আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এর প্রথম দিবস
ক্যাটাগরী:
আজ পয়লা মার্চ ২০১২ ইং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এর প্রথম দিবসে আমার জানা আমাদের পতাকার ঐতিহাসিক কথা লিখতে বসেছি বিডিনিউজ ব্লগ এ। যাতে আমাদের শিশুরা আমাদের প্রজন্ম জানে কি করে আজকের বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বাধীন একটি লাল-সবুজ পতাকার ডানাময় উড্ডীনতার অধিকারী হলো।
দিনটি ছিলো ১৯৭০ এর ৭ জুন। তখন এই পূর্ব বাংলা পশ্চিমা শাসকজান্তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে উত্তাল। ছাত্রজনতা বঙ্গবন্ধুর আদেশ এর জন্য অপেক্ষমাণ। আন্দোলনের জোয়ার গোটা দেশময়। সেদিন ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রদের জয়বাংলা বাহিনীর সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু যাতে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার প্রতীকি একটি পতাকা ওড়াতে পারেন তারই লক্ষ্যে ছাত্রনেতারা একটি পতাকা তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক রুমে বসেন। সভা করেন। সেই সভায় ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা সহ প্রগতিশীল ছাত্রনেতৃবৃন্দ। ছিলেন ছাত্রনেতা কাজী আরেফ আহমদ, আ স ম আবদুর রব, মার্শাল মনিরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, ইউসুফ সালাউদ্দিন, হাসানুল হক ইনু, শাহজাহান সিরাজ, স্বপন কুমার চৌধুরী ও কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক+কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ। সভায় সেদিনই তাঁরা তাঁদের সন্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে সাধীন বাংলাদেশের পতাকার রঙ ও ডিজাইন রূপে গাঢ় সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্য এবঙ সূর্যের মাঝখানে মানচিত্র খচিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মতো তখনই আর্টস পারদর্শী শিবনারায়ণ দাশ কাজ শুরু করেন। উইকির তথ্য মতে তখন রাত এগারোটা। ৭ জুন এর ঠিক সূর্যোদয়ের মুহূর্তেই শেষ হয় পতাকার ডিজাইন। আর সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বলাকা বিল্ডিং এর তৃতীয় তলার ফ্যাশন টেইলার্সের মাস্টার খালেক মোহাম্মদী সেলাই করেন প্রথম স্বাধীনতার পতাকাখানা। সকালের আলোয় ঝলমলানো পতাকাখানার রূপমুগ্ধ সাক্ষীরা সযত্নে তা সেদিনের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতে লুকিয়ে বহন করে নিয়ে যান।
ছাত্রজনতা উত্তাল ৭ জুনের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর হাতে ঐতিহাসিক সেই পতাকাটি প্রদান করেন ছাত্রনেতৃত্বে থাকা আ স ম আবদুর রব ও হাসানুল হক ইনু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীকি অমূল্য পতাকাটি প্রথম উঁচিয়ে ধরেন বঙ্গবন্ধু যেন মুক্ত স্বাধীন ডানার অনন্য গন্ধমাখা আনন্দজয়োচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া অজর মুহূর্ত। মুহুর্মুহু জয়বাংলা ধ্বনিতে কেঁপে ওঠা সে এক সৃতি অমলিন দিন। দিনটি আমাদের আজ প্রাতঃস্মরণীয় রূপে প্রজন্মকে জানানোর দিন।
এরপর ১৯৭১ এর দোসরা মার্চ পশ্চিমা শাসকরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশে বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে আবারও ওড়ানো হয়। এবঙ রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৩ মার্চ এর পাকিস্তান দিবসে পাকিস্তানী পতাকার বদলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে গোটা পূর্ব বাংলায়।
অতঃপর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে শুরু হয় জীবনবাজী মুক্তিযুদ্ধের কাল। রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগের অনন্য সংগ্রামী ফসল আমাদের প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এই ঐতিহাসিক অর্জন-আত্মত্যাগ-অহঙ্কার এর সঙ্গে আজকের বিএনপি-জামায়াত-জাপার বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব / ভূমিকা / অস্তিত্ত্ব ছিলোনা , কেবল জামায়াত-আলবদর-আলশামস-রাজাকারগঙ এর পৈশাচিক-হিংস্র-ধিক্কৃত ভূমিকা ব্যতীত। আজ তারাই বিচারিক প্রক্রিয়াধীন।
স্বাধীনতার স্বল্পকালের মধ্যেই ১৯৭২ এ বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এর গঠিত বাংলাদেশ সরকার পতাকার লাল সুর্যের মধ্যে মানচিত্র বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবঙ তা পটুয়া কামরুল হাসান-কে দিয়ে পরিমার্জিত রূপ দেয়া হয়। যা আজতক আমাদের অপরিবর্তনীয় অহঙ্কারের প্রতীক। আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক।
১ মার্চ ২০১২ ইং
১ মার্চ ২০১২ ইং
__._,_.___