Banner Advertiser

Tuesday, August 6, 2013

[mukto-mona] ‘তথ্য-তত্ত্ব’ থেকে ‘খুশবু’ : রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর সুপুত্র



'তথ্য-তত্ত্ব' থেকে 'খুশবু' : রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর সুপুত্র

শা হ আ হ ম দ রে জা
ভালো লাগুক আর না লাগুক এবং জনগণের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক যতই ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, মহাজোট নামের আওয়ামী লীগ সরকারের কিছুই যায়-আসে না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাউকে গণনায় পর্যন্ত আনতে রাজি নন সে বিষয়ে তো বহুবারই প্রমাণ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীদের মতো জননীকে অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রীর সুপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে তুফান তুলেছেন। শুরুতে বলে রাখা দরকার, তথ্য-প্রমাণসহ অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর এই সুপুত্রকে বিশেষ 'খাতির' দেখিয়ে এতদিন 'ছাড়' দেয়া হয়েছে। কারণ, অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের প্রধান একজন নীতিনির্ধারক এবং পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা হলেও এতদিন প্রকাশ্যে তাকে রাজনৈতিক তত্পরতা চালাতে দেখা যায়নি। মানুষ সেই সঙ্গে মনে রেখেছে, সজীব ওয়াজেদ জয় শুধু শেখ হাসিনার সুপুত্র নন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নাতিও। সব মিলিয়ে জয়কে কখনও বিতর্কের বিষয়বস্তু বানানো হয়নি। বিগত কয়েকদিনে অবশ্য পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ঘটিয়েছেনও আবার সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেই। তার পেছনে পেছনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে দৃশ্যপটে এসে গেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মহাজোট সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। তার প্রধান পরিচয়, শেখ মুজিবের সুচিন্তিত অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কলকাতায় গঠিত 'মুজিবনগর' সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার পিতা। সে কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে তাকে 'সৈয়দজাদা' বলে ডেকে থাকেন। এই 'সৈয়দজাদা' আশরাফকেই 'সাহেবজাদা' সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশে ঘোষণা দিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে। রীতিমত 'উদ্ধারকারীর' ভূমিকায় নেমেছেন তিনি। জানিয়ে রাখা দরকার, অশিক্ষিত মানুষের এই দেশে অনুগ্রহ করে রাজনীতিতে নেমেছেন বলে জয়কে সাধারণ মানুষ 'সাহেবজাদা'র বিরল সম্মান দিয়েছে।
এবার 'সাহেবজাদা' ও 'সৈয়দজাদা' কেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন তার কারণ সম্পর্কে বলা যাক। পাঠকরা নিশ্চয়ই জানেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তার কাছে 'তথ্য' রয়েছে-এমন এক ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি ঝড় তুলেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। 'সাহেবজাদা'র ঘোষিত এই 'তথ্য-তত্ত্ব' নিয়ে বিতর্কের ঝড়ে দ্রুত গতি বাড়তে থাকায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দৃশ্যপটে আসতে হয়েছে। মাসের বেশিরভাগ সময় লন্ডনে কাটানো এবং জয়ের মতো অমুসলিম এক বিদেশি রমণীর স্বামী সৈয়দ আশরাফকে অবশ্য মাঝে-মধ্যেই অনেকের ব্যাপারে 'উদ্ধারকারীর' ভূমিকায় দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কীর্তিমান পুত্রের বিপদেও যথারীতি 'উদ্ধারকারীর' ভূমিকা পালন করতে এসেছেন তিনি। নিজে 'না হিন্দু, না মুসলমান' হলেও সৈয়দ আশরাফ মাথায় টুপি লাগিয়ে ২৮ জুলাই রাজধানীর এক ইফতার মহফিলে অংশ নিয়েছেন। সেখানেই তিনি সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপর চেপে পড়া নিন্দা-সমালোচনার বোঝাটা নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। ২৩ জুলাই যুবলীগের এক ইফতার মহফিলে জয় যেখানে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তার কাছে 'তথ্য' রয়েছে, সেখানে সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তার কাছে 'তথ্য' নেই। তবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার 'গন্ধ' পাচ্ছেন তিনি! এই 'গন্ধ' তিনি নাকি পেয়েছেন একজন রাজনীতিক হিসেবে! সৈয়দ আশরাফের ব্যাখ্যায়ও কোনো ফাঁক ছিল না। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হবেই এবং সে নির্বাচনে সব দলই অংশ নেবে। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তার নেত্রীর দল আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তিনি 'গন্ধ' পাচ্ছেন! উল্লেখ্য, সৈয়দ আশরাফের মতো এখনও পুরোপুরি রাজনীতিক হয়ে ওঠেননি বলে জয় বেশি কথার মারপ্যাঁচে যাননি। তিনি সোজা জানিয়েছেন, তার কাছে 'তথ্য' আছে!
