সরকার পতনের হুমকি দিয়েও আন্দোলন চাঙ্গা করতে ব্যর্থ বিএনপি
সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাকর্মীদের অনৈক্য ও ত্যাগীদের নিষ্ক্রিয়তা
শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির আন্দোলন হালে পানি পাচ্ছে না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতাকর্মীদের অনৈক্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার কারণে প্রাণপণ চেষ্টা করেও দলটি সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর নবেম্বর মাসে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সরকারের বিরম্নদ্ধে হার্ড লাইনে যাওয়ার চেষ্টা করে বিএনপি। দলের একক চেষ্টায় তা পুরোপুরি সফল না হওয়ায় এ বছর মধ্যভাগে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আবারও নতুন উদ্যমে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও রাজপথে মিত্র হিসেবে পেতে চেষ্টা-তদ্বির শুরু করে তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলন চাঙ্গা করার কোন কৌশলই কাজে আসছে না তাদের।
উল্লেখ্য, এ বছর ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বিল পাসের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর এ ব্যাপারে সরকারকে কোন ধরনের ছাড় না দিয়ে একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচী দিয়ে সরকার পতনের হুমকি দিলেও কার্যত এ ব্যাপারে এখনও আন্দোলন জমাতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ অন্য সমমনা দলও যুগপৎ এই হরতাল পালন করে। এরপর ৯ জুন বিএনপি ও জামায়াত পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ১২জুন সকাল ৬টা থেকে ১৩ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যনত্ম টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল পালন করার ঘোষণা দেয়। এরপর গত ৬ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৮ জুলাই সকাল ৬টা পর্যনত্ম সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার এবং ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম হরতাল কর্মসূচী পালন করে বিএনপি। কিন্তু এ সব হরতাল সফল না হওয়ায় সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে হোঁচট খায় বিএনপি। এরপর সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে রোডমার্চ সফল হওয়ায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা এগিয়ে যায়। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর হরতাল ব্যর্থ হওয়ায় আবার বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে। তাই আপাতত আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দিচ্ছে না বিএনপি। তবে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করবে তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর ৬ জুন সকাল ৬টা থেকে শুরম্ন করে ৮ জুন সকাল ৬টা পর্যনত্ম সরাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি। কিন্তু সেই হরতাল সফল না হওয়ায় আন্দোলনের নতুন কৌশল গ্রহণ করে বিএনপি। এরপর ১৩ জুলাই ঢাকায় গণঅনশন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়ে এ কর্মসূচী সফল করতে চারদলীয় জোটের শরিক দল ও সমমনা ছোট ছোট ৮টি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চায় বিএনপি হাইকমান্ড। সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিএনপি।
আন্দোলন চাঙ্গা করার জন্য ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চারদলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসসহ আরও সমমনা ৮ দল যথা জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী লীগকে (ন্যাপ-ভাসানী) কাছে টানে বিএনপি। এ ধরনের আরও কিছু দলকে কাছে টানার চেষ্টা চলছে।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। আর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় দলের ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি। এর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কোন্দল চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর ঢেউ তৃণমূল পর্যায়ের সব জায়গায় গিয়ে পেঁৗছে। এ বছর ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাবার পর ৬ এপ্রিল মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়োগ করা হয়। তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে আন্দোলন চাঙ্গা করার ব্যাপারে কিছুটা অগ্রসর হলেও এখন আন্দোলনের গতি আবার থেমে গেছে। এর কারণ কেন্দ্রীয় নেতাদের গাছাড়া ভাব ও প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায়ই দলের কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করলে তা যে সফল হবে না তা দলের প্রতিটি সাধারণ নেতাকর্মীই বুঝতে পারছেন। তাই তৃণমূল থেকে আন্দোলন চাঙ্গা করার ব্যাপারে সাড়া না পেয়ে বিএনপি হাইকমান্ড এ নিয়ে চিনত্মাভাবনা শুরম্ন করেছে। তবে শীঘ্রই রোডমার্চ ও জনসভাসহ কিছু কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অতীতে বিএনপির আন্দোলনে বড় শক্তি ছিল যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। কিন্তু নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে এ সব সংগঠন এখন কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সিংহভাগ শিৰা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কোন কর্মকা- নেই। ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতাকর্মী বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করারও দাবি জোরদার করেছে। এক সময় এ সংগঠন আন্দোলন চলাকালে রাজপথ অচল করে দিত। সংগঠনের নেতৃত্বে কোন্দলের কারণে এখন কোন কর্মসূচীতে সচরাচর শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের দেখা মেলে না। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদল। সারাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে এ সংগঠনের শাখা থাকলেও নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে যুবদলের কার্যক্রম। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে নামকাওয়াসত্মা যুবদলের কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটলেও তেমন সাড়া জাগাতে পারছে না এ সংগঠনটি। বিএনপির আরেকটি অঙ্গ সংগঠন মহিলা দলের নেতৃত্ব নিয়ে সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার গ্রম্নপের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান গ্রম্নপের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব থাকায় এ সংগঠনটিও ঠিকভাবে কাজ করতে পরছে না। আর কৃষক দলের সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মূল দল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগঠনের অন্য নেতারাও অনেকাংশে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোন কার্যক্রমও এখন চোখে পড়ে না।
বিএনপির আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদেরও এখন আর রাজপথে দেখা যায় না। গত ১৪ মে সংস্কারপন্থী নেতা ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও কারাবন্দী নাসিরউদ্দিন পিন্টু গ্রুপের নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করা বিএনপির জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে অগোছাল দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন সফল করা যাবে না মনে করে বিএনপি হাইকমান্ড এখন এ ব্যাপারে গতি থামিয়ে দিয়েছে। এখন তারা ভেতরে ভেতরে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐক্য প্রক্রিয়ায় কাণ্ডতে লৰ্য অর্জনের পরই আন্দোলন জোরদার করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এর আগে দায়সারা কিছু কর্মসূচী পালন করবে তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর জনকণ্ঠকে বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এ সরকারের বিরম্নদ্ধে একের পর এক অনেক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছি, আরও কর্মসূচী পালন করব। আর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দল গোছানোর পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। শীঘ্রই নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
গত বছর নবেম্বর মাসে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সরকারের বিরম্নদ্ধে হার্ড লাইনে যাওয়ার চেষ্টা করে বিএনপি। দলের একক চেষ্টায় তা পুরোপুরি সফল না হওয়ায় এ বছর মধ্যভাগে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আবারও নতুন উদ্যমে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও রাজপথে মিত্র হিসেবে পেতে চেষ্টা-তদ্বির শুরু করে তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলন চাঙ্গা করার কোন কৌশলই কাজে আসছে না তাদের।
উল্লেখ্য, এ বছর ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বিল পাসের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর এ ব্যাপারে সরকারকে কোন ধরনের ছাড় না দিয়ে একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচী দিয়ে সরকার পতনের হুমকি দিলেও কার্যত এ ব্যাপারে এখনও আন্দোলন জমাতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ অন্য সমমনা দলও যুগপৎ এই হরতাল পালন করে। এরপর ৯ জুন বিএনপি ও জামায়াত পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ১২জুন সকাল ৬টা থেকে ১৩ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যনত্ম টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল পালন করার ঘোষণা দেয়। এরপর গত ৬ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৮ জুলাই সকাল ৬টা পর্যনত্ম সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার এবং ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম হরতাল কর্মসূচী পালন করে বিএনপি। কিন্তু এ সব হরতাল সফল না হওয়ায় সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে হোঁচট খায় বিএনপি। এরপর সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে রোডমার্চ সফল হওয়ায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা এগিয়ে যায়। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর হরতাল ব্যর্থ হওয়ায় আবার বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে। তাই আপাতত আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দিচ্ছে না বিএনপি। তবে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠনের পর কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করবে তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর ৬ জুন সকাল ৬টা থেকে শুরম্ন করে ৮ জুন সকাল ৬টা পর্যনত্ম সরাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি। কিন্তু সেই হরতাল সফল না হওয়ায় আন্দোলনের নতুন কৌশল গ্রহণ করে বিএনপি। এরপর ১৩ জুলাই ঢাকায় গণঅনশন কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়ে এ কর্মসূচী সফল করতে চারদলীয় জোটের শরিক দল ও সমমনা ছোট ছোট ৮টি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চায় বিএনপি হাইকমান্ড। সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিএনপি।
