----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Friday, June 22, 2012 6:33 AM
Subject: Re: রোহিঙ্গা সঙ্কট : দীপু মনির কোনো দোষ নেই
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Friday, June 22, 2012 6:33 AM
Subject: Re: রোহিঙ্গা সঙ্কট : দীপু মনির কোনো দোষ নেই
Organization Of Islamic Cooperation (OIC) is yet to condemn violence
against Rohingya Muslim minorities in Arakan province and other parts
of Myanmar. Neither, any other Muslim country including Saudi Arabia or
Pakistan have. The Muslim Ummah of 56 Islamic states promoting Muslim
solidarity in economic, social and political affairs (in paper !) should come
forward and rescue these New Boat People and settle them in their own lands.
Saudi Arabia should declare all the Rohinga Muslims Saudi citizen by
default !
"Bangladesh is already sheltering more than 300,000 Rohingya refugees from
Myanmar, there is a view that those countries and organisations which call upon
Bangladesh to open the border to Rohingyas on humanitarian considerations may
send their planes or passenger boats to Chittagong, and Bangladesh may open
the border on the condition that those who come to Bangladesh from
Myanmar will be sent to those countries. ... (Daily Star)
Related:
OIC Secretary General Condemns Attacks On Churches And Calls
For Restraint In Nigeria
Rohingya people - Wikipedia, the free encyclopedia
en.wikipedia.org/wiki/Rohingya_people
Now they are facing problems in Bangladesh as well where they do not receive support from the government any longer. In February 2009, many Rohingya ...- Rohingya Concerns Extend Beyond MyanmarWall Street Journal (blog) - 14 hours agoA recent protest by 2000 Rohingya Muslims in Kuala Lumpur illustrates how the stateless ethnic group's plight has become a regional problem ...
- AsiaNews.it - 4 days ago
Rohingya people - Wikipedia, the free encyclopedia
en.wikipedia.org/wiki/Rohingya_people
Now they are facing problems in Bangladesh as well where they do not receive support from the government any longer. In February 2009, many Rohingya ...Treating the 'Rohingya' issue in Bangladesh
1 day ago – Recently, the self-styled weeping of some international human rights observers and others has rather entrenched our longstanding belief that ...
- [PDF]
1/2011 Rohingya refugees in Bangladesh and Thailand
www.nyidanmark.dk/.../FactfindingrapportRohingya180411.pdfFile Format: PDF/Adobe Acrobat - Quick View
ENG. Rohingya refugees in Bangladesh and Thailand. Fact finding mission to Bangladesh and Thailand. 4 to 17 February 2011. Copenhagen, May 2011 ...
- [PDF]
10 YEARS FOR THE ROHINGYA REFUGEES IN BANGLADESH ...
www.doctorswithoutborders.org/publications/.../rohingya_report.pdfFile Format: PDF/Adobe Acrobat - Quick View
by MS Frontières-Holland - 2002 - Cited by 1 - Related articles
Approximately 200000 Rohingya Muslims flee the Burmese army's Operation. Nagamin (Dragon King). About 10000 refugees remain in Bangladesh, 10000 ...
==========================================
Related:
OIC Secretary General Condemns Attacks On Churches And Calls
For Restraint In Nigeria
2012/6/22 Abid Bahar <abid.bahar@gmail.com>
Like most Jonokhontha articles this is another nonsense trash
by a committed anti Muslim BJP supporter named Swedesh Roy.
by a committed anti Muslim BJP supporter named Swedesh Roy.
There is all the mark that the man is riding on the Aawami League
to help India conquer Bangladesh!.
2012/6/21 Capt. Farid Hossain <farid2002hossain@hotmail.com>রোহিঙ্গা সঙ্কট : দীপু মনির কোনো দোষ নেই
