বুধবার, ২৬ মার্চ ২০১৪, ১২ চৈত্র ১৪২০
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বর্তমান শ্রেণী-চরিত্র
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
প্রত্যেক দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ যতই জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত হোক, তার একটি শ্রেণী চরিত্র থাকে। ইংল্যান্ডে আটশ' বছর আগে রাজার হাত থেকে প্রজাদের স্বাধীনতা ও অধিকার উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ হয়েছিল এবং প্রজাদের অধিকার স্বীকার করে রাজা ম্যাগনা কার্টা নামে একটি সনদে সই দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই যুদ্ধেরও নেতৃত্ব ছিল মূলত তখনকার সামন্ত শ্রেণী তথা ব্যরন, লর্ড, এমনকি মাঝারি ভূস্বামীদের হাতে। ইংল্যান্ডের রাজা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু রাজতন্ত্র টিকে গেছে। এখনও ব্রিটেনে হাউস অব লর্ডস হাউস অব কমন্সের মাথায় ছড়ি ঘোরায়। এই হাউসটি বাতিলের প্রচেষ্টা এখনও সফল হয়নি।
ফরাসী বিপ্লবেও সাধারণ মানুষ এসে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্বের নামে যুক্ত হয়েছিল। তারা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও করেছিল। বেশি দিন টেকেনি। বিপ্লবে নেতৃত্ব ছিল রাজতন্ত্রের সভাসদ এবং সামরিক ও অসামরিক আমলাতন্ত্রের হাতে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। এমনকি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতা দখল করে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণারও সুযোগ পান। ফ্রান্স এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া শ্রেণীর হাতে।
আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধ মূলত ট্যাক্স-বিপ্লব বা করদাতাদের বিপ্লব। আমেরিকায় বসতিস্থাপনকারী সাদাদের ওপর (বেশির ভাগ ইংরেজ) বৈষম্যমূলকভাবে ইংল্যান্ডের সরকার করারোপ করায় তারা বিদ্রোহী হন এবং এই বিদ্রোহ স্বাধীনতার যুদ্ধে পরিণত হয়। এই স্বাধীনতার অন্যতম স্থপতি আব্রাহাম লিঙ্কন অবশ্য বলেছিলেন, তাঁরা আমেরিকায় জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা গঠিত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাতে তাঁরা সফল হননি।
কিছুকালের মধ্যে এই উঠতি ব্যবসায়ী শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায়। তৈরি হয় ওয়ালস্ট্রিট। অনেক দিন আগে হিউম্যানিস্ট আন্দোলনের প্রবর্তক এম এন রায় একটি চটি বই লিখেছিলেন, নাম 'হু রুল ইন আমেরিকা?' তাঁর মতে, হোয়াইট হাউস নয়, আমেরিকা শাসন করে ওয়ালস্ট্রিট। এই ওয়ালস্ট্রিট থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ব্যবসায়ীদের মনোপলি, কার্টেল, মাল্টি ন্যাশনাল ইত্যাদি, যা এখন কর্পোরেট, কার্টেলের ভূজবন্ধনে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমে পরিণত হয়েছে। এখন আমেরিকার সবচাইতে বড় শিল্প ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি। যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির মুনাফার ওপর মার্কিন অর্থনীতি নির্ভর করে, নির্ভর করে এই যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বাজার রক্ষার ওপর। আমেরিকাকে তাই যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির জন্য পৃথিবীর সর্বত্র যুদ্ধ বাধিয়ে রাখতে হয় এবং তার সম্প্রসারণ ঘটাতে হয়।
অধিক উদাহরণ দিতে যাব না। ঘরের কথায় ফিরে আসি। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই উপলক্ষে ঢাকার অন্য একটি দৈনিকে আমি একটি নিবন্ধন লিখেছি। শিরোনাম 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরিত্র ও চেহারা।' আমি এই নিবন্ধে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের সামগ্রিক আদর্শ ও দর্শন কী ছিল, যা তার চেহারায় প্রতিফলিত হতে না হতেই প্রতিবিপ্লবের ধাক্কায় ক্রমাগত পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছেÑ সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু এই যুদ্ধের নেতৃত্ব কোন্ শ্রেণীর হাতে ছিল সে সম্পর্কে আলোচনায় যেতে পারিনি। ফলে আলোচনাটি ওই নিবন্ধে অসমাপ্ত রয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি চমৎকার আদর্শ ও দর্শন ছিল। সেই আদর্শ ও দর্শন ছিল সেকুলারিজম ও সোশ্যালিজম। এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ঘটেছিল। এটাকে প্রকৃত অর্থেই জনযুদ্ধ বলা চলে। কিন্তু নেতৃত্ব ছিল একটি উঠতি ধনী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে, যাদের বলা চলে 'চিলড্রেন অব আইয়ুব ইরা' বা 'পাকিস্তানের শেষ আমলের আইয়ুব যুগের সন্তান।' আইয়ুব আমলে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষোভ দূর করার জন্য যে ছিটেফোটা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হয়, তাতে একটি আরবান নব্য ধনী শ্রেণী এবং গ্রামপর্যায়েও উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ হাতসাফাই করে একটি ভিলেজ নিউ রিচক্লাস গড়ে ওঠে। এরাই আইয়ুব আমলের শেষদিকে আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলনে এবং পরবর্তী ধাপে স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থন জানায়।
