ন্যাড়া বেল তলায় দু'বার যায় না আওয়ামী লীগকে কেন মানুষ আর ভোট দেবে না
সি রা জু র র হ মা ন |
দারুণ সুদর্শন ছেলেটি। বিবিসির হিন্দি অনুষ্ঠানে খণ্ডকালীন ব্রডকাস্টার ছিল। মেয়েটিও খুবই সুন্দরী। হিন্দি বিভাগে টাইপিস্ট হয়ে এসেছিল। কাছাকাছি বসে কাজ, সর্বক্ষণ দেখাশোনা। পরস্পরের প্রেমে মজে যেতে ওদের দেরি হয়নি। কোনো কোনো প্রেম পরিণয়ে সমাপ্তি পায়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। বছর না পেরুতেই ওরা বিয়ে করল। অন্যেরা প্রশংসায় ফেটে পড়লেন। আহ, মণি-কাঞ্চন সংযোগ যেন!
প্রেমে ভাটা পড়তেও বেশি বিলম্ব হয়নি। দেখা গেল ওরা আর একসঙ্গে চলাফেরা করে না সব সময়। মৃদু গুঞ্জনও শুরু হয়ে গেল। প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হয় দু'জনে। ছেলেটি নাকি বৌকে পেটায় প্রায়ই। এই করেই চলছিল এক বছরের বেশি দিন। একদিন শুনলাম মেয়েটি কাজে ইস্তফা দিয়েছে এবং ভারতে বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছে। আরও কিছু দিন যায়। ওদের ঘনিষ্ঠ জনেরা বলাবলি শুরু করল, ছেলেটি নাকি বিরহে উন্মাদ-প্রায়, বৌকে আবার ফেরত পেতে চায়। প্রতিদিনই ফোন করে বৌকে। কিছুদিন পর সেও চলে গেল ভারতে।
ছেলেটির সঙ্গে এরপর আমার দেখা কয়েক বছর পরে। দিল্লিতে, দূরদর্শনের মহাপরিচালকের আপিসে। আমি গেছি সৌজন্য সাক্ষাতে, আর সে এসেছে ব্যবসায়িক তদবিরে। বৌর সঙ্গে সমঝোতা আর হয়নি। একবারের অভিজ্ঞতাই মেয়েটির জন্য যথেষ্ট হয়েছে। প্রাক্তন স্বামীকে সে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে চায়নি। ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা আর স্বামীর নৃশংসতাকে ক্ষমা করতে সে রাজি ছিল না। শেষে বৌ তাকে ডিভোর্স করে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। ছেলে চলে গেল বলিউডে। সেখানে সে ছায়াছবি তৈরি করেছে। নায়ক তার হারানো প্রেম ফিরে পাওয়ার জন্য যেসব অসম্ভব কাণ্ডকারখানা করেছে সে কাহিনী। দূরদর্শনে ধারাবাহিকভাবে সে ছবি প্রদর্শনের তদবির করতে এসেছে। আর হ্যাঁ, ছবির নাম দিয়েছে 'ফির এক বার'।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুমুল উত্সাহে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন, যদিও নির্বাচন আদৌ হবে কিনা সে সম্পর্কে অনেকেরই সন্দেহ। শেখ হাসিনার প্রচারাভিযানের মূল কথাও যেন 'ফির এক বার'। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি বলছেন আরও একবার ভোট দিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী করতে। তাহলে কী করবেন তিনি? প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে। তিনি পদ্মায় সেতু তৈরি করবেন (ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে যে সেতু তৈরির কাজ চার বছর বন্ধ আছে), ২০০৮ সালে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির যেগুলো অপূর্ণ আছে (প্রায় সবগুলো প্রতিশ্রুতি পালনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে) সেগুলো পূর্ণ করবেন এবং পূর্ণ গণতন্ত্রের চর্চা করবেন। কার্যত প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন, এতদিন যে পন্থায় তিনি দেশ শাসন করেছেন সেটা গণতন্ত্রসম্মত ছিল না।
পদে পদে গণতন্ত্রের বিরোধিতা
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। নয় বছর ধরে যেভাবে তিনি লে. জে. এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন (যার অধিকাংশ সময় হাসিনা এরশাদকে সমর্থন দিয়েছেন), কৃতজ্ঞ জাতি সেজন্য ভোট দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করেছিল। বিশ্বের বহু দেশের পর্যবেক্ষক এসেছিলেন সে নির্বাচন দেখতে। দেখে তারা চমত্কৃত হয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। যে নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারেননি সেটা আবার কিসের নির্বাচন হলো? তিনি সংসদ বর্জন করলেন, রাজনীতিকে পথে টেনে নামালেন, ১৭৩ দিন হরতাল করলেন, নির্বিবাদে খালেদা জিয়াকে দেশের কাজ করার সুযোগ দিতে তিনি অস্বীকার করলেন।
শেষত তিনি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দলে টেনে আন্দোলন শুরু করে দিলেন। অত্যন্ত সহিংস আর রক্তক্ষরা ছিল সে আন্দোলন। বহু মানুষ মারা গেছে, জখম হয়েছে আরও বেশি। সড়ক, সেতু ও বন্দর অবরোধ করা হয়েছে, রেললাইনের স্লিপার তুলে নেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতির অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচন দিয়েছিলেন এবং জয়লাভও করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সে নির্বাচন বর্জন করে, তাদের সহিংস আন্দোলন আরও রক্তঝরা হয়ে ওঠে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আশায় খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার তড়িঘড়ি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করে। সে বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বল্প ব্যবধানে আওয়ামী লীগ একক গরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং জামায়াতের চারজন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে।