আ মী ন কা দী রনা, একদমই দোষ দেয়া যায় না দীপু মনিকে। যে যা-ই বলুক, যতোই বলুক, তার কোনো কসুর নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার মোটেই অপরাধ দেখছি না। আমি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে বিশ্বাসী। চাপাচাপি, জোরাজুরি করে কোনো লাভ নেই। আমার নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু কলম দিয়ে এ কলামে আজ একটি কথাও তার বিরুদ্ধে লেখানো যাবে না। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে তিনি যে অবস্থান নিয়েছেন, বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে তিনি সঠিক ও যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমি জানি, অনেকেই ক্ষুব্ধ হবেন আমার কথায়। কেউ কেউ গোস্যায় ফেটে পড়তেও পারেন। আপনারা বিস্মিতও হতে পারেন, আমি পাগলের প্রলাপ বকছি কি না। যেখানে বাংলাদেশসহ সারাদুনিয়ার মানবতাবাদীরা বলছেন—রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে মানবিক হও; মানবতার পাশে দাঁড়াও। আমি জানি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে একদমই শূন্য ডিগ্রি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের এক রকম বলছেন—আরে দূর দূর, এদেশে তোমাদের কোনো রকম আশ্রয় হবে না।
মৃত্যুকে মাত্র কয়েক সেকেন্ড দূর থেকে দেখে ওরা পালিয়ে এসেছিল এদেশে—নাফ নদী ও সাগরের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে। ওদের পেছনে ধাওয়া করছে মৃত্যু। নিষ্ঠুর নির্মম ভয়ঙ্কর মৃত্যু। তারপরও ডা. দীপু মনির নির্দেশে আমরা তাড়িয়ে দিচ্ছি তাদের। বলছি, ভাগ ভাগ। যা, মর গিয়ে। তোদের জন্য এখানে আল্লাহর লঙ্গরখানা খুলে বসি নাই।
এই নিষ্ঠুর দৃষ্টিভঙ্গির পরও আমি কেন দীপু মনির পক্ষে সাফাই গাইছি! এ প্রশ্নের সরল জবাব হলো, দীপু মনিকে কেউ বুঝলো না। দীপু মনির কষ্ট, তার প্রজ্ঞা, তার দূরদৃষ্টিকে কেউ মূল্যায়ন করলো না। কেউ ভেবে দেখলো না, মমতাময়ী স্নেহময়ী আশ্রয়ময়ী জন্মদাত্রী নারী জাতির একজন হয়েও তিনি কেন এতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠলেন! তিনি কি ক্ষুধিত পাষাণ! সেখানে মায়া-মমতা বলতে কিছু নেই! তার হৃদয় কি তবে লৌহ-ইস্পাত-তামা দিয়ে তৈরি! যে যা-ই বলুন, আমি বলব—আমার দিদিমণিকে কেউ বুঝলো না।
হ্যাঁ, এটা স্বীকার করছি, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের জন্য হাবিয়া জাহান্নামে পরিণত হয়েছে মিয়ানমার, বিশেষ করে আরাকান (বর্তমানে রাখাইন রাজ্য)। দোজখের আগুনের উত্তাপ, লেলিহান শিখা অনুভব ও দেখার যদি কারও ইচ্ছা হয়, সেই মানবতাবাদী অনুসন্ধিত্সুর গন্তব্য হতে পারে আরাকান। এটি এখন আগুন মৃত্যুপুরী। রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু মৃত্যু-জল্লাদ মেতে উঠেছে খুনের উল্লাসে। নির্দয়, নিষ্ঠুর! তারা পুড়িয়ে মারছে রোহিঙ্গাদের। পাখির মতো গুলি করে মারছে। চাইনিজ কুড়াল নিয়ে খুন-খারাবির যে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখি হংকং জাপানি মঙ্গোলয়েড ছবিতে। ছবির ভিলেন হাসতে হাসতে কোপ দেয় মাথার খুলি বরাবর। মাথা ফেটে চৌচির! সেসব দৃশ্য এখন আরাকানে প্রতিদিনের সত্য। সেখানে মৃত্যুসেনারা খুঁজে খুঁজে মারছে একটি জাতিগোষ্ঠীর অসহায় লোকগুলোকে। এটা জাতি নিধন ছাড়া অন্য কিছু নয়।
ওরা শিশু-নারী-গর্ভবতী কাউকে রেহাই দিচ্ছে না। পিঠে-বুকে কোপাচ্ছে শিশুকে। ধর্ষণ করছে নারীকে। ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এ হত্যাযজ্ঞের অকল্পনীয় ছবি আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি।
দাউ দাউ করে জ্বলছে রোহিঙ্গা বসতি। ঘরের পর ঘর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যার মুখে আমরা যেভাবে পালিয়েছিলাম গ্রাম ছেড়ে; ছুটছিলাম আশ্রয়ের সন্ধানে; রক্তাক্ত, দগ্ধ, ধর্ষিত হয়েছিল আমার স্বদেশ—রোহিঙ্গারা এখন ঠিক তেমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী আরাকানে শত বছর ধরে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, শোষিত। হত্যা ও নির্যাতনের শিকার। তাদের জন্য মানবতার মর্মবাণী সেখানে মূক ও মূঢ়। এরা দেখতে অনেকটাই বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর মতো। কারও কারও মুখাবয়ব, কাটছাঁট তামিল-বাঙালি সংমিশ্রণের। এজন্য শত বছর ধরে তাদের প্রতি একটা ভ্রাতৃত্ববোধ আমাদের রয়েছে।
যদ্দূর শুনেছি, আরাকান রোহিঙ্গা তাবলিগ জামাতের একটি উন্নাসিক কাফেলা মাইক্রোবাসে করে রাখাইন বসতির মধ্যের রাস্তা দিয়ে যাত্রা করলে তারা মুহূর্তেই হামলার কবলে পড়ে। মাইক্রোসহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারা হয় ৮-১০ জনের টিমকে । জীবন্ত দগ্ধ। এর সঙ্গে তুলনীয় ভারতের গুজরাটে গোধরা ট্রেন হত্যাযজ্ঞ। গুজরাটের হত্যা নিয়ে ভারতসহ সারাদুনিয়ায় তোলপাড় হয়েছিল। অথচ অন্ধকার মিয়ানমারের এমনই হাল, সেখানে মাইক্রোভর্তি একদল মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারলেও দুনিয়ায় টুঁ শব্দটি হয় না। কেউ জানতে পারে না।
রোহিঙ্গারা সীমিত সাধ্যে ওই হত্যার প্রতিবাদ জানালেই শুরু হয় এই ভয়ঙ্কর এথনিক ক্লিনজিং। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনোরকম বাদ-প্রতিবাদ-আওয়াজ নিষিদ্ধ। এর আগেও আশির দশকে এমনটি হয়েছিল। তখন নাফ নদী দিয়ে ভেসে আসতো লাশ আর লাশ। কাটা মস্তক। নারীর খণ্ডিত স্তন। মানবতার অনিবার্য দায় মেটাতে বাংলাদেশ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিল। লাখ লাখ রোহিঙ্গা এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। যাদের ৪-৫ লাখ এখনও বাংলাদেশের সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা এমনই লৌহহৃদয়, ওদের এখনও মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি।