এদের লক্ষ্য ছিল, শেখ মুজিবের স্বাধীনতার আন্দোলনের ফলে পাকিস্তানের অবাঙালী বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে তারা স্বাধীন বাংলাদেশে নিজস্ব পুঁজির প্রতিযোগিতাবিহীন বাজার পাবে এবং আদমজী, বাওয়ানি, ইস্পাহানীদের তারাই স্থলাভিষিক্ত হবে। ফলে এই শ্রেণীটি যুদ্ধে আওয়ামী লীগের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় এবং নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয়। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, তখনকার বাংলাদেশের নতুন এলিট ক্লাসের শীর্ষ নেতা রেহমান সোবহান, ড. নূরুল ইসলাম, ড. মোশাররফ হোসেন, এমনকি ড. কামাল হোসেনও মুখে হার্ভার্ড সোশ্যালিজমের বুলি আউড়ে শেখ মুজিবের ছয় দফা আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সতর্ক ব্যবধান রক্ষা করে চলেছেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এঁরাই দ্রুত দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেন এবং প্রকৃত সমাজতন্ত্রের বদলে তাদের 'হার্ভার্ড সোশ্যালিজম' প্রতিষ্ঠার দ্বারা দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় নব্য ধনী শ্রেণীর কর্তৃত্ব শক্ত করার চেষ্টা চালান। দেশকে শুধু স্বাধীন করা নয়, একটি শোষণমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় মনোভাবকে তাঁরা প্রভাবিত করতে পারেননি এবং বঙ্গবন্ধুও বাঙালী নব্য ধনীদের আশা পূরণ করতে চাননি।
ফলে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু-বিরোধী চক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এ সম্পর্কে লিখিত এক প্রবন্ধে রেহমান সোবহান স্বীকার করেন, বাংলাদেশের নব্য ধনীরা বঙ্গবন্ধুকে 'ক্লাস-ট্রেইটর' বা তাদের শ্রেণী স্বার্থের বিশ্বাস হন্তা বলে বিবেচনা করতে শুরু করে। অর্থাৎ তাঁরা আশা করেছিলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার নব্য ধনীদের স্বার্থরক্ষা করে তাদের সহায়তায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। তিনি তা না করে নব্য ধনীদের শ্রেণী স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি বড় পদক্ষেপ দেশের নব্য ধনী, পুরনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর আমলাতন্ত্র এবং নতুন গড়ে ওঠা মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা উচ্চাভিলাষী ও পাকিস্তানীমনা অংশকে আতঙ্কিত করে তোলে। এই সিদ্ধান্ত হলো, বাকশাল পদ্ধতি ও নির্বাচিত জেলা গবর্নর প্রথা প্রবর্তন দ্বারা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ও ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করা। রাষ্ট্রীয়করণ নীতি ও কমান্ড অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে বৃহৎ পুঁজি বিকাশের পথ রুদ্ধ হওয়া। শ্রেণী স্বার্থভিত্তিক বহু দলের পরিবর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী ও সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে মোর্চা গঠন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। অভ্যন্তরীণ শত্রু নিপাতের জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন, যার ফলে মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা অংশের মধ্যে ভয় ঢোকে অথবা ভয় ঢোকানো হয় যে, সামরিক বাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছে। এটা ছিল নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা।
শেষ রাতের বর্বর হত্যাকা- দ্বারা এবং আওয়ামী লীগের ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল অংশটিকে সামনে খাড়া করে ক্ষমতা দখলের পরও নব্য ধনী শ্রেণী এবং মাত্র গড়ে ওঠা মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি ক্ষমতা ধরে রাখা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তাদের পেছনে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পোষকতা ছিল; তবু তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তিÑ সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানীমনা মৌলবাদীদের এবং বামপন্থীদের মধ্য থেকে চীন সমর্থক অংশকে (চীন তখন বাংলাদেশ-বিরোধী ভূমিকায় ছিল) রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে তাদের ক্ষমতার সহায়ক শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে মস্ক এ্যান্ড মিলিটারির সহায়তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার শ্রেণী চরিত্রটি বদলে যায়। আর্থসামাজিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অবাঙালী পাকিস্তানীদের শাসন ও শোষণের পরিবর্তে নব্য বিকশিত বাঙালী নব্য ধনী শ্রেণীর শাসন ও শোষণ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এই শাসন-শোষণের ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল পর ক্ষমতায় এসেও সেই ধারা পরিবর্তন করতে পারছে না। কারণ, আওয়ামী লীগের শ্রেণী চরিত্রও ইতোমধ্যে সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়েছে। লুটেরা নব্য ধনী শ্রেণীর একটা বড় অংশ দলটির মধ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সিভিল এ্যান্ড মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা অংশও এসে প্রভাব বিস্তার করেছে। দলের মধ্যে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোসকামী একটি অংশও আছে। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা ও সেক্যুলারিজমের কথা বলার জন্য নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার একক ব্যক্তিত্ব মাত্র কাজ করছে। তিনি চারদিক থেকে পরিবৃত। পিতার মতোই তিনি সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গী মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ত। কিন্তু তাঁর সহায়ক শক্তি প্রতিপক্ষের তুলনায় দুর্বল।
লক্ষ্য করার বিষয়, বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশে নব্য ধনীদের শ্রেণী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে (গণতন্ত্রের মুখোশে) ব্যর্থ করার জন্য বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তনে এগোতেই এলিট ক্লাসের হার্ভার্ড সোশ্যালিস্টরা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন, এমনকি পরে অক্সফোর্ডে ও হার্ভার্ডে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন; বর্তমানেও তারা হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরোধিতায় তেমনি এককাট্টা হয়েছেন। তবে এবার দেশ ছাড়েননি। দেশে বসেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সুজন, হিউম্যান রাইটস সংস্থা ইত্যাদি নামে বিদেশী অর্থপুষ্ট এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গঠিত অসংখ্য সংস্থা গড়ে তুলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে শোরগোল তুলে বর্তমান সরকারের বিরোধিতায় ব্যস্ত। উদ্দেশ্য, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও রাজনীতিতে নব্য ধনী শ্রেণীর স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষা। সে জন্য জঙ্গী মৌলবাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কেও তারা নীরব। তাদের সব সরব প্রতিবাদ শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে।
যে সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, সেই লক্ষ্যটি এখন হারিয়ে গেছে। দেশটির নামের সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্র কথাটি এখনও যুক্ত আছে, কিন্তু দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চরিত্রহীন পেটিবুর্জোয়াতন্ত্র; সন্ত্রাস ও দুর্নীতি যে তন্ত্রের মূলভিত্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার শ্রেণী চরিত্র এখন নব্য ধনী শ্রেণীর কর্তৃত্বপরায়ণ চরিত্র। উন্নত বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইনের শাসনও দেশটিতে প্রায় অনুপস্থিত অথবা অস্বীকৃত। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দ-দানও তাই বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আইনকেও তার যথাযথ পথে চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই শ্রেণী চরিত্র বদলাতে হলে শেখ হাসিনা একা কত লড়বেন? বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও হত্যার চেষ্টা কম হয়নি। তাঁর উচিত তাঁর দলের শ্রেণী-চরিত্র বদল করা। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। অন্যান্য ছোট-বড় এমন গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, যাদের মধ্যে লুটেরা শ্রেণীর কর্তৃত্ব এখনও বিস্তার লাভ করেনি। সুশীল সমাজের যে প্রগতিশীল অংশ এখনও কায়েমী স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায়নি, তাদের সংঘবদ্ধ করা। সর্বোপরি দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাকে তৃণমূল পর্যায়ের সকল মানুষকে উজ্জীবিত করা। এই ডাকে যে মানুষ উজ্জীবিত হয় তার প্রমাণ ভারতে পাওয়া গেছে। উপযুক্ত নেতৃত্ব পেলে বাংলাদেশের মানুষও নতুন মুক্তির ডাকে সাড়া দেবে। এই কাজটি দুঃসাধ্য, কিন্তু অসাধ্য নয়। এই মুহূর্তে এই দুঃসাধ্য কাজটি একমাত্র হাসিনা-নেতৃত্বের পক্ষেই করা সম্ভব। তিনি এই অসাধ্য সাধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর মতো নব্য ধনীদের দ্বারা হয়ত 'ক্লাস ট্রেইটর' বলে গালি খাবেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন।
