|
__._,_.___
|
ওয়াশিংটন পোস্টের একটা ফটোফিচার পড়ছিলাম 'বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট এবং ইসলামিক মৌলবাদিতা বৃদ্ধি' এই শিরোনামে। ঢাকা-মুম্বাই ঘোরাঘুরি করেন বোস্টনে জন্ম নেওয়া এমন একজন এনজিওকর্মী কাম ফটোসাংবাদিক অ্যালিসন জয়েস লিখেছেন। তথ্যে নতুন কিছু নেই, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিংগুলো নিজেরা করেছে বলে আইএস যে প্রচার করছে তার স্বীকৃতি প্রদানের চেষ্টা বলা চলে। তবে মেয়েটির তোলা চার্চের ছবিগুলো সুন্দর, একইসঙ্গে খৃষ্ট ধর্মীয় সুড়সুড়ি জাগানোর মতো। আইএস এখন বিশ্ব মিডিয়ার কাছে হট আইটেম, কলাবাগানে জুলহাজ মান্নানের খুনের পর পর আইএস মোড়কে তার এই ফিচার মার্কিন মিডিয়ায় কেনার মতোই আইটেম।
এটা পড়া শেষ না হতেই সংবাদ পেলাম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি কলাবাগানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জুলহাজ মান্নানের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও সরকারের চেষ্টার কথা বলেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফেরত পাঠানোর কথাও বলেছেন কেরিকে। জন কেরি যখন ফোন করেন আমাদের বুঝতে হবে, এটা শুধু জুলহাজের জন্য নয়, বাংলাদেশে আইএস প্রতিষ্ঠার মার্কিন মহড়ার অংশ। তার আগের দিন ২৭ এপ্রিল ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসলে তিনি নিজের নয়, ক্যাপিটল হিলের বার্তা দিয়ে এসেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেখানে খুনি খুন করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং তা পুলিশ বা সরকার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি আকারে ইঙ্গিতে তার পূর্বসূরি ড্যান মজিনার মতো আরও বলেছেন যে, বাংলাদেশে আইএস রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশে আইএস এর অস্তিত্ব আছে। ড্যান মজিনা সরাসরি বাংলাদেশের স্বীকারোক্তিও চেয়েছিলেন। ঢাকায় পুলিশের এক কর্মকর্তা একবার চারজনকে গ্রেফতার করে কথিত আইএস বলে প্রচার করলেও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এখন পর্যন্ত কোথাও কখনও আইএস-এর অস্তিত্ব স্বীকার করেননি, যদিও দেশি জঙ্গি বিস্তার এবং থাকার ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেন না। সরকারের অনেকে আইএস নিয়ে আমেরিকার এই একতরফা প্রচারকে দূরভিসন্ধি বলে মনে করছেন।
আরও পড়তে পারেন: সহিংসতা ঠেকাতে ১০ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি পুলিশের
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এসেছিল। ফলাফল শূন্য। বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের পরও এফবিআই এসেছিল। এখানেও ফলাফল শূন্য। তারা কোনও বস্তুনিষ্ঠ সহায়তা প্রদান করতে পারেননি- যদিও আমেরিকার এফবিআই সম্পর্কে প্রচার রয়েছে যে এটি খুবই শক্তিশালী সংস্থা।
আমেরিকা ন্যাটোর লিডার। এখন আইএস নিয়ে সবচেয়ে বেশি মুশকিলে পড়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। প্যারিসের হামলায় অনেক লোক মারা গেছেন। বেলজিয়ামের ক্ষয়ক্ষতিও প্রচুর। এখন আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছে যে, অচিরেই আইএস বৃটেন, জার্মানি ও ইটালিতে অপারেশন চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে। আমেরিকার উচিৎ তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইউরোপকে সাহায্য করা। কারণ এখন যে তিন রাষ্ট্রকে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার মতে টার্গেট করা হয়েছে তারা আধুনিক সভ্যতার বাতিঘর।
বাংলাদেশে হচ্ছে টার্গেট কিলিং আর ইউরোপে হচ্ছে মাস কিলিং। আমরা কোনওরকম কিলিং চাই না। কিন্তু এটাও সত্য বৃটিশের সময়েও বাংলাদেশে টার্গেট কিলিং ছিল। টার্গেট করে বৃটিশদের হত্যা করা হতো। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেনসহ বহু বাঙালির টার্গেট কিলিং এর জন্য ফাঁসি হয়েছে বৃটিশদের আদালতে। সরকার এসব টার্গেট কিলিং মোকাবেলায় শুধু অন্যের দিকে ইঙ্গিত করলে হবে না, নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
জঙ্গি দমনে আমেরিকা যতই বাংলাদেশের পাশে থাকতে আগ্রহী হোক, বাংলাদেশ চাইতে পারে না। কারণ আমেরিকাকে নিয়ে শান্তিকামী বিশ্বের ভয় রয়েছে প্রচুর। কোনওখানে গোলমাল দেখলে তারা গায়ে পড়ে পক্ষভুক্ত হয় আর সে এলাকাকে দীর্ঘদিনের জন্য অশান্তিময় এলাকা হিসেবে গড়ে তোলে। এলাকাটাকে বিধ্বস্ত করে ফেলে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় তার সাম্প্রতিক প্রমাণ।
আরও পড়তে পারেন: এটা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতি!