সে নির্বাচনে ভোটারদের বিবেচনা ছিল দ্বিমুখী। তারা আশা করেছিল মেখ হাসিনা শান্ত হবেন, দেশে শান্তিপূর্ণ আর গণতান্ত্রিক শাসন চালু হবে। শত হলেও শেখ মুজিবের মেয়ে তো! কিন্তু রাজনীতিতে তারা যে স্থায়ী অশান্তির বীজ বপণন করল, ভোটাররা তখন বুঝতে পারেনি। মুজিবের কন্যার জন্য তাদের সহানুভূতি যে স্বৈরতন্ত্রী ক্ষমতালোভিতারই জন্ম দেবে, বুঝে ওঠা তাদের জন্য সম্ভব ছিল না।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা সহিংস ও সন্ত্রাসী পথে গদি চিরস্থায়ী করার দিকে মনোযোগ দিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি একটা সশস্ত্র ক্যাডার গঠন করেন। এই ক্যাডারদের গডফাদাররা দেশজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। ফেনীর জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরের আবু তাহের, ঢাকার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী মায়া এবং নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের নাম মানুষ তখন ত্রাসের সঙ্গে স্মরণ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রসঙ্গ তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের তিনি 'একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার' তাগিদ দিয়েছিলেন, তাদের পুরুষত্ব নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন। ক্ষমতাসীন সরকারপ্রধান কোনো দেশে প্রকাশ্যে এ জাতীয় সন্ত্রাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই।
হাসিনার বিজয় নির্বাচনের শর্ত নয়
এখন প্রমাণিত হয়েছে যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতার কোনো দাম নেই শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সার কাছে। তিনি যেন বলতে চান, আমি যা করি তোমরা সেটা করতে পারবে না, আর তিনি গদি না পেলে অন্য কাউকে তিনি দেশ শাসন করতে দেবেন না। ২০০৬ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার সংবিধান অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করে। আওয়ামী লীগ জানত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। শেখ হাসিনা লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলনের ডাক দিলেন কার্যত সংবিধানকে হত্যা করার লক্ষ্যে। রাজধানীর রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে একাধিক ডজন মানুষ হত্যা করা হয়। আবারও সড়ক ও বন্দর অবরোধ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, এমনকি রাষ্ট্রপতিকে গণভবনে কার্যত বাইরের জগত্ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বন্দি করে রাখা হয়।
পরে শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের যোগসাজশে এবং ভারতীয় হাইকমিশনার ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ষড়যন্ত্রে (বাংলাদেশের দু'জন পত্রিকা সম্পাদকসহ) একটা বর্ণচোরা সামরিক সরকার চালু হয়। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নির্বাসিত করার এবং বিএনপি দলকে ভেঙে দেয়ার সব রকম চেষ্টা হয়েছিল সে সরকারের আমলে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন স্বাভাবিক নির্বাচন ছিল না। বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশজোড়া একটা মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
কী করেছেন শেখ হাসিনা এই দ্বিতীয় মেয়াদে? নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দশ টাকা কেজি দরে মানুষকে চাল দেবেন তিনি, দুর্নীতি দমন করা হবে এবং মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের বিবরণ মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে, রাতারাতি বিদ্যুত্ সঙ্কটের অবসান এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটাও পূরণ করা হয়নি। মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি গোড়াতেই পরিত্যক্ত হয়। সরকারের এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি করার 'ওপেন জেনারেল লাইসেন্সই' যেন দিয়ে দেয়া হলো।
দুর্নীতির ফাদার-মাদার
প্রথমে শেয়ারবাজার লুট করে ৩৫ লাখ পরিবারকে ফতুর করে দেয়া হয়, পণ্যের বাজারকে মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের সিন্ডিকেটের ফাঁদে ফেলে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা নিঃশেষ করে দেয়া হয়, সরকারের কাছের জনেরা ডেসটিনি, হলমার্ক ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সাধারণ মানুষের আমানত লুট করে নিরাপদেই আছেন, মন্ত্রী এবং তাদের পারিবারিক ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো 'কুইক রেন্টাল' কেলেঙ্কারিতে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। কিন্তু দুর্নীতির ফাদার-মাদার বিশ্বের মানুষ দেখেছে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছেন বিশ্বব্যাংক কোনো টাকাই দেয়নি, দুর্নীতি হলো কী করে? তার কথায় বিরল কিছু সত্যতা অবশ্যই আছে। বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে সে আশ্বাসে কানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানি দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে 'সাময়িকভাবে' আগাম দেয়া ৩৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া এ টাকাটা লাভালিন কোম্পানিকে ধার দেয়া তো সম্ভব হওয়ার কথা নয়। তাহলে এই দু'জন কর্মকর্তাও কি দুর্নীতিবাজদের তালিকায় পড়েন না?