আন্দোলন চাঙ্গা করার জন্য ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চারদলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসসহ আরও সমমনা ৮ দল যথা জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী লীগকে (ন্যাপ-ভাসানী) কাছে টানে বিএনপি। এ ধরনের আরও কিছু দলকে কাছে টানার চেষ্টা চলছে।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। আর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় দলের ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি। এর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কোন্দল চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর ঢেউ তৃণমূল পর্যায়ের সব জায়গায় গিয়ে পেঁৗছে। এ বছর ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাবার পর ৬ এপ্রিল মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়োগ করা হয়। তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমে আন্দোলন চাঙ্গা করার ব্যাপারে কিছুটা অগ্রসর হলেও এখন আন্দোলনের গতি আবার থেমে গেছে। এর কারণ কেন্দ্রীয় নেতাদের গাছাড়া ভাব ও প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায়ই দলের কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করলে তা যে সফল হবে না তা দলের প্রতিটি সাধারণ নেতাকর্মীই বুঝতে পারছেন। তাই তৃণমূল থেকে আন্দোলন চাঙ্গা করার ব্যাপারে সাড়া না পেয়ে বিএনপি হাইকমান্ড এ নিয়ে চিনত্মাভাবনা শুরম্ন করেছে। তবে শীঘ্রই রোডমার্চ ও জনসভাসহ কিছু কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে বিএনপি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অতীতে বিএনপির আন্দোলনে বড় শক্তি ছিল যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। কিন্তু নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে এ সব সংগঠন এখন কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সিংহভাগ শিৰা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কোন কর্মকা- নেই। ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতাকর্মী বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করারও দাবি জোরদার করেছে। এক সময় এ সংগঠন আন্দোলন চলাকালে রাজপথ অচল করে দিত। সংগঠনের নেতৃত্বে কোন্দলের কারণে এখন কোন কর্মসূচীতে সচরাচর শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের দেখা মেলে না। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদল। সারাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে এ সংগঠনের শাখা থাকলেও নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে যুবদলের কার্যক্রম। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে নামকাওয়াসত্মা যুবদলের কিছু নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটলেও তেমন সাড়া জাগাতে পারছে না এ সংগঠনটি। বিএনপির আরেকটি অঙ্গ সংগঠন মহিলা দলের নেতৃত্ব নিয়ে সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার গ্রম্নপের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান গ্রম্নপের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব থাকায় এ সংগঠনটিও ঠিকভাবে কাজ করতে পরছে না। আর কৃষক দলের সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর ও সাধারণ সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মূল দল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগঠনের অন্য নেতারাও অনেকাংশে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোন কার্যক্রমও এখন চোখে পড়ে না।
বিএনপির আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদেরও এখন আর রাজপথে দেখা যায় না। গত ১৪ মে সংস্কারপন্থী নেতা ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও কারাবন্দী নাসিরউদ্দিন পিন্টু গ্রুপের নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে আন্দোলন চাঙ্গা করা বিএনপির জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে অগোছাল দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন সফল করা যাবে না মনে করে বিএনপি হাইকমান্ড এখন এ ব্যাপারে গতি থামিয়ে দিয়েছে। এখন তারা ভেতরে ভেতরে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐক্য প্রক্রিয়ায় কাণ্ডতে লৰ্য অর্জনের পরই আন্দোলন জোরদার করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এর আগে দায়সারা কিছু কর্মসূচী পালন করবে তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর জনকণ্ঠকে বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এ সরকারের বিরম্নদ্ধে একের পর এক অনেক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছি, আরও কর্মসূচী পালন করব। আর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দল গোছানোর পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। শীঘ্রই নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
__._,_.___