লন্ডন মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০১৪ ॥
ফরাসী বিপ্লবেও সাধারণ মানুষ এসে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্বের নামে যুক্ত হয়েছিল। তারা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও করেছিল। বেশি দিন টেকেনি। বিপ্লবে নেতৃত্ব ছিল রাজতন্ত্রের সভাসদ এবং সামরিক ও অসামরিক আমলাতন্ত্রের হাতে তারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। এমনকি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতা দখল করে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণারও সুযোগ পান। ফ্রান্স এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া শ্রেণীর হাতে।
আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধ মূলত ট্যাক্স-বিপ্লব বা করদাতাদের বিপ্লব। আমেরিকায় বসতিস্থাপনকারী সাদাদের ওপর (বেশির ভাগ ইংরেজ) বৈষম্যমূলকভাবে ইংল্যান্ডের সরকার করারোপ করায় তারা বিদ্রোহী হন এবং এই বিদ্রোহ স্বাধীনতার যুদ্ধে পরিণত হয়। এই স্বাধীনতার অন্যতম স্থপতি আব্রাহাম লিঙ্কন অবশ্য বলেছিলেন, তাঁরা আমেরিকায় জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা গঠিত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাতে তাঁরা সফল হননি।
কিছুকালের মধ্যে এই উঠতি ব্যবসায়ী শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায়। তৈরি হয় ওয়ালস্ট্রিট। অনেক দিন আগে হিউম্যানিস্ট আন্দোলনের প্রবর্তক এম এন রায় একটি চটি বই লিখেছিলেন, নাম 'হু রুল ইন আমেরিকা?' তাঁর মতে, হোয়াইট হাউস নয়, আমেরিকা শাসন করে ওয়ালস্ট্রিট। এই ওয়ালস্ট্রিট থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ব্যবসায়ীদের মনোপলি, কার্টেল, মাল্টি ন্যাশনাল ইত্যাদি, যা এখন কর্পোরেট, কার্টেলের ভূজবন্ধনে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমে পরিণত হয়েছে। এখন আমেরিকার সবচাইতে বড় শিল্প ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি। যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির মুনাফার ওপর মার্কিন অর্থনীতি নির্ভর করে, নির্ভর করে এই যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বাজার রক্ষার ওপর। আমেরিকাকে তাই যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির জন্য পৃথিবীর সর্বত্র যুদ্ধ বাধিয়ে রাখতে হয় এবং তার সম্প্রসারণ ঘটাতে হয়।
অধিক উদাহরণ দিতে যাব না। ঘরের কথায় ফিরে আসি। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই উপলক্ষে ঢাকার অন্য একটি দৈনিকে আমি একটি নিবন্ধন লিখেছি। শিরোনাম 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরিত্র ও চেহারা।' আমি এই নিবন্ধে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের সামগ্রিক আদর্শ ও দর্শন কী ছিল, যা তার চেহারায় প্রতিফলিত হতে না হতেই প্রতিবিপ্লবের ধাক্কায় ক্রমাগত পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছেÑ সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু এই যুদ্ধের নেতৃত্ব কোন্ শ্রেণীর হাতে ছিল সে সম্পর্কে আলোচনায় যেতে পারিনি। ফলে আলোচনাটি ওই নিবন্ধে অসমাপ্ত রয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি চমৎকার আদর্শ ও দর্শন ছিল। সেই আদর্শ ও দর্শন ছিল সেকুলারিজম ও সোশ্যালিজম। এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ঘটেছিল। এটাকে প্রকৃত অর্থেই জনযুদ্ধ বলা চলে। কিন্তু নেতৃত্ব ছিল একটি উঠতি ধনী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে, যাদের বলা চলে 'চিলড্রেন অব আইয়ুব ইরা' বা 'পাকিস্তানের শেষ আমলের আইয়ুব যুগের সন্তান।' আইয়ুব আমলে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষোভ দূর করার জন্য যে ছিটেফোটা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া হয়, তাতে একটি আরবান নব্য ধনী শ্রেণী এবং গ্রামপর্যায়েও উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ হাতসাফাই করে একটি ভিলেজ নিউ রিচক্লাস গড়ে ওঠে। এরাই আইয়ুব আমলের শেষদিকে আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলনে এবং পরবর্তী ধাপে স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থন জানায়।