এবারও আরাকানে ধর্ষিত হয়ে লাশ হচ্ছে নারী। তার শরীর কাটাচেরা হচ্ছে। ধর্ষিত ও খুন হচ্ছে মানবতা। আবারও তাই বাংলাদেশ মুখোমুখি মানবতার মহাপরীক্ষার। অনেকেই ডা. দীপু মনির আচরণ ও বক্তব্যে বিস্মিত; কেননা তিনি এই পরীক্ষার টেবিলে বসতেই নারাজি জানিয়েছেন। আমি জানি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীপু মনির বিরুদ্ধে বলতে শুরু করলে তার শেষ নেই।
তিনি নারী, কিন্তু তার মধ্যে মায়ের মমতা দেখতে পাচ্ছেন না অনেকে। তিনি পেশায় চিকিত্সক ছিলেন। পড়াশোনা করেছেন চিকিত্সাবিদ্যার মতো মহান বিষয়ে—যে শাস্ত্রের পাঠ শুরু হয় আর্তমানবতার সেবার আলটিমেট শপথ নিয়ে। অসুস্থ জনের শুশ্রূষা। আহত, মরণ পথের যাত্রীর জন্য জীবনের দিশা দেয়ার পবিত্র অঙ্গীকার তাদের রয়েছে। বিরুদ্ধবাদীরা নিশ্চয়ই বলবেন, সেই শপথ ভঙ্গ করেছেন দীপু মনি। পররাষ্ট্র দফতরের সেবার গুরু দায়িত্বভার নিয়ে তিনি ভুলে গেছেন ফ্লোরেনস নাইটিংগেলের মহান ব্রত। অথচ একজন চিকিত্সক-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফ্লোরেন্স সুরভিত দায় সম্পাদনই ছিল অধিক প্রত্যাশিত।
হ্যাঁ, অনেকে জাতীয় সংসদে দেয়া দীপু মনির মন্ত্রিক বিবৃতি নিয়েও শোরগোল-হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে তত্পর। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অব্যাহত অনুরোধ করে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার জন্য। তারাও মানবতার ধুয়া তুলছে। জবাবে দীপু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই অনুরোধ মানতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়।
'বাধ্য নয়' বলায় মন্ত্রীর বক্তব্য একটু খটোমটোই লাগছে। ওরা তো বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক কিছু বলেনি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে 'বাধ্য' করার তারা কে! 'বাধ্য' করার মালিক হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ। মন্ত্রীর বুঝতে ভুল হয়ে থাকবে। সারাক্ষণ ইংরেজি, হিন্দি, আরবি হিব্রু—নানা বিদেশি ভাষা নিয়ে পড়ে থাকেন। তাই বাংলা ভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন হয়তো। তাছাড়া কূটনীতিতে যুদ্ধংদেহীতা অবশ্যই পরিহার্য। এখানে যুদ্ধ ঘোষণাও করতে হয় শান্তি প্রতিষ্ঠার আবরণে। উচ্চকণ্ঠ, চিত্কার, হুমকি—এসব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আচরণীয় নয়। ওটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জরুরিতম মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী ঋজু কণ্ঠে বলবেন। দীপু মনি তরুণ পূর্ণমন্ত্রী। তার সামনে সম্ভাবনাময় দীর্ঘপথ। হ্যাঁ স্বীকার করি, এই মুহূর্তে তার এমন উত্তেজিত হওয়া ঠিক হয়নি।
আরেকটি কথা তিনি বলেছেন—মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নাকি জানিয়েছে, বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী মিয়ানমারের মধ্যে ওইসব দাঙ্গা-হাঙ্গামার নেপথ্যে। এটাও বালখিল্য উক্তি হয়েছে।
রোহিঙ্গা নামের জাতিগোষ্ঠী যখন আরাকানে 'ইয়া নফসি ইয়া নফসি' করে বাঁচার সন্ধানে ছুটছে, এই কঠিন মুহূর্তে তাদের খুবই তুচ্ছ করেছেন তিনি। বরং এ কথা বলে নির্যাতক সম্প্রদায়, মিয়ানমার সেনা জান্তার পক্ষ নিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়ক মন্ত্রী তিনি। পররাষ্ট্রের মন্ত্রী নন। এই মানবতার ঐতিহাসিক সঙ্কট মুহূর্তে তিনি বার্মা সরকারের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে কথা বলবেন, তা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত নয়। কাজটা বোকার মতো হলো কি না জানি না। বলা বাহুল্য, তিনি তো প্রকারান্তরে মিয়ানমারের ভেতরে বাংলাদেশের মধ্য থেকে রাজনৈতিক উসকানির অভিযোগকে অ-বিদেশমন্ত্রীসুলভ প্রজ্ঞায় স্বীকার করে নিলেন।
ইউএনএইচসিআর-জাতিসংঘ কর্মকর্তারা টেকনাফের দুর্গম সীমান্তে যেতে চাওয়ায় সতর্ক করে দিয়েছে পররাষ্ট্র দফতর। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চান তারা। দীপু মনি যেতে দিতে চান না। অনুমতি মিলছে না। পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনটা তার করা ঠিক হয়নি। জাতিসংঘের লোকজনের অবাধ যাতায়াত মোটামুটি স্বীকৃত। তারচেয়েও বড় কথা হলো, টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশ তো কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে না। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের দায় বাংলাদেশের নয়। তাহলে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে বাধা দেবে কেন! আমরা তো মিয়ানমারি নির্যাতকদের সহযোগীও নই। তাহলে আপত্তি কেন!
