Banner Advertiser

Friday, June 5, 2015

[mukto-mona] Fw: The significance of "Six Point Movement" and It's Impact on Independence of Bangladesh !!!!!





On Friday, June 5, 2015 9:53 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:


I urge you all to read this article to know the historical six points movement and its impact on achieving our Independence :






__._,_.___

Posted by: Muhammad Ali <man1k195709@yahoo.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___

[mukto-mona] বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক



বিষয়:- বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
আলোচক:- লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ডা. দিপু মনি এবং দেলোয়ার হোসেন।
তারিখ : ০৫-০৬-২০১৫

বিষয়:- বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। আলোচক:- লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ডা. দিপু মনি এবং দেলোয়ার হোসেন।
youtube.com




__._,_.___

Posted by: Farida Majid <farida_majid@hotmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___

[mukto-mona] Story behind the veil : BNP's birth & Jadu Miah episode.........[From the memory lane]



জিয়াউর রহমানের সেনানিবাসের বাড়িতে গভীর রাতে বসত গোপন বৈঠক। বিএনপির জন্ম সেখানেই। সেই জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর স্টিফেন আইজেনব্রাউন। একই বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদের সঙ্গেও।
মিজানুর রহমান খানের তিন কিস্তির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পড়ুন:

বিএনপির জন্ম যেভাবে সেনানিবাসে
মার্কিন দূতাবাসকে গোপন বৈঠক সম্পর্কে জানাতেন যাদু মিয়া


বিএনপি গঠনে রাজনীতিকেরা প্রথম বৈঠক করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান সেনানিবাসের বাড়িতেই। বৈঠকগুলো হতো গভীর রাতে। এসব গোপন বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো ঢাকার মার্কিন দূতাবাসকে। জিয়াউর রহমানের পক্ষে এ কাজ করতেন প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) করতেন। তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হলেও কথা রাখেননি জিয়া। এমনকি তাঁর মৃত্যু আজও পরিবারের কাছে রহস্যাবৃত।
ঢাকার তখনকার মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর স্টিফেন আইজেনব্রাউনের কাছে যাদু মিয়া গোপন বৈঠক সম্পর্কে তথ্য দিতেন। আইজেনব্রাউনের পেশাগত কূটনৈতিক-জীবনের শুরু পঁচাত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ ডেস্কে।
আইজেনব্রাউন ২০০৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রবিষয়ক কথ্য ইতিহাস কর্মসূচির পরিচালক চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডিকে সাক্ষাৎকার দেন। এতে তিনি বিএনপির জন্মের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। ১৯৭৬-৭৮ ও ১৯৯৬-৯৮ সালে তিনি ঢাকায় মার্কিন পলিটিক্যাল অফিসার ও পলিটিক্যাল কাউন্সেলর ছিলেন।
যেভাবে আছে সেভাবেই থাক: সম্প্রতি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইজেনব্রাউন ও চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য বা ব্যাখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। সাবেক পেশাদার মার্কিন কূটনীতিক স্টুয়ার্ট কেনেডি এখন ভার্জিনিয়ায় থাকেন। এই প্রতিবেদকের কাছে গত ৩০ আগস্ট পাঠানো ই-মেইল বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, 'আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে অল্পই জানি। আমি কিছু বলে যদি ইতিহাসে ইতিবাচক কিছু যোগ না করতে পারি, তাহলে তা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ ঘটাবে। তার চেয়ে বরং সাক্ষাৎকারগুলো যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক।' আইজেনব্রাউন এই প্রতিবেদকের কাছে শুধু তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠাতে সম্মত হন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে আইজেনব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। আইজেনব্রাউন জানিয়েছেন, তিনি এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনসংক্রান্ত সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির জন্ম-প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মশিউর রহমান যাদু মিয়া এবং তিনি বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখেন। তবে ১ সেপ্টেম্বর মওদুদ আহমদ এক প্রশ্নের জবাবে আইজেনব্রাউনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের সুযোগ ঘটেছিল কি না, তা স্মরণ করতে পারেননি।
ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন কূটনীতিক আইজেনব্রাউন সেনানিবাসে জেনারেল জিয়াউর রহমান কীভাবে বিএনপির জন্ম দিয়েছিলেন, তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। ২০০৪ সালে চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডির একটি প্রশ্নের সূত্রে বিএনপি প্রসঙ্গ আসে। আইজেনব্রাউন কথা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে কেন্দ্র করে তাঁর কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে 'অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কের' কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা ও ইত্তেফাক-এর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরিবারের সঙ্গে। আবুল হাসান চৌধুরী তাঁর সঙ্গে জানাশোনার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
আইজেনব্রাউন বেশ নাটকীয়ভাবে এবং যতটা সম্ভব রসিয়ে বিএনপির জন্মবৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, '১৯৭৮ সালে বিএনপির জন্মের সঙ্গে আমার গল্পের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। পুরান ঢাকায় (যাদু মিয়ার বাসা ছিল মগবাজারে) আমাদের গোপন বৈঠকগুলো হতো। এর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি ডান ও বামপন্থীদের মধ্যকার প্রবল সক্রিয় অংশকে একত্র করেছিলেন। একদিকে মোল্লা, অন্যদিকে বামপন্থী—উভয়ের কাছ থেকে তিনি পরামর্শ নিতেন। বিএনপি গঠন-প্রক্রিয়ায় সেনানিবাসে যেসব গোপন বৈঠক হয়েছিল, তার বিবরণ আমি পেতাম। সে বিষয়ে যিনি আমাকে অবহিত করতেন, তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। যিনি পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মিনিস্টার হয়েছিলেন।'
আইজেনব্রাউন বলেছেন, বাম ও ডানপন্থীদের নিয়ে দল গঠনের একটি প্রক্রিয়া তখন ছিল। মন্তব্য চাওয়া হলে মওদুদ আহমদ গত ২১ আগস্ট প্রথম আলোকে বলেন, 'সেটা তো একদম ঠিক কথা। সেটাই ঘটেছিল। কারণ, ন্যাপ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সংখ্যায় অনেক। প্রায় ৭০ জন এমপি ছিলেন ন্যাপ থেকেই। আপনি যদি তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেন, তাহলে দেখবেন বামপন্থী দল থেকে বেশি এসেছিল। তখন শহীদ জিয়ার দলে আমরা যাঁদের বামপন্থী বলি, তাঁদের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে বিএনপিকে বলা যেত লেফট অব দ্য সেন্টার। যদিও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে বিধানটা বাহাত্তরের সংবিধানে ছিল, সেটা তিনি তুলে দিয়েছিলেন। '
'এক সপ্তাহ পরে ভ্রু নাচ': আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন যে তিনি বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াশিংটনকে বিস্তারিত অবহিত রাখতেন। তাঁর কথায়, '৭৮ সালের বসন্তে ঢাকার রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ওয়াশিংটনে প্রতিবেদন পাঠাতে পাঠাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখনকার বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তেমন কোনো গল্প বলার কিছু নেই। কারণ, তখন রাজনীতি উন্মুক্ত ছিল না। তবে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একটা সম্পর্ক বজায় রাখতে আমি সচেষ্ট ছিলাম।' আইজেনব্রাউনের এই সাক্ষাৎকারে অবশ্য বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়ার প্রশ্নে শুধু যাদু মিয়ার সঙ্গেই ওই সময় তাঁর নিবিড় যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন যাদু মিয়া। দুই প্রবীণ সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ও এবিএম মূসা অবশ্য নিশ্চিত করেন যে ভাসানী তাঁকে নিয়ে সংশয়গ্রস্ত ছিলেন। সাবেক ন্যাপের (ভাসানী) নেতা রাশেদ খান মেনন এ বিষয়টি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি মিশ্র চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গোঁড়া বুর্জোয়া স্বভাবের সঙ্গে তাঁর একটি গণমুখী দিকও ছিল। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। একাত্তরে কলকাতায় গেলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি নিঃসন্দেহে বড় চরিত্র। সিনিয়র মিনিস্টার থাকাকালে হাসপাতালে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ভাসানী ন্যাপের দক্ষিণপন্থী গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। বাহাত্তরের ১ অক্টোবর রাতে আমি ভাসানীর মুখে পাকিস্তানিদের দালালি করার জন্য জেলহাজতে থাকা যাদু মিয়াকে ভর্ৎসনা করতে শুনেছিলাম।' অপর এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, শুধু যাদু মিয়া নন, সেদিন জেনারেল জিয়ার দল গঠনের সমর্থকদের অনেকেই বর্তমান সরকারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে আছেন।
জেনারেল জিয়া যখন সেনানিবাসের বাড়িতে গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিলেন, তখন এইচ এম এরশাদ সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান। এরশাদের শ্যালক মহিউদ্দিন হলেন যাদু মিয়ার জামাতা। এরশাদ মহিউদ্দিনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও যাদু মিয়ার ছেলে শফিকুল গনি স্বপনকে প্রতিমন্ত্রী করেন। যাদু মিয়ার মেয়ে মনসুরা মহিউদ্দিন (মহিউদ্দিনের স্ত্রী) সাংসদ নির্বাচিত হন। যাদু মিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে রিতা রহমানের বিয়ে হয় মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জেলহত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পান। পঁচাত্তরে তিনি ফারুক-রশীদদের সঙ্গে লিবিয়া যান। বিএনপি তাঁকে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করেছিল। আওয়ামী লীগের বিগত আমলে তাঁকে তলব করা হলে তিনি আর দেশে ফেরেননি।
