নেড়ি কুকুরের ইন্টারভিউ: জলিলের ইন্টারভিউ ও গোয়েন্দার অ্যাকশনশফিক রেহমান | |
এবারের ঈদের সকালটা ছিল অনেকের জন্যই কষ্টকর ও যন্ত্রনাদায়ক। আপনারা দেখেছেন আশ্বিনের দ্বিতীয় সপ্তাহ হলেও সেদিন কেমন আষাঢ়ে বৃষ্টির ঢল নেমেছিল। শোলাকিয়া থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত ঈদের সব জামাতে নামাজিদের কি কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। গুটি কয়েক নামাজি ছাতা হাতে নামাজ পড়েছিলেন। বাদবাকি সবাইকে মাথার উপরে বৃষ্টির পানি এবং পায়ের নিচে বৃষ্টির পানির মধ্যে নামাজ পড়তে হয় হয়েছিল। কেউ কেউ মাটিতে পলিথিন ব্যাগ অথবা শিট বিছিয়ে সেজদা দিয়েছেন। কিন্তু সবাই বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন, সেদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা যেহেতু ছিল সেহেতু শামিয়ানার ওপরে তেরপলের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। তবে সমালোচকরা বলেননি এই ঢাউশ সাইজের তেরপলের দাম পড়বে কতো এবং দুই ঈদের দুই সকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে এর কার্যকারিতা ও স্টোরেজ কি হবে। আমি, নেড়ি কুকুর বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখেছি। বৃষ্টির পানিতে সেদিন ঈদগাহে ছয়-সাত ইঞ্চি গভীর পানির বিরাট লেকের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পানির মধ্যে নামাজিরা যে কষ্ট পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পেতে পারেন- সেটা পুষিয়ে দেয়া যেতে পারে একভাবে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেই পানির মধ্যে মাছ ছেড়ে দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে ঈদের সকালে নামাজের ও কোলাকুলির পরে মুসুল্লিরা তাদের পলিথিনের ঝোলাঝুলিতে টাটকা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন এবং ঘরণীরা ঈদের মেনুতে মাংসের সব ডিশের পাশাপাশি মাছের ডিশ সংযোজনের চমৎকার সুযোগ পাবেন। মসজিদ ও নগর কর্তৃপক্ষ তেরপল কেনা ও বছরের ৩৬৩ দিন গুদামজাত করার খরচ না করলেও প্রশংসিত হতে পারবেন। ঈদের মাঠে মাছ থাকলে নেড়ি কুকুরদেরও একটা ভূমিকা থাকবে। আর সেজন্যই আমি এই প্রস্তাবটি গভীরভাবে বিবেচনার অনুরোধ করছি। আমরা সেদিন মাছ ধরার মানুষদের সাহায্য করতে পারবো। তবে তার জন্য একটা প্রস্তুতি লাগবে। বাংলাদেশের কুকুরদের মধ্যে নতুন জাতের কুকুরের জন্ম হতে হবে। এ নতুন জাতের কুকুর হবে ওয়াটার ডগ বা পানি কুকুর। এই কুকুর আমদানি করতে হবে আমেরিকা অথবা পর্তুগাল থেকে। গত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিয়ন্তা জেনারেল মইন ইন্ডিয়া থেকে ঘোড়া আমদানি করেছিলেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান নিয়ন্তা কয়েকটি ওয়াটার ডগ আমদানি করে তাদের প্রজনন ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হতে পারেন। কিন্তু বিদেশী