[Attachment(s) from nur kazi included below]
বিশ্ব প্রবীণ দিবসঃ পশ্চিমা সমাজে বাংলাদেশী প্রবীণ
নূর মোহাম্মদ কাজী
পহেলা অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এ দিবসটি জাতিসংঘ ঘোষিত। জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্র দিবসটি মর্যাদা সহকারে পালন করে। পশ্চিমা দেশের সরকারগুলু প্রবীনত্ত্বকে গুরুত্ত্ব সহকারে দেখে এবং এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পালন করে থাকে। এবার এ দিবস পালন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ "সমাজ সকল বয়সের জন্য (A Society for all Ages)"- এ মুল বাণী ঘোষনা করেছে। সমাজে বয়স-বৈষম্য রয়েছে। বয়সকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে। সমাজে শিশুর বিরুদ্ধে বয়স্কদের এবং প্রবীণের বিরুদ্ধে নবীনদের বৈষম্য রযেছে। জাতিসংঘ এ সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে কর্মসুচী গ্রহন করেছে। বয়সের উপর জাতিসংঘ ২০০২ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বয়স-বৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত কর্মসুচী (Action Plan) গ্রহন করা হয়। এখন প্রশ্ন হল যারা আমরা আশির দশকে স্বদেশ ত্যাগ করেছি, পশ্চিমা সমাজে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছি এবং বার্ধ্যক্যে উপনীত হয়েছি, তারা কি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি? এ প্রবন্ধে আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
বয়স-বৈষম্য
বিগত ২০০৬ সালে আমি বাংলাদেশ সফরে যাই। এ সফরে বয়স্কদের প্রতি বৈষম্যের ব্যাপারটি আমি গভীরভাবে অন্নেষন (Observation) করি। এবং লক্ষ্য করি যে, ধনবাদী বৈষম্যের কারনে বাংলাদেশের গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রবীণদের দুঃখ ও দুর্দশা অনেকগুন বেড়ে গেছে। প্রবীণদের প্রতি অবহেলা ও অবিচার চরম আকার ধারন করেছে।
আমার এ অন্নেষনে আমি এ ব্যাপারে ওয়াকেব ছিলাম যে, বাংলাদেশী সমাজ পারিবারিক মুল্যবোধের উপর ভিত্তিশীল। পরিবার আবার ধর্মীয় মূল্যবোধের দ্বারা চালিত। বাংলাদেশের সকল ধর্মই প্রবীণদের সেবার তাগিদ দিয়েছে। পিতা-মাতা বার্ধ্যক্যে উপনীত হলে পরিবারই সেবার দায়িত্ত্ব পালন করে। বিশেষ করে পরিবাবের বড় ছেলের উপর বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবার দায়িত্ব পড়ে। তা'ছাড়া ও পরিবারের অন্যান্য ছেলে-মেয়েরাও বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়রা সেবার দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের ব্যাপারে এ ও আমি জানি যে, সরকার রাষ্ট প্রবীণ সেবার ব্যাপারে এখন ও আগ্রহী হয়ে উঠেনি। প্রবীণ সেবা কার্যক্রম একেবারেই সীমিত। সরকারী কর্মচারী এবং স্বল্প কিছু সংখ্যক বেসরকারী সেক্টরের কর্মচারীরা কেবল এখানে পেনশন পেয়ে থাকেন। ইদানিং সরকার নাম মাত্র বৃদ্ধ-ভাতা চালু করেছেন। তবে গ্রামের ৮৫ ভাগ মানুষ বৃদ্ধকালীণ ভাতা থেকে বঞ্চিত। সর্বশেষ বিচারে বাংলাদেশে প্রবীণ সেবার ব্যাপারটি পরিবারই করে থাকে।
অপর দিকে আমি লক্ষ্য করেছি যে, পশ্চিমা সমাজ ব্যাক্তি-স্বাতন্ত্রতাবাদী দর্শন তত্ত্বের (Individualism) উপর প্রতিষ্ঠিত। ব্যাক্তি-স্বত্তাকে সকল প্রকার বদ্ধন থেকে মুক্ত রাখার ধারনা থেকে এ দর্শন তত্ত্বের উত্পত্তি। প্রাচ্য সমাজ যেখানে পরিবারকে রাষ্ট্রের একক ইউনিট হিসেবে গন্য করে, সেখানে প্রাশ্চাত্য ব্যাক্তিকে একক ইউনিট হিসেবে গন্য করে থাকে। প্রাচ্য পরিবারকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যেগ নেয়। আর প্রাশ্চাত্য ব্যাক্তিকে প্রাধান্যে রেখে রাষ্ট্রীয় সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বাংলাদেশী প্রবীণ ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে আলোক পাত করতে চাই।
প্রবীণ সেবা