http://www.banglatribune.com/columns/opinion/100733/আমেরিকার-আইএস-তৎপরতা
শনিবার ; এপ্রিল ৩০, ২০১৬
A wasp nest made of masticated wood. Wasps often use a type of paper created from wooden particles and their secretions. Thousands of years ago, Chinese paper inventors carefully observed wasps and drew inspiration. Typically, large wasps’ nests consist of several horizontal combs, aligned in parallel lines. Several layers of the wasp paper close off the entire ensemble from the outside, and there is only one small entrance. The layers offer physical protection, and the air between the combs protects against strong temperature fluctuations.
প্রথম আলো: ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার তো বললেন, অভিজিৎ রায় ও ফয়সল আরেফিন দীপনের খুনিদের দু-একজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে...
আবুল কাসেম ফজলুল হক: বিচার-প্রক্রিয়ায় আমার আস্থা নেই। শুধু অনাস্থা আছে। আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য বিচার করা দরকার, সেটা সরকারের কর্তব্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি হিংসা-প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না। বিচারে কারও কারও ফাঁসি হলে, কারাদণ্ড হলে আমি কি দীপনকে ফিরে পাব? দীপনের কি তাতে কোনো উপকার হবে? যে রাজনীতির কারণে দীপন-অভিজিৎসহ আরও কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে, আমি সেই রাজনীতির অবসান চাই। এক হাতে তালি বাজে না। আমি চাই সকল মহলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
প্রথম আলো: কিন্তু সন্দেহভাজনদের নজরদারিতে রাখতে তো পুলিশ ব্যর্থ হলো।
আবুল কাসেম ফজলুল হক: এ নিয়ে অনেকে অনেক সমালোচনা করেছেন। আমি আর বলতে চাই না। প্রথম প্রথম পুলিশ খোঁজখবর করত। এখন আর করে না। বেশ কিছুদিন আমার বাড়ির সামনেও পুলিশ বসে থাকত। আমি চলে যেতে বলেছি। আসলে কেবল পুলিশের ওপর নির্ভর করে, পুলিশকে নিন্দা করে সুফল হবে না। সরকার এবং আরও অনেকে এই হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে কথা বলছেন। এটা স্পষ্ট যে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো বৃহৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। এগুলোকে সাধারণ অপরাধমূলক কাজ হিসেবে গণ্য করা ঠিক না। এর পেছনে আদর্শগত, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক কারণ আছে। হঠাৎ করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সবদিকেই অনুসন্ধান করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, মুক্তবুদ্ধির নামে পর্নো ঠিক নয়। তিনি আরও বলেছেন, মুক্তবুদ্ধির নামে মহানবী (সা.) ও ইসলাম সম্পর্কে নোংরা চিন্তা অনুমোদনযোগ্য নয়। এই কথাটা সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য। আমি নিজে ১৯৮১ সাল থেকে এই কথাটা বলে আসছি। যদিও আমি পর্নোগ্রাফি এবং নোংরা এই শব্দগুলো প্রয়োগ করিনি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আগাগোড়াই বিতর্ক আছে। সেই বিতর্কের ধারায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে যুক্ত হয়েছে। আমি মনে করি, জঙ্গিবাদ রুখতে এখনই সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম—এ দুটো কথাই বাদ দেওয়া দরকার। জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে আন্তর্জাতিক কারণও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো: বুঝিয়ে বলবেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় কী হয়েছে? কী হচ্ছে? আফগানিস্তানে রুশদের বিরুদ্ধে তালেবানদের উত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আল-কায়েদা, আইএস ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এখন এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কিছু দেশে ইসলামের নামে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে শামিল থাকার চুক্তিতে আবদ্ধ। এর ফলে তালেবান, আল-কায়েদা, আইএস বাংলাদেশ ও ভারতকে তাদের কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই বাস্তবতার মধ্যে পরিপূর্ণ সততার সঙ্গে আমাদের সমাধানের পথ ভাবতে হবে।
প্রথম আলো: সমাধানটা কী হতে পারে?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: মৌলবাদ তো আমাদের দেশের সঙ্গে যায় না। এই ধারণা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা একই সুরে কথা বললে সমস্যা বাড়বে, কমবে না। সমস্যার সমাধান করতে হবে জনগণকে নিয়ে। গণঐক্য দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মতৈক্য এখন খুব দরকার। আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। গণতন্ত্রের ধারণাকে পুনর্গঠিত করতে হবে। আর মাঝে মাঝে বিরাজনৈতিকীকরণের যে চেষ্টা, সেটাও মঙ্গলজনক নয়।
প্রথম আলো: অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনারা কেমন আছেন? জাগৃতির (প্রকাশনা সংস্থা) কী অবস্থা?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: দীপন বন্ধু-অন্তঃপ্রাণ ছিল। কত যে বন্ধু ছিল ওর। জাগৃতিটাও বেশ নাম করেছিল। ওর স্ত্রী রাজিয়া রহমান তো চিকিৎসক। আগে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখত। এখন আর দেখে না। জাগৃতিটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আমি বলেছি, আমার এই বয়সে পেছন থেকে যতটা সহযোগিতা করা সম্ভব, আমি করব।