অ্যালসেশিয়ান, ল্যাব্রাডার, কর্গি, পুডল এবং স্বদেশী সরাইল থাকতে আমি কেন ওয়াটার ডগ আমদানির প্রস্তাব দিচ্ছি? বলছি। পর্তুগিজ ওয়াটার ডগ (Portuguese Water Dog) ইওরোপে চলতিভাবে পিডাবলিউডি (PWD) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে অবশ্য পিডাবলিউডি বলতে সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট বা গণপূর্ত বিভাগকে বোঝায়। কিন্তু ইওরোপিয়ানদের কাজকর্মই আলাদা। তারা এক বিশেষ প্রজাতির কুকুরের নাম দিয়েছে পিডাবলিউডি। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা তাদের পূর্বপুরুষ ইওরোপিয়ানদের চাইতে আলাদা। তারা পূর্তগিজ ওয়াটার ডগকে পিডাবলিউডি বলে না, তারা বলে ওয়াটার ডগ। নাম যাই হোক না কেন এই ওয়াটার কেনেলে ক্লাব ( American Kennel club) জানিয়েছে এই কুকুরের আদি হচ্ছে পর্তূগালের সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়ি আলগ্রেভ অঞ্চলে। সেখান থেকে তারা ছড়িয়ে পড়ে পর্তূগালের তীরবর্তী সকল অঞ্চলে। কারণ? কারণ পর্তূগালের জেলেরা এদের শেখায়, কিভাবে মাছকে তাড়া করে জালে ঢোকাতে হয়, হারিয়ে যাওয়া বড়শি অথবা জাল, পানি থেকে উদ্ধার করতে হয়। জেলেদের এক ট্রলার থেকে আরেক ট্রলারে চিঠি পৌঁছে দিতে হয় অথবা জাহাজ থেকে বন্দরে খবর পৌঁছে দিতে হয়। পর্তূগাল অবস্থিত আটলান্টিকের তীরে এবং আটলান্টিকের পানি তুলনামূলকভাবে গরম। পর্তূগালের জেলেরা ওয়াটার ডগ নিয়ে তাদের ফিশিং ট্রলারে চলে যেত আইসল্যান্ড পর্যন্ত যেখানে সমুদ্রের পানি বরফশীতল। সেই ঠান্ডা পানিতেও ওয়াটার ডগরা ঝাপিয়ে পড়ে কড (Cod) মাছ ধরায় সাহায্য করতো। এছাড়া ভাস্কো-ডা-গামার মতো ভূ-পর্যটক নাবিকেরাও তাদের সঙ্গে নিতেন ওয়াটার ডগ। এসব গুণের ফলে পর্তূগালে এর নাম হচ্ছে পর্তূগিজ ফিশিং ডগ। কেউ কেউ সেখানে একে বলেন আলগ্রেভিয়ান ওয়াটার ডগ। আর পর্তূগিজ ভাষায় এতে বলা হয় কাও-ডি-আহ-গোয়া (Cao de Agua)। কেউ কেউ একে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন পোর্টি (Portie)। এই কুকুরের আরেকটি গুণ হলো এর লোম ঝরে খুব কম। মানুষের মত এর চুল। যদি নিয়মিত শ্যাম্পু করা এবং চিরুনি দিয়ে আচড়ানো হয় তাহলে নতুন লোম দ্রুত গজায়। এসব কারণে বর্তমান যুগে ওয়াটার ডগের কদর বেড়েছে ইওরোপ আর আমেরিকায়। ওয়াটার ডগ সাইজে ছোট এবং ওজনে কম। পুরুষ ওয়াটার ডগ হতে পারে ২০ থেকে ২৩ ইঞ্চি উঁচু এবং ওজন হতে পারে ১৮ থেকে ২৭ ইঞ্চি কেজি। আর নারী ওয়াটার ডগ হতে পারে ১৭ থেকে ২১ ইঞ্চি উঁচু এবং ওজন হতে পারে ১৬ থেকে ২৫ কেজি। এদের রং হতে পারে কালো, ব্রাউন অথবা কালো-শাদা-কিংবা ব্রাউন শাদার মিশ্রণ। এদের নাচতে শেখালে নাচতে পারে এবং এরা শুধু পেছনের দুই পায়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। পরিশ্রমী এবং এরা পানি ভালোবাসে। আর ভালোবাসে মানুষকে। তাই তারা মানুষের চারপাশে কোনো কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। গত