http://www.bkagoj1.com/print-edition/2014/11/07/3267.php
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন : রিপাবলিকানদের জয়জয়কার
যেমনটা ধারণা করা হয়েছিলো যুক্তরাস্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল মোটামুটি তেমনটিই হয়েছে অথবা বলা যায়, রিপাবলিকানরা আশাতিরিক্ত জয় পেয়েছেন, ডেমক্রেটরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন।ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ডেমক্রেট সিনেটর জো মানকিন (৩য়) তাই বলেছেন, 'এটা আমাদের পশ্চাতে বেত্রাঘাত।' নির্বাচনী এ ফলাফল প্রেসিডেন্ট ওবামার নীতির ওপর ভোটারদের অনাস্থার বহি:প্রকাশ। এ নির্বাচনে শুধু যে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমক্রেটদের হাত থেকে রিপাবলিকানদের (জিওপি) হাতে গেছে তা নয়; কংগ্রেসের ওপরও জিওপি-র আধিপত্য বেড়েছে, কারণ তারা অধিক সংখ্যক আসনে জিতেছেন। ডেমক্রেটরা এমনকি গভর্নর পদেও বেশ ক'টি সীটে হেরেছেন। ম্যারিল্যান্ড, আরকানসাস, ইলিনয়েস বা ম্যাসাচুসেট স্টেট ডেমক্রেট সংখ্যাগরিষ্ট হলেও ওখানেও তারা পরাজিত হয়েছেন।
জানুয়ারী থেকে সিনেট রিপাবলিকানদের হাতে এবং এর নেতা হবেন কেন্টাকির সিনেটর মিচ ম্যাককলি। ২০০৬-এর পর এবারকার বিরাট বিজয়ের জন্যে তাকে অনেকটা কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে। সিনেটে জিওপি-র দরকার ছিলো ৬টি আসন, পেয়েছেন ৮টি। যেসব স্টেটে হারার সম্ভবনা ছিলো তাও কাটিয়ে উঠেছেন। ডেমক্রেটদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন আইওয়া, কলোরাডো, মন্টানা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, সাউথ ডাকোটা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং আরকানসাস-এর সীট। নির্বাচনের ঠিক আগখান দিকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, তারা সিনেট হারাবেন না, তার সেই আশায় ছাই পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা রিপাবলিকানদের অভিনন্দিত করে বলেছেন, মঙ্গলবার রাতটি ওদের জন্যে ছিলো চমত্কার রজনী। অবশ্য তিনি এও বলেছেন, জানুয়ারী থেকে আমার কাছে এমন কিছু বিল আসবে যা আমি স্বাক্ষর করতে পারবো না। তিনি ডেমক্রেট-রিপাবলিকানদের যৌথভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। এর জবাবে অবশ্য ম্যাককলি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যদি একপেশে কিছু করেন, তবে তিনি ভুল করবেন। উল্লেখ্য যে, প্রেসিডেন্টের ভেটো ক্ষমতা আছে এবং তা উল্টে দেয়ার জন্যে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা জিওপি-র নাই। সুতরাং আগামী দুই বছর ক্ষমতার রশি টানাটানিতে কখনো-সখনো অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও প্রেসিডেন্টের হাতে 'বিশেষ ক্ষমতা' রয়েছে, যা প্রয়োজনে তিনি ব্যবহার করতে পারবেন।
এই বিরাট বিজয়ের পর এখন দেখার বিষয় রিপাবলিকানরা কিভাবে এগিয়ে যেতে চান। হবু সিনেট নেতা ম্যাককলি এবং হাউজ স্পীকার ওহাইও-র রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জন এ. বেহণার ইতোমধ্যে নীরবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যস্ত এবং জানুয়ারিতে বেশ কিছু বিল (প্রস্তাবনা) পাশের ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যাতে তারা প্রমান করতে চাইবেন যে রাষ্ট্র শাসন করতে তারা পারদর্শী। সবচেয়ে দেখার বিষয় হবে, রিপাবলিকানরা কিভাবে প্রেসিডেন্টকে হ্যান্ডেল করেন এবং প্রেসিডেন্ট কিভাবে হাউস ও সিনেট ম্যানেজ করেন। সর্বশেষ সংবাদে জানা যায়, সিনেটে জিওপি ৫২ সীট পেয়েছে, আরো ১টি পেতে পারেন। ডেমক্রেট ৪৩, আরো ২টি বাড়তে পারে। বাকি ২টি সীট স্বতন্ত্র। হাউজে রিপাবলিকানরা ২৪৩টি আসন জিতেছেন, আরো ৩টি জিততে পারেন। ডেমক্রেটদের উল্টো বাতাসের মধ্যেও সু-সংবাদ হলো, পেনসিলভানিয়ার ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান গভর্নরকে হারিয়ে ডেমক্রেট নির্বাচিত হয়েছেন। লুইজিয়ানার সিনেট সীটে কোন প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৫০% না পাওয়ায় সেখানে ৬ই ডিসেম্বর 'রান-অফ' ভোট হবে। ২০০৭ থেকে সিনেটের বর্তমান নেতা ডেমক্রেট হ্যারী রিড রিপাবলিকানদের স্বাগত জানিয়ে একসাথে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। ওরিগন ও ওয়াশিংটন স্টেটে ভোটাররা 'মারিজুয়ানা' বৈধ করেছেন।
ডেমক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে এলেও তারা বসে থাকবেন না। দলের এ বিপর্যয়ে লাভবান হবেন হিলারী ক্লিন্টন। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে রিপাবলিকানদের জোয়ার ঠেকাতে নেতৃবৃন্দ হয়তো হিলারীকে চাপ দেবেন যাতে তিনি ত্বরিত প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, যাতে দল জাতীয়ভাবে তার পেছনে সমবেত হতে পারে। রিপাবলিকানদেরও লক্ষ্য হবে দলের এ বিজয় সু-সংহত করে ২০১৬-তে হোয়াইট হাউস ছিনিয়ে নেয়া। তাতে সিনেট আবার ছুটে গেলেও ক্ষতি নেই। বস্তুত: সামনের বছর থেকেই ধীরলয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করবে। রিপাবলিকান গভর্নররা এতে উজ্জীবিত হবেন। এরমধ্যে বাতাসে গুঞ্জন রয়েছে হিলারি ক্লিন্টন, জেব বুশ, ক্রিস ক্রিস্টি, রান্ড পল, মার্কো রুবিও, টেড ক্রুজ সিরিয়াসলি প্রতিদ্বন্দিতায় নামার কথা ভাবছেন। প্রশ্ন হলো, ডেমক্রেটদের কেন এই বিপর্যয়? উত্তর, সবাই ওবামার বিরুদ্ভে। ভোটাররা মনে করছেন 'ওয়াশিংটন সঠিক পথে নেই'। তাই ওবামার 'হোপ' শ্লোগান মার খেয়েছে ম্যাককলির 'টাইম ফর চ্যেঞ্জ' শ্লোগানের কাছে।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ৫ই নভেম্বর ২০১৪।
__._,_.___