শুনতে খুব সহজ-সরল এবং 'ইনোসেন্ট' ধরনের বক্তব্য মনে হলেও একটু লক্ষ্য করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের 'তথ্য-তত্ত্ব' এবং সৈয়দ আশরাফের 'গন্ধ-তত্ত্বের' নাড়ি বা মূলটুকু রয়েছে একই স্থানে। অর্থাত্ আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় আনা হবে বলে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের 'দক্ষিণী' কেন্দ্র থেকে দু'জনের কানেই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন একে 'তথ্য' হিসেবে নিয়েছেন, অন্যজন এর মধ্যে পেয়েছেন 'গন্ধ'। অনেকটা হঠাত্ করে রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন এবং বয়সে এখনও অনেক কাঁচা বলেই জয়ের পক্ষে 'কানপড়াটা' সম্ভবত চেপে রাখা সম্ভব হয়নি। তার ওপর পাঁচ-পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মায়ের এবং মায়ের দলের জন্য দরদে উথলে ওঠাটাও তার জন্য ছিল স্বাভাবিক। তাছাড়া ছিল দলের নেতিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের 'টনিক' বা 'মৃতসঞ্জীবনী' ধরনের কোনো মাদক বা 'সুরা' দিয়ে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্য। আবেগের আতিশয্যে 'তথ্য'টি জয় আসলে 'টনিক' এবং মৃতসঞ্জীবনী 'সুরা' হিসেবেই নেতাকর্মীদের গলায় ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কূটনীতিতে যথেষ্ট ঝানু বলে বিশেষ কিছু মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত সজীব ওয়াজেদ খেয়াল করেননি, ঘরের সব খবর বাইরে প্রকাশ করতে হয় না। কারণ, এখন সময়টা তার মায়ের জন্য মোটেও ভালো যাচ্ছে না।
বলা দরকার, রাজনৈতিক অঙ্গনে এর উল্টো ব্যাখ্যাও করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস এবং ১/১১ ঘটানো থেকে ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা এবং নিজের জননী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ। সেই থেকে প্রকাশ্যে না হলেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। সুতরাং এমন মনে করা মোটেও উচিত নয় যে, 'তথ্য-তত্ত্ব'টি কোনো অপরিপকস্ফ যুবকের মুখ থেকে হঠাত্ মনের অজান্তে বেরিয়ে পড়েছে। বাস্তবে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি সেনা কর্মকর্তা সিওভাক্কোর সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামী দল, মাদরাসা শিক্ষা ও সেনাবাহিনীর ব্যাপারে সুচিন্তিত কিছু ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা পেশ করার এবং আওয়ামী লীগের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দেয়ার মধ্য দিয়ে বহুদিন ধরেই জয় দেশের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। তাছাড়া তিনি আবার পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধাসহ প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও। তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ে। সব মিলিয়েই বলা যায়, এতদিন যেভাবেই তাকে হাজির করা হয়ে থাকুক না কেন, এখন আর তিনি কেবলই প্রধানমন্ত্রীর অতি আদরের পুত্র বা 'বঙ্গবন্ধুর' নাতি নন, অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একজন রাজনীতিকও বটে। একই কারণে তার কোনো কথাকেই হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। তার 'তথ্য-তত্ত্ব'ও তাই নিন্দা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বলা হচ্ছে, এটা অবশ্যই শুধু কথার কথা নয়। সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতে জয় আসলে আগাম জানান দিয়ে ফেলেছেন। আর এ ধরনের 'তথ্য' যে জয়ের জানা থাকে বা তাকে যে আগে থেকেই জানিয়ে রাখা হয়, সে খবর তো বহু আগেই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে সৈয়দ আশরাফকেও যেনতেন রাজনীতিক মনে করার সুযোগ নেই। তার সম্পর্কে সবচেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু তথ্য জানিয়ে গেছেন মরহুম আবদুল জলিল—যিনি সৈয়দ আশরাফেরই ইমেডিয়েট পূর্বসূরি