Dear Razakar-Al Badrs ,
Kindly read the article and distribute it to your followers so that they can learn about the true story of our great liberation war .
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই ছিল প্রতিরোধের নির্দেশনা
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সবাই স্বাধীনতার পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন; মাত্র কিছু কুলাঙ্গার সন্তান রাজাকার, আলবদর, আল শামসের সদস্য ছাড়া। এই গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে তৈরি করেছিলেন মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়ে আমি কুমিল্লা সেনানিবাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিই। '৭০-এর নির্বাচনের পর অন্যান্য মানুষের মতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সদস্যরাও আশা করেছিলেন, নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হবে। বাঙালিরা পাকিস্তান সরকার পরিচালনা করবে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জুনিয়র সদস্যরা পর্যন্ত বলতে থাকল, পাকিস্তানের কর্তৃত্ব তুলে দিয়ে বাঙালিদের বিশ্বাস করা যায় না। পরে আমরা দেখতে পেলাম, বেসামরিক পোশাকে হাজার হাজার সেনা, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যুদ্ধসামগ্রী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে আনা হচ্ছে। তখন আমরা বুঝতে পারলাম, এসব গোলাবারুদ নিরীহ বাঙালিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। সেনাবাহিনীতে থাকা বাঙালিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কোনো অবস্থাতেই অস্ত্র সমর্পণ করা হবে না। প্রয়োজনে বিদ্রোহ করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, '...প্রস্তুত থাকো... তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে...'_ সে ভাষণ শুনে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সময় অনুযায়ী পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করা হবে। ২৫ মার্চের কালরাতে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থানরত অফিসার ও সৈনিকরা তৎকালীন সিনিয়র বাঙালি অফিসার মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ২৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। সেই থেকে আমার মুক্তিযুদ্ধ শুরু। প্রথমে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ছিলাম। পরে গঙ্গাসাগর, আখাউড়া, খড়মপুর, সিঙ্গারবিল এলাকায় যুদ্ধ করে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতে প্রবেশ করি। ফিরে এসে গেরিলা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। পরে কে ফোর্সের অধীনে কনভেনশনাল যুদ্ধ করি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে চৌদ্দগ্রাম হয়ে কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হই। ৮ ডিসেম্বর আমরা কুমিল্লা শহর মুক্ত করি।
যুদ্ধকালীন একটি স্মৃতি আজও আমার হৃদয় আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলজ্বল করে। '৭১ সালের নভেম্বরের ২০-২১ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার উত্তরে চন্দ্রপুর লাথুমুরা এলাকায় ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে একটি আক্রমণ পরিচালনা করেছিলাম। বিশেষ কয়েকটি কারণে আমাদের এ আক্রমণ আংশিক সফল হয়। প্রায় ১৮ ঘণ্টা একটানা ভয়াবহ যুদ্ধের পরে আমাদের পশ্চাৎপসারণ করে আসতে হয়। এই যুদ্ধে আমাদের একজন অফিসারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে আমরা শহীদদের মৃতদেহ এমনকি আহত সহযোদ্ধাদেরও ফিরিয়ে আনতে পারিনি। আহতদের সেই আর্তনাদ এখনও আমার কানে বাজে। যুদ্ধের সেই ভয়াবহ স্মৃতিটি আমি আজও ভুলতে পারিনি।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বিশেষ কয়েকটি আদর্শ ধারণ করে। প্রথমত, পাকিস্তান ছিল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র। এর বিপরীতে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম বাঙালি সংস্কৃতিভিত্তিক রাষ্ট্র। সে কারণেই যুদ্ধের জয়ধ্বনি ছিল জয় বাংলা। তাছাড়া একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণই হবে সব ক্ষমতার মালিক। দুঃখের বিষয়, সে সব লক্ষ্য থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। যার জন্য মৌলবাদ. সন্ত্রাসবাদ, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আজ সমাজে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরই প্রচেষ্টা চালাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে নতুনভাবে রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার জন্য। যে রাষ্ট্র হবে পৃথিবীর বুকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র_ বাংলাদেশ।
রেটিং দিন :
( এই লেখাটি পড়েছেন : ২৩৮৬ জন )
__._,_.___