জাতিসংঘ সেখানে গিয়ে নিষ্ঠুরতা-নৃশংসতার ভয়াবহতা দেখতে পারতো। আন্তর্জাতিক আপিল জোরদার হতো। মিয়ানমার মিলিটারি শাসন কবলিত শতবর্ষের অন্ধকার দেশ। বিশ্বের আলো এই দেশটির ওপর পড়তে দেয়নি শাসকরা। দুনিয়াকে লুকিয়ে এরা বারবার জাতি নিধন কর্মকাণ্ড অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে দেশটিতে। এখন সেখানে গণতন্ত্রের কথিত বাতাস কিঞ্চিত্ বইলেও তা গোনার মধ্যে নয়। জাতিসংঘের চোখ দিয়ে বিশ্ববাসী যদি এই লুকানো সত্যগুলো জানতো, তা বাংলাদেশের জন্য মন্দ হবে কেন! অবশ্য নবযুগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তার চোখে নিশ্চয়ই নব প্রজন্মের উত্তর আধুনিক সব স্বপ্ন। মান্ধাতার রাজার আমলের কীসব জাতিসংঘ নীতিমালা—সেসব তিনি মানবেন কেন! সেসব তিনি মানতে বাধ্য নন।
তাছাড়া দীপু মনির কাজ-কর্মে আরেকটি সম্ভাবনাময় দূরদর্শিতার প্রবল আভাস পাচ্ছি। এখানে লক্ষণীয় যে, আরাকানে মানবতার কলঙ্কজনক বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-কানাডা-জাতিসংঘের মায়াকান্না বাস্তবিক অর্থে হাস্যকর। তারা বাংলাদেশের মতো একটি 'তলাবিহীন ঝুড়ি'কে বলছে—রোহিঙ্গাদের বাঁচাও। আশ্রয় দাও।
অথচ নিজেরা কিন্তু মিয়ানমারের সরকারকে মোটেই চাপ দিচ্ছে না। তারা তাদের প্রয়োজনে পশ্চিমা বধূ অং সান সু চিকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বানিয়েছে। মানবতার দেবী বানিয়েছে—মিয়ানমারের মুক্তিদাত্রী। আরাকানে মানুষ নিধনের মহাদুর্যোগে মানবতার দেবী কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশে নেই। দেবী এখানে অন্ধ। তিনি এখন পশ্চিমা দেশে হেসে হেসে বেড়াচ্ছেন। লন্ডন, অসলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অ্যামনেস্টির অর্ঘ্য নিচ্ছেন। নোবেল পুরস্কার নিচ্ছেন। পশ্চিমা মানবতাবাদীরা তাকে টুঁ প্রশ্নটি করছে না। বরং তাকে উপর্যুপরি উপঢৌকন, ফুলের মালা সম্মাননায় ভরিয়ে তুলছেন। সত্যিই তো, মানবতায় দায় পড়েছে যেন দীপু মনির। আর উপঢৌকন গ্রহণের উত্সব চলছে সু চির। এটা মতলববাজ পশ্চিমাদের ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। ওরা বদমতলব ছাড়া কিছু করে না। ওদের প্রতিটি পদক্ষেপের পেছনে থাকে কোনো রাষ্ট্রের অঢেল সম্পদরাজি লুটের দুর্দমনীয় বাসনা। শুধু সে বাসনাকে তারা নানা রঙ চড়িয়ে মোহনীয় করে প্রকাশ করে। আজ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে হালকা হালকা। পশ্চিমাদের নজর মিয়ানমারের মাটির নিচের অফুরন্ত সম্পদের দিকে; সমুদ্র সম্পদের দিকে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-সম্পদ আধাআধি ভাগ বাটোয়ারা করে সমুদ্রজয়ের আনন্দে বাকবাকুম। আশঙ্কা করি, আমাদের মহান নেতানেত্রীদের অজান্তে এই ভাগ-বাটোয়ারার নেপথ্যেও রয়েছে সম্পদ লুটের আন্তর্জাতিক নীল নকশা। সবকিছু নীল নকশা অনুযায়ীই হচ্ছে। আমরা যতই চিত্কার-চেঁচামেচি করি না কেন, যথাসময়ে সপ্তম, অষ্টম বা নবম নৌবহন এসে হাজির হবে বঙ্গোপসাগরের সীমানায়। আমরা তখন দেখেও কিছু দেখবো না। মুখে কুলুপ এঁটে থাকবো। চোখে ঠুলি পরে থাকবো।