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছিল। বলেছিল এদের বিচার ও শাস্তি হলে তারা আবার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কিছুতেই দুর্নীতিবাজদের পালের গোদা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন সম্বন্ধে তদন্ত কিংবা তার বিচার করতে রাজি হয়নি। বরং শেখ হাসিনা আবুল হোসেনকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। আবুল হোসেন কার হয়ে প্রক্সিতে দুর্নীতি করছিলেন সে সম্পকূে দেশের মানুষের কৌতূহল বেড়েই চলেছে। হাসিনা বলছেন আবার গদি পেলে তিনি সেতুটি তৈরি করবেন। কিন্তু আগের বারে যে সেতু তৈরি হলো না সে দায়িত্ব কে নেবে?
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ এক কথায় গণহত্যা। বস্তুত এ বাবত তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে সরকারের শত শত বিরোধী ও সমালোচককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের দলীয়কৃত পুলিশ ও র্যাব শতাধিক মানুষকে গুম ও হত্যা করেছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে সেই যে ১৭ মাস আগে র্যাব বনানী থেকে ধরে নিয়ে গেল, তারপর তার আর কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্রুসেড
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ড দানের পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে প্রতিবাদ উঠেছিল সেটা দমন করতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বর্বর আক্রমণে কয়েকটি প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে। সর্বোপরি গত ৬ মে অতি ভোরে শাপলা চত্বরের গণহত্যায় বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ও তাদের দলীয়কৃত পুলিশ অতি বিলম্বে হত্যার কথা অস্বীকার করলেও তাদের কথা কেউ কোথাও বিশ্বাস করছে না। বিশ্ব মিডিয়ায় ও ব্লগে সে ঘটনার বহু ভিডিও ছবি দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বিরোধী দলগুলোর যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে সেগুলো তো আছেই। শেখ হাসিনা যতদিন এসব গণহত্যার জন্য ক্ষমা না চাইবেন ততদিন বাংলাদেশের কোনো মানুষ আবার তাকে গদি দেয়ার কথা ভাবতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
শেখ হাসিনার উক্তিগুলো আন্তরিক নয় বলেই একেক দিন একেক সুরে কথা বলছেন তিনি। বিগত কয়েক দিনে পুলিশ বাহিনীকে যেসব বিভিন্ন পরামর্শ তিনি দিয়েছেন তার মাথামুণ্ড অর্থ উপলব্ধি করা কি সাধারণ বুদ্ধির মানুষের পক্ষে সম্ভব? আবার গদি পেলে তিনি গণতন্ত্র দেবেন। অর্থাত্ গত দুই দফায় গণতন্ত্র তিনি দেননি। সেটা অবশ্যই সত্যি কথা। কিন্তু আবার গদি পেলে তিনি যে গণতান্ত্রিক ফেরেশতা হয়ে যাবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়? দুই-দুইবার তিনি বাংলাদেশের মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন, তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ভবিষ্যতে যে আবার তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না তার প্রমাণ কি? দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক দাবি অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে অস্বীকার করে তিনি প্রমাণ করে চলেছেন যে তার গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। নইলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির জন্য জাতির দাবি মেনে নিতেন, শান্তিতে দেশে নির্বাচন হতে পারত।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনা আমেরিকা থেকে 'যুবরাজ' জয়কে আমদানি করেছেন। কিছুদিন আগে জয় প্রায় ঘোষণাই করেছিলেন যে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। মুখে মুখে প্রশ্ন উঠছিল, আওয়ামী লীগ জয়ী হবেন বলে তার কাছে তথ্য আছে, একথা বলে তিনি আরও একটি মাস্টারপ্ল্যানের ইঙ্গিত দিয়েছেন কি? তারপর হঠাত্ করে একদিন মধ্যরাতে তিনি সপরিবারে আমেরিকায় চলে গেলেন। প্রশ্ন উঠল, তার এই আকস্মিক অন্তর্ধানের সঙ্গে ৯ সেপ্টেম্বর কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার প্রি-হিয়ারিংয়ের তারিখের কোনো সম্পর্ক আছে কি? আবার হঠাত্ করেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে আবির্ভূত হলেন। এবারে প্রশ্ন উঠছে, ওই প্রি-হিয়ারিং ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা।
এ যাবত যেসব কথাবার্তা তিনি বলেছেন তাতে তার আনাড়িপনাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? তার মা যে কোনোভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এ দেশ সম্পর্কে তার প্রকৃত জ্ঞান এখানেই সীমিত বলে সন্দেহ হচ্ছে। না জেনেশুনে উল্টোপাল্টা দাবি করছেন তিনি। তার নানার হত্যার পর নাকি শুধুই মাদরাসা তৈরি হচ্ছে, সেক্যুলার স্কুল নয়—তার দাবি বানানো কথা ছাড়া আর কিছুই নয়, কেননা এ সময়ের মধ্যে সেক্যুলার স্কুলের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।
