স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১২ মার্চ বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোটের কর্মসূচীকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে ফেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবেই বেছে নেয়া হতে পারে কর্মসূচীকে। কর্মসূচীতে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের চেয়েও মারাত্মক আকারে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হতে পারে। বড় ধরনের নাশকতা চালাতে মাঠে নামানো হতে পারে জামিনে মুক্ত হওয়া অন্তত শতাধিক জঙ্গীকে। প্রয়োজনে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়ার প্রস্ততি নিতে পারে স্বাধীনতাবিরোধীরা। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীতে পুলিশ ও র্যাবের অন্তত ২০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ঢাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ৩ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচীর পাশাপাশি সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির। ১২ মার্চের কর্মসূচীর আড়ালে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি চলছে। কর্মসূচীর আড়ালে নাশকতার মাধ্যমে ঢাকাকে অবরুদ্ধ ও অচল করে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য জঙ্গীদের মাঠে নামানোর প্রস্তুতি চলছে। দীর্ঘ দিন ধরেই এমন প্রস্তুতি চলছে। এজন্য অনেক আগ থেকেই ঢাকার আশপাশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে জঙ্গীরা। মূলত যারা নাশকতা চালাবে তাদের আগেই ঢাকায় আনা হয়েছে। তারা সরকারকে বেকায়দায় রাখতে কি ধরনের নাশকতা চালানো হবে তা নিয়ে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঢাকাসহ সারাদেশকে অচল করে দিতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের তৎপরতায় ও প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিদ্যুত স্টেশন-ওয়াসা অফিস, পানির পাম্প, পুলিশ ও র্যাব সদর দফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালানোর পাঁয়তারা করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে মহলগুলো দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বগুড়া, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াত নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। অনেক পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এজন্য মারমুখী অবস্থানে রয়েছে তারা। মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে জামায়াত। ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মারাত্মক হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সিরিজ বোমা হামলা, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যাসহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এমন কর্মকা- শুরু করে। পরিকল্পনা মোতাবেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তার মৃতদেহ ম্যানহোলে ফেলে দেয়া জামায়াত-শিবির।
এছাড়া গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে চোরাগুপ্তা হামলা চালায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। হামলায় পথচারী, সাংবাদিক, ৩৮ জন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ অন্তত শতাধিক আহত হন। হামলাকারীরা অন্তত ২ শতাধিক যানবাহনে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা কর্মসূচীকে পুঁজি করে ওইদিন ভোরে জামায়াত শিবির ঢাকায় সিরিজ বোমা হামলাসহ সারাদেশে বেপরোয়া তা-ব চালায়। একযোগে ঢাকায় অন্তত ২৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। রাজধানীর মতিঝিলে বোমা হামলা করে এক যুবককে হত্যা এবং সিলেটে চিত্রনায়িকা শাবনূরের পিতাকে বাসের ভেতরে জীবন্ত পুুড়িয়ে হত্যা করে।
গত ১১ জানুয়ারি শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম গ্রেফতারের পর জামায়াত শিবির রাজধানীতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে পুরো ঢাকা মহানগর রণক্ষেত্রে পরিণত করে। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা পুলিশের পেট্রোল ইন্সপেক্টর আবুল বাশারকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে রীতিমতো অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে। পুলিশ কর্মকর্তা হাতজোড় করে মাফ চাইলেও ক্ষমা করেনি জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা। মারধরের সময় পুলিশ কর্মকর্তার ৮ রাউন্ড গুলিসহ সরকারী আগ্নেয়াস্ত্রটি খোয়া যায়। ওইদিন হামলায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
সর্বশেষ জামায়াতের টার্গেট ছিল গত ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিল। গণমিছিলে বেপরোয়া হামলা চালিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল। সরকারের গদি নাড়িয়ে দেয়ার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে গণমিছিলকে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। এমন আশঙ্কা থেকেই পুলিশ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারী করে। এতে ভেস্তে যায় জামায়াতের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা। তারপরও পরিকল্পিতভাবে বাতিল গণমিছিল কর্মসূচী পালনকালে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে গুলিতে ৪ জন নিহত হন। নিহতরা গণমিছিল আহ্বানকারীদের নেতাকর্মী। কর্মসূচীটি বাতিল না হয়ে বহাল থাকলে ৪ জনের মৃত্যু নিয়ে বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষণার কথা ছিল বিএনপি-জামায়াতের। কিন্তু সে জামায়াতী পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
সর্বশেষ আগামী ১২ মার্চের কর্মসূচীকে ঘিরে চলছে নানামুখী নাশকতার পরিকল্পনা। এটিকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে জামায়াত-শিবির। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের মতো পুরো রাজধানীতে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হতে পারে। এবার আতঙ্ক নয় রীতিমতো মানুষ হত্যা করে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তার চলছে। দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়ার পরিকল্পনা করছে চারদলীয় জোট। প্রয়োজনে নিজ দলীয় নেতা কর্মীদের হত্যা করেও সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের।
নিজ দলীয় কর্মসূচীতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে লাশ ফেলে যাতে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পরিকল্পনা সফল না হয় এজন্য সরকারের সবোর্চ্চ পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশ জারী করা হয়েছে। শুধু কর্মসূচী নয় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাড়তি নিরাপত্তা ও সর্তকর্তামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীর ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো রাখা হচ্ছে কঠোর হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। ঐতিহাসিক স্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ বিশেষ স্থানে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, গোপন মুভি ক্যামেরা ও সিসি টিভি। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে সম্মিলিতভাবে ১২ মার্চের কর্মসূচীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক কন্ট্রোলরুম বসানো হচ্ছে। কূটনৈতিকপাড়াসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশ ও র্যাবের বাড়তি টহল টিম কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকায় বসানো হয়েছে অন্তত আড়াইশ নিরাপত্তা চৌকি। চেকপোস্টগুলোতে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের নিয়মিত তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলায় পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, সোয়াট, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, নারী পুলিশ টিম এবং র্যাবের পিকআপ ও মোটরসাইকেল টহল টিম, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডকে সর্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। রাজধানীতে বসানো হচ্ছে অর্ধহাজার সিসি টিভি ও গোপন মুভি ক্যামেরা। বিশেষ বিশেষ স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে।