ভ্যাট প্রত্যাহার এবং প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক আগমন
'মন পাবি দেহ পাবি ভ্যাট পাবিনা'। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে এ শ্লোগান অনেকের দৃষ্টি কাঁড়ে। যে যুবতী এ শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তিনিও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শ্লোগান তো শ্লোগানই। এরবেশি মর্মার্থ খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন প্রাক্কালে কট্টর বাম ও নক্সালদের একটি শ্লোগান ছিলো, 'রইলো তোদের নির্বাচন চললাম আমরা বৃন্দাবন'।
খালেদা জিয়ার আমলে সাইফুর রহমান সম্ভবত: প্রথম প্রায় সবকিছুর ওপরই ভ্যাট চালু করেন। তখনো বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই শ্লোগান উঠেছিলো, 'ভ্যাট নয়, ভাত চাই'। এরশাদের আমলে ঢাকার মেয়র ছিলেন মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান, তিনি 'থিপ অব বাগদাদ' নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন, যদিও ঢাকার রাস্তায় শ্লোগান ছিলো, 'মাহমুদুল হাসানের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র'। নুর হোসেনের পিঠে লেখা বিখ্যাত শ্লোগান, 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক'-এর কথাতো সবাই জানেন।
সুখের বিষয় ভ্যাট প্রত্যাহৃত হয়েছে। সরকার যর্থাথ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিরোধীরা মৃদুস্বরে বলার চেষ্টা করছেন যে সরকার পরাজিত হয়েছেন। আসলে আন্দোলন হলো কই যে পরাজয় হবে! সবে তো টুকটাক প্রতিবাদ, পক্ষে-বিপক্ষে কথাবার্তা হচ্ছিলো; ঠিক তখনই সরকার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিলেন। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে; সকল পক্ষ জিতেছেন। রটনা আছে, নুর হোসেনকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিলো। ঐসময় ক্ষমতায় ছিলো স্বৈরাচারী সরকার। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ও জনবান্ধব, এরা আন্দোলনের কদর জানেন, দমন-পীড়নে অভ্যস্থ নন এবং সম্ভবত: তাই ভ্যাট নিয়ে এ ত্বরিত সিদ্ধান্ত।
দেশে এ সময়ে আন্দোলনের পরিবেশ নেই, ইস্যুও নেই। তাছাড়া পেটে ভাত থাকলে এবং পকেটে কিছু পয়সা থাকলে আন্দোলন এতটা সহজ নয়। মহাজোট সরকার মানুষকে দু'টোই দিয়েছেন। সুতরাং, নো আন্দোলন। এমনকি বিএনপি-জামাত আন্দোলনের কথা ভুলে গিয়ে ঘরে বসে 'শান্তিতে' হিন্দি ম্যুভি-সিরিয়াল দেখছেন। শান্তির কথা বললাম এজন্যে যে দেশে এখন শান্তি বিরাজ করছে। দেশ শান্ত। মানুষ শান্তিতে আছে। অবশ্য শান্ত পরিস্থিতি ভালো, থমথমে পরিবেশ নয়। কারণ পরিবেশ অতিমাত্রায় শান্ত হয়ে গেলে দমকা হওয়া বা ঘুর্নিঝড়ের সম্ভবনা থাকে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি শান্ত না থমথমে?
ক'টি মিডিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি সরকার মেনে নেয়ায় বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমিক সংগঠন এদের দাবীদাওয়া নিয়ে সক্রিয় হতে পারেন। এটা স্বাভাবিক। এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। এসব অরাজনৈতিক অন্দোলনের পেছনে জামাত-বিএনপি'র সমর্থন বা যোগসাজস অসম্ভব নয়। 'জনতার মঞ্চ' কাহিনী সবার জানা এবং ওই আন্দোলন খালেদা জিয়ার পতনকে ত্বরান্বিত করেছিলো তা বলা বাহুল্য। ঈদ এসে গেছে, সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের পর দেখা যাক কি হয়! তবে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল সতর্ক, তারা জানেন কি করতে হবে।
এ সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক-এ আসছেন। তাকে আগাম অভিনন্দন। যে ক'টা দিন তিনি নিউইয়র্ক থাকেন সেই সময়টা এখানে উত্সবমুখর পরিবেশ থাকে। আওয়ামী ঘরানায় সবাই ভাইভাই হয়ে যান। তিনি চলে গেলে আবার 'ভাই ভাই ঠাই ঠাই'। আর শুধু আওয়ামী লীগ কেন পুরো প্রবাসীরা এসময় জেগে ওঠেন। যে হোটেলে প্রধানমন্ত্রী থাকেন, সেই হোটেলে বাঙালীর ঢল নামে। কারণ একটাই প্রধানমন্ত্রীকে একটু দেখা। এখন নিউইয়র্কে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধি আছেন, আর কোথাও এমন দৃশ্য দেখা যায়না।
যাহোক, মিডিয়ায় দেখলাম সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসীন আলী মারা যাবার পর পুরো দেশ কাদছে। অনেকে মন্তব্য করছেন, লোকটা খারাপ ছিলো না। মরার আগে তার 'আকাশের ওই মিটিমিটি চাঁদের সাথে কইবো কথা' গানটিও শুনলাম। সিগারেট খাওয়া, ঘুমিয়ে পড়া ইত্যাদি বাদ দিলে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, লোকটার মনটি ভাল ছিলো। একজন মন্তব্য করেছেন, সম্ভবত: এ কারণেই শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক। ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১৫।
__._,_.___