দেশের পোশাক শিল্প খাত ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
সংসদ ভবন, ২৬ নভেম্বর ২০১২ (বিডিএনএন২৪):- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাক শিল্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশের পোশাক শিল্প খাত ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়Ñএটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরায় কারখানায় অগ্নিসংযোগ করতে দেখা গেছে এবং সংশ্লিষ্ট দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নাশকতার জন্য যে অর্থ যোগান দিয়েছে তাকেও ধরা হয়েছে। এদের পেছনে আরো কারা কাজ করছে তদন্ত করে তাদেরও ধরা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, দেশে বিনিয়োগ আসছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাফল্য পাচ্ছি তখন এ ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে, কেন ঘটাচ্ছে তা বুঝতে পারি।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রস্তাবের আলোচনা এসব কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সংসদে শোক প্রস্তাব আনেন। পরে তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেননসহ সংসদ সদস্যরা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুলিয়ায় পোশাক শিল্পে অগ্নিকান্ডের প্রাণহানির ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, ঘটনার সাথে সাথে আগুন নেভানোর সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টসে একজন মহিলা অগ্নিসংযোগ করছে এই দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট ধরা পড়েছে। একজন মহিলা শ্রমিক আগুন দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, সুমি বেগম ও জাকির খান পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এ কাজে সুমি ২০ হাজার টাকা পেয়েছে বলে স্বীকার করেছে। যে টাকা দিয়েছে সেও ধরা পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এর পেছনে কাজ করেছে তদন্ত করে তাদেরও ধরা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুমি বেগম ও জাকির হোসেনের ঘটনা প্রমাণ করে অগ্নিকান্ডের এই ঘটনা নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস রফতানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করি। এ খাতে আঘাত করা হয়েছে এমন সময়ে যখন অর্ডার নিয়ে বিদেশ থেকে বায়াররা আসছেন এবং অর্ডার নিচ্ছেন। গার্মেন্ট কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যে শিল্প তাদেরকে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সামান্য টাকার জন্য তারা কেন ক্ষতি করছে? এধরনের আত্মঘাতি নাশকতামূলক কাজ যাতে আর না ঘটে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিকদের সতর্ক থাকার এবং শ্রমিক নেতাদের উস্কানিমূলক কাজ না করার আহ্বান জানান।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু লোক সাহায্য না করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনা ঘটার পর উদ্ধার কর্মীদের আক্রমণ না করে সাহায্য করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন গাড়ির নিচে কেউ চাপা পড়লে ড্রাইভার আক্রমণের ভয়ে গাড়ি না থামিয়ে চলে যায়। অথচ গাড়িটা থামালে চাকার তলে থাকা লোকটি বাঁচতে পারে। তিনি বলেন, কোন ঘটনা ঘটার পর মারপিট আক্রমণ করার মানসিকতা বাদ দিতে হবে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনা ঘটার পর গাড়ি এবং পুলিশবক্সে আগুন দিয়ে কার লাভ হয়েছে? এভাবে বাধা দেয়াতে উদ্ধার কাজে অনেক সময় চলে যায় তা মানুষকে বুঝতে হবে। বহদ্দার হাটের ঘটনায় সরকার সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেখানেও দ্রুত উদ্ধার কাজ চালিয়েছি। ঢাকা থেকে সিমেন্ট কাটার মেশিন পাঠানো হয়েছে, তা দিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং এখন গার্মেন্টস শিল্পে আক্রমণ হয়েছে। এ ধরনের আক্রমণ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ ও বহদ্দারহাটের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা যথাসম্ভব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে বলতে চাই ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০৯টা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৬০টি লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে দেয়া হয়েছে এবং ৫৭টি লাশ মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করার পর লাশগুলো সনাক্ত করা হবে এবং আগামীকাল দাফন করা হবে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
__._,_.___