পিতাকে পুত্র
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৪:২৮ অপরাহ্ন
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 'বিপদে মোরে রা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়'Ñ কবির এই অমর বাণীই আমায় সারাজীবন পথ দেখিয়েছে। একেবারে সাধারণ অবহেলিত মানুষ হিসেবে জীবন শুরু করেছিলাম। দাদু আলাউদ্দিন সিদ্দিকী ছিলেন বড় মাপের রাজনীতিবিদ, মহাত্মা গান্ধীর সাথে কাজ করেছেন। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সংগ্রাম করে পাকিস্তান এনেছিলেন। অসময়ে তিনি চলে যাওয়ায় বাবা বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। হঠাৎ ঝড়-তুফানে কারো ঘর-দুয়ার উড়ে গেলে আশ্রয়হীনদের যেমন হয়, তেমনই হয়েছিল আমাদের। অন্য দশজনের চাইতে অনেক বেশি জমিজমা থাকতেও পরিচালনার মতা না থাকায় কিছু দিন খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। দেড়-দুই শ' বছর পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে আমাদের পরিবারের অনেকে অনেক বড় বড় রাষ্ট্রীয় কাজে ভূমিকা রেখেছেন। মোগল আমলের পাট্টা রয়েছে পূর্বপুরুষদের নামে। লাখেরাজ শত শত খাদা ভূমি ভোগ করতেন তারা। দাদুর মৃত্যুর ছয়-সাত বছর পর আমার জন্ম। পরিবারে খুব একটা সচ্ছলতা ছিল না তখন। কিছুটা সচ্ছলতা এসেছিল আমার জন্মের প্রায় ১৩-১৪ বছর পর। আবার আইয়ুব-মোনায়েমের আক্রমণে সব তছনছ হয়ে যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদারেরা ঘরবাড়ি সব পুড়ে ছারখার করে দেয়। যুদ্ধ শেষে যখন কেবলই শক্ত পায়ে দাঁড়াতে গেলাম, যাকে ঘিরে রাজনৈতিক জীবন উত্থানের সূচনা, সেই তুমিই হঠাৎ করে কিছু না বলে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে। তোমার মৃত্যুতে কতজন দাঁত কেলিয়ে হি হি করে হাসলেন, কিন্তু আমার হাসি তো দূরের কথা, চোখ খুললেই পানিতে ঝাপসা হয়ে এলো। শপথ নিলাম জীবন থাকতে হত্যাকারীদের বিনা প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ছেড়ে দেবো না। সব কিছু খুইয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুললাম। ১৬ বছর নির্বাসনে কাটালাম। ২৮ বছর গোশত মুখে দিলাম না। কিন্তু আজ দেখি সব বৃথা। এক বিদেশী মাঝে মধ্যে এটা ওটা বলে নিজেকে বড় বেশি জাহির করার চেষ্টা করেন। তার কথার জবাব দেয়ার কোনো দিন ইচ্ছে হয়নি। লোকটি প্রচুর নেশা করেন। তোমার সাথে সাথে প্রতি পদে পদে বেঈমানি করেছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর জনকণ্ঠের চতুরঙ্গ পাতায় লিখেছেন, আমি জীবনের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিছুই করিনি, সব তিনি করেছেন। কিন্তু '৭৬-'৭৭ সালে জাতীয় মুক্তিবাহিনীর টাকায় লন্ডনে বসে তরল পানীয় পান করতেন আর বাংলার ডাক নামে এক পত্রিকায় আমাদের প্রতিরোধের কথা বয়ান করতেন। তার সেদিনের বয়ান আর আজকের বয়ান আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সেদিন ছিলেন প্রতিরোধের প,ে আজ বিরুদ্ধে। এ যাত্রায় তার লেখার শব্দে শব্দে জবাব দিতে চাই, কারণ লোকটার সকাল-বিকেল ঠিক নেই। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা কারো বন্ধু হলে তার কোনো শত্র"র প্রয়োজন পড়ে না। তেমনি বিদেশী নাগরিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী কারো পে দাঁড়ালে তার বিপে কাউকে প্রয়োজন পড়ে না। তিনি একাই একশ'। জনাব চৌধুরী সব মৃত মানুষকে সাী রেখে গল্প রচনা করেন। যখন যেমন তখন তেমন করে বয়ান করেন। লেখার হাত তার অসাধারণ। তিলকে তাল বানাতে পারেন, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বানাতে তার জুড়ি নেই। কিন্তু পেছনের অপকর্মগুলো বাদ দেবেন কী করে? তার লেখার সত্য-মিথ্যা ধরার কেউ চেষ্টা করে না, তাই তিনি বাহাদুর। কোনো যুদ্ধ না করেই যোদ্ধা, লড়াই না করেই বীর। অসময়ে তার বাপ মরায় তিনি খুব একটা রাজা-বাদশা ছিলেন না। অতীত জীবনে তাকে যিনিই সাহায্য করেছেন, বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে তারই কোছ কেটেছেন। এই েেত্র হুজুর মওলানা ভাসানী, তুমিসহ কাউকে বাদ দেয়া যায় না। আমাকে নিয়ে সব সময় উল্টাপাল্টা বলেন, আমি কিছু বলি না। দেশের সবাই জানে অন্যকে কটুকথা বলা তার স্বভাব। সারাজীবনই উল্টাপাল্টা করেছেন, এখনো করছেন। পত্রিকা বের করতে গিয়ে কতজনের সাথে কতবার প্রতারণা করেছেন তা বলেকয়ে শেষ করা যাবে না। ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচনের পর ৩ জানুয়ারি '৭১ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল নৌকার মঞ্চে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের শপথ হয়েছিল। সেই শপথ তুমি নিজে করিয়েছিলে। বলেছিলে, ৬ দফা, ১১ দফা এখন আর কোনো দল বা ব্যক্তির নয়, ওটা এখন জাতীয় সম্পত্তি। এই জাতীয় সম্পত্তির দাঁড়ি-কমা পরিবর্তনের মতা আওয়ামী লীগের নেই। সেই শপথ অনুষ্ঠানের সূচনায় ছয়টা কবুতর উড়ানো হয়েছিল। পাঁচটা উড়ে গেলেও একটা পড়ে গিয়েছিল। পরদিন ৪ জানুয়ারি পাকিস্তান সমর্থক পূর্বদেশ পত্রিকায় গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন, আওয়ামী লীগের ৬ দফার ১ দফা ঝরে গেছে, পড়ে গেছে। এখনো কেউ আর্কাইভে সেদিনের পূর্বদেশ দেখতে পারেন। ওই লেখার জন্য চৌধুরী বড় বেশি নিন্দিত হয়েছিলেন। যেখানেই যেতেন সেখানেই অপমান-অপদস্ত হতেন। সুরা খাওয়া মানুষের একটা সুবিধা, যখন পান করেন তখন নাকি খুব ফুর্তিতে থাকেন। গায়ে-পায়ে কোনো বাতাস লাগে না, দুনিয়াকে রঙিন মনে হয়। বিড়ি-সিগারেট ধরার সৌভাগ্য থেকে এখনো বঞ্চিত। হোটেল-রেস্তোরাঁই ভালো করে দেখিনি, চৌধুরী সাহেবের জগতের কথা বলব কী করে? স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৫ মার্চ। তিনি আগরতলায় গিয়েছিলেন শেষ আগস্টে। সেখানে কেউ তাকে গ্রহণ করেননি। অনেকেই পাকিস্তানের এজেন্ট বলে ফিরিয়ে দিতে অথবা ভারতীয় কর্তৃপরে কাছে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। অনেক খড়কুটো পুড়িয়ে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতাতেও তাকে প্রথম প্রথম খুব একটা পাত্তা দেয়া হয়নি। তবুও কোনোভাবে জননেতা আব্দুল মান্নানের শুভদৃষ্টি অর্জনে সম হয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকারের মুখোপত্র জয়বাংলা পত্রিকায় জায়গা করে নেন। গাফ্ফার চৌধুরী কলম চালনার েেত্র সব সময় ছিলেন অসাধারণ। এখন বয়সের কারণে হয়তো অতটা পরিশ্রম করতে পারেন না, তখন পারতেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে লেখালেখির েেত্র বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। অথচ এম আর আখতার মুকুল পুলিশের সন্তান। লেখালেখিতে তার তেমন একটা বড়সড় পরিচয় ছিল না। কিন্তু প্রাণের তাগিদে তিনি যে চরমপত্র রচনা এবং পাঠ করেছিলেন তা পাকিস্তান হানাদারদের বিরুদ্ধে বিসুবিয়াসের শক্তিকেও হার মানিয়েছে। বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তোমার লতিফ সিদ্দিকীকে দেখে রাজনীতিতে এসেছিলাম। তিনি অনেক কিছু অস্বীকার করলেও তার মতো আমি পারি না। কারণ তিনি এখন তোমার কবর দেয়া আওয়ামী লীগ করেন, আমি আওয়ামী লীগ করি না। আওয়ামী লীগ করলে নিজের কথা, বিবেকের কথা, সাধারণ মানুষের কথা বলা যায় না। সব সময় আওয়ামী লীগের কথা বলতে হয়, সেটা ন্যায়-অন্যায় যাই হোক। আমি কোনো দিনই বিবেকবর্জিত কথাবার্তা বলতে পারতাম না; তাই জননেত্রী হাসিনা লীগের জন্য উপযুক্ত নই। এটা মওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ নয়, তোমারও নয়। তোমার কবর দেয়া আওয়ামী লীগের কঙ্কাল, তাই তাদের সাথে আমার চলে না। বড় ভাইয়ের অনেক ত্যাগ নিয়ে এখনো গর্ববোধ করি। কিন্তু অতি সম্প্রতি তার কিছু কিছু কথা জনমনে ভীষণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ মর্মাহত হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছেন বলে তাকে বিনা বিচারে জেলে নিতে হবে। হরতাল আহ্বানকারীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করতে হবেÑ এসব কথা কোনো বিবেকবান মানুষ বলে? জানি, এসব লতিফ সিদ্দিকীর কথা নয়, এসব আওয়ামী লীগের কথা। জনাব চৌধুরী কতবার যে লতিফ সিদ্দিকীর গৌরবময় ভূমিকার নাহক নিন্দা করেছেন, তাকে ছোট করেছেন, গালাগাল করেছেন। এই প্রথম তার খারাপ কথাগুলোকে সাধুবাদ দিয়ে গলাগলির ইচ্ছা করেছেন। তবে কি মি. চৌধুরী লতিফ সিদ্দিকীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন? উসকে দিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন? কেমন যেন তেমন সন্দেহই জাগে। তিনি লিখেছেন, " '৭১ সালের সবচাইতে আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা '৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যিনি এককভাবে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যাকে পুত্রসম জ্ঞান করে বাকশাল গঠনের পর টাঙ্গাইলের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন, বাংলাদেশে বাঘাসিদ্দিকী নামে এককালে পরিচিত-প্রবাদসিদ্ধ মানুষটির আজ এই পরিণতি কেন? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইউরোপে দেশপ্রেমিক বাঙালিরা যে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে, তখন আমি কাদের সিদ্দিকীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। তিনি তখন বাংলাদেশের বাইরে (ভারতে) চলে এসে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ঘোষণা করেছিলেন, 'বঙ্গবন্ধুর এক পুত্র হিসেবে আমি এখনো বেঁচে আছি। আমি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেব।' স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আমরা অনেকে আকৃষ্ট হয়েছিলাম এবং তাকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। দেশে সামরিক শাসন উৎখাতের আন্দোলনে সমর্থন চেয়ে কাদের সিদ্দিকী তখন অক্সফোর্ডে অবস্থানরত ড. কামাল হোসেনের কাছে বহু চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলো ড. কামাল হোসেনের কাছে বহন করে নেয়ার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। ড. কামাল হোসেন একটি চিঠিও গ্রহণ করেননি। জবাব দেননি। উপো করেছেন। যত দূর মনে পড়ে তিনি কাদের সিদ্দিকীকে 'ব্যান্ডিট' মনে করতেন। সেই কামাল হোসেনের কাছে পরে কাদের সিদ্দিকীকে বারবার লজ্জাকর ধরনা দিয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্তে তার সহযোগী সাজতে দেখা গেছে। এখন তো শেখ হাসিনার আরেক বিরোধী অর্ধ নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সাথে ফটোসেশন করে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।" তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ জনাব চৌধুরী দু-তিনটি প্রসঙ্গ তোলার চেষ্টা করেছেন, এক. এক সময় আমি জগদ্বিখ্যাত ছিলাম। তুমি খুব ভালোবাসতে। আমার কোনো ত্যাগ-তিতিা নিষ্ঠা ছিল না। এখন তো পচেই গেছি। আর অন্যটি হলো, তুমি নিহত হওয়ার পর আমাদের প্রতিরোধ সংগ্রামের কারণে তিনি এবং অন্যরা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এমনকি চৌধুরী সাহেবের আমার পিয়নের দায়িত্ব পালনেও কোনো আপত্তি ছিল না। ড. হোসেনকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে অনেক চিঠি লিখেছি। তিনি কোনো চিঠি গ্রহণ করেননি, পাত্তা দেননি। পরবর্তীকালে ড. কামাল হোসেন জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র করেছেন, আমি লজ্জাজনকভাবে সেসব ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করেছি। সর্বশেষ শেখ হাসিনার আরেক বিরোধী অর্ধ নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সাথে ফটোসেশন করে নিজে ধন্য হচ্ছি। আসলে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা সে করতেই পারে। তুমি তো জানোই আমার অনেক দোষ থাকলেও গলা উঁচু করে দাঁত কেলিয়ে কারো সাথে ছবি তোলার স্বভাব নেই। ফটোসেশন করার লোক আমি নই, আমি কাজের লোক। সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, ক্যামেরাম্যান অনেকেই আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু তাদের কথামতো এদিক-ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে পোজ দিয়ে ছবি তুলি না। সেজন্য তাদের কষ্ট হয়। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে এগিয়ে বসুন, পিছিয়ে বসুন, অল্প বয়সী ফটোগ্রাফাররা ওসব করাতে না পেরে মাঝেসাজে বেশ কষ্ট পায়। কারো সাথে কোনো কথাবার্তা বলতে বা বইপুস্তক বা অন্য কিছু দিতে ফটোসেশনের সময় ক্যামেরাম্যানরা আশা করে তাদের দিকে তাকাই। তা যখন দেখে না তারা তখন ক্যামেরায় তাকাতে অনুরোধ করে। যার সাথে দেখাসাাৎ তার দিকে না তাকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকানো রুচিকর মনে হয় না। সেজন্য অনেক েেত্র তাকাই না। ইদানীং অভিনয়ের মূল্য অনেক, অনেক বড় বড় সভা-সমাবেশে আলো পড়ে যাবে অথবা সংবাদের সময় পার হয়ে যাবে বলে দেশের প্রধান প্রধান নেতাও ক্যামেরায় প্রোক্সি দেন। মানে আগেই দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ক্যামেরাম্যান বিদায় করেন। আমি এখনো ওসব করতে পারি না। তাই ড. ইউনূসের সাথে ফটোসেশন করে ধন্য হতে যাবো কেন? পত্রিকায় একদিন নাম উঠলে অনেকেই এক বছর সে পত্রিকা নিয়ে ঘোরে। সারা পৃথিবীতে তোমার জন্য দেড়-দুই শ' জাতীয় পত্রিকায় যখন ছবি উঠেছে, সেদিনও দেখতে যাইনি। এ েেত্র চৌধুরী সাহেব খুবই ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন। একেবারে অর্থহীন পোলাপানের মতো বাদাবাদি স্বভাবের পরিচয় দিয়েছেন। ড. ইউনূসের সাথে যতবার কথা হয়েছে তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একবারও কোনো কথা বলেননি; বরং তোমার কন্যা হিসেবে তার প্রতি কম-বেশি দরদ দেখিয়েছেন। '৭৫ পরবর্তী অক্সফোর্ডে থাকা ড. কামাল হোসেন আমাদের চিঠিপত্র গ্রহণ করেননি। আমরা তাকে বারবার চিঠি দিয়েছি। কেন তাকে চিঠি দিতে যাবো? তিনি কি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব ছিলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অথবা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী? ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ই দেশবাসীর মনে একটি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল। সিআইএ'র লোক হিসেবে তোমার বিপে পাকিস্তানের পরে লোক ভাবা হতো। তুমি তাকে সাথে নিয়ে দেশে না ফিরলে ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে স্বাধীনতা-পরবর্তী অনেক রকমের কথা হতো। আমরা তো কথা বানাতে কারো চাইতে কম নই। আমরা এ দিকেও পারি, ও দিকেও পারি। একজন নামী-দামি মানুষ তোমার অনুসারী হিসেবে নিশ্চয়ই তার কাছে দু-একবার চিঠি পাঠাতেই পারি। আমি ছিলাম মেঘালয়ে, তিনি ছিলেন লন্ডনে। চৌধুরী সাহেব নিজেই পিয়নের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে আমার কী বলার থাকতে পারে? আমি ছোট মানুষ, আদার ব্যাপারী, আমার জাহাজের খবর নিয়ে কী কাজ? তবে চৌধুরী সাহেব যেভাবে এখন জিনিসগুলোকে তুলে ধরতে চাচ্ছেন, ওরকম নয়। ড. কামাল হোসেন যদি আমাদের কোনো চিঠি গ্রহণ না করে থাকেন, সেটা তার ব্যাপার। ওতে আমাদের ওপর আসমান ভেঙে পড়েনি। আর উত্তর না পেলে কেন তাকে বারবার চিঠি দিতে যাবো? তবে একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই, আমার মতো বেকুব নিয়ে কারো ষড়যন্ত্র করা সম্ভব নয়। ষড়যন্ত্রের যে যোগ্যতা লাগে আমার তা নেই। ড. কামাল হোসেন ষড়যন্ত্র করতে পারেন কি না তা তার ব্যাপার। একজন বয়সী মানুষ চৌধুরী সাহেব তার মতো সকালে সালাম, বিকেলে গালি দিতে কোনো দিন পারিনি। যত দিন দুনিয়ায় থাকব ওই গুণ থেকে যেন বঞ্চিতই থাকি। আল্লাহ যেন ওইসব গুণ থেকে দূরে রাখেনÑ আমিন।
__._,_.___