আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে বলে মনে করছে না বিএনপি। মাঠের আন্দোলনে অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছে দলটি। বিশেষ করে ঢাকা অভিমুখে 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' সফল না হওয়ায় এবং অবরোধ কর্মসূচি ক্রমেই ঢিলেঢালা হয়ে পড়ায় নেতা-কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
গতকাল বুধবার থেকে শুরু হওয়া ষষ্ঠ দফার অবরোধ কর্মসূচিতে কোথাও বিরোধী দলের কাউকে দেখা যায়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, তাঁরা শেষ আশা হিসেবে এখনো বিদেশি কূটনীতিকদের দিকে চেয়ে আছেন। তার পরও হরতাল-অবরোধের মতো গতানুগতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ভোটের দিন অন্য কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এসব নেতা আরও জানান, ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী দায়িত্বে মাঠে থাকবে। সশস্ত্র বাহিনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার পর নতুন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ভোটের আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। ভোট প্রতিহত করার মতো কোনো পরিস্থিতি তাঁরা তৈরি করতে পারেননি। এ কারণে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা ধরে নিয়েছেন, দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে। তা ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পর জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়াটাও বিএনপিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নেতারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এমন একজন নেতা বলেন, মাঠের আন্দোলন জোরদার না হলে কেবল কূটনীতিকদের ওপর ভরসা করে এ ধরনের রাজনৈতিক সমস্যার কখনো সমাধান হয়নি। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় অতীতে আওয়ামী লীগও অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নির্ভর করেছিল। তবে তারা একই সঙ্গে মাঠে শক্তি প্রদর্শন করে তৎকালীন সরকারকে চাপে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু বিএনপি সেভাবে মাঠের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলতে পারেনি।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা আশা করছি, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বন্ধে কূটনীতিকেরা সফল হবেন। তাঁরা দৌড়ঝাঁপ করছেন, বিরোধী দল ও সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন।' তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিত করাতে পারলে সংবিধান লঙ্ঘন না করেই আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।
এ রকম আশাবাদী নেতাদের মতে, তাঁরা এখনো আশা ছাড়েননি। কারণ, আন্তর্জাতিক মহল, বিদেশি কূটনীতিক ও দাতারা এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না। দেশের নাগরিক সমাজের প্রভাবশালী প্রতিনিধিরাও মনে করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হবে না। এতে করে দেশে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হবেই। এর আগে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, দশম নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। সরকার তার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই যেকোনো উপায়ে এ নির্বাচন করবে। 'অস্তিত্ব বলতে কী বোঝান'—জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, 'আমাদের এখানে রাজনীতি এক মারাত্মক খেলা। দর্শক অর্থাৎ জনগণ দেখে কে বেশি শক্তিশালী। তারা সেই দিকেই থাকে। একতরফা এই নির্বাচন করতে না পারলে শক্তির খেলায় সরকার হেরে যাবে।'
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তাঁদের আন্দোলন চলবে। যদি সরকার নির্বাচন স্থগিত করে আলোচনা শুরু করে, তবেই তাঁরা আন্দোলন বন্ধ করবেন।