এদের লক্ষ্য ছিল, শেখ মুজিবের স্বাধীনতার আন্দোলনের ফলে পাকিস্তানের অবাঙালী বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে তারা স্বাধীন বাংলাদেশে নিজস্ব পুঁজির প্রতিযোগিতাবিহীন বাজার পাবে এবং আদমজী, বাওয়ানি, ইস্পাহানীদের তারাই স্থলাভিষিক্ত হবে। ফলে এই শ্রেণীটি যুদ্ধে আওয়ামী লীগের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় এবং নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয়। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, তখনকার বাংলাদেশের নতুন এলিট ক্লাসের শীর্ষ নেতা রেহমান সোবহান, ড. নূরুল ইসলাম, ড. মোশাররফ হোসেন, এমনকি ড. কামাল হোসেনও মুখে হার্ভার্ড সোশ্যালিজমের বুলি আউড়ে শেখ মুজিবের ছয় দফা আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সতর্ক ব্যবধান রক্ষা করে চলেছেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এঁরাই দ্রুত দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেন এবং প্রকৃত সমাজতন্ত্রের বদলে তাদের 'হার্ভার্ড সোশ্যালিজম' প্রতিষ্ঠার দ্বারা দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় নব্য ধনী শ্রেণীর কর্তৃত্ব শক্ত করার চেষ্টা চালান। দেশকে শুধু স্বাধীন করা নয়, একটি শোষণমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর অনমনীয় মনোভাবকে তাঁরা প্রভাবিত করতে পারেননি এবং বঙ্গবন্ধুও বাঙালী নব্য ধনীদের আশা পূরণ করতে চাননি।
ফলে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু-বিরোধী চক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এ সম্পর্কে লিখিত এক প্রবন্ধে রেহমান সোবহান স্বীকার করেন, বাংলাদেশের নব্য ধনীরা বঙ্গবন্ধুকে 'ক্লাস-ট্রেইটর' বা তাদের শ্রেণী স্বার্থের বিশ্বাস হন্তা বলে বিবেচনা করতে শুরু করে। অর্থাৎ তাঁরা আশা করেছিলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার নব্য ধনীদের স্বার্থরক্ষা করে তাদের সহায়তায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। তিনি তা না করে নব্য ধনীদের শ্রেণী স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি বড় পদক্ষেপ দেশের নব্য ধনী, পুরনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর আমলাতন্ত্র এবং নতুন গড়ে ওঠা মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা উচ্চাভিলাষী ও পাকিস্তানীমনা অংশকে আতঙ্কিত করে তোলে। এই সিদ্ধান্ত হলো, বাকশাল পদ্ধতি ও নির্বাচিত জেলা গবর্নর প্রথা প্রবর্তন দ্বারা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ও ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করা। রাষ্ট্রীয়করণ নীতি ও কমান্ড অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে বৃহৎ পুঁজি বিকাশের পথ রুদ্ধ হওয়া। শ্রেণী স্বার্থভিত্তিক বহু দলের পরিবর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী ও সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে মোর্চা গঠন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। অভ্যন্তরীণ শত্রু নিপাতের জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন, যার ফলে মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা অংশের মধ্যে ভয় ঢোকে অথবা ভয় ঢোকানো হয় যে, সামরিক বাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছে। এটা ছিল নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা।
শেষ রাতের বর্বর হত্যাকা- দ্বারা এবং আওয়ামী লীগের ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল অংশটিকে সামনে খাড়া করে ক্ষমতা দখলের পরও নব্য ধনী শ্রেণী এবং মাত্র গড়ে ওঠা মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি ক্ষমতা ধরে রাখা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তাদের পেছনে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পোষকতা ছিল; তবু তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তিÑ সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানীমনা মৌলবাদীদের এবং বামপন্থীদের মধ্য থেকে চীন সমর্থক অংশকে (চীন তখন বাংলাদেশ-বিরোধী ভূমিকায় ছিল) রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে তাদের ক্ষমতার সহায়ক শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে মস্ক এ্যান্ড মিলিটারির সহায়তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার শ্রেণী চরিত্রটি বদলে যায়। আর্থসামাজিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অবাঙালী পাকিস্তানীদের শাসন ও শোষণের পরিবর্তে নব্য বিকশিত বাঙালী নব্য ধনী শ্রেণীর শাসন ও শোষণ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এই শাসন-শোষণের ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল পর ক্ষমতায় এসেও সেই ধারা পরিবর্তন করতে পারছে না। কারণ, আওয়ামী লীগের শ্রেণী চরিত্রও ইতোমধ্যে সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়েছে। লুটেরা নব্য ধনী শ্রেণীর একটা বড় অংশ দলটির মধ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সিভিল এ্যান্ড মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির একটা অংশও এসে প্রভাব বিস্তার করেছে। দলের মধ্যে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোসকামী একটি অংশও আছে। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা ও সেক্যুলারিজমের কথা বলার জন্য নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার একক ব্যক্তিত্ব মাত্র কাজ করছে। তিনি চারদিক থেকে পরিবৃত। পিতার মতোই তিনি সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গী মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ত। কিন্তু তাঁর সহায়ক শক্তি প্রতিপক্ষের তুলনায় দুর্বল।
লক্ষ্য করার বিষয়, বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশে নব্য ধনীদের শ্রেণী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে (গণতন্ত্রের মুখোশে) ব্যর্থ করার জন্য বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তনে এগোতেই এলিট ক্লাসের হার্ভার্ড সোশ্যালিস্টরা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন, এমনকি পরে অক্সফোর্ডে ও হার্ভার্ডে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন; বর্তমানেও তারা হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরোধিতায় তেমনি এককাট্টা হয়েছেন। তবে এবার দেশ ছাড়েননি। দেশে বসেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সুজন, হিউম্যান রাইটস সংস্থা ইত্যাদি নামে বিদেশী অর্থপুষ্ট এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গঠিত অসংখ্য সংস্থা গড়ে তুলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে শোরগোল তুলে বর্তমান সরকারের বিরোধিতায় ব্যস্ত। উদ্দেশ্য, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও রাজনীতিতে নব্য ধনী শ্রেণীর স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষা। সে জন্য জঙ্গী মৌলবাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কেও তারা নীরব। তাদের সব সরব প্রতিবাদ শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে।
যে সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, সেই লক্ষ্যটি এখন হারিয়ে গেছে। দেশটির নামের সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্র কথাটি এখনও যুক্ত আছে, কিন্তু দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চরিত্রহীন পেটিবুর্জোয়াতন্ত্র; সন্ত্রাস ও দুর্নীতি যে তন্ত্রের মূলভিত্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার শ্রেণী চরিত্র এখন নব্য ধনী শ্রেণীর কর্তৃত্বপরায়ণ চরিত্র। উন্নত বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইনের শাসনও দেশটিতে প্রায় অনুপস্থিত অথবা অস্বীকৃত। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দ-দানও তাই বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আইনকেও তার যথাযথ পথে চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই শ্রেণী চরিত্র বদলাতে হলে শেখ হাসিনা একা কত লড়বেন? বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও হত্যার চেষ্টা কম হয়নি। তাঁর উচিত তাঁর দলের শ্রেণী-চরিত্র বদল করা। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। অন্যান্য ছোট-বড় এমন গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, যাদের মধ্যে লুটেরা শ্রেণীর কর্তৃত্ব এখনও বিস্তার লাভ করেনি। সুশীল সমাজের যে প্রগতিশীল অংশ এখনও কায়েমী স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায়নি, তাদের সংঘবদ্ধ করা। সর্বোপরি দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাকে তৃণমূল পর্যায়ের সকল মানুষকে উজ্জীবিত করা। এই ডাকে যে মানুষ উজ্জীবিত হয় তার প্রমাণ ভারতে পাওয়া গেছে। উপযুক্ত নেতৃত্ব পেলে বাংলাদেশের মানুষও নতুন মুক্তির ডাকে সাড়া দেবে। এই কাজটি দুঃসাধ্য, কিন্তু অসাধ্য নয়। এই মুহূর্তে এই দুঃসাধ্য কাজটি একমাত্র হাসিনা-নেতৃত্বের পক্ষেই করা সম্ভব। তিনি এই অসাধ্য সাধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর মতো নব্য ধনীদের দ্বারা হয়ত 'ক্লাস ট্রেইটর' বলে গালি খাবেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন।
লন্ডন মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০১৪ ॥
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ মার্চ ২০১৪, ১২ চৈত্র ১৪২০
Also Read:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরিত্র ও চেহারা
__._,_.___