'ভুল' আর 'ভয়ে' ডুবছে বিএনপি জাহাঙ্গীর কিরণ ভোটের আগেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অন্যতম বড় দল বিএনপির পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। ছয়টি ধাপে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের দুই ধাপের আনুষ্ঠানিক তফসিল এরই মাঝে ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের পর্বও শেষ। চূড়ান্ত হয়েছে প্রার্থী তালিকাও। কিন্তু প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় ভোটের আগেই ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। প্রথম ধাপের ভোটে ১১৯টি ইউপির দখল আগেই পেয়ে গেছে ক্ষমতাসীনরা। দ্বিতীয় ধাপেও এগিয়ে আছে ১৩টি ইউপিতে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দল মনোনীত প্রার্থীদের ভুল আর ভয়ের কারণেই নির্বাচনে বিএনপির এই করুণ দশা। মনোনয়নপত্রে ভুল তথ্য দেয়ায় যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে গেছে অনেকের প্রার্থিতা। তাছাড়া অনেক ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও ক্ষমতাসীনদের ভয়ে এবং বাধায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়নি। এদিকে প্রথমবারের মতো সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির (জাপা) অবস্থাও ভোটের মাঠে অনেকটাই শোচনীয়। বিশ্লেষকদের মতে, জাপার প্রতীক লাঙ্গল টানার লোকই মিলছে না সিংহভাগ এলাকায়। কোথাও কোথাও প্রার্থী থাকলেও তাদের অবস্থান ততটা সুদৃঢ় নয়। ফলে ভোটের হাওয়া লাগছে নৌকার পালেই। রায় অনেকটাই ক্ষমতাসীনদের পক্ষে চলে গেছে আগেভাগেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৩২টির মধ্যে ১১৯টি ইউনিয়নে প্রার্থী নেই বিএনপির। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর মোট ৬১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৬২টি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। এর বাইরে ৫৭ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই। তবে এসব ইউপিতে জাপাসহ অন্যদলের প্রার্থী রয়েছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয় এই এলাকাগুলোতে সুনিশ্চিত থাকলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করা যাচ্ছে না। সূত্রমতে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ হাজার ২৪৬ জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টির ১২৭ জন, জাসদের ২৯ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ৪ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৩ জন, জেপির ১৭ জন, বিএনএফের ৭ জন, সিপিবির ৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২২৭ জন, ন্যাপের ৩ জন ও অন্যান্য দলের ১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বহাল আছে। ৬২টি ইউপিতে সর্বনিম্ন প্রার্থী থাকার পাশাপাশি এক ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রার্থীও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬১টিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। এ ধাপে ১৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। যাদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। ইসির তথ্য মতে, ৬৪৪ ইউপির মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ও ৫৮ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই। ফেনীর ৩টি ইউপিতে কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ১০টির স্থলে বেড়ে হয়েছে ১৩টি এবং বিএনপির প্রার্থী ইউনিয়ন ৫৮ এর স্থলে হবে ৬১টি। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় এই নির্বাচনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই স্পস্ট ব্যবধানের বিষয়ে অভিযোগ ও অনুযোগের অন্ত নেই বিএনপির। দলটির একাধিক নেতা সংবাদ সম্মেলন করে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এমনকি নির্বাচন কমিশনে গিয়েও অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীনদের বাধায় তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে সংস্থাটি সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে একাধিক নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের কাছে ইসির অবস্থান তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী এ ব্যাপারে বলেন, কমিশন আইনগতভাবে কাজ করছে। যে জায়গায় প্রভাব খাটানো ও বাধা দেয়ার ঘটনা হয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে ৬২ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে, সেখানে কোনো অভিযোগ ছিল না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দিলে ইসির করার কিছুই থাকে না। এক্ষেত্রে বেশি সংখ্যায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেই পারে। একই কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজও। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে গেলেও ইসির কিছুই করার নেই। কোথাও অনিয়ম হলো কি-না ইসি সেটি দেখবে। কে কোথায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলো, এটা কমিশনের দেখার বিষয় না। আইনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান আছে। মানবকণ্ঠ/আরএস |
__._,_.___