জয় বলেছেন তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মসজিদে পাঠাচ্ছেন। অবশ্যই নামাজ আদায় করার জন্য নয়। তার মা এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মসজিদে যাতে বিরূপ কথাবার্তা কিংবা খোতবা পড়া না হয় সেটা তিনি নিশ্চিত করতে চান। আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের স্বভাব অনুযায়ী মাথা ফাটাফাটি হবে, নাকি শুধুই ভীতি প্রদর্শন করা হবে, সেটা শুধু ভবিষ্যতেই বলা যাবে। জয় আরও বলেছেন, মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা হ্রাস করার জন্য তিনি এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান এবং তারা ধর্মপ্রাণ। ভয় দেখিয়ে মসজিদে মুসল্লি এবং মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা হ্রাস করাকে অবশ্যই ইসলাম ধর্মের ওপর আরও একটি আঘাত বিবেচনা করা হবে।
আমার যতদূর জানা আছে, একমাত্র হিটলারের আমলেই মানুষের পছন্দ-অপছন্দের ওপর এ ধরনের আঘাত এসেছিল। হাইনরিখ হিমালয়ের স্টর্মট্রুপার বাহিনী লাখ লাখ কপি বই পুড়িয়েছিল এ লক্ষ্যে। এ সরকার আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামবিরোধী ব্লগারদের সংরক্ষণ দিয়েছিল। অতি বিলম্বে গ্রেফতার করা হলেও তাদের জামিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কুকীর্তি ফাঁস করে দেয়ায় মাহমুদুর রহমানকে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় বিনা বিচারে জেলে রেখে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, আমার দেশ পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ করতে আন্দোলন করেছিল হেফাজতে ইসলাম নামে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের গাঁও-গেরামের বিশ্বাসী মানুষ। রাতের আঁধারে শাপলা চত্বরে ঘুমিয়ে থাকা সে লাখ লাখ মানুষের ওপর নির্বিচারে এক লাখ ৫২ হাজর গুলি চালিয়েছিল সরকারের ঘাতক বাহিনী। সংবিধান থেকে আল্লাহ ও ইসলামকে নির্বাসিত করে, সন্ত্রাস দমনের নামে হাজার হাজার টুপি-দাড়ি পরিহিত মুসলমানকে জেল-জুলুম দিয়ে এবং শেষত শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তার ওপর সজীব ওয়াজেদ জয়ের সর্বশেষ কুকীর্তিগুলো বাংলাদেশের মানুষের গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া বলেই মনে হবে।
জয় বনাম ববি
শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে চিনতে পারেননি। তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে। তার পুত্রের তো চিনতে পারার কথাই নয়। জয়ের শৈশব কেটেছে বাবা-মার সঙ্গে জার্মানিতে; তারপর মা ও খালার সঙ্গে দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে এবং 'র'-এর হেফাজতে। তার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তরপর আমেরিকায় গিয়ে তিনি মার্কিন রমণীকে বিয়ে করেছেন এবং মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি মায়ের চাইতেও বেশি এগিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন—আওয়ামী লীগকে আবার গদি দেয়া হলে যে যা চাইবে দিয়ে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে, নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য ব্যক্তি সজীব ওয়াজেদ জয় নন। প্রকাশ্যে কেউ কেউ এবং গোপনে অনেকেই বলছেন যে জয়ের চাইতে শেখ রেহানার পুত্র রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ডাকনাম ববি) ভবিষ্যত্ নেতৃত্বের জন্য অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি হবেন।
বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী সাত বছরে যার বুদ্ধি না হয়, সত্তর বছরেও তার বুদ্ধি হয় না। একথা সবাই বুঝবেন, দশ বছর গদিতে থেকে যারা সুশাসন করতে পারেনি, জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে ব্যর্থ হয়েছে, দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনেকখানি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে—আরও পাঁচ বছরের জন্য তাদের গদি দেয়া হলে বাংলাদেশ নামে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশ আরও একটি সিকিম হয়ে যাবে। সেটাই এই সরকারের লক্ষ্য, আর সেজন্যই এ সরকারকে গদিতে রাখতে ভারতের এত আগ্রহ। সে জন্যই তারা শেখ হাসিনার অধীনে তার নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন চায়। ফরমালিন ইনজেকশন দিয়ে বর্তমান সংসদ আর বর্তমান মন্ত্রিসভা দিয়ে গদি আঁকড়ে রাখাই আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে। সে জন্যই সংসদ ভেঙে দিতে সরকারের এত আপত্তি।
বাংলা প্রদাদে আরেকটা হিতোপদেশ আছে। ন্যাড়া বেল তলায় দু'বার যায় না। যাদের মাথায় চুল নেই, গাছ থেকে বেল মাথায় পড়লে তারা বেশি ব্যথা পায়। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বড় ব্যথা। বিশ্বাসভঙ্গতা আর অত্যাচার-নির্যাতন শেখ হাসিনার দুই দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষাদের কাহিনী। এই প্রধানমন্ত্রী আর এই শাসক দল দ্বিতীয়বার ক্ষমতা পেতে চায় ভাবতেই তাদের আতঙ্ক হচ্ছে। ভোট দিয়ে তারা কখনোই এই দল আর এই প্রধানমন্ত্রীকে আবার গদিতে বসাবে না।
