জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ছয়জনের। দণ্ডিতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী। তিন বছর আগে সংগঠনের আরেক পক্ষের হামলায় নিহত জুবায়েরও ছাত্রলীগ করতেন। এ হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে দু'জন খালাস পেয়েছেন। ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক গতকাল রোববার এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র মাহবুব আকরাম। মামলার বিচার চলাকালে এরা সবাই পলাতক ছিলেন। যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে দর্শন বিভাগের ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ ও কামরুজ্জামান সোহাগ, ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের শফিউল আলম সেতু ও অভিনন্দন কুণ্ড ওরফে অভি এবং অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজমুস সাকিব তপুর। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান প্লাবন ও ইতিহাসের মাহমুদুল হাসান। দণ্ডিতদের মধ্যে আশিক, রইছ, আকরাম ও অরূপ শুনানি চলাকালে কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান। মাহবুব আকরাম ছাড়াও নাজমুস সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রায় ঘোষণার আগে সকালে আসামিদের মধ্যে কারাবন্দি সোহাগ, মাজহারুল, সেতু, অভি, তপু, প্লাবন ও মাহমুদুলকে আদালতে হাজির করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও অবরোধের মধ্যে আসামিদের কারাগার থেকে না আনায় তা পিছিয়ে যায়।
তিন বছরের বেশি সময় বিচার চলার পর গত ২৮ জানুয়ারি বিচারক নিজামুল হক এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন দিয়েছিলেন। ওই দিনই সাত আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, যাদের দু'জন খালাস পেয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র জুবায়ের ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নিবন্ধক হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় এই হত্যা মামলা করেন।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকার হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ। হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর মামলাটি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে এলে তা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
জুবায়ের নিহত হওয়ার পর ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়কার উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির।
ফাঁসি দ্রুত কার্যকর চায় জুবায়েরের পরিবার : এদিকে জুবায়ের আহমেদকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। গতকাল রোববার এ মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জুবায়েরের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন এ দাবি জানান।
সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক মামুন বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ জনের মধ্যে আশিকুল ইসলাম আশিক ও খান মোহাম্মদ রইস পালিয়ে গিয়ে এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। পলাতক রইস বর্তমানে ডেনমার্কে এবং আশিক মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
এছাড়া পলাতক দণ্ডিতদের মধ্যে কয়েকজনকে সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের 'র্যাগ ডে'র অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা গেছে বলে জানান তিনি।
দু'জনকে খালাসের কারণ : রায়ে বলা হয়েছে, মামলার বিচারে উঠে এসেছে যে, প্লাবন ঘটনার সময় সেখানে থাকলেও মারধর থেকে জুবায়েরকে বাঁচাতে তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তিনি মোবাইল ফোনে মাহমুদুল হাসান মাসুদকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে আসেন যেন জুবায়েরকে পিটুনির হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
__._,_.___