ইংরেজীতে 'আইডেনটিটি পলিটিক্স' বাংলায় ধরলাম 'স্বত্ত্বা বাজী'।
ধরেন, আপনি 'মুসলিম'। আপনার একটি স্বত্ত্বা, একটি পরিচয়। এটি আহত হতে পারে, যদি আপনার মুসলিম পরিচয়ের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে খারাপ কিছু শোনেন/দেখেন/বোঝেন।
অর্থ্যাৎ, আপনার মুসলিমানুভূতি আহত হতে পারে।
এবার আপনার অন্যান্য পরিচয়গুলি নিয়েও কথা বলা যায়? এই যেমন আপনি একজন পিতা / মাতা। সন্তান বিষয়ে আপনার কিছু দুর্বলতা রয়েছে, ফলে আপনার সন্তানুভূতিও আহত হতে পারে, যদি সে ব্যাথা পায়, কেউ বকা দেয়, কিংবা স্কুলে সমস্যা হয়।
এভাবেই আমরা পরিচয় নিয়ে ঘুরি, একেকজনের বহু পরিচয়। আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেউ কুৎসা রটনা করলে, আপনার মাথায় আগুন জ্বলে।
আপনি বিনপি পন্থী, খালেদা, তারেক জিয়াকে নিয়ে কেউ মন্তব্য করলে আপনার দিলে খোট দেয়।
আপনি লীগপন্থী, শেখ মুজিব নিয়ে আপনার মহান দুর্বলতা, তাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে আপনি আহত হচ্ছেন।
আপনার এই যে বিবিধ স্বত্ত্বা, এগুলির ভেতরেও আন্তঃকলহ থাকতে পারে।
তখন আপনি একটা সমস্যায় ভুগতে পারেন, একে ইংরেজিতে 'কগনিটিভ ডিজোনেন্স' বা ধরেন, বাংলায় তার_ছিড়ালী বলতে পারি।
মানে যখন দুইটা স্বত্তার ভেতরের আন্তকলহ আপনাকে বিপদে ফেলে না, স্বত্ত্বা দুইটা নিজেদের মতোন করে আপনার ভেতরেই বাস করে।
এই যেমন ধরেন বাঙালী স্বত্ত্বা। এর সাথে মুসলিম স্বত্ত্বার বিপুল বিরোধ।
এই যে বিরোধগুলি, তার আবিষ্কার কিন্তু রাজনীতির হাত ধরে। একে বলে, উপরোল্লিখিত, আইডেনটিটি পলিটিক্স, বা স্বত্ত্বা-বাজী।
আপনি পহেলা বৈশাখ ভালোবাসেন, কিন্তু একই সাথে মুসলিম। আপনি রবীন্দ্রনাথের গান ভালোবাসেন, কিন্তু আপনার মুসলিম স্বত্ত্বার হুজুরেরা বলে রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, কাজেই আপনি মুসলিম হইলে বাঙালী হইতে পারবেন না।
এই যে দুই পরিচয়ের মাঝে ঘাপলা বাধাইয়া দেয়া, এইটা বর্তমান কালের রাজনীতি খুব ভালো করে চর্চা করে।
এবার আসি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক, মালিক হিসেবে আপনার যে নাগরিক পরিচয়, তার প্রসঙ্গে।
আপনার কিছু মৌলিক অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান নিশ্চিত করার কথা ছিলো। রাষ্ট্র নামের যে সাংগাঠনিক যন্ত্রটা বিপুল শক্তি ও অর্থের জোরে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রন করে, তার মালিক হিসেবে আপনি সেই অধিকার প্রাপ্যদের একজন।
এখন রাষ্ট্রের যারা পরিচালক, মানে নির্বাচিত রাজনীতিবিদ, তারা যদি আপনার সেই অধিকার চুরি করে নিজেদের আখের গোছানোতে ব্যাস্ত থাকে, আপনি তখন কি করবেন?
এবার আসেন, রাষ্ট্র কিভাবে সেই প্রতিবাদী জনগনকে প্রতিহত করবে, সেইটা বুঝি।
রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রপাতি, আপনাকে বিভিন্ন স্বত্ত্বায় বিভক্ত করে, আপনারেই আপনার ভাই, বোন, বাপ, বন্ধু ইত্যাদি অন্য নাগরিকের সাথে লাগায়ে দিবে, ফাটায়ে দিবে।
আপনি মুসলিম হয়ে মুক্তিযুদ্ধবাদীর সাথে লড়াই করতে থাকবেন, অথবা বাঙালী হয়ে রাজকারের বিচার চাইবেন, অথবা রাজাকারের বিচারের দাবি করবেন, অথবা বিচার দাবি কারীদের সাথে মাইর ধর শুরু করবেন, অথবা নাস্তিকদের নিয়ে দৌড়াবেন, অথবা বামপন্থী দেখলে কটুবাক্য বর্ষণ করবেন।
ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।
আপনার অধিকার, সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক নাগরিক অধিকার কিন্তু ওই দিক দিয়ে লুটের মহোৎসব চলতেই আছে।
লুটকারীদের কোন পরিচয় নাই, তারা আইডিনটিটি পলিটিক্সে আক্রান্ত না, তাদের কোন লুটকার অনুভূতি নাই।
এরা অন্ধকারের জীব, এরাই আমারে আপনার সাথে লাগায়ে দেয়, তারপরে অন্ধকারে আড়ালে বসে খ্যাক খ্যাক করে মজা দেখতে থাকে।
আপনি কি করবেন, নিজেই জানেন, ঠিক?