আনু মুহাম্মদ প্রাইভেট লিমিটেড মার্কা কিছু ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী সামান্য বাদ-প্রতিবাদ করবে, কিন্তু সরকার থাকবে মৌন নীরব। সব কিছু নীল নকশা অনুযায়ী ঘটবে।
আজ আরাকান ইস্যুতে কেউ মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীকে কিছু বলছে না। কেননা ওই সম্পদরাশির লোভে পশ্চিমারা ওদের চটাতে চায় না। দীপু মনিকে এত চাপ দিচ্ছে, অথচ অং সান সু চিকে একবারও বলছে না। এভাবে নির্লজ্জের মতো ফুলের মালা না নিয়ে প্রকৃত মানবতাবাদীর মতো নিজ দেশের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াও। ওদের রক্ষা করো। প্রয়োজনে তোমাকে আবারও নোবেল দেয়া হবে।
না, তা বলবে না। কেননা পশ্চিমা বধূ সু চিকে শিখণ্ডি করে ওরা লুটের ছক কেটেছে। সু চির সন্তানাদি বিদেশেই প্রতিপালিত। প্রশিক্ষিত। উচ্চশিক্ষিত। এই শিখণ্ডিরা যুগে যুগে মানবতার ধ্বজা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বাস্তবে তারা আশ্রয়দাতা-উপঢৌকন দাতাদের স্বার্থরক্ষা করবেন—সেটাই স্বাভাবিক।
দীপু মনিকে দূরদর্শীই বলতে হবে। তার সামনে চলার অনেক পথ বাকি। তিনিও হয়তো মওকার অপেক্ষায় আছেন। ভেবেচিন্তেই তিনি পশ্চিমাদের মতো মিয়ানমারের সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন। তারা যা বলছে, সেই সুরে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন। তাদের চটাতে চাচ্ছেন না। এমনিতেই ওদের সঙ্গে কত কষ্ট করে ভাও করে সাগর ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এখন সুবর্ণ সময়ের জন্য অপেক্ষা। পশ্চিমারা যখন আরাকান-মিয়ানমার-বঙ্গোপসাগরে সম্পদ আহরণে নৌবহর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তখন আমরাও ব্লক বেচাকেনা করে টু পাইস কামাতে পারবো। আজ ভারতীয় কোম্পানি সাহারা ইন্ডিয়া রীতিমত মাতৃভূমি সাহারা নাম নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ পরিবার সদস্যদের দু-এক আনি হিস্যা দিয়ে এমডি বানিয়ে সদলবলে ঢুকে পড়েছে সোনার বাংলায়। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের রাজনৈতিক উত্তর পুরুষরাও পশ্চিমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা-রেঙ্গুন কনসোর্টিয়াম গড়ে তুলতে পারবেন। রোহিঙ্গারা মরে মরুক। মিয়ানমারকে চটিয়ে আমাদের ভবিষ্যত্ রাজপুরুষদের স্বার্থহানি ঘটানো কোনো কাণ্ডজ্ঞানের কাজ নয়। যে যাই বলুক—এখন যুগ হলো রাজপুরুষের সঙ্গে রাজপুরুষের মহান সখ্যের। সেই সখ্য রক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ উলুখাগড়া জনগণ যদি কচুকাটা হয়, তাতে অন্য উলুখাগড়াদের প্রাণ কাঁদে, তাতে কিছু আসে-যায় না।
২.
এবার আসুন, আমরা মূল প্রস্তাবনায় ফিরে যাই। আমরা যদি দীপু মনির কাজে শুধুই দোষ খুঁজে ফিরি, তবে ১১০টা দোষ খুঁজে পাবো। কিন্তু বিষয়টির গভীরে যেতে হবে আমাদের। বোঝার চেষ্টা করতে হবে—কেন এমনটা করছেন তিনি। সে কি কেবলই মিয়ানমারের সঙ্গে একটা দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য? সে কি কেবলই সমুদ্রসম্পদ আহরণ কনসোর্টিয়ামে হিস্যা রাখার লক্ষ্যে?
না, আমার তা মনে হয় না। দীপু মনি একদমই মানবিক নন!