অর্থাত্ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১/১১-এর পর সৈয়দ আশরাফ কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার কোন ধরনের 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং' হয়েছিল এবং ঠিক কোন আশ্বাস ও ভরসায় তিনি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন এসব বিষয়ে আবদুল জলিল বহুবার টিভিতে বলেছেন। সংবাদপত্রেও এ সম্পর্কিত রিপোর্ট বেরিয়েছে। অর্থাত্ সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো সৈয়দ আশরাফও কেবলই একজন রাজনীতিক নন। ১/১১ ঘটানোসহ রাষ্ট্রক্ষমতার রদবদলে তারও যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তিনি নাকি 'তুখোড়' একজন খেলোয়াড়ও। কথাটা আমাদের নয়, আবদুল জলিল তো বলেছেনই, এখনও বলে থাকেন আরও অনেকে। সুতরাং সে সৈয়দ আশরাফও যখন সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরপর ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আগাম 'গন্ধ' পান, তখন আসলে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। তাছাড়া 'আউটলুক' ধরনের ভারতীয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন তো অনেক উপলক্ষেই জানিয়ে দিয়েছে, ভারত শেখ হাসিনাকেই আবারও ক্ষমতায় আনতে চায় এবং এ ব্যাপারে দেশটি তার 'কৌশল'ও চূড়ান্ত করেছে। 'আউটলুক'-এর এ খবরটি নিয়ে দেশে হৈচৈ কম হয়নি। বলা দরকার, 'আউটলুক' কোনো সাধারণ পত্রিকা নয়। বিডিআর বিদ্রোহের আড়ালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের সময় এ ম্যাগাজিনটিই অনেক গোপন খবর ফাঁস করেছিল। ভারত যে বাংলাদেশকে তার 'রাডার'-এর বাইরে যেতে দেবে না এবং সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই যে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল, সে খবরও জনগণ 'আউটলুক'-এর বদৌলতেই জানতে পেরেছিল। সুতরাং 'আউটলুক'-এর এবারের খবরকেও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনায় নেয়া দরকার। তাছাড়া 'আউটলুক' একা নয়, 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' এবং 'আনন্দবাজার'সহ আরও কিছু পত্রিকার কল্যাণে আজকাল ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্দরমহলের অনেক খবরও তো বেরিয়ে আসছে।
সব মিলিয়েই ধরে নেয়া যায়, সজীব ওয়াজেদ জয় অকারণে হঠাত্ 'তথ্য-তত্ত্ব' হাজির করেননি, সৈয়দ আশরাফের নাকেও সঠিক 'গন্ধ'ই ঢুকেছে। নিজেদের জন্য শুভ বার্তা বলে তার তাই শুধু 'গন্ধ' না বলে 'খুশবু' বলা উচিত ছিল। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে একজন 'তুখোড় খেলোয়াড়' হওয়া সত্ত্বেও সৈয়দ আশরাফ কেন 'খুশবু' না বলে শুধু 'গন্ধ' পর্যন্ত বলেই থেমে গেছেন সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তা সত্ত্বেও কিছু কথা আবার না জানিয়েও পারা যায় না। এসব কথার কারণ তৈরি করেছেন বিদেশ সফরে 'বিশ্ব রেকর্ড' সৃষ্টিকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, মাত্র ক'দিন আগে, গত ২২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে রীতিমত তেড়ে উঠেছিলেন তিনি। কারণটি ছিল তার বিদেশ সফর নিয়ে প্রকাশিত এক বিশেষ রিপোর্ট। এতে বলা হয়েছিল, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দীপু মনি নাকি ১৮০-১৯০ বার বিদেশ সফর করেছেন। অন্যদিকে দীপু মনি জানিয়েছিলেন, তিনি বিদেশ সফর করেছেন 'মাত্র' ১১৪ বার, ১৮০-১৯০ বার নয়। দ্বিপাক্ষিক সফরের পরিসংখ্যানেও নাকি 'গণিত-বিভ্রাট' ছিল রিপোর্টটিতে। কারণ, দীপু মনি দ্বিপাক্ষিক সফরে গেছেন ৬২ বার, কিন্তু পত্রিকাটি লিখেছিল ১৭ বার। বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে দীপু মনি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পর্যন্ত টপকে গেছেন বলে যে মন্তব্য রিপোর্টটিতে ছিল, তারও কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