স্টিফেন আইজেনব্রাউনের বর্ণনায়, 'আমি তৃতীয় যে ব্যক্তির দিকে নজর রাখছিলাম, তিনি পুরান ঢাকায় বাস করতেন। তাঁর নাম মশিউর রহমান। তিনি যাদু মিয়া বা ম্যাজিক ম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পঁচাত্তরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে বামপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনে তিনি সহায়তা দিয়েছিলেন। এতে প্রতীয়মান হয়েছিল যে যাদু মিয়া সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। বাস করতেন পুরান ঢাকায়। আর বেলকনিতে বসে হুক্কা টানতেন। আমরা একত্রে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে মতবিনিময় করতাম। এ ঘটনার এক সপ্তাহ কিংবা আরও কিছুটা সময় পরে এক তরুণ মার্কিন দূতাবাসে এলেন। আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তরুণটি জানালেন যাদু মিয়া আমার সঙ্গে অনতিবিলম্বে সাক্ষাৎ করতে চান। সুতরাং আমি রিকশায় চেপে পুরান ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। তাঁর গায়ে বেশ সৌন্দর্যখচিত জামা-কাপড় লক্ষ করলাম। বেশ ফিটফাট। দাড়ি কামিয়েছেন। তাঁকে এমন কেতাদুরস্ত আমি আগে দেখিনি। এবারে চোখে পড়ল না হুক্কাটিও। আমি তাঁর ভ্রু নাচন (ক্ষমতার ঝিলিক) দেখলাম। একেবারে একজন নতুন মানুষ। ৭০-এর কোঠায় দাঁড়িয়ে কেমন নবীন হয়ে উঠেছেন। তিনি আমাকে বললেন, জেনারেল জিয়া একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান।'
উল্লেখ্য, জিয়া কখন রাজনৈতিক দল করতে চান, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরাট প্রশ্ন। সে কারণে মওদুদ আহমদকে প্রশ্ন করি, আপনার কি এটা স্মরণে আছে যে জেনারেল জিয়া আপনাদের ডেকে দল করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন, নাকি আপনারাই তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন। মওদুদ বলেন, 'আমরা তাঁকে সহায়তা দিয়েছি। তিনি ছিলেন খুবই তীক্ষ।' মওদুদ আহমদ ২০০০ সালে প্রকাশিত গণতন্ত্র এবং উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ করেন, 'রাজধানীর রাজপথে সৈনিক ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল রাতারাতি তাঁকে এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। এই জনপ্রিয় সমর্থন অবলম্বন করে জিয়া সাফল্যজনকভাবে তাহের ও মোশতাককে দমন করতে সফল হন।
গভীর রাতে প্রথম সভা: '৭৮ সালের বসন্তে মশিউর রহমান আইজেনব্রাউনকে বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান দল করতে চান। কিন্তু জিয়ার জানা নেই যে এটা কীভাবে করতে হবে। সুতরাং রাজনীতিতে যাঁরা অবসরে গেছেন, তিনি তাঁদের একটা সভা ডাকলেন। এই সভা ডাকা হয়েছিল গভীর রাতে। জিয়া তাঁদের কাছ থেকে উপদেশ নিলেন। সেই বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, যাদু মিয়া আমার কাছে তাঁদের নাম প্রকাশ করলেন।
আইজেনব্রাউনের সাক্ষাৎকারে সেই নামগুলোর উল্লেখ নেই। তবে সেনানিবাসের বাড়িতে পরবর্তীকালে গভীর রাত কোনো ব্যাপারই ছিল না। গভীর রাতই ছিল আকর্ষণ। মওদুদ আহমদের মতে, 'ক্ষমতায় আসার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জিয়া ব্যক্তিগতভাবে ও গোপনে নিজের অফিস ও বাড়িতে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে সলাপরামর্শের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।'
এ বিষয়ে মওদদু আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা তো প্রতিদিন রাত তিনটা-চারটা পর্যন্ত ওনার ওখানে আলোচনা করতাম।' তাঁর তথ্য অনুযায়ী, '৭৭ সালের শেষ ডিসেম্বর বা '৭৮ সালের জানুয়ারির এক রাতে জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনে বসে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কাঠামো তৈরি করা হয়। '৭৮ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাগদল করা হয়।'
সেনানিবাসের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই প্রথম বৈঠক সম্পর্কে আইজেনব্রাউন বলেন, 'আমি বেশ বুঝতে পারলাম সেই সভায় বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের সম্মিলন ঘটেছিল। যাদু মিয়ার মতো লোক ছিলেন বামপন্থা থেকে। আর ডানপন্থীদের মধ্যে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা। বাস্তবে তাঁরা প্রত্যেকেই ষাটের দশকের শেষভাগে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন সেই সব লোক হয় কারাগারে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ঢাকার রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তখন যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হয় অতি বাম না হয় অতি ডান। সুতরাং জিয়া তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে কয়েকজনকে গোপনে সেনানিবাসে একত্র করেছিলেন। সেই বৈঠক মধ্য রাতে হয়েছিল।'
উল্লেখ্য, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারকে স্টিফেন আইজেনব্রাউন ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রদূত পেয়েছিলেন। বোস্টার '৭৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরকে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ পাঠিয়েছিলেন। বোস্টার এতে লিখেছেন, 'বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে চরম উপদলীয় কোন্দল বিরাজমান। তাদের সংগঠনের দলীয় কাঠামো এবং সদস্যপদ অস্পষ্ট। মওলানা ভাসানীর নামমাত্র নেতৃত্বে পরিচালিত পিকিংপন্থী বামপন্থীরা পুনর্গঠিত হয়েছেন। এর নেতৃত্ব দিয়েছেন মশিউর রহমান। তিনি দলের মহাসচিব হিসেবে আবির্ভূত হন। '৭৪ সালে ন্যাপ তিক্ত অভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। মশিউর রহমান ও ডা. আলীম আল রাজি সংশোধনবাদীদের পক্ষে অবস্থান নেন। ওই সময় ন্যাপে বিতর্ক ছিল, সর্বহারার একনায়কতন্ত্র কায়েমের জন্য খাঁটি আদর্শবাদের নীতিতে অবিচল থাকা নাকি সমন্বয় ও সংশোধনবাদের পথে শ্রেণীহীন সমাজ অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া। কাজী জাফর আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিলেন। '৭৪ সালে ন্যাপ-ভাসানী বিভক্ত হয়। কাজী জাফর ও মেনন গঠন করেন ইউপিপি। ডা. আলীম আল রাজিও নিজের দল গঠনের কথা ভাবছেন। তাই তিনি যাদু মিয়াকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'
১৯৭৬ সালে ভাসানীর মৃত্যুর পর যাদু মিয়া ন্যাপের সভাপতি হন। চল্লিশের দশকে তেভাগা আন্দোলন ছিল উত্তাল। তদনারায়ণ বর্মণ নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় যাদু মিয়া প্রধান আসামি হন। তিনিই গুলি করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল। সেই খুনের বিচার হয়নি। আলিপুরের আদালতে মামলা প্রত্যাহার হয়। রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, 'যাদু ভাই জিয়ার সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমি আর হায়দার আকবর খান রনো তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাদের বলেছিলেন, "বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর্মি ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তাই বুঝেশুনে চলতে হবে"।'
স্টিফেন আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, 'যাদু মিয়া আমাকে বললেন, সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিস্তারিত আপনার কাছে প্রকাশ করতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যাদু মিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে আমি দূতাবাসে ফিরলাম। সব কথা খুলে বললাম ক্রেইগ বেক্সটারকে (পলিটিক্যাল কাউন্সেলর)। তিনি তা জানিয়ে দিলেন রাষ্ট্রদূতকে। এ সম্পর্কে তখন পর্যন্ত আমাদের কিছুই জানা ছিল না। সুতরাং আমরা এ কথা দ্রুত জানিয়ে দিলাম ওয়াশিংটনকে। এর কয়েক দিন পর যাদু মিয়া আবার আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তখন আমাকে সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত রাত্রিকালীন ধারাবাহিক বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। জিয়া কী করতে চান, কার কী চিন্তাভাবনা, কে কী বলেছেন ইত্যাদি। আমি তখন এসব আলাপ-আলোচনার বিষয় সম্পর্কে রিপোর্ট করেছি ওয়াশিংটনকে। সেই ঘটনাবলি সম্পর্কে আজ যাঁরা কৌতূহলী, তাঁরা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আর্কাইভে কেব্ল (তারবার্তা) খুঁজে পেতে পারেন। সেখানেই রয়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের অনুপুঙ্খ ইতিহাস।'