(লন্ডন, ১৭-০৯-১৩)
serajurrahman34@gmail.com
প্রেমে ভাটা পড়তেও বেশি বিলম্ব হয়নি। দেখা গেল ওরা আর একসঙ্গে চলাফেরা করে না সব সময়। মৃদু গুঞ্জনও শুরু হয়ে গেল। প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হয় দু'জনে। ছেলেটি নাকি বৌকে পেটায় প্রায়ই। এই করেই চলছিল এক বছরের বেশি দিন। একদিন শুনলাম মেয়েটি কাজে ইস্তফা দিয়েছে এবং ভারতে বাবা-মার কাছে ফিরে যাচ্ছে। আরও কিছু দিন যায়। ওদের ঘনিষ্ঠ জনেরা বলাবলি শুরু করল, ছেলেটি নাকি বিরহে উন্মাদ-প্রায়, বৌকে আবার ফেরত পেতে চায়। প্রতিদিনই ফোন করে বৌকে। কিছুদিন পর সেও চলে গেল ভারতে।
ছেলেটির সঙ্গে এরপর আমার দেখা কয়েক বছর পরে। দিল্লিতে, দূরদর্শনের মহাপরিচালকের আপিসে। আমি গেছি সৌজন্য সাক্ষাতে, আর সে এসেছে ব্যবসায়িক তদবিরে। বৌর সঙ্গে সমঝোতা আর হয়নি। একবারের অভিজ্ঞতাই মেয়েটির জন্য যথেষ্ট হয়েছে। প্রাক্তন স্বামীকে সে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে চায়নি। ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা আর স্বামীর নৃশংসতাকে ক্ষমা করতে সে রাজি ছিল না। শেষে বৌ তাকে ডিভোর্স করে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। ছেলে চলে গেল বলিউডে। সেখানে সে ছায়াছবি তৈরি করেছে। নায়ক তার হারানো প্রেম ফিরে পাওয়ার জন্য যেসব অসম্ভব কাণ্ডকারখানা করেছে সে কাহিনী। দূরদর্শনে ধারাবাহিকভাবে সে ছবি প্রদর্শনের তদবির করতে এসেছে। আর হ্যাঁ, ছবির নাম দিয়েছে 'ফির এক বার'।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুমুল উত্সাহে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন, যদিও নির্বাচন আদৌ হবে কিনা সে সম্পর্কে অনেকেরই সন্দেহ। শেখ হাসিনার প্রচারাভিযানের মূল কথাও যেন 'ফির এক বার'। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি বলছেন আরও একবার ভোট দিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী করতে। তাহলে কী করবেন তিনি? প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে। তিনি পদ্মায় সেতু তৈরি করবেন (ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে যে সেতু তৈরির কাজ চার বছর বন্ধ আছে), ২০০৮ সালে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির যেগুলো অপূর্ণ আছে (প্রায় সবগুলো প্রতিশ্রুতি পালনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে) সেগুলো পূর্ণ করবেন এবং পূর্ণ গণতন্ত্রের চর্চা করবেন। কার্যত প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন, এতদিন যে পন্থায় তিনি দেশ শাসন করেছেন সেটা গণতন্ত্রসম্মত ছিল না।
পদে পদে গণতন্ত্রের বিরোধিতা
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। নয় বছর ধরে যেভাবে তিনি লে. জে. এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন (যার অধিকাংশ সময় হাসিনা এরশাদকে সমর্থন দিয়েছেন), কৃতজ্ঞ জাতি সেজন্য ভোট দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করেছিল। বিশ্বের বহু দেশের পর্যবেক্ষক এসেছিলেন সে নির্বাচন দেখতে। দেখে তারা চমত্কৃত হয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। যে নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারেননি সেটা আবার কিসের নির্বাচন হলো? তিনি সংসদ বর্জন করলেন, রাজনীতিকে পথে টেনে নামালেন, ১৭৩ দিন হরতাল করলেন, নির্বিবাদে খালেদা জিয়াকে দেশের কাজ করার সুযোগ দিতে তিনি অস্বীকার করলেন।
শেষত তিনি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দলে টেনে আন্দোলন শুরু করে দিলেন। অত্যন্ত সহিংস আর রক্তক্ষরা ছিল সে আন্দোলন। বহু মানুষ মারা গেছে, জখম হয়েছে আরও বেশি। সড়ক, সেতু ও বন্দর অবরোধ করা হয়েছে, রেললাইনের স্লিপার তুলে নেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতির অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচন দিয়েছিলেন এবং জয়লাভও করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সে নির্বাচন বর্জন করে, তাদের সহিংস আন্দোলন আরও রক্তঝরা হয়ে ওঠে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আশায় খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার তড়িঘড়ি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করে। সে বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বল্প ব্যবধানে আওয়ামী লীগ একক গরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং জামায়াতের চারজন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে।
