেন তাহলে কপালে আরও দুঃখ আছে। এই যে প্রায় ১৫০ জন মানুষ সারা পেলেন এরা সবাই দুঃখী দরিদ্র সাধারণ মানুষ। কোন রাজনৈতিক নেতার ক্ষতি হয়নি। এত যে স্কুল পোড়ানো হলো তাতে বিএনপি-জামায়াতের কোন ছেলেমেয়ের ক্ষতি হয়নি। তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়ে। ১০০০-এরও ওপরে যানবাহন ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াত-বিএনপির কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। আমরা যেন এ কথাটি মনে রাখি।
দুই নেত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি
একটা উদাহরণ দিলে দুই দলের নেত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে। আমি অনেকবার লিখেছিলাম এবং বলেছিলামও যে, খালেদা জিয়া কখনও কোন প্রশ্নের উত্তর দেন না। প্রেস কনফারেন্স করলে তো নয়ই। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সাংবাদিকরা কেন যান সেসব সংবাদ সম্মেলনে? এ ধরনের বক্তব্যে সংবাদকর্মীদের অনেকেই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু তাতে মূল যুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়নি। এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার উল্লেখ করি। এই অবরোধের সময় ব্যবসায়ীদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইল। তিনি তাঁর অন্যান্য কর্মসূচী বাতিল করে দুই ঘণ্টা তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। এরপর ব্যবসায়ী নেতারা গেলেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। তিনি দেখা করলেন না বরং একজন পার্শ্বচরকে পাঠালেন স্মারকলিপি গ্রহণ করার জন্য।
নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে তিনি এক গ্র্যান্ড সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। বিরাট এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করে উঠে চলে গেলেন।
এই যে দৃষ্টিভঙ্গি এটি হচ্ছে সাধারণ দূরে থাকুক, যারা বিভিন্ন পেশায় মর্যাদাবান তাদেরও নিম্নস্তরের মানুষ মনে করা। এটি মানুষকে অপমান, নিজের আত্মগরিমা জাহির করা। খালেদা জিয়া জানেন কিনা জানি না, একটি প্রবচন আছে, যে যত ওপরে উঠবেন তিনি তত বিনয়ী হবেন। এই মানুষকে মানুষ মনে না করা। যারা মর্যাদাবান তাদের পার্শ্বচর মনে করাÑ এটি ভদ্রতার কোন ব্যাপার নয়। আমি খুব অবাক হয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এটিএন বাংলার জ.ই. মামুন সাংবাদিক হয়ে সর্বসমক্ষে এই বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। এতে তিনি হয়ত বিএনপি-জামায়াতের অসন্তোষের মুখে পড়বেন কিন্তু তিনি নিজের ক্ষোভ জানিয়ে নিজের সম্মানটা রেখেছেন। অন্তত অনেকের প্রিয় আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদের কাছে একটি বক্তব্য আশা করেছিলাম এর নিন্দা জানিয়ে, কেননা তিনি অলোকিত মানুষ গড়তে চান। তিনি কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আলো হাতে ঘুরতে ঘুরতে? সময় বোধহয় করতে পারেননি রাজাকারদের বিরুদ্ধে কিছু বলার। সরকারকে স্বৈরাচারী বলার সময় অবশ্য তিনি পেরেছেন। এ হচ্ছে আমাদের সুশীল সমাজ, যারা এখন যথার্থ কারণেই সুশীল বাটপার হিসেবে পরিচিত।
আর এই হচ্ছে ১৮ দলের প্রধান দুই দল বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃতি। অবশ্য তাদের দোষ দেয়া যায় না। ঐতিহাসিকভাবে তারা ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী। ১৯৭১ সালে জামায়াতের আল বদর রাজাকাররা কী করেছিল তা আমাদের জানা। জিয়াউর রহমান কর্তৃক পুনর্বাসিত হওয়ার পর জামায়াত বিরোধীদের ধরে হাত-পায়ের রগ কেটে দিত যাতে বিরোধী ব্যক্তি মারা যায় বা পঙ্গু হয়ে যায়। রগকাটা রাজনীতি নামে এটি পরিচিত হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকার জন্য কমপক্ষে এক হাজার সেনা ও সেনাকর্মকর্তাকে খুন করেছিলেন 'দ-' দিয়ে। বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসে তখন এক গ্রেনেড হামলায়ই মেরে ফেলেছিল প্রয় ৩০ জন। পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন তারচেয়েও বেশি। ক্ষমতায় আসার পর পর তারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আর সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছিল তা নজিরবিহীন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এবং কিছুদিন আগে থেকেই মন্দির পোড়ানো, সংখ্যালঘুদের প্রাণ ও সম্পত্তিনাশ চলছিল। ক্ষমতায় থাকতে ১০ জন হিন্দুকে পুড়িয়ে মেরেছিল বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচনের দিন এবং পরে যে এমনটি ঘটবে তাও সবার অজানা ছিল না। এ ছাড়া খালেদা জিয়া সেদিন তার ভাষায় 'আন্দোলন' ও আমাদের ভাষায় সন্ত্রাস চালাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশে চাঙ্গা হয়ে আবার সুনির্দিষ্টভাবে নৌকার সমর্থক ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এমনও শোনা গেছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিল তাদেরও কিছুটা খুশি করে গিয়েছিল হামলাকারীরা।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলোÑ এরপর বিএনপির নেতৃবৃন্দ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরকম শঠতা তারা না করলেই পারতেন। এখন আবার মিডিয়া এই ঘটনায় হামলে পড়েছে। দুঃখ ইত্যাদি প্রকাশ করেছে। কিন্তু মিডিয়ার একাংশের উস্কানি যে ছিল তা কি অস্বীকার করা যাবে? নির্বাচন যে কোন মূল্যে স্থগিতের প্রচারণা তো তারাই বেশি করেছে। তবে, আমরা সৌভাগ্যবান বলতে হবে, মিডিয়ার একটি অংশ বিএনপি-জামায়াতের হঠকারিতাও তুলে ধরেছিল।
এই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃতি, একেবারে শ্বাপদের মতো। ক্ষমতায় না যেয়ে তারা যা করেছে এবং করছে ক্ষমতায় গেলে তারা যে কী করবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। সাধারণ মানুষ যদি এখনও তাদের না চিনে থাকেন তাহলে কপালে আরও দুঃখ আছে। এই যে প্রায় ১৫০ জন মানুষ সারা পেলেন এরা সবাই দুঃখী দরিদ্র সাধারণ মানুষ। কোন রাজনৈতিক নেতার ক্ষতি হয়নি। এত যে স্কুল পোড়ানো হলো তাতে বিএনপি-জামায়াতের কোন ছেলেমেয়ের ক্ষতি হয়নি। তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পড়ে। ১০০০-এরও ওপরে যানবাহন ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াত-বিএনপির কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। আমরা যেন এ কথাটি মনে রাখি।
শেখ হাসিনাও সংবাদ সম্মেলন করেন। আগেও করেছেন। কেউ বলতে পারবেন না তিনি কোন পেশাজীবী সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মর্যাদাহানিকর ব্যবহার করেছেন।
রাজনীতিতেও এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। বিএনপি কখনও আলোচনায় আসতে চায়নি। আলোচনার ছলে ভায়োলেন্স দিয়ে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে চেয়েছে। অতীতেও তারা এ কাজটি করেছে এবং সফল হয়েছে। এখনও তারা ভেবেছিল তারা সফল হবে। ভায়োলেন্সের মাধ্যমে যদি কোন দল বা ব্যক্তি দাবি আদায় করতে পারে তাহলে সমাজ রাষ্ট্রে তা একটি অতি ক্ষতিকর উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ, সবাই তখন সবকিছু ভায়োলেন্সের মাধ্যমে আদায় করতে চাইবে। (চলবে)
প্রকাশ: রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৪, ২৯ পৌষ ১৪২০
Related:
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (প্রথম কিস্তি)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৪, ২৬ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (দ্বিতীয় কিস্তি)
প্রকাশ:শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৪, ২৭ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর -(তৃতীয় কিস্তি)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৪, ২৮ পৌষ ১৪২০
__._,_.___