২ জিয়া রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণে যাদু মিয়াকে ব্যবহার করেছিলেন
'স্টিফেন আইজেনব্রাউনকে অনেকবারই আমাদের বাসায় দেখেছি', স্মরণ করেন মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ছেলে আনোয়ারুল গনি। তাহলে আপনিই কি সেই তরুণ, যে আইজেনব্রাউনকে ডেকে আনতে মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন? প্রতিবেদকের এ প্রশ্নে সায় দেন আনোয়ারুল গনি। তাঁর বয়স এখন ৫৯। ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে কথা হয়। দীর্ঘ আলাপে প্রকাশ পায়, জিয়া যাদু মিয়াকে তাঁর রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণে ব্যবহার করেছেন। আবার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেও ছাড়েননি। তবে জিয়া কিংবা বিএনপি সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি গনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জিয়া দল গঠনে সেনা গোয়েন্দা সংস্থাকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে যাদু মিয়াকে গৃহবন্দী ও তাঁর দুই ছেলেকে (আনোয়ারসহ) গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে জিয়া তাঁর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর যাদু মিয়া আবার জিয়ার সঙ্গে সক্রিয় হন। '৭৭ সালের গণভোট প্রশ্নে যাদু মিয়ার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের মতভেদ হয়। সে কারণে তাঁরা হয়রানির শিকার হন। আনোয়ারুল গনির ভাষায়, 'আমি যদিও ন্যাপ করতাম, কিন্তু আমার ভাই তরিকুল গনি (বর্তমানে সুদানে) তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সাদা পোশাকের পুলিশ বাসা থেকে আমাদের ধরে নিয়ে গেল। প্রথমে মতিঝিল, পরে রমনা থানায়। ডিজিএফআই ও এনএসআই থেকে লোক এসে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করল। একদিন জিয়া নিজেই রমনা থানায় ফোন করলে আমরা ছাড়া পাই।'
'৮৫ সালের ১১ এপ্রিল যাদু মিয়ার ভাই মোখলেসুর রহমান সিধু মিয়া জাতীয় জাদুঘরের কথ্য ইতিহাস প্রকল্পকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেন। বরেণ্য শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম যৌথভাবে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। প্রথম আলোকে তাঁরা উভয়ে তা নিশ্চিত করেন। দুই ভাতিজার গ্রেপ্তারের ঘটনা সম্পর্কে সিধু মিয়া তাঁর ওই অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বলেন, 'গণভোটের যে পোস্টার দেয়ালে সাঁটা হয়েছিল, সেগুলো নাকি তারা ছিঁড়েছিল, সেই অভিযোগে তাদের আটক রাখা হয়। যাদু মিয়ার দুই ছেলেকে প্রায় তিন সপ্তাহ, মানে গণভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত থানাহাজতে আটক রাখা হয়। তারা যাদু মিয়ার ছেলে, শুধু এ কারণেই আটক করা হয়েছিল।' সিধু মিয়ার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জিয়ার বিএনপি গঠন-প্রক্রিয়ায় মদদ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি অর্থব্যয়ের দিকটিও ফুটে উঠেছে।
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিধু মিয়া (ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের বাবা) পেশায় ব্যবসায়ী হলেও প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। তিনি স্বীকার করেন, বিএনপি গঠন-প্রক্রিয়ায় তিনি নেপথ্যে তাঁর ছোট ভাইকে নানাবিধ পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সেটা ছিল 'গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে, ছোট ভাইকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়।'
গণভোট নিয়ে বিরোধ: সিধু মিয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'জিয়াউর রহমান হঠাৎ করেই যাদু মিয়ার সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত নিলেন। যাদু মিয়া তো একেবারে খেপে লাল। সে আমাকে বলল, "জিয়া আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। আমি একটা সংবাদ সম্মেলন করব।" আমি বললাম, "কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করবে? এখন তো মার্শাল ল চলছে।" যাদু বলল, "না, সংবাদ সম্মেলন করবই"।'
সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় যাদু মিয়ার মগবাজারের বাসা 'লুতেশিয়া'য়। সিধু মিয়ার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, যাদু মিয়ার সেই সংবাদ সম্মেলনের বিবরণ কোনো দিন ছাপা হয়নি। কারণ, সেটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম' সংযোজনের জন্য কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন। যাদু মিয়া তাঁর সংবাদ সম্মেলনে জিয়ার সেই দাবির সূত্র ধরে বললেন, 'উনি তো "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম" যোগ করার কথা বললেন। তার আগে একটা লাইন ছিল "আউজুবিল্লাহি মিনাসশায়তোয়ানির রাজিম"—ওটা দেন নাই কেন?' এ ধরনের প্রশ্ন তুলে তিনি বেশ সমালোচনা করেন। এরপর যাদু সিধু মিয়াকে টেলিফোন করে বলেন, 'আমি তো যা বলার বলেছি। এখন তো আমার বাড়ি ঘেরাও। বাড়ি থেকে কাউকে বেরোতে দিচ্ছে না, কাউকে ভেতরেও আসতে দিচ্ছে না। যাদু মিয়াকে এভাবে তিন দিন রাখা হয়েছিল।'
যাদু মিয়া রেহাই পেলেন: জিয়া নিজে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে পাঁচ বছর (১৯৫৯-৬৪) ছিলেন। দল ভাঙা-গড়ায় তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে পদ্ধতিগতভাবে ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি তথ্য হাজির করেছেন সিধু মিয়া। তাঁর কথায়, 'ওই ঘটনার সময় ডিজিএফআইয়ের প্রধান আমিনুল ইসলামের (এরশাদের প্রথম মন্ত্রিসভার যোগাযোগ উপদেষ্টা) পক্ষ থেকে একটা ফাইল দেওয়া হলো জিয়াউর রহমানের কাছে। তাতে যাদু মিয়াকে সামরিক আইনে গ্রেপ্তার করার কথা বলা হলো। জিয়া এরশাদসহ অন্যদের ডাকলেন। এরশাদ তখন ডেপুটি চিফ। মঞ্জুর ছিলেন সিজিএস। এরশাদ প্রথমেই নাকি বলেছিলেন (এটা যাদুর কাছ থেকে শোনা), "যাদু মিয়া আমার আত্মীয়। কাজেই আমি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে থাকতে চাই না।" জিয়া এ কথা শুনে বলেছিলেন, "ইউ আর এক্সকিউজড।" এরশাদ উঠে চলে গিয়েছিলেন। মঞ্জুরের ওপর দায়িত্ব চাপে। মঞ্জুর বলেছিলেন, "যাদু মিয়া যে সামরিক আইন লঙ্ঘন করেছেন, সেটা আপনি কী করে জানলেন?" জিয়ার জবাব, "আমার কাছে টেপ আছে।" টেপ বাজানো হলো। টেপ শুনে দেখা গেল, সামরিক আইনকে তিনি আক্রমণ করেননি। জিয়াকেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। এসব শোনার পর মঞ্জুর বললেন, "আমার ধারণা, মশিউর রহমান সামরিক আইনের কোনো ধারাই লঙ্ঘন করেননি। সুতরাং তাঁকে গ্রেপ্তার করার আমি কোনো যুক্তি দেখি না"।'
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল গনি প্রথম আলোকে বলেন, 'আমার বাবা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কারণ গণভোট ছিল জিয়ার ব্যক্তিগত বৈধতার প্রশ্নের। এর সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি ও গণতন্ত্রে উত্তরণের বিষয় ছিল না।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হাজতে থাকাকালে ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের লোক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ নয়, আমরা দুই ভাই ১১ দিন হাজতবাস করেছিলাম। দুইবার রিমান্ডে আনা হয়। আমার বিয়ের তারিখ স্থির ছিল। হাজতবাসের কারণে তা পিছিয়ে যায়।'
জিয়ার দুঃখ প্রকাশ: ওই সময় এনএসআইয়ের প্রধান ছিলেন এ বি এম সফদার। সিধু মিয়ার বিবরণ অনুযায়ী, 'জিয়া ওই বৈঠকে সফদারকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনার কী মত?" সফদার নাকি বলেছিলেন, "আমরা তো আগের সব খবর জানি স্যার। উনি তো আমাদের বন্ধু। হি ইজ অ্যা ফ্রেন্ড অব দি অথরিটি। আপনার সঙ্গে তো তাঁর অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পক্ষে আমি পর্যাপ্ত ভিত্তি বা কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।" যাদু মিয়া সে-যাত্রায় রেহাই পান। এরপর গণভোট হলো। গণভোটে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট পড়ল। বিদেশি পত্রপত্রিকায় কঠিন সমালোচনা বেরোল। ২১ এপ্রিল, ১৯৭৭ জিয়া রাষ্ট্রপতির শপথ নেন। এরপর কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে যান। ফিরে এসে জিয়া যাদুকে ডাকেন। "ভাই, এবার আপনি ছাড়া কেউ আর আমার মানসম্মান রক্ষা করতে পারবে না। মানসম্মান বলতে আর কিছু নেই।" যাদু মিয়া বললেন, "কেমন করে করব?" জিয়া বলেছিলেন, "আমাকে জনসাধারণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে দেন।" জিয়ার সঙ্গে তাঁর এসব কথা হলো অনেক রাত পর্যন্ত। তারপর সকাল ছয়টার দিকে যাদু মিয়ার ফোন পেলাম। ঈষৎ শঙ্কিত গলায় আমি বললাম, "কী হয়েছে তোমার?" বলল, "না, কিছু হয়নি। আপনি একটু আসেন।" আমি গেলাম। যাদু বলল, "জিয়া আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তো তাঁকে কথা দিয়ে এসেছি যে তাঁকে আমি জনসাধারণের সরাসরি ভোটে পাস করাব।" আমি বললাম, "কথা দিয়ে এসেছ, অথচ তুমি কি তা পারবে? তুমি একলা কথা দিয়ে এলে কেন? জিয়াউর রহমানকে জনসাধারণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষমতা কি তোমার আছে?" যাদু মিয়া বলল, "না, আমি পারব না বলেই আপনাকে খবর দিলাম। কথা যখন দিয়ে এসেছি, এখন বলেন, আমি কী করতে পারি"?'
স্টিফেন আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে অবশ্য যাদু মিয়ার সাংগঠনিক সামর্থ্যের প্রশংসা করেন। আইজেনব্রাউনের কথায়, 'যাদু মিয়ার কারণেই নতুন রাজনৈতিক দল বিএনপি '৭৯-র নির্বাচনে ২০৮টি আসন পেয়েছিল।'