সে নির্বাচনে ভোটারদের বিবেচনা ছিল দ্বিমুখী। তারা আশা করেছিল মেখ হাসিনা শান্ত হবেন, দেশে শান্তিপূর্ণ আর গণতান্ত্রিক শাসন চালু হবে। শত হলেও শেখ মুজিবের মেয়ে তো! কিন্তু রাজনীতিতে তারা যে স্থায়ী অশান্তির বীজ বপণন করল, ভোটাররা তখন বুঝতে পারেনি। মুজিবের কন্যার জন্য তাদের সহানুভূতি যে স্বৈরতন্ত্রী ক্ষমতালোভিতারই জন্ম দেবে, বুঝে ওঠা তাদের জন্য সম্ভব ছিল না।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা সহিংস ও সন্ত্রাসী পথে গদি চিরস্থায়ী করার দিকে মনোযোগ দিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি একটা সশস্ত্র ক্যাডার গঠন করেন। এই ক্যাডারদের গডফাদাররা দেশজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। ফেনীর জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরের আবু তাহের, ঢাকার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী মায়া এবং নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের নাম মানুষ তখন ত্রাসের সঙ্গে স্মরণ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রসঙ্গ তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের তিনি 'একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার' তাগিদ দিয়েছিলেন, তাদের পুরুষত্ব নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন। ক্ষমতাসীন সরকারপ্রধান কোনো দেশে প্রকাশ্যে এ জাতীয় সন্ত্রাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই।
হাসিনার বিজয় নির্বাচনের শর্ত নয়
এখন প্রমাণিত হয়েছে যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতার কোনো দাম নেই শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সার কাছে। তিনি যেন বলতে চান, আমি যা করি তোমরা সেটা করতে পারবে না, আর তিনি গদি না পেলে অন্য কাউকে তিনি দেশ শাসন করতে দেবেন না। ২০০৬ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার সংবিধান অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করে। আওয়ামী লীগ জানত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। শেখ হাসিনা লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলনের ডাক দিলেন কার্যত সংবিধানকে হত্যা করার লক্ষ্যে। রাজধানীর রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে একাধিক ডজন মানুষ হত্যা করা হয়। আবারও সড়ক ও বন্দর অবরোধ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, এমনকি রাষ্ট্রপতিকে গণভবনে কার্যত বাইরের জগত্ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বন্দি করে রাখা হয়।
পরে শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের যোগসাজশে এবং ভারতীয় হাইকমিশনার ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ষড়যন্ত্রে (বাংলাদেশের দু'জন পত্রিকা সম্পাদকসহ) একটা বর্ণচোরা সামরিক সরকার চালু হয়। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নির্বাসিত করার এবং বিএনপি দলকে ভেঙে দেয়ার সব রকম চেষ্টা হয়েছিল সে সরকারের আমলে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন স্বাভাবিক নির্বাচন ছিল না। বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশজোড়া একটা মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
কী করেছেন শেখ হাসিনা এই দ্বিতীয় মেয়াদে? নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দশ টাকা কেজি দরে মানুষকে চাল দেবেন তিনি, দুর্নীতি দমন করা হবে এবং মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের বিবরণ মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে, রাতারাতি বিদ্যুত্ সঙ্কটের অবসান এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটাও পূরণ করা হয়নি। মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি গোড়াতেই পরিত্যক্ত হয়। সরকারের এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি করার 'ওপেন জেনারেল লাইসেন্সই' যেন দিয়ে দেয়া হলো।
দুর্নীতির ফাদার-মাদার
প্রথমে শেয়ারবাজার লুট করে ৩৫ লাখ পরিবারকে ফতুর করে দেয়া হয়, পণ্যের বাজারকে মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের সিন্ডিকেটের ফাঁদে ফেলে মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা নিঃশেষ করে দেয়া হয়, সরকারের কাছের জনেরা ডেসটিনি, হলমার্ক ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সাধারণ মানুষের আমানত লুট করে নিরাপদেই আছেন, মন্ত্রী এবং তাদের পারিবারিক ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো 'কুইক রেন্টাল' কেলেঙ্কারিতে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। কিন্তু দুর্নীতির ফাদার-মাদার বিশ্বের মানুষ দেখেছে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছেন বিশ্বব্যাংক কোনো টাকাই দেয়নি, দুর্নীতি হলো কী করে? তার কথায় বিরল কিছু সত্যতা অবশ্যই আছে। বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে সে আশ্বাসে কানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানি দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে 'সাময়িকভাবে' আগাম দেয়া ৩৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া এ টাকাটা লাভালিন কোম্পানিকে ধার দেয়া তো সম্ভব হওয়ার কথা নয়। তাহলে এই দু'জন কর্মকর্তাও কি দুর্নীতিবাজদের তালিকায় পড়েন না?