খুবই কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, বিদেশ সফরে 'বিশ্ব রেকর্ড' সৃষ্টি সম্পর্কিত নিন্দা, বিতর্ক ও সমালোচনা চলতে থাকা অবস্থায় ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেই ২৫ জুলাই উড়াল দিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে দিয়ে বহুল আলোচিত এবং পদ্মা সেতুর পাশাপাশি আরেক 'হাইকোর্ট' হয়ে ওঠা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করানো। সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করানোর চেষ্টাও ছিল তার তালিকায়। কোনো কোনো দৈনিক দীপু মনির এ সফরকে এমনকি মহাজোট সরকারের 'শেষ চেষ্টা' পর্যন্ত বলেও মন্তব্য করেছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিক থেকেও চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না। তাছাড়া দিল্লির 'সাউথ ব্লক'সহ ভারতের শীর্ষ মহলে দীপু মনির বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেও বিভিন্ন সময়ে জানা গেছে। ভারতীয় নেতাদের অনেকেই দীপু মনিকে অতি আপনজন বলে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত অমন এক চিন্তা ও আশাবাদের ভিত্তিতেই 'শেষ চেষ্টা' চালানোর জন্য দীপু মনিকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদের সঙ্গে সাক্ষাত্ ও বৈঠকও করেছেন দীপু মনি। আবদার জানিয়ে বলেছেন, আর কিছু না হোক, ভারতীয়রা যদি তিস্তা চুক্তিটিও কোনোভাবে স্ব্বাক্ষর করতেন তাহলেও শেখ হাসিনার ও আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য আগামী নির্বাচন পাড়ি দেয়া এবং বিরোধী পক্ষের ভারতকেন্দ্রিক সমালোচনার জবাব দেয়া সহজ হতে পারত।
অন্যদিকে ভারতীয় নেতারা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য দরদে উথলে ওঠেননি। এবারও যথারীতি শুধু আশ্বাসের কথাই শুনিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদও মুসলমান হিসেবে দীপু মনিকে ইফতার খাওয়ানোর বাইরে শেখ হাসিনার জন্য আশান্বিত হওয়ার মতো কোনো বার্তা পাঠাননি। প্রত্যেকে বরং ভারতের সংবিধান, লোকসভা ও রাজ্যসভাসহ পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতি এবং সংবিধান কীভাবে সংশোধন করতে হয় এসব সম্পর্কে নতুন করে জ্ঞান দিয়েছেন। ভারত যে বাংলাদেশের মতো ছোট কোনো এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র নয় বরং সম্প্রতি গঠিত তেলেঙ্গানাসহ ২৯টি রাজ্যের সমন্বয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখানে তিস্তা চুক্তি বা সীমান্ত প্রটোকলের মতো বিষয়গুলোতে সংশিষ্ট রাজ্যগুলোরও যে সম্মতি ও অনুমোদন নিতে হয়, সেকথাও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে দীপু মনিকে। তাছাড়া শুধু সরকার চাইলেই চলে না, এ ধরনের বিষয়ে বিরোধী দলেরও সমর্থন থাকতে হয়। অর্থাত্ নানা কথার মারপ্যাঁচে সব মিলিয়েই শেখ হাসিনার জন্য বিরাট একটি 'না'-সূচক বার্তা পাঠিয়েছে মনমোহন সিংয়ের সরকার। দীপু মনি অবশ্য এত অল্পে হাল ছেড়ে দেননি। তিনি বরং ভারতে দাঁড়িয়ে ভারতীয়দের সঙ্গেই 'পলিটিক্স' করার হাস্যকর চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রথমে গিয়ে হাজির হয়েছেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলীর দরজায়। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা তিনি। কিন্তু অরুণ জেটলীও অনেকটা 'পত্রপাঠ' বিদায় করেছেন দীপু মনিকে। সম্ভবত বলেও দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ যে কংগ্রেসের সেবাদাসগিরি করে সে কংগ্রেসের কাছেই গিয়ে 'ধরনা' দেয়া উচিত দীপু মনির।