সবুর খানের কাছে ব্র্যান্ডি: সিধু মিয়া তাঁর ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা একটা রাজনৈতিক রণকৌশল ঠিক করেছিলাম। আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশটিকে আমি বলেছিলাম "সাইলেন্ট মেজরিটি"। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু বলতেও সাহস পায় না। আবার তাকে সমর্থনও করতে পারছিল না। আমি বললাম, "এদের ডাকা যেতে পারে।'' যাদু মিয়া আমাকে বলল, "আওয়ামী লীগ সামরিক বাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই প্রস্তাবিত জোটে আওয়ামী লীগের সে রকমের কোনো প্রতিষ্ঠিত নেতা আসতে পারবেন না।" আমি বললাম, "তাহলে ব্যাপারটা হবে কী করে? তাদের বাদ দিয়ে কিছু হলে সেটা হবে অত্যন্ত দুর্বল কিছু।" যাদু মিয়া বলল, "মুসলিম লীগকে আনতে পারব।" আমি বললাম, "মুসলিম লীগ মানেই তো সবুর খান। তাঁকে তো বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করবে না।" তখন যাদু বলল, "একটা কাজ করা যায়, সবুর ভাইকে কিছু ভালো ব্র্যান্ডি-ট্র্যান্ডি দিয়ে তাঁর সঙ্গে আজ রাতেই একটু কথা বললে হয় না! তাঁকে যদি কিছুদিনের জন্য সরিয়ে দিতে পারি, আর শাহ আজিজকে মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট করতে পারি, অর্থাৎ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সবুর খান যদি সরে যায়, তাহলে শাহ আজিজ আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে।" সবুর সাহেবের কাছে খুব ভালো ব্র্যান্ডি নিয়ে গেলেন যাদু মিয়া। আর রাতের মধ্যেই সবুর সাহেব দু-এক মাসের জন্য শাহ আজিজকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেন। এসব কিছু করার জন্য সব ধরনের টাকাকড়ির জোগান দিয়েছিল সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনার পরপরই শাহ আজিজ যাদু মিয়ার সঙ্গে যোগ দিলেন। এ ঘটনা ঘটেছিল "জাগদল" হওয়ার পর।'
উর্দু লেখা ও পায়ে হাঁটা: এভাবে একটা রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি হলো। এর মধ্যে কাজী জাফরও (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায়) ভিড়লেন। যাদু মিয়া ন্যাপকে আনলেন। সিধু মিয়ার মতে, এই প্লাটফর্ম থেকেই জিয়াকে প্রেসিডেন্ট করা হলো। কারণ, তাঁরা জানতেন যে জিয়াউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তাঁর একটা জনপ্রিয়তা ছিল এবং সত্যি বলতে কি, তাঁকে রাজনীতিবিদ বানানোর যে প্রক্রিয়া, সেটা ছিল খুবই মজার একটা ব্যাপার।
সিধু মিয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'জিয়া কিন্তু বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন না। তিনি শেষের দিকে যা কিছুতে সই করতেন, সেটা করতেন শুধু বাংলায় 'জিয়া' লিখে আপনারা যদি তাঁর সই করা ফাইল ইত্যাদি দেখেন, তাহলে এ ব্যাপারটা লক্ষ করবেন। করাচিতে তিনি লেখাপড়া শিখেছেন। যৎসামান্য বাংলা বলতে পারতেন। প্রথম দিকে তিনি বাংলায় যে বক্তব্য দিতেন, সেগুলো প্রথমে বাংলা উচ্চারণে উর্দুতে লিখতেন। লিখে তারপর তা-ই দেখে দেখে ভাষণ দিতেন। যা-ই হোক, ব্যক্তি হিসেবে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো বদনাম ছিল না। মানুষ তাঁকে পছন্দই করত। কিন্তু ভালো করে বক্তব্য দিতে পারতেন না। দিতে গেলে খালি হাত-পা ছুড়তেন। এসব দেখে-টেখে যাদু একদিন আমাকে বলল, "এ রকম হলে তাঁকে আমি কী করে চালিয়ে নেব?" আমি বললাম, দেখো, জিয়া বক্তৃতা দিতে পারে না ঠিক আছে। কিন্তু তিনি সবচেয়ে ভালোভাবে কী করতে পারেন, সেটা খুঁজে বের করো।' জবাবে যাদু বলল, হাঁটতে পারে একনাগাড়ে ২০ থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত। আমি বললাম, এই তো পাওয়া গেল সবচেয়ে ভালো একটা উপায়। তুমি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাড়াগাঁয়ে হাঁটাও। হাঁটাও আর যেটা পারে, তাঁকে দিয়ে সেটাই করাও। গাঁও-গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবে আর মানুষজনকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছেন? প্রেসিডেন্ট, দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান, তিনি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে, কানা-কানচি দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন আর লোকজনের ভালোমন্দের খোঁজখবর করছেন, তাতেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। এভাবে দেখতে দেখতে তিনি বক্তৃতা দেওয়াটাও রপ্ত করে ফেললেন।'
জিয়ার জনপ্রিয়তা: ওই সময় ক্রেইগ বেক্সটার ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর (১৯৭৬-৭৮)। আইজেনব্রাউনকে যাদু মিয়া যেসব তথ্য সরবরাহ করতেন, তা বেক্সটারও জানতেন। আইজেনব্রাউনের বস ছিলেন একদা সেনাবাহিনীতে থাকা বেক্সটার। তিনি পরে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ (ইতিহাসে পিএইচডি, প্রফেসর ইমেরিটাস এবং আমেরিকায় বাংলাদেশ স্টাডিজ গ্রুপের দীর্ঘকালীন সভাপতি) হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ২০০৮ সালে বেক্সটার মারা যান। বাংলাদেশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাঁকে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবেই গণ্য করেন। জিয়ার আমন্ত্রণে বেক্সটারও সেনানিবাসের বাড়িতে আতিথ্য নিয়েছেন। বাংলাদেশের সেনাশাসন ও রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর একাধিক বই এবং এক ডজনের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে বেক্সটারকে তাঁর পেশাদারি কূটনৈতিক জীবনের প্রভাবশালী গুরু হিসেবে বর্ণনা করেন। বেক্সটার তাঁর একটি বইয়ে লিখেছেন, 'মোশতাক ও সায়েম উভয়ে '৭৬ সালের আগস্টে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর অঙ্গীকার করেছিলেন। কারণ তাঁরা '৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর একাংশ ভেবেছিল, নির্বাচন দেওয়ার সময় হয়নি। সায়েম ক্ষমতা নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু ও নির্বাচন দিতে সক্রিয় হন। প্রায় ৬০টি দল অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করেছিল। প্রাথমিকভাবে ২১টি দলকে অনুমোদনও দেওয়া হয়। কিন্তু সায়েমের মতামত অগ্রাহ্য করে '৭৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সায়েম সিএমএলএ পদ থেকে ইস্তফা দেন। জিয়া সিএমএলএ হন। অনেক দল ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্তে আপত্তি করেন। এর মধ্যে মোশতাক ও তাঁর ডেমোক্রেটিক লীগও ছিল। মোশতাকের কিছু সহযোগী এ কারণে গ্রেপ্তার হন।'
মওদুদ আহমদের বর্ণনায়, 'সায়েমকে মূলত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।' বিচারপতি সায়েম নিজেও তাঁর বইয়ে লিখেছেন, 'তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা পরিত্যাগ করেননি।' মওদুদ এটা সমর্থন করেন।
জেনারেল জিয়ার সামনে নতুন দল করা ছাড়া অন্য বিকল্প ছিল কি? এ প্রশ্নের জবাবে মওদুদ প্রথম আলোকে জানান, জিয়ার বড় সুবিধা ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। স্টিফেন আইজেনব্রাউনের কথায়, 'প্রথম কথা হলো, দেশটি দরিদ্র ছিল। কয়েক বছর আগের যুদ্ধে দেশটি ছিল বিধ্বস্ত। চুয়াত্তরে দেশটি হলো দুর্ভিক্ষকবলিত। পঁচাত্তরে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের ফলে গোটা দেশ যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে। দেশটি ধীরে ধীরে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে সেরে উঠছিল।' আইজেনব্রাউন এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জেনারেল জিয়াকে অনেকটা কৃতিত্ব দেন। তাঁর কথায়, 'জিয়া দৃঢ় প্রশাসক, উদারপন্থী, তাঁর নীতিগুলো ছিল যুক্তিপূর্ণ। উপরন্তু বাংলাদেশের জনগণকে তিনি তাঁর নেতৃত্বে শামিল করতে পেরেছিলেন।' আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন এড়িয়ে তাঁর সময়ের মার্কিন রাষ্ট্রদূত এডওয়ার্ড ই মাস্টার্সের জিয়া-বন্দনাকে তিনি সুনজরে দেখেননি। তবে জিয়ার জনপ্রিয়তা অর্জনের নেপথ্যের কারণ আইজেনব্রাউনের গুরু বেক্সটার বর্ণনা করেন এভাবে: 'জিয়া প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে দেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখতেন। তিনি সামরিক নেতা থেকে যেভাবে নিজেকে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে রূপান্তর করেছিলেন, তাতে বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক বিস্মিত হন। পঁচাত্তরে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। সামরিক প্রশাসনের বড় অংশ ছিল তাঁর অধীনে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় ছিল তাঁর হাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাহির করার সুযোগ সীমিত। কিন্তু এটাও ঠিক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের নির্ভরশীলতা রয়েছে।'
বেক্সটার লিখেছেন, 'জিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন। "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী" হিসেবে পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ছিল তাঁর অধীনে। এর ফলে জিয়ার পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার সুযোগ ঘটে। জিয়া ক্রমশ রাজনীতিকের মতো আচরণ করেন। তিনি ব্যাপকভাবে সারা দেশ সফর করেন। তিনি সম্ভবত ফজলুল হক, মুজিবসহ অন্যান্য নেতার চেয়ে বেশি মাত্রায় গ্রাম-বাংলা সফর করেছিলেন।'

