বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্থানান্তরের জন্য পুনরায় দাবী
এ এস খান, ষ্টকহোম, ১৭ আগস্ট (বিডিএনএন২৪) :- স্ইুডেন প্রবাসী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মামা ৭১এর মুক্তিযুদ্ধকালে গেরিলা দল মামা গ্রুপের প্রধান ছিলেন। এ জন্য তিনি 'মামা' নামে পরিচিত। বিগত ১০ ও ১১ জুলাই বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় শহীদুল হক মামা রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য প্রদান করেন। সৈয়দ শহীদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনামলে তাঁর বিরদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। ঐ মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পান। ওই মামলায় যারা তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁদের একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।
জবানবন্দিতে শহীদুল হক মামা আরো বলেন, পরে মিরপুরে এসে তিনি দুটি ঘটনা শোনেন। ২৭ মার্চ কবি মেহেরুননিসা, তাঁর ভাই ও মাকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা এই হত্যাকান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন। এছাড়া ঢাকার বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে আখতার গুন্ডা ও তার সহযোগীরা ঠাটারী বাজার থেকে ধরে নিয়ে মিরপুরের মুসলিম বাজার নামক স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে পল্লবের হাতের আঙুল কেটে ও পরে গাছে ঝুলিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা এই ঘটনার মূল নায়ক ছিলেন। এসব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য সহযোগিদের মধ্যে ছিল হাশে হাশমী, আব্বাস চেয়ারম্যান, আক্তার গুন্ডা, হাক্কা গুন্ডা ও নেহার সহ আরো অনেকে।
সাক্ষী বলেন, একাত্তরে তিনি ভারতের আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন শেষে ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের হেড কোয়ার্টর মেলাঘরে যান। সেখানে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও মেজর হায়দারের অধীনে প্রশিক্ষন নেন।পরে দেশে ফিরে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার বিহারিদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা, জামায়াত ও ছাত্রসংঘের সদস্যরা মিলে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৩১ জানুয়ারী ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করা হয়। ঐ যুদ্ধে শহীদুল মামা প্রধান ভুমিকা পালন করেন। ওই এলাকার স্বাধীনতার বিপক্ষের ঘটনা এবং ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে কাদের মোল্লা বিচ্ছিন্ন ছিলেন না।
শহীদুল মামা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি একজন ছাত্র নেতা ছিলেন এবং ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন ও ৭০ এর নির্বাচনে মোহম্মদপুর-মিরপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা সহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেছিলেন। অপরদিকে ৭০ এর নির্বাচনে কাদের মোল্লা অত্র এলাকায় জামায়াত মনোনিত প্রার্থী গোলাম আজমের পক্ষে ব্যপক নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছে। শহীদুল মামা আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি রায়েরবাজার বধ্যভুমি থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীর অসংখ্য লাশ এবং এক বস্তা চোখ উদ্ধার করেন। জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামী পক্ষের উকিল একরামুল হক। প্রথম দিন সাক্ষীকে ২৫টি প্রশ্ন করেন এবং দ্বিতীয় দিন ৮০টি প্রশ্ন করেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে খুন ও গনহত্যার অপরাধে ৬টি চার্জ গঠন করে। সৈয়দ শহীদুল হক খান মামা নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ আদর্শের সৈনিক হিসাবে দাবী করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি কারো সাথে কোন আপোষ করেন না। তাই বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে এবং স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে দেশের সাধারন মানুষের কল্যানের পরিপর্তে যারা নিজেদের আখের ঘুচিয়েছেন, তারা তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বঙ্গবন্ধুর মাজার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অর্থ্যাৎ যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন ও ষ¦াধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন, সেখানে তার সমাধিস্থল স্থানান্তরের দাবী জানিয়ে আসছেন। যতদিন পর্যন্ত তার এ দাবী পূরণ করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি এই দাবী পূরণের লক্ষ্যে তিনি ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। জাতির জনকের সমাধিসৌধ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তর পরিষদ গঠন করে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এ আন্দোলনের সাথে সাধনা সংসদ একাত্বতা ঘোষনা করে মানববন্ধন কর্মসুচীতে অংশ গ্রহন করে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৩৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে পুনরায় তার সমাধিস্থল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্থানান্তরের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জনান। তিনি বলেন, ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য তার লাশ টুঙ্গিবাড়ীতে দাফন করে। অথচ বঙ্গবন্ধুর সাথে শহীদ তার সকল স্বজনদের ঢাকায় সমাহিত করা হয়। তিনি হুসিয়ারী উচ্চারন করে বলেন, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হই, তাহলে বলতে হবে আমরা ঘাতকদের উদ্দেশ্যকেই সফল করতে সহযোগিতা করছি।
শহীদুল হক মামা জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে খুন ও গনহত্যার অপরাধে সাক্ষ্য প্রদান সহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী শেষে সুইডেনে ফিরে আসলে, সুইডেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ্জ্ব আমিনুল হক সহ সাইদূল হক, একরামুল হক, ফয়সাল রহমান,নওরোজ, আসরাফ খান, মামুন, সোহেল ও অরো অনেকে ফুলের তোড়া নিয়ে তার সাথে সৈজন্য সাক্ষ্যাত করেন এবং তার সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। উল্লেখ্য, শহীদুল হক মামা ১৯৮৬ সাল থেকে স্বপরিবারে সুইডেনে বসবাস করেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করলেও ব্যক্তি জীবনে অত্যান্ত ধার্মিক। তিনি নিয়মিত রোজা-নামাজ ও ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলেন এবং সাদাসিধে জীবন-যাপন করেন। জানা গেছে, দেশ-বিদেশে তার প্রচুর ভক্তবৃন্দ রয়েছে।
__._,_.___