মাসে প্রয়াত আমেরিকার সিনেটর এডওয়ার্ড (টেড) কেনেডি-র একাধিক পোষা কুকুর ছিল ওয়াটার ডগ। এদের মধ্যে প্রিয় তিনটির নাম ছিল, স্প্ল্যাশ, সানি ও ক্যাপি। স্প্ল্যাশের ছবি তিনি তার স্টাডি টেবিলে ফ্রেমে বাঁধাই করে রেখেছিলেন। শিশুদের জন্য টেড কেনেডি একটি বই লিখেছিলেন। নাম: সিনেটর অ্যান্ড মি: এ ডগ'স আই-ভিউ অফ ওয়াশিংটন ডিসি (My Senator and Me: A Dog's Eye-View of Washington DC)। এই বইয়ের নায়ক স্প্ল্যাশ, যে তার চোখে রাজধানী ওয়াশিংটন ও রাজনীতির বিষয়টি সহজ সরল ভাষায় বলেছে। আপনি মইন-মিলার বদলে একটি কুকুরের ইন্টারভিউ নেয়াতে যারা নাখোশ হচ্ছেন তাদের এই খবরটা দিতে পারেন যে টেড কেনেডির একটি কুকুরের মাধ্যমে তার বক্তব্য রেখে গিয়েছেন। টেড কেনেডির আশীর্বাদপুষ্ট আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা নির্বাচিত হবার আগে তার দুই মেয়ে শাশা ও মালিয়া-কে প্রমিস করেছিলেন যে হোয়াইট হাউসে গেলে তিনি তাদের একটা কুকুর গিফ্ট দেবেন। তাই ওবামা প্রেসিডেন্ট হবার পর বিশ্বের নজর ছিল তিনি কোন জাতীয় কুকুর উপহার দেবেন। গত ১১ এপ্রিল ২০০৯-এ জানা যায় সিনেটর টেড কেনেডি তার কুকুরপালের মধ্য থেকে তাকে একটি ওয়াটার ডগ দিয়েছেন। শাশা ও মালিয়া এরনাম রাখে বো (Bo)। কারণ তাদের এক কাজিনের বিড়ালের নামও তাই। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন ওবামার দুটি আদ্যক্ষর (B এবং O ) থেকে এই ফাস্ট ডগ-এর নাম রাখা হয়েছে বো। আমার বিশ্বাস প্রেসিডেন্ট ওবামাকে অনুরোধ করলে তিনি কয়েকটি ওয়াটার ডগ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। যেসব বাংলাদেশী মুসলমান বারাক হোসেন ওবামা-র নামের মধ্যে হোসেন শব্দটি আছে ভেবে এবং তার সৎ পিতা একজন আফ্রিকান মুসলিম ছিলেন জেনে এবং তিনি এবার ওয়াশিংটন ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিলেন দেখে আমেরিকার এই প্রেসিডেন্টকে মুসলিম ভাবতে ভালোবাসেন তারা নিশ্চয়ই মনে করবেন একজন মুসলিম হিসেবে তিনি বাংলাদেশী মুসলিমদের সাহায্যে করলে মানবিক কারণেই করবেন, তিনি মুসলিম বলে নয়। আসলে তিনি মুসলিম নয়। লক্ষ্য করুন তিনি ইফতার পার্টি দিলেও ঈদের কোনো নামাজে যাননি। নভেম্বর, ২০০৮-এর নির্বাচনের আগে ওবামা বলেছিলেন, আমি যদি মুসলিম হতাম, তাহলে সেটা আপনাদের জানাতাম। বাস্তব হচ্ছে এই যে, তিনি কৃশ্চিয়ান ধর্মের একটি শাখা, টুনিটি ইউনাইটেড চার্চ অফ ক্রাইস্ট-এর সদস্য এবং একজন প্রাকটিসিং কৃশ্চিয়ান। তিনি এখন মুসলিম নন। কিন্তু তিনি কি আগে মুসলিম ছিলেন? পরে ধর্মান্তরিত হয়ে মুরতাদ হয়ে গিয়েছেন? এসব প্রশ্নে ১২ নভেম্বর ২০০৮-এ ওবামার নির্বাচনী অভিযানের ওয়েবসাইটে দুটি উত্তর ছিল। এক বারাক ওবামা মুসলিম নন এবং কখনই মুসলিম ছিলেন না। দুই, ওবামা কখনই মসজিদে নামাজ পড়েননি। মুসলিম রূপে তিনি বড় হননি এবং তিনি একজন ধর্মপ্রাণ কৃশ্চিয়ান। এরপর ২২ ডিসেম্বরে