সেনাছাউনিতে বিএনপির জন্মকে ষড়যন্ত্রমূলক বলেন আইজেনব্রাউন

স্টিফেন আইজেনব্রাউন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করলেও সেনাছাউনিতে বিএনপির জন্মকে ষড়যন্ত্রমূলক বলেই মনে করেন। কারণ মওদুদ আহমদকে তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন।
আইজেনব্রাউন মার্কিন কথ্য ইতিহাসবিদ চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডিকে মশিউর রহমান যাদু মিয়ার সঙ্গে তাঁর বৈঠকের বিবরণ দেন এভাবে, 'সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটতে লাগল। আমাদের রাষ্ট্রদূত তত দিনে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করলেন। এমনকি তৎকালীন মার্কিন পলিটিক্যাল কাউন্সেলর ক্রেইগ বেক্সটারের কানেও কিছু কথা ভেসে আসতে লাগল। কিন্তু আমি বিএনপির জন্ম-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অব্যাহতভাবে তথ্য দিয়ে গেছি। কী পরিকল্পনা নেওয়া হবে, সে-সংক্রান্ত কোনো গুজবের ধার আমি ধারতাম না। গুজব সম্পর্কে দূতাবাসকে কোনো ধারণাই দিতাম না। সেই সময় ঢাকার অন্যতম বিশিষ্ট একজন তরুণ ব্যারিস্টার ছিলেন মওদুদ আহমদ। তিনি পরে বিভিন্ন সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যা হোক, জেনারেল জিয়ার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে মূল ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম ছিলেন মওদুদ। আমাকে বলা হয়েছিল, মওদুদ দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।'
প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন, বিএনপি ও তার আগে গঠিত জাগদলের (জাতীয় গণতান্ত্রিক দল) গঠনতন্ত্রের রূপকার তিনিই।
জিয়া-যাদু চুক্তি: মওদুদ আহমদ নিশ্চিত করেন, সংবিধানে ক্ষমতার বণ্টন প্রশ্নে জিয়াউর রহমান ও যাদু মিয়ার মধ্যে একটা মতানৈক্য দেখা দেয়। মোখলেসুর রহমান সিধু মিয়াও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি জানান, এ নিয়ে পরে জিয়া-যাদু লিখিত চুক্তি হয়েছিল। সিধু মিয়ার কথায়, 'আমি বলেছিলাম জিয়াকে এ রকমভাবে সমর্থন দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে যাদু মিয়ার একটা চুক্তি হতে হবে এবং সেটা হতে হবে সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে। সেই চুক্তিপত্রে যাদু মিয়া ও জিয়াউর রহমান দুজনেরই সই ছিল। চুক্তিপত্রটির দুটি কপি ছিল। একটা ছিল যাদু মিয়ার কাছে, আর একটা জিয়াউর রহমানের কাছে। তৃতীয় একটা কপিও থাকতে পারে। খুব সম্ভব সেটা ছিল মেজর জেনারেল নুরুল ইসলামের কাছে। আমি দেখেছি, সেই কপিটায় ১২-১৩টা প্রস্তাব লেখা ছিল। তাতে সংসদের এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটুকু থাকবে, তার বিবরণ ছিল। মোটামুটি একটা গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখাই তাতে তুলে ধরা হয়েছিল। তবে ওটার প্রথম খসড়াটা কার করা ছিল, সেটা আমি জানি না।' মওদুদ জানান, পঞ্চম সংশোধনীর খসড়া করেছিলেন আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী। পরে তিনি বিচারপতি হন।
জিয়া-যাদু চুক্তির কপি কোথায় আছে, জানতে চাইলে যাদু মিয়ার ছেলে আনোয়ারুল গনি বলেন, 'এটা আমরাও অনেক খুঁজেছি, পাইনি। এটা ছিল ইংরেজিতে, এপিঠ-ওপিঠ হাতে লেখা। এক পৃষ্ঠা। এক বা দুটি বাক্য বাংলায় ছিল। চুক্তিতে জিয়া ও বাবার সই ছিল। এই চুক্তি আমি দেখেছি। আমার বোন রিতার কাছে একসময় ছিল।' এ বিষয়ে সিধু মিয়া '৮৫ সালে তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, 'যাদুর মৃত্যুর পর আমি ওই চুক্তির কপি খোঁজ করেছি। যাদুর শোবার ঘরে আলমারির ওপর একটা স্যুটকেসের মধ্যে ওটা রাখা ছিল। কিন্তু এত খুঁজেও ওটা পাইনি।'
বাহাত্তরের সংবিধান নয়: সিধু মিয়ার কথায়, 'একদিন যাদু মিয়া আমার কাছে একটা জরুরি চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, সংবিধান ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমি তো একা সামাল দিতে পারছি না। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। আমি তাড়াতাড়িই গেলাম। অবশ্য আমি যাওয়ার আগেই জিয়াউর রহমান সাহেবের সঙ্গে যাদু মিয়ার নানা রকমের আলোচনা হয়ে গেছে। বাহাত্তরের সংবিধানে তিনি ফিরবেন না। তাঁর হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা চাই। জিয়ার প্রথম কথা, তাঁকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট করা হোক। প্রেসিডেন্ট এবং সংসদের ক্ষমতা কেমন হবে, তা নিয়েও কথা হলো। ফরাসি, জার্মানি ও পাকিস্তানের সংবিধান ইত্যাদি নিয়েও আলাপ হয়।' মওদুদ আহমদও জানান, তখন এসব দেশের সংবিধান, বিশেষ করে ফরাসি ও তুরস্কের সংবিধানের মডেল নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
এ বিষয়ে মওদুদের সঙ্গে কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রথম আলো: সংবিধান নিয়ে কী ঘটেছিল?
মওদুদ: আমি ও যাদু ভাই সংকল্পবদ্ধ ছিলাম, দেশকে তাড়াতাড়ি গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করব। সুতরাং আমরা যখন প্রস্তাব দিলাম, দলের সব কমিটি চেয়ারম্যানই (জিয়া) ঠিক করবেন, তখন যাদু ভাই এটা পছন্দ করেননি। তাঁর অপছন্দ এতটাই ছিল যে এ জন্য তিনি মন্ত্রিসভার তিনটি বৈঠকে আসেননি।
প্রথম আলো: কোন বিষয়টি তিনি পছন্দ করেননি?
মওদুদ: পুরো নির্বাহী ক্ষমতা জিয়াকে দেওয়া। আমি জিয়ার হাতে সব ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ছিলাম। কারণ জিয়াকে দিয়েই তো আমাদের গণতন্ত্রটা ফিরিয়ে আনতে হবে। সুতরাং তাঁর অবস্থানটি নিরাপদ রাখতে হবে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, দলে গণতন্ত্র আগে, না দেশের গণতন্ত্র আগে? দেশে গণতন্ত্র আগে চাইলে জিয়াকে আত্মবিশ্বাস দিতে হবে। তিনি উর্দি ছাড়বেন। তাই তাঁর ভরসা চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, রাষ্ট্রপতি ও সংসদের ক্ষমতার ভারসাম্য প্রশ্নে যাদু মিয়ার সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছিল, তা পরে রক্ষা করা হয়। যাদু মিয়ার পারিবারিক সূত্র বলেছে, সেটা করা হয়নি। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার কথাও ছিল। এরশাদ পরে উপজেলা করেন। আর সেটা ওই চুক্তির আলোকেই। তবে '৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফেরার সময় জিয়া-যাদু চুক্তির কথা উঠেছিল।
উল্লেখ্য, জিয়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ৯২(ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করেন। এটা '৯১ সালে বিলোপ হয়। এই অনুচ্ছেদটি দিয়ে জিয়া সংসদকে পদানত রাখেন। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায় থেকে দেখা যায়, এতটা বেপরোয়া স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা ভোগের চিন্তা মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকেরাও করেননি।
বিরোধী দল সৃষ্টি: সিধু মিয়ার দাবি, গণতন্ত্রে বিরোধী দল রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি পরামর্শ দেন। তাঁর বর্ণনায়, 'তারা আমার কথাটা খুব ভালোভাবে নিয়েছিল। কিছু কিছু লোক সংসদে এসেছিলেন নিজেদের জোরে। আর কিছু কিছু জায়গায় ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে ঘটেছিল। যেমন, সবুর সাহেবের কথাই ধরুন। তিনি মুসলিম লিগার। তাঁর সঙ্গে এ রকমের চুক্তি হয়েছিল, তাঁকে তিন জায়গা থেকে পাস করিয়ে আনতে হবে। সেটা রক্ষা করা হয়েছিল। রংপুরে মুসলিম লীগের কাজী আবদুল কাদেরের কথাই ধরা যাক। সেখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন যিনি, তিনিই আমাকে বলেছিলেন, তাঁকে টাকা দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তারা পর্যন্ত কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের কিছু লোক নিজেদের শক্তির বলেই এসেছেন। ফলে একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিরোধীদলীয় সদস্য সংসদে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের সংখ্যা ছিল ৮০ জনের মতো।
সিনিয়র মিনিস্টার যেভাবে: যাদু মিয়াকে প্রধানমন্ত্রী না করা এবং তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর যোগসূত্র সম্পর্কে ওই সময়ই রাজনীতিতে একটা গুঞ্জন তৈরি হয়। এমনকি যাদু মিয়ার চিকিৎসা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই প্রশ্ন যাদু মিয়ার পরিবারের কাছে এখনো রয়েছে। অনেকে মনে করেন, জিয়ার কাছে ওই সময় কট্টর ইসলামপন্থীদের খুশি রাখার প্রশ্ন ছিল বড়। সে জন্য শাহ আজিজের গ্রহণযোগ্যতা ছিল বেশি। যাদু মিয়া ছিলেন ভাসানী অনুসারী পিকিংপন্থী। জানা যায়, আতাউর রহমান খানও যাদু মিয়ার সঙ্গে সেনানিবাসের বাড়িতে বৈঠক করেছেন। তবে তিনি দলে যোগ দেননি। আতাউর রহমান খান পরে লিখেছেন, 'জিয়া আমাকে দলে ভেড়াতে এক বছর চেষ্টা চালান। যাদু মিয়া আমাকে ফুসলিয়েছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে খুবই শক্ত থাকতে বলেন। শক্ত ছিলাম। তারপর জিয়াকে বাগিয়ে তিনি মন্ত্রিত্বে ঢুকে পড়েন।'