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছিল। বলেছিল এদের বিচার ও শাস্তি হলে তারা আবার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কিছুতেই দুর্নীতিবাজদের পালের গোদা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন সম্বন্ধে তদন্ত কিংবা তার বিচার করতে রাজি হয়নি। বরং শেখ হাসিনা আবুল হোসেনকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। আবুল হোসেন কার হয়ে প্রক্সিতে দুর্নীতি করছিলেন সে সম্পকূে দেশের মানুষের কৌতূহল বেড়েই চলেছে। হাসিনা বলছেন আবার গদি পেলে তিনি সেতুটি তৈরি করবেন। কিন্তু আগের বারে যে সেতু তৈরি হলো না সে দায়িত্ব কে নেবে?
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ এক কথায় গণহত্যা। বস্তুত এ বাবত তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে সরকারের শত শত বিরোধী ও সমালোচককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের দলীয়কৃত পুলিশ ও র্যাব শতাধিক মানুষকে গুম ও হত্যা করেছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে সেই যে ১৭ মাস আগে র্যাব বনানী থেকে ধরে নিয়ে গেল, তারপর তার আর কোনো খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী ক্রুসেড
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ড দানের পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে প্রতিবাদ উঠেছিল সেটা দমন করতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বর্বর আক্রমণে কয়েকটি প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে। সর্বোপরি গত ৬ মে অতি ভোরে শাপলা চত্বরের গণহত্যায় বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ও তাদের দলীয়কৃত পুলিশ অতি বিলম্বে হত্যার কথা অস্বীকার করলেও তাদের কথা কেউ কোথাও বিশ্বাস করছে না। বিশ্ব মিডিয়ায় ও ব্লগে সে ঘটনার বহু ভিডিও ছবি দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বিরোধী দলগুলোর যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে সেগুলো তো আছেই। শেখ হাসিনা যতদিন এসব গণহত্যার জন্য ক্ষমা না চাইবেন ততদিন বাংলাদেশের কোনো মানুষ আবার তাকে গদি দেয়ার কথা ভাবতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
শেখ হাসিনার উক্তিগুলো আন্তরিক নয় বলেই একেক দিন একেক সুরে কথা বলছেন তিনি। বিগত কয়েক দিনে পুলিশ বাহিনীকে যেসব বিভিন্ন পরামর্শ তিনি দিয়েছেন তার মাথামুণ্ড অর্থ উপলব্ধি করা কি সাধারণ বুদ্ধির মানুষের পক্ষে সম্ভব? আবার গদি পেলে তিনি গণতন্ত্র দেবেন। অর্থাত্ গত দুই দফায় গণতন্ত্র তিনি দেননি। সেটা অবশ্যই সত্যি কথা। কিন্তু আবার গদি পেলে তিনি যে গণতান্ত্রিক ফেরেশতা হয়ে যাবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়? দুই-দুইবার তিনি বাংলাদেশের মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন, তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ভবিষ্যতে যে আবার তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না তার প্রমাণ কি? দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক দাবি অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে অস্বীকার করে তিনি প্রমাণ করে চলেছেন যে তার গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। নইলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির জন্য জাতির দাবি মেনে নিতেন, শান্তিতে দেশে নির্বাচন হতে পারত।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনা আমেরিকা থেকে 'যুবরাজ' জয়কে আমদানি করেছেন। কিছুদিন আগে জয় প্রায় ঘোষণাই করেছিলেন যে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। মুখে মুখে প্রশ্ন উঠছিল, আওয়ামী লীগ জয়ী হবেন বলে তার কাছে তথ্য আছে, একথা বলে তিনি আরও একটি মাস্টারপ্ল্যানের ইঙ্গিত দিয়েছেন কি? তারপর হঠাত্ করে একদিন মধ্যরাতে তিনি সপরিবারে আমেরিকায় চলে গেলেন। প্রশ্ন উঠল, তার এই আকস্মিক অন্তর্ধানের সঙ্গে ৯ সেপ্টেম্বর কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার প্রি-হিয়ারিংয়ের তারিখের কোনো সম্পর্ক আছে কি? আবার হঠাত্ করেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে আবির্ভূত হলেন। এবারে প্রশ্ন উঠছে, ওই প্রি-হিয়ারিং ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা।
এ যাবত যেসব কথাবার্তা তিনি বলেছেন তাতে তার আনাড়িপনাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? তার মা যে কোনোভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এ দেশ সম্পর্কে তার প্রকৃত জ্ঞান এখানেই সীমিত বলে সন্দেহ হচ্ছে। না জেনেশুনে উল্টোপাল্টা দাবি করছেন তিনি। তার নানার হত্যার পর নাকি শুধুই মাদরাসা তৈরি হচ্ছে, সেক্যুলার স্কুল নয়—তার দাবি বানানো কথা ছাড়া আর কিছুই নয়, কেননা এ সময়ের মধ্যে সেক্যুলার স্কুলের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।
