রাজীব হত্যা : মামলা দায়ের ৪ জন গ্রেফতার : রক্তমাখা চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার
পল্লবী ও গাজীপুরে বিক্ষুব্ধ লোকজনের সড়ক অবরোধ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রাজধানীর পল্লবীতে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার বস্নগার রাজীব হত্যার ঘটনায় তার বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল শনিবার সকালে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি করা হয়। এই হত্যাকা-ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির জড়িত বলে অভিযোগ করছেন তার পরিবার। এদিকে, সন্দেহভাজন ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবি'র একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করেছেন তারা। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিআইডির একটি টিমসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা সেখান থেকে রক্তমাখা চাপাতিসহ আলামত সংগ্রহ করেছেন।
বস্নগার রাজীবের মেঝ মামা খুররম হায়দার গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই না তারাই রাজীবকে হত্যা করেছে। কারণ রাজীব জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের স্বরূপ উন্মোচন করে বস্নগ লিখত। এজন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজীব প্রায়ই বলত আমি ইসলামবিরোধী নই। তবে জামায়াতে ইসলামীবিরোধী।
এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে মিরপুর ও গাজীপুরে তার গ্রামের বাড়িতে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। মিরপুর ১০ নাম্বর থেকে পল্লবী পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। ওই বিক্ষোভে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। এ সময় ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজীব বড়। ছোট ভাইয়ের নাম নোবেল। দুই ভাই পেশায় আর্কিটেক্ট। রাজধানীর এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। কোন চাকরি করতেন না। নিজেই ডিজাইন করতেন। দুই ভাই মিলে মিরপুর পল্লবীর পলাশনগর এলাকার একটি টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকত। বাবা নাজিম উদ্দিন পেশায় ডাক্তার। মা নার্গিস হায়দার স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাবা-মা গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের সৈয়দপুরে থাকেন। তিন বছর আগে নিজে পছন্দ করে অনিকা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। ওই বিষয়টা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ থাকলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে দুই পরিবারই বিষয়টি মেনে নেয়। রাজীব প্রায় পাঁচ বছর ধরে বস্নগে লিখত বলে জানা গেছে।
তার মামা খুররম বলেন, ঘটনার দিন দুপুর তিনটার দিকে তার সঙ্গে শেষ কথা হয় আমার। সে শাহবাগে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর রাত নয়টার দিকে আমার ভগি্নপতি হারুন অর রশিদ ফোনে জানায়, বাড়ির সামনে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। এত হিংস্রভাবে তাকে মারা হয়েছে যে, প্রথমে আমি তাকে চিনতে পারিনি। এক পর্যায়ে আমি ফিরে আসছিলাম। কিন্তু পরে যখন তার মোবাইলে ফোন করি ওর পকেটে থাকা মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে। এরপর আমি নিশ্চিত হই এটা রাজীব।
তিনি বলেন, ওই সময় আমার মনে হয়েছিল মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তখন কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
রাজীবের নানা মফিজ উদ্দিন মাস্টার মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তবে রাজীবরা দুই ভাই কোন রাজনীতি করতেন না। এ বিষয়ে তার মামা বলেন, রাজীবের সঙ্গে বস্নগ ও তাদের বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে আমার প্রায়ই কথা হতো। সে ছিল শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম। সে বলত, আমরা যে আন্দোলন সৃষ্টি করে দিয়েছি শাহবাগে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তাকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম কয়েকদিন সে সর্বক্ষণ ওই আন্দোলনেই থাকত। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল, মডেম ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। কোন কিছু নিয়ে যায়নি। এ থেকে বোঝা যায় হত্যাকা-টি পরিকল্পিত।
এ ব্যাপারে পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান সংবাদকে জানান, ডিবি পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। তবে গোয়েন্দা একটি সূত্র জানায়, কয়েকজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম জানাতে চাননি তিনি। ঘটনায় জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতারে বিভিন্ন কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ওই সূত্রের।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হত্যার ক্লু উদ্ঘাটন ও আসামিদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চলছে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান।
বিদায় রাজীব : কান্না আর ক্ষোভ সহযোদ্ধাদের
প্রচ- আক্রোশে এই হত্যাকা- ঘটানো হয় : ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ:
Rajib's body has 8 wounds: 'Didn't see such brutal murder before'
রাজিবের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল
ব্লগার রাজিব হত্যায় আটক ৫
__._,_.___