http://sonarbangladesh.com/article.php?ID=6818
পাশ্চাত্য ও ইসলামি ব্যবস্খার তুলনা
শাহ আবদুল হান্নান
ইসলামি জীবনধারা ও পাশ্চাত্য জীবনধারার তুলনামূলক আলোচনাই এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য। কারণ আমার অনেক বন্ধু পাশ্চাত্যের ভক্ত। পাশ্চাত্যের উন্নয়ন, তাদের বিরাট বিরাট বিল্ডিং, তাদের যোগাযোগব্যবস্খা, তাদের গণতন্ত্র আমার বন্ধুদেরকে খুবই আকৃষ্ট করে। পাশ্চাত্যের ভালোকে মন্দ বলা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে তাদের জীবনধারা এবং সিস্টেমগুলোর অসম্পূর্ণতা তুলে ধরা এ লেখার উদ্দেশ্য। শেষের দিকে ইসলাম বা মুসলিম সিস্টেমের ব্যাপারেও কিছু উল্লেখ করব।
এর মধ্যে লেখক হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই আপনাকে আমি খুঁজিয়া বেড়াই পড়লাম। তাতে হুমায়ূন আহমেদ আমেরিকার সমাজব্যবস্খাকে পছন্দ করেননি। তিনি লিখছেন যে, একটা সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকেই আলাদা কটে থাকে। শিশুকে ঘড়ি ধরে খাওয়ানো হয়। কাঁদলেও সময়ের আগে খাওয়ানো হয় না। সন্তান দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-মামা, ফুফু, খালাদের সঙ্গ পায় না। বয়স হলে আলাদা বাসায় থাকতে হয়। তার চাকরি তাকে জোগাড় করতে হয়। তার বিয়ে তাকে করতে হয়। মেয়ে হলে শত শত ছেলের পেছনে ঘুরতে হয়। এর জন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক খুব কমই থাকে। এ ধরনের বিয়ে টেকেও কম। ছাড়াছাড়ি অনেক বেশি হয়। স্ত্রী বা স্বামী বদল অনেক ঘটে। হুমায়ূন আহমেদ আরো অনেক কিছু লিখেছেন। আমার ধারণাও তাই। তাদের সমাজব্যবস্খা ভালো নয়। বৃদ্ধরাও ভালো নেই। শিশুরাও ভালো নেই। উন্নয়ন আর ভালো যোগাযোগব্যবস্খা অনেকটা নিরর্থক। তাদের কালচার দু:খজনক। সবই নোংরামি। মদ ও নোংরামি তাদের কালচার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমা, টিভিতে নোংরামি ও নগ্নতা। সি-বিচ, হোটেল, ভ্রমণ সব কিছুতেই নোংরামি ও নগ্নতা। হুমায়ূন আহমেদ তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, সেখানে নারীর মর্যাদা বলে তেমন কিছু নেই। পুরুষরা মনে করে, যা কিছু খারাপ সব মেয়েলি কাজ। নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, কেবল নারী হিসেবে দেখা হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এ কথা পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। নারীকে যে বাস্তবে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাও আমরা জানি।
শত উন্নতি সত্ত্বেও তাদের আর্থিক ব্যবস্খাকে ভালো বলা যায় না। নিজের দেশের নিম্নবিত্তদের ও পরদেশ শোষণ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিত্ত গড়ে উঠেছে। পুঁজিপতিরা মূলত শোষক। কিছু করপোরেশনের হাতেই সব বিত্ত। সুদব্যবস্খা সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণে সাহায্য করেছে। সে দেশে গৃহহীন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেকের চিকিৎসাসুবিধা নেই। পুঁজিবাদ দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম।
সেসব দেশের ভালো দিক বলা যায় গণতন্ত্রকে। কিন্তু তা-ও এখন পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে। পুঁজিপতিদের চাঁদায় তারা নির্বাচিত হন এবং পার্টি চালান। ফলে পুঁজির স্বার্থে তাদের দেশীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। এ অবস্খায় গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে মনে হয় না।
এর তুলনায় আমাদের ব্যবস্খা তুলনামূলকভাবে ভালো। ইসলামি ব্যবস্খার তো কথাই নেই যেখানে পরিবার শক্তিশালী করাই মূল কথা। বাবা-মা এবং শিশুদের স্বার্থরক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম কালচারে নোংরামি ও নগ্নতা বলে কিছু নেই। মুসলিম সমাজের নোংরামি পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত। ইসলামি অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ নেই। বাজার স্বাধীন, তবে তার হিসাবায়ন (হিসবা বা accountability) সরকারকে করতে হয়।
ইসলামে সরকারের দায়িত্ব সবার কাজের ব্যবস্খা করা, না হয় ভরণপোষণের ব্যবস্খা করা। অবশ্য তা তখনই করা হবে, যখন আত্মীয়স্বজন সে দায়িত্ব নিতে সক্ষম নয়। জাকাতব্যবস্খা দারিদ্র্য লাঘবে সাহায্য করে। ইসলাম উন্নয়ন চায়। এ ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক জায়গায় এখনো দারিদ্র্য রয়ে গেছে উন্নয়ন না করার কারণে। আমাদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশেও দারিদ্র্য ব্যাপক।
সবাই একমত যে, গণতন্ত্র ইসলামসম্মত, তবে তা আল্লাহর বিধানসাপেক্ষ হবে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের ব্যর্থতা অনেক। আমরা ভালো করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্খা গড়ে তুলতে পারিনি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্খা দুর্বল।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
[সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ১১/০৯/১১]
__._,_.___