প্রথম আলো: ফয়সল আরেফিন দীপন যেদিন খুন হলেন, তার পরদিন তো তাঁর ছেলে রিদাত ফারহানের জেএসসি পরীক্ষা ছিল।
আবুল কাসেম ফজলুল হক: হ্যাঁ। ও এখন উদয়ন বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। দীপনের মেয়ে রিদমা আদনান সপ্তম শ্রেণিতে। রিদমার বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সবচেয়ে বেশি। বাচ্চা দুটো এত বিমর্ষ হয়ে থাকে। পুলিশ দীপনের কিছু জিনিসপত্র নিজেদের কাছে রেখেছিল। আমি চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। ফেরত দিয়ে গেছে। দীপনের মাকে দেখলাম, সেদিন ওই জিনিসগুলো আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। কী বলব! আমি নিজেকে সংযত রেখে শুধু এটুকুই বলতে চাই, সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
আবুল কাসেম ফজলুল হক
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন...
বিকাশ দত্ত ॥ মে মাসে সবার নজর থাকবে সুপ্রীমকের্টের আপীল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। অবকাশকালীন ছুটি শেষে ২ মে সুপ্রীমকোর্ট খুলবে। আদালত খোলার পরই ৩ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ৪ মার্চ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায়ও শীঘ্র প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালে সিএভি রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে, শীঘ্রই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী মোঃ এজাবুদ্দিন মিয়ার জবানবন্দী শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আশা করছে, মে মাসে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হতে পারে।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়াতে এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তারকাখচিত আসামিদের বিচার শেষে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোট ২২টি মামলায় ২৬ জনকে দ- প্রদান করেছে। এর মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদ-, একজনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পতালক আছে পাঁচজন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে প্রায় ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে সাতটি। আর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে চারজনের।
যাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিপক্ষের রিভিউ করার পালা। আপীল বিভাগে এখনও ৯টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
মতিউর রহমান নিজামী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন শুনানি ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। ১০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। নিজামীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে সময় চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। গত ২৯ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে দ- থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি যুক্তি (গ্রাউন্ড) তুলে ধরা হয়েছে। রিভিউ আবেদনে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হলেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন।
রিভিউ আবেদন করার পরদিন ৩০ মার্চ তা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। ওই দিনই এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত। নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে তার দ- কার্যকর করা যাবে না। আর রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করবে।
এর আগে গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আইন অনুযায়ী পরোয়ানা শোনার পর থেকে নিজামী আপীল বিভাগের চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের রিভিউ আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, যার শেষ দিন ছিল ৩০ মার্চ। তাই নির্ধারিত ১৫ দিন সময় শেষ হওয়ার একদিন আগেই নিজামী রিভিউ আবেদন জমা দেন। গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখে আপীল বিভাগ। ওই দিন সংক্ষিপ্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেনÑ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মীর কাশেম আলী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা। ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর আপীল এক মিনিটে আংশিক খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকার ॥ প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে, খুব শীঘ্রই কিশোরগঞ্জের দুই সহোদও এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে রায ঘোষিত হবে। ১১ এপ্রিল এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল সিএভি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে।
জামালপুরের ৮ রাজাকার ॥ ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেটি হলো জামালপুরের আট রাজাকারের মামলা। ২৪ এপ্রিল জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ আট রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী মোঃ এজাবুদ্দিন মিয়া জবানবন্দী শেষ করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
- See more at: https://www.dailyjanakantha.com/details/article/188346/