তিনি একেবারেই বিবেকহীন—এমনটাও মনে করতে চাই না আমি। বরং হতে পারে তার বিবেক অবিরাম কেঁদে চলেছে! কিছু করতে পারছেন না বলে তিনি নীরবে-নিভৃতে আহাজারি করে চলেছেন; আমরা কেউ তা টের পাচ্ছি না।
আমি এমনটা দাবি করছি এ কারণে যে, রাজপথে দীপু মনিকে আমি দেখেছি। আর্তজনের সেবা থেকে তিনি বিমুখ ছিলেন না। যখন শেখ হাসিনা স্কয়ার হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন, তখন কত মমতা নিয়ে তিনি প্রতিদিন সেখানে ছুটে গেছেন। দিন নেই রাত নেই সেখানে পড়ে থেকেছেন। নেত্রীর সেবায় তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। একজন মমতাময়ীর মুগ্ধকরা রূপ আমরা সেসময়ে দেখেছি। যখন বিরোধী দলে ছিলেন, কী চমত্কারভাবে তিনি তার সেবা-অন্তপ্রাণ মনের কথা অকপটে তুলে ধরতেন। মন্ত্রী হয়ে সেই দীপু মনি বদলে যেতে পারেন না। যে দীপু মনি চিকিত্সা বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে আর্ত-মানবতার সেবার শপথ নিয়েছিলেন, মন্ত্রিত্ব পেয়েই তিনি কসাই হয়ে উঠবেন, আমি কোনোভাবেই তা বিশ্বাস করতে রাজি নই। বরং আমি বিশ্বাস করি, একজন মানবিক, মমত্বময়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি অন্তর্জ্বালায় ভুগছেন। তিনি কী চেয়েছিলেন, আর পৌনে চার বছরে দেশের অবস্থা কী হয়েছে; কী স্বপ্ন দেখেছিলেন, আর সোনার বাংলাদেশ কী দুঃস্বপ্নের হয়ে উঠেছে।
দেশটা কি এখন নিরন্ন নিরাশ্রয় বিপন্ন হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়ার অবস্থায় রয়েছে? এই মৌলিক প্রশ্নটি মনে হয় অনেকেই ভেবে দেখেননি। বাংলাদেশ নিজেই তো এখন স্মরণকালের সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ। বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই তো চরম অনিরাপদ। মৃত্যু প্রায় প্রতিদিন হানা দিচ্ছে রাজধানীসহ নানা জনপদে। এমন একটা দেশে তিনি কেমন করে বিলুপ্ত-মুখী একটা জাতিগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেবেন! শুধু সীমান্ত খুলে দিয়ে আশ্রয় দিলেই তো হবে না, তাদের খেতে-পরতে দিতে হবে। বাসস্থান দিতে হবে। আশ্রয় দেয়া মানে তা শুধু সীমান্ত খুলে দেয়া নয়, আশ্রয়দাতাকে আরও অনেক দায়দায়িত্ব পালন করতে হয়। কথায় বলে—ভেবে কর কাজ, করে ভেব না। দীপু মনি সেই কাজটিই করছেন।
আমি জানি, বিরুদ্ধবাদীরা হৈ-হট্টগোল করে বলে উঠবেন—কেন, দীপু মনিকে খাওয়াতে-পরাতে হবে কেন! সেজন্য ইউএন এইচসিআর রয়েছে। আপাতত আশ্রয়টা দেয়ার পর ইন্টারন্যাশনাল আপিলটা ঠিকমত করতে পারলে আন্তর্জাতিক সাহায্য যেমন আসবে, তাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠবে না। মুসলিম দেশগুলো অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে। পশ্চিমা মানবতাবাদীরাও পিছিয়ে থাকবে না।
বিরুদ্ধবাদীদের এই যুক্তি আমি মানি। তবে এ কাজে দক্ষ কূটনীতি প্রয়োজন। তত্পরতা হওয়া চাই খুবই জোরদার। এক্ষেত্রে দীপু মনি পুরোপুরি প্রস্তুত নন। তার একটু প্র্যাকটিসিং অসুবিধা রয়েছে। গত পৌনে ৪ বছর ধরেই তিনি একমুখী এবং একদেশদর্শী কূটনীতি প্র্যাকটিস করেছেন, বহুদেশদর্শী হওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি আগাগোড়া ভারতনির্ভর ও ভারতবিশেষজ্ঞ বিদেশমন্ত্রী। একজন ডাক্তার যখন বিশেষ কোনো বিষয়ে এফসিপিএস বা উচ্চডিগ্রি করেন, তখন তিনি সেই বিশেষ রোগের সেবা দিতে পারেন। তাকে সর্বরোগ হরণের দায়িত্ব দিলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। দীপু মনির হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা। তিনি শুধু ভারতকে ভালো বোঝেন। প্রণবদাকে ভালো বোঝেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো মস্ত বহুমুখী বিষয়ের জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত নন। আর আন্তর্জাতিক নানা সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া একা দায়দায়িত্ব নেয়ার অবস্থা কি বাংলাদেশের আছে? দেড় লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। হাওয়াই মিঠাই বাজেট। দেহের মূল আকারের চেয়ে ঘাটতির লেজটা বড়। তাতে শরণার্থী এনটারটেইনমেন্টের জন্য এক পয়সাও মুফতি খাত রাখা হয়নি।