এরপর ভারতীয় রাজনীতিকদের হতবাক করে দীপু মনি গিয়ে 'ধরনা' দিয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র নাথ মোদীর দুয়ারে। ভারতীয় মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০২ সালে গুজরাট রাজ্যে হাজার হাজার মুসলিম হত্যার খলনায়ক হিসেবে বিশ্বব্যাপী ঘৃণিত এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতার দ্বারস্থ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো, নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে—যদি বিজেপি ও তার জোট এনডিএ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিততে পারে। ওদিকে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর 'ধরনা' দেয়ার বিষয়টিকে রাজনীতির পুঁজি হিসেবে পরিপূর্ণরূপে কাজে লাগিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতের মুসলমানদের বুঝিয়েছেন, তিনি যদি সত্যিই ঘাতক ও মুসলিমবিরোধী হতেন তাহলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার কাছে 'ধরনা' দিতে আসতেন না। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু তাই বলে কোনো আশ্বাসই দেননি দীপু মনিকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন অবস্থায় আসলে নেইও মিস্টার মোদী। কারণ তিনি ২৯টির মধ্যে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাত্র। তাছাড়া বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, যার সঙ্গে এই সময়ে মোদীদেরও কংগ্রেসবিরোধী নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ চলছে। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য তিনি মমতার সঙ্গে ঝামেলা বাঁধানোর চিন্তাই করতে পারেন না।
অর্থাত্ দিল্লি সফরে গিয়ে কোনোদিক থেকেই সামান্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে বরং বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, শেখ হাসিনাকে এবং আওয়ামী লীগের মতো একটি সেবাদাস দলকে ক্ষমতায় রাখার বা আনার জন্য ভারতীয়রা নিজেদের দলীয় স্বার্থ এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যেক বিপন্ন করতে রাজি নন। জাতীয় স্বার্থ তো পরিত্যাগ করবেনই না। বলা দরকার, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয়রা স্বাধীনতার পর থেকেই একই মনোভাব দেখিয়ে এসেছে। এবার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকার এমনভাবেই ভারতীয়দের সব ইচ্ছা পূরণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে যে, ভারত এই সরকারকে স্ব্বাধীন ও সার্বভৌম কোনো দেশের সরকার বলেই মনে করছে না। গুরুত্ব ও সম্মানও যে দিচ্ছে না তার প্রমাণ তো পাওয়া গেছে অনেক উপলক্ষেই। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতকে 'চাহিবা মাত্র' স্টাইলে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে ভারত কিন্তু শেখ হাসিনার মানসম্মান বাঁচানোর জন্য তিস্তা চুক্তি পর্যন্ত স্ব্বাক্ষর করেনি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির আড়াল নিয়ে মনমোহন এমনকি সীমান্ত প্রটোকলের ব্যাপারেও কলম ধরেননি।
এতকিছুর পরও শেখ হাসিনার সরকার আগ বাড়িয়েই ভারতকে সবকিছু দিয়েছিল। এখন যেহেতু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে সে কারণে দীপু মনিকে পাঠানো হয়েছিল 'শেষ চেষ্টা' চালানোর জন্য। বুঝতে অসুবিধে হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সঙ্গী-সাথীরা এখনও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যকার মূল কথাটুকুই শিখে উঠতে পারেননি। সেটা হলো, দিল্লি শুধু নিতে জানে, দিতে নয়। এজন্যই দীপু মনিকে ফিরতে হয়েছে একেবারে খালি হাতে। আমরা জানি না, দীপু মনির এই খালি হাতে ফেরার ঘটনা থেকে 'সৈয়দজাদা' ও 'সাহেবজাদা'রা কিছু শিক্ষা নেবেন কি না, তবে এটুকু অবশ্যই বলা দরকার, শুধু ভারত এবং শেখ হাসিনারা চাইলেই চলবে না, কৌশলের জবাবে পাল্টা কৌশল বলেও একটা কথা রয়েছে! আর যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য হলো, বাংলাদেশের জনগণকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দমন ও ইচ্ছাধীন করা যায় না। বিশেষ করে এমন কোনো দল বা নেত্রীকে ক্ষমতায় আনা যায় না, যার বা যাদের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালন করার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যত তথ্যই থাকুক বা যত গন্ধই কেউ পান না কেন, এ ব্যাপারে 'সাহেবজাদা' আর 'সৈয়দজাদা'দেরও খুব বেশি কিছু করার নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___