জয় বলেছেন তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মসজিদে পাঠাচ্ছেন। অবশ্যই নামাজ আদায় করার জন্য নয়। তার মা এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মসজিদে যাতে বিরূপ কথাবার্তা কিংবা খোতবা পড়া না হয় সেটা তিনি নিশ্চিত করতে চান। আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের স্বভাব অনুযায়ী মাথা ফাটাফাটি হবে, নাকি শুধুই ভীতি প্রদর্শন করা হবে, সেটা শুধু ভবিষ্যতেই বলা যাবে। জয় আরও বলেছেন, মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা হ্রাস করার জন্য তিনি এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান এবং তারা ধর্মপ্রাণ। ভয় দেখিয়ে মসজিদে মুসল্লি এবং মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা হ্রাস করাকে অবশ্যই ইসলাম ধর্মের ওপর আরও একটি আঘাত বিবেচনা করা হবে।
আমার যতদূর জানা আছে, একমাত্র হিটলারের আমলেই মানুষের পছন্দ-অপছন্দের ওপর এ ধরনের আঘাত এসেছিল। হাইনরিখ হিমালয়ের স্টর্মট্রুপার বাহিনী লাখ লাখ কপি বই পুড়িয়েছিল এ লক্ষ্যে। এ সরকার আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও ইসলামবিরোধী ব্লগারদের সংরক্ষণ দিয়েছিল। অতি বিলম্বে গ্রেফতার করা হলেও তাদের জামিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কুকীর্তি ফাঁস করে দেয়ায় মাহমুদুর রহমানকে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় বিনা বিচারে জেলে রেখে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, আমার দেশ পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ করতে আন্দোলন করেছিল হেফাজতে ইসলাম নামে বাংলাদেশের সব অঞ্চলের গাঁও-গেরামের বিশ্বাসী মানুষ। রাতের আঁধারে শাপলা চত্বরে ঘুমিয়ে থাকা সে লাখ লাখ মানুষের ওপর নির্বিচারে এক লাখ ৫২ হাজর গুলি চালিয়েছিল সরকারের ঘাতক বাহিনী। সংবিধান থেকে আল্লাহ ও ইসলামকে নির্বাসিত করে, সন্ত্রাস দমনের নামে হাজার হাজার টুপি-দাড়ি পরিহিত মুসলমানকে জেল-জুলুম দিয়ে এবং শেষত শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তার ওপর সজীব ওয়াজেদ জয়ের সর্বশেষ কুকীর্তিগুলো বাংলাদেশের মানুষের গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া বলেই মনে হবে।
জয় বনাম ববি
শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে চিনতে পারেননি। তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে। তার পুত্রের তো চিনতে পারার কথাই নয়। জয়ের শৈশব কেটেছে বাবা-মার সঙ্গে জার্মানিতে; তারপর মা ও খালার সঙ্গে দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে এবং 'র'-এর হেফাজতে। তার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তরপর আমেরিকায় গিয়ে তিনি মার্কিন রমণীকে বিয়ে করেছেন এবং মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি মায়ের চাইতেও বেশি এগিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন—আওয়ামী লীগকে আবার গদি দেয়া হলে যে যা চাইবে দিয়ে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের ভেতরেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে, নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য ব্যক্তি সজীব ওয়াজেদ জয় নন। প্রকাশ্যে কেউ কেউ এবং গোপনে অনেকেই বলছেন যে জয়ের চাইতে শেখ রেহানার পুত্র রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ডাকনাম ববি) ভবিষ্যত্ নেতৃত্বের জন্য অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি হবেন।
বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী সাত বছরে যার বুদ্ধি না হয়, সত্তর বছরেও তার বুদ্ধি হয় না। একথা সবাই বুঝবেন, দশ বছর গদিতে থেকে যারা সুশাসন করতে পারেনি, জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে ব্যর্থ হয়েছে, দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অনেকখানি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে—আরও পাঁচ বছরের জন্য তাদের গদি দেয়া হলে বাংলাদেশ নামে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশ আরও একটি সিকিম হয়ে যাবে। সেটাই এই সরকারের লক্ষ্য, আর সেজন্যই এ সরকারকে গদিতে রাখতে ভারতের এত আগ্রহ। সে জন্যই তারা শেখ হাসিনার অধীনে তার নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন চায়। ফরমালিন ইনজেকশন দিয়ে বর্তমান সংসদ আর বর্তমান মন্ত্রিসভা দিয়ে গদি আঁকড়ে রাখাই আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে। সে জন্যই সংসদ ভেঙে দিতে সরকারের এত আপত্তি।
বাংলা প্রদাদে আরেকটা হিতোপদেশ আছে। ন্যাড়া বেল তলায় দু'বার যায় না। যাদের মাথায় চুল নেই, গাছ থেকে বেল মাথায় পড়লে তারা বেশি ব্যথা পায়। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বড় ব্যথা। বিশ্বাসভঙ্গতা আর অত্যাচার-নির্যাতন শেখ হাসিনার দুই দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষাদের কাহিনী। এই প্রধানমন্ত্রী আর এই শাসক দল দ্বিতীয়বার ক্ষমতা পেতে চায় ভাবতেই তাদের আতঙ্ক হচ্ছে। ভোট দিয়ে তারা কখনোই এই দল আর এই প্রধানমন্ত্রীকে আবার গদিতে বসাবে না।
(লন্ডন, ১৭-০৯-১৩)
serajurrahman34@gmail.com
__._,_.___