তাছাড়া আত্মবিবেক জিজ্ঞাসা বলে একটা ব্যাপার অবশ্যই রয়েছে।
দীপু মনির নিজের দেশের কী অবস্থা? দীপু মনির অনুকূলে সার্বিক সমস্যাটা বোঝাতে মাত্র দৃষ্টান্ত হাজির করতে চাই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রপাগান্ডায় সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে সবচেয়ে হট ব্র্যান্ড। সাংবাদিক নির্যাতন হলে সারা দুনিয়ায় হইচই-হট্টগোল লেগে যায়। বাংলাদেশের তাতে কী পরোয়া? আমরা এখন এমনই অন্ধকারে ডুবে আছি; পৃথিবীর কোনো আলোই এখানে এসে পৌঁছুচ্ছে না। আমরা দিব্যি একের পর এক সাংবাদিককে খুন হতে দেখছি। সরকার নির্বিকার। সাগর-রুনিকে বেডরুমে হাত-পা বেঁধে খুন করা হলো। কুপিয়ে কুপিয়ে খুন। তিনটি মাস হলো। বিচারের কোনো নাম নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রী দিলেন নির্দেশ। কে পাত্তা দেয় তাতে? খুনিদের শিবিরে চলছে উল্লাসের নৃত্য। খুনিচক্রের সন্দেভাজন জড়িত একজন গাড়ল রীতিমত আগ বাড়িয়ে নানা উল্টোপাল্টা বকেছে সম্প্রতি। ভাড়ার ঘরে কে আমি কলা খাই না। সে স্বতঃস্ফূর্ত আত্মজবানবন্দি দিয়েছে। সাংবাদিকরা তাকে গ্রেফতারের দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছে। কিসের কি! আইনবিচারের এখানে বালাই নেই। নিহত সাংবাদিকের কাফেলা বাড়ছে। যশোরে সাংবাদিক জামালউদ্দিনকে খুন করা হয়েছে মধ্যযুগীয় কায়দায়। এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে তাকে। তারপর খুঁচিয়ে কুচিয়ে তার চোখ তোলা হয়েছে। প্রকাশ্যে মাদক কারবারিরা সরকারি দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে এ কাণ্ড করেছে। এথনিক ক্লিনজিংয়ের ভয়ংকর নৃশংসতার চেয়ে এসব নির্মমতা কি কিছু কম! সাংবাদিকরা হইচই জুড়ে দিয়েছে এ নিয়ে। কিন্তু কী আসে যায় তাতে? মাদক-খুনিদের হাত যে ওই গাড়ল মিডিয়া মোগলের মতো লম্বা। মাদক-কারবারিরাও এদেশে রাজা।
ঢাকায় সেগুনবাগিচায় মায়ের সামনে খুনিরা খুন করে গেল মেয়েকে। মা আঠারো ঘণ্টা লাশ আগলে থাকলেন। শুধু কি তাই। এখন নিজেই লাশ হয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তাকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না রাষ্ট্র। অঢেল সম্পত্তির মালিক এই বৃদ্ধাকে জানে মারার হুমকি দিচ্ছে বেপরোয়া খুনিচক্র। আমাদের দক্ষ পুলিশ সব জানে। কিন্তু তারা নিয়েছে খুনিদের রক্ষা কর্মসূচি। মায়ের সামনে মেয়েকে চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে খুন করতে দ্বিধা করেনি হত্যাকারীরা। কেননা তারা জানে, কোনো বিচার হবে না তাদের। বরং তারা লুণ্ঠিত সম্পত্তির কিছুটা বিলিয়ে ম্যানেজ করতে পারবে সবাইকে। সবকিছু ওপেন সিক্রেট হচ্ছে। কোনো রাখঢাক নেই।
আইন-বিচারের বালাই নেই বলেই হাতিরপুলের সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা দেখেছি—এক অ্যাডভারটাইজিং কোম্পানির মালিক দরিদ্র একটি মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ধর্ষণ করতে গিয়ে কী কাণ্ডটাই না করলো। ধর্ষণ করে ফেঁসে যাবে, এই আশঙ্কায় সে খুনকেই বেছে নিয়েছে সহজতম মুক্তির উপায় হিসেবে। মেয়েটিকে সে ২৪ টুকরা করেছে। তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে চাই না এখানে। কেননা তা অবর্ণনীয়। টুকরাগুলো সে ছড়িয়ে দিয়েছে পাশের বাড়ির ছাদে, রাস্তায়। তারপর পুলিশের হাতে ধরা পড়েও সে নির্বিকার। যেন কিছুই করেনি সে। কিছুই হবে না তার। এই বরাভয় তাকে কে দিল? এমন অভয় সে কোত্থেকে পেল? সত্যি বলতে কি, চারপাশের বিচারহীন হাজারো ঘটনা, নিষ্ঠুরতা; খুনিদের আনন্দ-উল্লাসই তাকে অনুপ্রাণিত করে থাকবে। সে জানে, সরকারি দলের আশীর্বাদ থাকলে এ দেশে যে কোনো অপরাধ করেই পার পাওয়া যায়। আর দরকার টু পাইস খরচ করার ক্ষমতা। তাহলে সবকিছু হাতের মুঠোয়।
চট্টগ্রামে হিমাদ্রি হত্যাকাণ্ডের কথাই ধরি না কেন। হিমাদ্রি মাদকবিরোধী আন্দোলন করতো। তার খেসারত দিতে হয়েছে জীবনের বিনিময়ে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। খুনিরা তাকে জোর করে একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। তার ওপর নির্যাতন করে। খুন করার জন্য বেছে নেয় অত্যাধুনিক পদ্ধতি। হিমাদ্রির ওপর লেলিয়ে দেয় রক্তপিয়াসী ডালকুত্তা। তারপর ফেলে দেয় ছাদ থেকে। এই উল্লাসমুখর হত্যারও কোনো বিচার নেই। খুনিরা দিব্যি পালিয়ে গেছে লন্ডন। আর খুনিদের মায়েরা অর্থবিত্তের জোরে চালিয়ে যাচ্ছে জোর তদবির। তারা প্রেস কনফারেন্স করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাজে সহায়তা দিচ্ছে খোদ চট্টগ্রাম পুলিশ। ভাবুন একবার অবস্থা।
বিএনপির তরুণ জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন আজ দু'মাস হয়ে গেল। তার মেয়ের জন্মদিন ছিল ১৮ জুন। শিশুকন্যাটি দিনভর অপেক্ষা করেছে—বাবা আসবে। বাবা আসেনি। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল মেয়েটি বাবাকে ফেরত চেয়ে। ফেরত পায়নি বাবাকে। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তিন সন্তানকে নিয়ে দেখা করেছিলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। ভেবেছিলেন, নিশ্চয়ই ফেরত পাবেন স্বামীকে। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন এই পরিবারটিকে। কিন্তু কিসের কি আশ্বাস! বরং মিলেছে একের পর এ ব্যঙ্গ-উপহাস-পরিহাস। খোদ প্রধানমন্ত্রী সহাস্যে নানা স্থানে ব্যঙ্গোক্তি করে চলেছেন। সরকারের শীর্ষ ভরসাস্থলের এই যদি হয় আচরণ, তখন অন্যদের কী কর্তব্যবোধ, তা সহজেই অনুমেয়।
একটি রাষ্ট্রের প্রশাসনব্যবস্থার এই যদি হয় হাল, জননিরাপত্তা যে দেশে খেলো—ঠাট্টা-তামাশার ব্যাপার, সে দেশ অন্য দেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত নাগরিকদের কী নিরাপত্তা দেবে! মৃত্যুমুখর এই জনপদ। যে দেশের নাগরিকদের প্রতিবেশী ভারত পাখির মতো গুলি করে মারে প্রতিনিয়ত। সীমান্তে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়মিত নিষ্ঠুর নির্যাতন করে, আর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী স্বদেশবাসীর প্রতিপক্ষে গিয়ে অম্লান কণ্ঠে বলেন, সীমান্তে অমন ঘটনা ঘটেই। এ নিয়ে সরকার মোটেই চিন্তিত নয়।
ঘরে-বাইরে অনিরাপদ; মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ এমন একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে দীপু মনি কোন মুখে আরেকটি দেশের নির্যাতিত নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার মিথ্যা বাহানা করবেন? মহাজোট মন্ত্রিসভা প্রাইভেট লিমিটেডের মন্ত্রী হয়েছেন বলে তিনি তো বিবেক-বুদ্ধি, মায়ামমতা সবকিছু খুইয়ে বসেননি। ধারণা করা যায়, নিজ দেশের নিজ সরকারের এই করুণ হাল দেখে দীপু মনি সম্ভবত চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রায় চারটি বছর দেখতে দেখতে চলে গেল। বুলিবাজির সুশাসনের বিদায় বিউগল এখন বেজে ওঠার অপেক্ষা। কোনো আশা নেই। এই অবনতিশীল অবস্থা বদলানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকার এখন আর জনগণের নেই। মহাজোট সরকার এখন জনশত্রুর কাতারে চলে গেছে। শেষ সময়ে সবকিছু আরও লেজেগোবরে হয়ে পড়ছে। এই বিপদ-সঙ্গিন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপ্লবী ভূমিকা নিয়ে বিপদ বাড়াতে চাননি।
দীপু মনিকে কেউ বুঝতে চাইল না। তারও মমতাময় মন আছে। তিনিও স্নেহময়ী, মায়াময়ী। তিনিও দায়িত্বশীল নারী। অথচ কেউ তার দুঃখ বুঝলো না। দেশের এই সার্বিক দুঃসময়ে দীপু মনি যদি আরেকটি আন্তর্জাতিক বোঝার দায় নিতে অপারগতা জানান; না, দীপু মনিকে কোনোভাবেই দোষ দেয়া যায় না।
লেখক : কপি সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
ameenqudir@gmail.com