যাদু মিয়াকে কেন প্রধানমন্ত্রী করা হলো না? জবাবে মওদুদ বলেন, তিনি জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছিলেন। কথা ছিল '৭৯ সালের নির্বাচনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং তিনি তা হতেনও, যদি তাঁর মৃত্যু না ঘটত।
অন্য কারণ ছিল নাকি? মওদুদের জবাব, 'না অন্য কারণ ছিল না। তাঁর মৃত্যু না ঘটলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতেন। তাঁর প্রটোকল ছিল সিনিয়র মিনিস্টারের। শুধু নির্বাচনের কারণে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি। সংবিধানে সিনিয়র মিনিস্টার বলতে কিছু ছিল না। সংবিধান ফিরে এলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটাই ছিল কথা।' মওদুদ এ বিষয়ে তাঁর দুটি বইয়ে দুই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
২০০১ সালে মওদুদ লিখেন, 'মশিউর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে জিয়া মত পাল্টান। অনেক প্ররোচনার পর জেনারেল নুরুল ইসলাম (শিশু) যাদু মিয়াকে সিনিয়র মিনিস্টার পদ গ্রহণে সম্মত করান।' উল্লেখ্য, সেনাছাউনিতে বিএনপি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী জেনারেল নুরুল ইসলাম। সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর বাড়ি বিক্রি করেন বলেও জানা যায়। যাদু মিয়ার পারিবারিক সূত্র বলেছে, নওরতন কলোনির এক বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিশু যাদু মিয়াকে জিয়ার প্রস্তাব পৌঁছে দিয়েছিলেন।
সিধু মিয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, 'একদিন যাদু মিয়া আমাকে দুঃখ করে বলেছিল, "আমি তো শাহ আজিজকে নিয়ে গেলাম সংসদ আর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কী হবে, কতটুকু হবে, সে ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। এ রকমের একটা ধারা ছিল যে প্রেসিডেন্টই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন; কিন্তু সংসদে গিয়ে তাঁকে ৩০ দিনের মধ্যে আস্থা ভোট নিতে হবে। শাহ আজিজ ওখানে বসে ছিলেন। তিনি জিয়াকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, স্যার, এর আবার কী দরকার? আপনি নমিনেট করবেন, আস্থা ভোটের কী দরকার? ইয়োর নমিনেশন ইজ এনাফ।" যাদু বলল, "তাঁকে নিয়ে গেলাম আমি, আর সে গিয়ে কিনা আমার বিরুদ্ধেই কথা বলতে শুরু করল জিয়ার কাছে।" এসব ব্যাপার নিয়ে যাদু মিয়া শাহ আজিজ সম্পর্কে হতাশা বোধ করতে শুরু করে। কিন্তু তখন আর উপায় ছিল না।'
সিধু মিয়া বলেন, 'নির্বাচনের পর জিয়া অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হন। যাদুর কাছে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার অফার আসে। কিন্তু যাদু বলছিল, সে অন্য কিছু নেবে না। এ নিয়ে খুব গোলমাল হলো। যাদু মিয়ার মৃত্যুর কিছুদিন আগে টঙ্গীতে একটা সভা ছিল। সেখানে সে বক্তৃতা করেছিল। সেই সভা চলার সময়ই সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার খুব উচ্চ রক্তচাপ ছিল। মানসিক উত্তেজনা থেকেই সেটা আরও বেড়েছিল।'
অভিনন্দন জানাতে পারিনি: আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, '১৯৭৮ সালের জুনের কথা। জিয়ার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের গুজব শহরময় রটে গেছে। আর আমি তখনো যাদু মিয়ার কাছ থেকে ভেতরের স্কুপ পেয়েই চলেছিলাম। এক কিংবা দুই সপ্তাহ আগে যাদু মিয়া আমাকে বললেন, জিয়াউর রহমান একটি মন্ত্রিসভা, একটি রাজনৈতিক দল গঠন ও সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছেন। যাদু মিয়ার কাছ থেকেই অধিকাংশের নাম জানলাম, কারা মন্ত্রিসভায় থাকছেন এবং তাঁদের কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে। তিনি আমাকে বলেননি, কে হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি এ বিষয়ে যাদু মিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু যাদু মিয়া বললেন, জিয়া এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, কে হবেন মন্ত্রিসভার নেতা? একদিন দিল্লিমুখী দুপুরের ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেব। যাওয়ার আগে আমি সংবাদপত্রের দিকে নজর দিচ্ছিলাম। দেখলাম, বড় হরফে শিরোনাম—জেনারেল জিয়া একটি নতুন রাজনৈতিক দল ও মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। শিগগিরই সংসদ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। চিফ মিনিস্টার যাদু মিয়া। আমি কখনো তাঁকে অভিনন্দন জানাতে পারিনি। তবে আমি শুনেছিলাম, কয়েক মাস পর যাদু মিয়ার স্ট্রোক হয়। ১৯৭৯ সালের মার্চে তিনি মারা যান।' মৃত্যুর পর অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁর দাফন হয়েছিল।
ব্যারাকে ফেরা নয়: পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের 'সিপাহি-জনতার বিপ্লবে' জিয়ার উত্থান। পঁচাত্তরের নভেম্বরে দেওয়া ভাষণে জিয়া বলেছিলেন, 'সামরিক বাহিনী রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে, সামরিক সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের নয়।' এর পর থেকেই অন্যদের মতো মার্কিন কূটনীতিকেরাও নজর রাখছিলেন, '৭৭ সালের ফেব্রুয়ারির প্রতিশ্রুত সংসদ নির্বাচন জিয়া করবেন কি না। '৭৬-এর ডিসেম্বরে তিনি হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করেন। এর অনেক আগ থেকেই তিনি মোশতাক-ফারুক-রশীদের ধারাবাহিকতায় মার্কিন সরকারের সঙ্গে দোস্তি গড়ে তোলেন। মার্কিনদের কাছে তাই স্পষ্ট ছিল যে, জিয়া রাজনীতিতে আসছেন। জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে ওই সময়ে মার্কিন কূটনীতিকদের বেশ যাতায়াত ('৭৬-এর ২৪ নভেম্বরের এক সন্ধ্যাকালীন বৈঠকে এরশাদ ও রওশন এরশাদকেও দেখা যায়) ছিল।
আরভিং চেসল ছিলেন আইজেনব্রাউনের অন্যতম বস। মার্কিন দূতাবাসের তখনকার ডেপুটি চিফ অব মিশন। ২৮ অক্টোবর, ১৯৭৬ চেসল ওয়াশিংটনে বার্তা পাঠান: গত জুনে জিয়া একবার আমন্ত্রণ জানান। এবারে আরও অনানুষ্ঠানিকতায় গত রাতে আমি ও আমার স্ত্রী এক চা-চক্রে জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে গেলাম। জোড়া দম্পতির সম্মিলন। আমরা ছাড়া জিয়া ও বেগম জিয়া। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে এল আমেরিকান ক্লাব স্যান্ডউইচ। আন্তরিকতার ছোঁয়া ছিল। আলোচনা হলো সাড়ে চার ঘণ্টা।
চেসল লিখেছেন, 'সবশেষে বললাম, আমি যদি এখন শহরময় রটে যাওয়া এই শখের প্রশ্নটা না করি, তাহলে আপনি হয়তো বেজার হবেন। প্রশ্নটি হলো, আপনি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন দেখছেন? নির্বাচনের সম্ভাবনা কতটুকু? জিয়া বললেন, আপনাকে গোপনীয়তার সঙ্গে বলছি, সারা দেশ সফর করে বুঝতে পারছি যে, অধিকাংশ জনগণ ও রাজনীতিক এখনই নির্বাচন চায় না। তবে তিনি নিশ্চিত নন যে, নির্বাচন স্থগিত করা হলে তার ফল কী দাঁড়াবে? জিয়া কৌতুকভরে জানতে চাইলেন, আমার কোনো পরামর্শ আছে কি না? আমি কৌতুক না করে বললাম, এ ধরনের উচ্চমাত্রার জটিল বিষয়ে আমি কোনো ধারণামূলক উত্তর দেব না। আমি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ইউপি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানলাম। জিয়া এ বিষয়ে অত্যন্ত উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। বললেন, এর মাধ্যমে বিরাট সুফল মিলবে। তবে জিয়া এ কথাও বললেন যে, তিনি নিশ্চিত নন যে ইউপি নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন চার থেকে পাঁচ মাসের বেশি (জিয়া সম্পূর্ণ অনুকূল পরিবেশে দুই বছর পরে '৭৯ সালে নির্বাচন দেন। পঞ্চম সংশোধনী পাস করেন) স্থগিত করা যাবে কি না।
চেসল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো ওই বার্তায় (নম্বর ১৯৭৬ ঢাকা এ০৫৫৪৫) মন্তব্য করেন, 'এর আগে ও গত রাতে জিয়ার সঙ্গে আলোচনার মধ্যে একটা বড় ফারাক ঘটে গেছে। তাঁকে আগের চেয়ে অনেক কম সেনা অধিনায়ক মনে হলো। তিনি এখন অনেক বেশি নিরুদ্বেগ, সংকল্পবদ্ধ, আত্মবিশ্বাসী ও পেশাদার রাজনৈতিক নেতা। এই নতুন লোকটি আর ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছেন বলে আমি মনে করি না।'
দেলোয়ার যখন একান্তে: আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, '৯৬ সালে আমি দ্বিতীয়বার চাকরির সুবাদে ঢাকা যাই। রাষ্ট্রদূত আয়োজিত এক নৈশভোজে বিএনপির কতিপয় জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। আমি সিদ্ধান্ত নিই, তাঁদের দল গঠনে আমার জানা সেই ইতিহাস আমি তাঁদের কাছে ব্যক্ত করব। তবে ১৮ বছর পরও এ বিষয়ে ঢাকার রাজনীতিতে একটা রাখঢাক ভাব আমি লক্ষ করেছিলাম। সে কারণে আমি একজন ভদ্রলোককে বেছে নিলাম। মনস্থির করলাম, তাঁর কাছেই সব খুলে বলব। তিনি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তিনি একাগ্রতার সঙ্গে মনঃসংযোগ করলেন। কোনো প্রশ্ন না তুলে আমার কথা শুনে গেলেন। আমি যখন বলা শেষ করলাম, তখন মন্তব্য করলেন, আপনার বিবরণ সঠিক। আপনি যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই সবকিছু ঘটেছিল।' (শেষ)

