দুই মাস পূর্তিতে স্বরূপে প্রজন্ম চত্বর
স্লোগানের ভাষা ছিল, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ কর, জামাতের অপর নাম হেফাজতে ইসলাম, বাঁশের লাঠি তৈরি কর জামায়াত-শিবির ধোলাই কর।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
ধারাবাহিক আন্দোলনের দুই মাসপূর্তিতে আবার স্বরূপ ফিরে পেয়েছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অবস্থান শুক্রবার দুই মাস পূর্ণ করল।
ফাইল ছবি
প্রথম দিনের সন্ধ্যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে তরুণদের জ্বালানো মোমবাতির আলোকচ্ছটা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে, সেভাবে শুক্রবার সন্ধ্যায়ও একইভাবে আলোক প্রজ্বালনের চিত্র দেখা গেছে শাহবাগে।
অবরোধ পালনের জন্য স্থায়ী মঞ্চ থেকে সন্ধ্যা ৬টায় সবাই নেমে আসেন সেই শাহবাগ মোড়ে। কিছুক্ষণের মাথায় মোমবাতি জ্বালিয়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে বসতে দেখা গেছে বিভিন্ন দলকে।
স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে শাহবাগের গোল চত্বর। প্রতিবাদী স্লোগানে জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতকে ইসলামকেও প্রতিরোধের ডাক দেন তারা।
"তারুণ্যের জাগরণ যেভাবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত হয়েছে সেভাবে দুই মাস পূর্তিতে আন্দোলনের প্রতিপক্ষের কাতারে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে অনেকে।"
স্লোগানের ভাষায় ছিল, 'জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ কর', 'জামাতের অপর নাম হেফাজতে ইসলাম', 'বাঁশের লাঠি তৈরি কর জামায়াত-শিবির ধোলাই কর' প্রভৃতি।
কিছুক্ষণ পরপর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মিছিলসহ এসেছেন শাহবাগ চত্বরে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারুণ্যের জাগরণ যেভাবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত হয়েছে সেভাবে দুই মাস পূর্তিতে আন্দোলনের প্রতিপক্ষের কাতারে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে অনেকে। হেফাজতের ছদ্মাবরণে চলা জামায়াতী কার্যক্রম ঠেকানোর জন্য অবরোধের ডাক দিতে হয়েছে তাদেরকে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সচেতনতা তৈরি শাহবাগ আন্দোলনের বড় প্রাপ্তি বলে মুল্যায়ন করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ব্লগার মারুফ রসূল।
তিনি সমকালকে বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সঙ্গে পক্ষ শক্তির দ্বন্দ্ব চিরন্তন। কখনো তার প্রতিরোধ হবে বক্তব্যে, কখনো তা হবে স্লোগানে। আবার কখনো তা হবে রাস্তার প্রতিরোধে।"
"শুরু থেকে হেফাজতকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ আহ্বানটিও ছিল তাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তারা এসব মানেননি। ফলে গণজাগরণ মঞ্চের এ অবরোধ কর্মসূচি।"
মারুফ রসূল বলেন. "জামায়াত শিবির স্বমূলে উৎপাটন সহজ কাজ নয়। কারণ '৭৫ সালের পর রাষ্ট্রীয় সহায়তায় তারা অনেক বিকশিত হয়েছে। তাদের প্রতিরোধের জন্য যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন-আর সে কথাটিই শুরু থেকে বলে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ।"
প্রথম দিন থেকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মলয় কুমার দত্তের মূল্যায়ন, "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরে শুরু হওয়া তীব্র আন্দোলন মাঝপথে এসে খানিকটা স্থিমিত হলেও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে আবার নব উদ্যোমে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গণজাগরণ মঞ্চ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য তরুণ প্রজন্মের আবেগের জায়গায় পরিণত হতে পেরেছে।"
মন্তব্য
__._,_.___