আইওয়ার ওসকালুসা শহরে স্মোকিরো কফি শপে একটি ইন্টারভিউতে ওবামা তার মুসলিম ঐতিহ্য সম্পর্কে নিজেই বলেন, আমার জন্ম হয়েছিল কেনিয়াতে এবং তার গ্রামের অনেক মানুষই মুসলিম। বাবা নিজে ইসলাম ধর্ম পালন করতেন না। সত্য কথা হচ্ছে এই যে বাবা নিজে খুব রিলিজিয়াস ছিলেন না। মার জন্ম হয়েছিল কানসাস-এ কৃশ্চিয়ান রূপে। তার সঙ্গে আমার মা-র দেখা হয়েছিল। তারা প্রেমে পড়েন। তারা বিয়ে করেন। তারপর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমাকে লালন-পালন করেন আমার মা। তাই আমি সব সময়ই কৃশ্চিয়ান ছিলাম। ইসলামের সঙ্গে আমার একমাত্র যোগাযোগটা হচ্ছে আমার দাদা ছিলেন কেনিয়ান। কিন্তু আমি কখনই ইসলাম ধর্ম পালন করিনি.... কিছু কালের জন্য আমি ইন্দোনেশিয়াতে ছিলাম। সেখানে আমার মা টিচার রূপে কাজ করেছিলেন আর ইন্দোনেশিয়া একটি মুসলিম দেশ। আমি সেখানে স্কুলে যেতাম। কিন্তু ইসলাম ধর্ম পালন করিনি। তবে আমি মনে করি এর ফলে ইসলাম ধর্মপালনকারীদের বিষয়ে আমার একটা অন্তর্দৃষ্টি হয়েছে এবং তার ফলে মিডল ইস্টে সুসম্পর্ক স্থাপন সহজতর হবে। ওবামার এই কথায় বিতর্কের অবসান হয়নি। মুসলিমরা মনে করেন, যেহেতু তার জন্ম হয়েছে একটি মুসলিম বংশে এবং যেহেতু তার নাম হোসেন-এর শিকড় হচ্ছে আরবি ভাষায় সেহেতু তিনি মুসলিম রূপে জন্ম নিয়েছেন। এর আগে ২৪ জানুয়ারী ২০০৭-এ এসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছিলেন, ডিভোর্সের পর ওবামার মা বিয়ে করেছিলেন লোলো সোয়েতোরো নামে এক ইন্দোনেশিয়ানকে। তারা ইন্দোনেশিয়াতে ছিলেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত। প্রথমে ওবামা ভর্তি হয়েছিলেন ফ্রান্সিসকাস আসিসিস নামে একটি ক্যাথলিক স্কুলে। ইন্দোনেশিয়াতে রাষ্ট্র অনুমোদিত পাঁচটি ধর্ম আছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট। ঐ ক্যাথলিক স্কুলের রেজিস্টারে দেখা যায়, ওবামাকে তার সৎ পিতার ধর্মে, মুসলিম রূপে রেজিস্টার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে দুই মাস পরে লস এঞ্জেলেস টাইমস রিপোর্ট করে, তারা ইন্দোনেশিয়াতে ওবামার ক্যাথলিক ও মুসলিম টিচারদের এবং ওবামার ছেলেবেলার বন্ধুদের ইন্টারভিউ করে জানতে পেরেছে তিনি সেখানে দুটি স্কুলে পড়াশুনা করেন থার্ড ও ফোর্থ গ্রেডে। এই দুটি স্কুলে তাকে মুসলিম রূপে রেজিস্টার করা হয়েছিল। এসব স্কুলের রিলিজিয়ন ক্লাসে সপ্তাহে দুই ঘন্টা ধর্মশিক্ষা দেয়া হয় এবং ওবামা সেই শিক্ষা পেয়েছিলেন ইসলাম ধর্ম বিষয়ে। তার ছেলেবেলার বন্ধুরা বলেন ওবামা মাঝে মধ্যে জুমার নামাজ পড়তে স্থানীয় মসজিদে যেতেন। আমরা নামাজ পড়তাম তবে সিরিয়াসলি নয়। বড় মানুষরা যা করেন আমরা তাই নকল করতাম। মসজিদে আমরা যেতাম বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে এবং খেলা যাবে ভেবে। ওবামার ছোট বোন মায়া সোয়োতোরো ওবামার পক্ষে বলেন, প্রতি শুক্রবারে ওবামা মসজিদে যেতেন না। তিনি