সংশোধনী: গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদনে ন্যাপ গঠনের তারিখ ১৯৭৫ ছাপা হয়েছে। এটা হবে ১৯৫৭। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।

 
 
পুরনো পথেই বিএনপি
বাহাউদ্দীন চৌধুরী
http://oldsite.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=13&dd=2009-12-15&ni=2892


Watch the videos (the tips of the iceberg):

 
YouTube - Videos from this email
ZIAUR RAHMAN was involved Bangabondhu killing-Col.Faruq _Col Rashid's interview
 
 
Killer faruk rashid interview
 
Conspirators in Mujib Killing
 
America knew about Bangabandhu killing plan
 
 
The Testimony of Colonel Taher

 





__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___

[mukto-mona] add me

Sent from Symphony

------------------------------------
Posted by: shoukhinsingha86 <shoukhinsingha86@gmail.com>
------------------------------------

****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190
------------------------------------

Yahoo Groups Links

<*> To visit your group on the web, go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/

<*> Your email settings:
Individual Email | Traditional

<*> To change settings online go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/join
(Yahoo! ID required)

<*> To change settings via email:
mukto-mona-digest@yahoogroups.com
mukto-mona-fullfeatured@yahoogroups.com

<*> To unsubscribe from this group, send an email to:
mukto-mona-unsubscribe@yahoogroups.com

<*> Your use of Yahoo Groups is subject to:
https://info.yahoo.com/legal/us/yahoo/utos/terms/