প্রাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে আগত ইমিগ্রান্টরা এখন প্রবীণ হয়েছেন। এদের কেহ কেহ স্বদেশের পারিবারিক মূল্যবোধকেই সঠিক বলে মনে করেন। বার্ধ্যক্যে পারিবারিক সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়াটাকে এরা অত্যন্ত দুঃখ জনক বলে বর্ননা করেছেন। তবে অনেকে আবার প্রাশ্চাত্যের সেবা কার্যক্রমকেও সঠিক বলে মনে করেন। এ সব তথ্য আমার নিজের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। আমার গবেষনার একজন সাক্ষত্দাতা (যিনি কানাডায় শিশু বয়সে এসেছেন এবং প্রাশ্চাত্যের সেবা কার্যক্রমকে সঠিক বলে মনে করেন) আমার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, "দেখুন আমরা এ দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম মেনে বড় হয়েছি। ব্যাক্তি-স্বাতন্ত্রতাবাদী শিক্ষাদর্শন দ্বারা শিক্ষিত হয়েছি। আমার বাবা-মা বয়স্ক হয়েছেন। ভালো কথা। আমি আশা করি, এদেশের নিয়ম অনুযায়ী তারা চলবেন। তারা এখানকার স্বাস্থ্য সেবা গ্রহন করবেন। প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত সেবাসমুহ গ্রহন করবেন। এ সবক্ষেত্রে আমার করার কিছু নেই। দিন দিন তাদের স্বাস্থ্য ভেংগে পড়ছে। স্বাস্থ্য সেবার সুবিধার্থেই আমার বাবা-মার জন্য বৃদ্ধ-নিবাসই (Old Age Home) ভালো আশ্রয় বলে আমি মনে করি"।
গবেষনায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে পশ্চিমা সমাজে বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবীণ ব্যাক্তিগণ দু'তরফা বঞ্চনার (Double Jeopardy) শিকার হচ্ছেন। প্রথমতঃ তারা স্বদেশে পরিবারের সদস্যদের সেবা যে পেত, এ দেশে এসে তারা সে সেবা থেকে বঞ্চিত। কারন এখানে পরিবারের সদস্যদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা করার সু্যোগ নাই। এখানকার পরিবার কাঠামো স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান দ্বারা গঠিত- একক পরিবার। বাংলাদেশে রয়েছে একান্নবর্তী পরিবার। একান্নবর্তী পরিবারে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা সম্ভব হলেও একক পরিবারে তা সম্ভব নয়। তাই এ খানে বাংলাদেশী বয়ঃবৃদ্ধ ব্যাক্তিগন বাংলাদেশের মত পারিবারিক সেবা থেকে বঞ্চিত। দ্বিতীয়তঃ এ দেশে এসে ও তারা এ দেশে বসবাসকারী মানুষদের মত সু্যোগ সুবিধা পাচ্ছে না। কারন এ দেশের সমাজ কাঠামোর সাথে এরা মিশতে পারে না। এ দেশের সু্যোগ সুবিধা সম্পর্কে এদের জ্ঞান সীমিত। তদুপরি আমরা সংগঠনপ্রিয় মানুষ (Organizational men) নই। এখানকার সমাজ সেবাকে সংগঠনের অন্তর্গত করে রেখেছে। সরকারের রিসোর্স সংগঠনে আসবে। আপনি সংগঠনের সদস্য হলে পরে তার ভাগ পাবেন। আপনার কমিউনিটি সংগঠন থাকলে সরকার আপনাকে সহযোগীতা করবে। আমাদের কমিউনিটি সংগঠন নাই। কেহ কোন সংগঠন করার উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে দেখা যায়, সে উদ্যেগকে কিভাবে ধবংশ করা যায়, তার জন্য কিছু কিছু লোক প্রেত-নৃত্য শুরু দেয়। এ কারনে আমাদের প্রবীণরা এ দেশের সেবা সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটাকে বলে দুরফা বঞ্চনা।
শেষ কথা
একটি ভালোদেশে আমাদের এ দুর্দশা কেন? এটা আমাদের নিজ়েদের দোষ। আমরা সংগঠন বুঝি না। সংগঠন গড়ার চাইতে ভাংগাটাকে বেশী প্রাধান্য দেই। আমি আজ থেকে ১১ বছর আগে মন্টিয়লে "হিমালয়া সিনিয়রস" নামে বাংলাদেশী প্রবীণদের জন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম। বাংলাদেশী কমিউনিটির কতিপয় উঠতি নেতা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তা পাকিস্তানীদের দিয়ে দিলেন। তারা এ সংগঠনের পতাকা তলে এখন নিজ়েদের লোকদের সংগঠিত করেছে। আমরা ধর্মীয় প্রতিষ্টান গড়ে তুলি আর দেখা যায় তার পরিচালানার ভার চলে যায় ভিন জাতির হাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বনি ইস্রাইলীদের মত আমাদের অবস্থা হবে। ফেরাউনদের পিরামড তৈরী করতে করতে বছরের পর বছর যাবে দিশা ফিরবে না। দুঃখ ও কষ্টের সীমা থাকবে না। আসুন ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করি। বনি ইস্রাইলীদের দুঃখ অনুভব করি। আসুন প্রবীণদের সংগঠিত করি। দু'তরফা বঞ্চনা থেকে প্রবীণদের বাঁচাই।
Nur Mohammad Kazi, s.w., MSW(DU).,MSS(DU).,MSW (McGill).,Ph.D.abd.(McGill).
President
Project profamily
Tel:(514) 273-1502
Attachment(s) from nur kazi
1 of 1 File(s)
__._,_.___