মসজিদে যেতেন বড় সব ঘটনার সময়ে। এই তর্ক এখনো চলছে এবং এটা থেকে যা বেরিয়ে এসেছে তা হলো: ওবামার জন্ম হয়েছিলো একজন মুসলিম রূপে। তার পিতা ছিলেন একজন ননপ্রাকটিসিং মুসলিম। কিছুকালের জন্য তার সৎপিতার তত্ত্বাবধানে তিনি যখন ছিলেন, তখন ওবামা মুসলিম ধর্ম কিছুটা পালন করেছিলেন। কোনো এক পর্যায়ে, সম্ভবত আমেরিকার রাজনীতিতে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের পর, তিনি কৃশ্চিয়ান ধর্ম গ্রহণ করেন। সুতরাং ওবামা যে বলেন, আমার জন্ম হয়েছিল একজন কৃশ্চিয়ান রূপে এবং আমি কখনই ইসলাম ধর্ম পালন করিনি সেটা সঠিক নয়। ওবামা যে কখনই মসজিদে যাননি বলে তার ক্যামপেইনে বলা হয়েছিল সেটা ছিল মিথ্যা। তবে এটাও সত্য যে এখন ওবামাকে জোর করে মুসলিম বানানো যাবে না। কারণ তিনি নিজেই জোরালোভাবে বলেছেন তার জন্ম হয়েছিল একজন কৃশ্চিয়ান রূপে। তাহলেও আমি ধরে নেব ওবামার ছোট বোন মায়ার কথাও সত্যি। অর্থাৎ, ইন্দোনেশিয়াতে ওবামা বড় কিছু অনুষ্ঠানে মসজিদে গিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ওবামা যে নামাজে গিয়েছিলেন এটা অনুমান করা যৌক্তিক হবে। আর তার মানে হচ্ছে ঈদের জামায়াতের অভিজ্ঞতা ওবামার আছে এবং বাংলাদেশে ঈদের জামাতের দিনে বৃষ্টি হলে মাছ ধরার সুবিধার্থে ওয়াটার ডগ পাঠানোর ব্যবস্থা তিনি করবেন। থ্যাংক ইউ ইন অ্যাডভ্যান্স, প্রেসিডেন্ট বিও। আমাদের কুকরদের ধর্ম নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের কোনো ধর্ম নেই। আমরা আসলেই ধর্মহীন এবং তাই ধর্ম সংক্রান্ত সব তর্ক থেকে মুক্ত। সে যাই হোক। আমি জানতে পেরেছি ঈদের দিনটা আপনার জন্য আনন্দদায়ক হয়নি। আপনি সেদিন বিকেল ছ'টায় গিয়েছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শহীদ মইনুল রোডে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে। কিন্তু আপনি সেটা করতে পারেননি। আপনাকে এবং বিশিষ্ট আবদুল আওয়াল মিন্টুসহ শুভেচ্ছা জানাতে আগ্রহী আরো অনেক ব্যক্তিকে সেদিন মইনুল রোডের শুরুতেই আটকে দেয়া হয়েছিল। প্রায় দেড় ঘন্টা সেখানে যেতে আপনারা সরকার পক্ষে কর্মরত ডজন খানেক মিলিটারি পুলিশ (MP) ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা, পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চের (SB-এসবি) গোয়েন্দা এবং শাদা পোশাক পরা গোয়েন্দাদের কাছে বহু যুক্তি তর্ক দেখিয়েও ম্যাডাম জিয়ার বাড়িতে যেতে পারেননি। সেখানে কর্মরত পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে আপনার বাদানুবাদের কল্পনা আমি করেছি। শাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা : আপনার পরিচয়? শ. রে : আমার নাম শফিক রেহমান। আমি লেখালেখি করি। গোয়েন্দা : আপনি যে শফিক রেহমান তার প্রমাণ কি? শ. রে : (মানিব্যাগ থেকে কার্ড বের করে) এই নিন আমার ভিজিটিং কার্ড। গোয়েন্দা : এটাই যে আপনার ভিজিটিং কার্ড তার প্রমাণ কি? অন্য কোনো অকাট্য প্রমাণ আছে কি? ন্যাশনাল আইডি কার্ড? শ. রে : না। নেই। ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকলেও কোনো লাভ হতো না। সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে আপনারা আইডি কার্ডের জন্য যেসব ফটো তুলেছিলেন তার অধিকাংশই খারাপ হয়েছিল। বাস্তব চেহারার সঙ্গে ঐসব ফটোর কোনো মিল খুব কম। তাই ঐ কার্ড দেখে আপনি আমাকে শনাক্ত করতে পারতেন না। গোয়েন্দা : তাহলে আপনি যেতে পারবেন না। শ. রে : দেখুন, আজ ঈদের দিন। আজকের দিনে পারস্পারিক সৌজন্য ও শুভেচ্ছা বিনিময় করাটা একটা মুসলিম ধর্মীয় রীতি। আপনি সেই ধর্মীয় রীতি পালনে বাধা দিচ্ছেন। গোয়েন্দা : সরি স্যার । আপনি যেতে পারবেন না। ওপরের নির্দেশ নেই। শ. রে: আপনি ওপরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং জানিয়ে দিন আমি কে ও কেন ম্যাডাম জিয়ার বাড়িতে যেতে চাচ্ছি। গোয়েন্দা (মোবাইল ফোনে ওপরের কারো সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর) :নো স্যার। আপনার যাবার অনুমতি নেই। শ. রে : কোনো কারণ বলেছেন কি উনি? গোয়েন্দা : আপনার রিয়াল পরিচয়, আপনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জলিল। শ. রে: সে কি! আমি তো শুনেছি মি. জলিল এখন লন্ডনে! গোয়েন্দা : আমাদের ইন্টেলিজেন্সের খবর তিনি লন্ডনে ছিলেন বটে। কিন্তু এখন ঢাকায় এসেছেন খুব শর্ট ট্রিপে। আবার ফিরে যাবেন লন্ডনে। শ. রে : আপনাদের ইনফর্মেশন ভুল। জলিল সাহেব কেনই বা লন্ডন�ঢাকা�লন্ডন যাতায়াত করবেন? বিশেষত এই ঈদের সময়ে। আর কেনই বা তিনি ঢাকায় এস খালেদা জিয়ার বাড়িতে যেতে চাইবেন? তিনি তো নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগের এবং নিবেদিত প্রাণ হাসিনাপন্থী। গোয়েন্দা : সেটা তিনি আগে ছিলেন। এখন জলিল সাহেব আসা-যাওয়া করছেন ম্যাডাম জিয়ার সঙ্গে একটা গভীর ষড়যন্ত্র করতে। তিনি লন্ডনে বাংলা টিভিকে বিয়াল্লিশ মিনিটের একটা ইন্ডারভিউ দিয়েছেন। এটা লন্ডনে টেলিকাস্ট হবে আগামীকাল ২২ সেপ্টেম্বরে রাত দশটায়। কিন্তু এরপরে ঢাকায় ফিরাটা তার জন্য খুব ডিফিকাল্ট হয়ে যেতে পারে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা তাকে লাঞ্ছিত করতে পারে। তাই তিনি আগেই ঢাকায় এসে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার প্রটেকশন চাইতে এসেছেন এবং আপনিই সেই ব্যক্তি। আপনিই আবদুল জলিল। শ. রে: ইনক্রেডিবল। অবিশ্বাস্য আপনাদের এই অভিযোগ। জলিল সাহেবের সঙ্গে আমার মিল কোথায়? গোয়েন্দা : আপনি একজন পুরুষ। চোখে চশমা আছে। এটাই তো যথেষ্ট। শ. রে: আমার চশমার ফ্রেম লাইট। জলিল সাহেবের চশমার ফ্রেম হেভি। আমার গোফ নেই। জলিল সাহেবের হেভি গোফ আছে। আমি হাওয়াই শার্ট পরেছি। জলিল সাহেব সব সময়ই বঙ্গবন্ধু কোট পরেন। গোয়েন্দা (স্মিত হেসে) : আমরা সেটা জানি। আর সেজন্যই আমরা সাসপেক্ট করছি আমাদের চোখে ধুলা দেয়ার জন্য আপনি জনাব আবদুল জলিল, নতুন চশমা পরে, গোফ কামিয়ে, হাওয়াই শার্ট পরে মি. শফিক রেহমান সেজে আজ এখানে এসেছেন! শ. রে: ওই ইন্টারভিউতে তিনি কি বলেছেন যে জন্য তাকে বেগম খালেদা জিয়ার প্রটেকশন নিতে হবে? আমাকে আটকাতে হবে? গোয়েন্দা : তিনি বলেছেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল......আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা এবং বিপুল বিজয়ের পেছনেও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডিজিএফআইয়ের একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। শ. রে: এটা আবার নতুন কথা কি? সবাই তো সেটা আগেই জানে। নইলে নির্বাচনে আশি শতাংশের বেশী ভোট পড়লো কি করে? তার জন্য জলিল সাহেবকে লাঞ্ছিত হতে হবে কেন? গোয়েন্দা : কারণ তিনি দলের সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। তার কথার গুরুত্ব আছে। তার কথায় প্রমাণিত হচ্ছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা সমঝোতা অনেক আগে থেকেই ছিল। অর্থাৎ একটি সাজানো নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হয়েছে। এটা গুরুতর অভিযোগ। এর পরে ডিজিএফআই কি করে আপনাকে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বাড়িতে যাবার অনুমতি দেবে? শ. রে : তা ঠিক। ডিজিএফআই এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেউ এই অভিযোগের প্রতিবাদ করবে বলে মনে হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে জলিল সাহেবের অভিযোগকে আমি সত্য বলেই মেনে নেব। জলিল সাহেবকে ধন্যবাদ দেব সত্যটা তিনি প্রতিষ্ঠিত করলেন বলে। সে যাই হোক না কেন, আমি তো আবদুল জলিল নই। আমাকে যেতে দিন। গোয়েন্দা : অর্ডার ইজ অর্ডার স্যার। আই অ্যাম ভেরি সরি স্যার। ওপরের নির্দেশ স্যার। শ. রে : বেশ। আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু যাবার আগে বলতে চাই আপনারা জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানব অধিকার লংঘন করছেন। জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের ২০ ধারার ক অনুচ্ছেদে লেখা আছে : প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হবার অধিকার আছে। রাইট টু পিসফুল অ্যাসেম্বলি আছে। গোয়েন্দা : জাতিসংঘ এসব ঘোষণা দেয় নাকি? আমরা তো জানি ওদের একমাত্র কাজ হচ্ছে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সৈন্য পাঠানো। আমরা কিছু ডলার কামাতে চাই, জাতিসংঘ সেই সুযোগটা করে দেয়। জেনারেল মইন তো সেটাই আমাদের বুঝিয়েছিলেন। তাই তাকে আমরা সাপোর্ট দিয়েছিলাম। জাতিসংঘ যে মানব অধিকারের কথাও বলে তা এই প্রথম শুনলাম। এটা একটা সম্পূর্ণ নতুন ইনফর্মেশন। শ. রে : তাহলে বুঝুন, আপনাদের ইনফর্মেশন কালেকশান সিসটেম কতোটা দূর্বল অথবা কতোটা স্ট্রং। আপনাদের অ্যাকশান কতোটা রাইট অথবা কতোটা রং। আমরা সবাই চলে যাচ্ছি। ইন্টারভিউ নিয়েছেন শফিক রেহমান ৩ অক্টোবর ২০০৯ |
__._,_.___