লাশের গাড়ি থেকে ফেরা নাসিমা সাংসদ হচ্ছেন
বরগুনা প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Mar 2014 17:03 BdST Updated: 08 Mar 2014 19:03 BdST
একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত বরগুনার পাথরঘাটার মেয়ে নাসিমা ফেরদৌসী আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হতে চলেছেন।
হাজারো স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা ও পঙ্গুত্ব নিয়ে পথচলা এই নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। রোববার মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন।
"লাশের গাড়িতে নড়েচড়ে না উঠলে আর কোনোদিন পৃথিবীর আলো বাতাস দেখা হত না, নেয়া হত না হাসপাতালে। সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে অকালেই চলে যেতে হত," বলছিলেন তিনি।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর (উত্তর) শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসিমা।
চিরতরে পঙ্গু হয়ে কখনো হুইল চেয়ারে, কখনো-বা লাঠি তার চলার সঙ্গী। স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা কেড়ে নিয়েছে তার ঘুম।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জালাল উদ্দিনের মেয়ে নাসিমার বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ পরিমণ্ডলে, এক সময় নিজেও জড়ান এ দলের রাজনীতিতে।
বিয়ের পরে ব্যবসায়ী স্বামী হারুন অর রশিদের সঙ্গে ঢাকা চলে যান। ১৯৭৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
২১ অগাস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাসিমা বলেন, আইভি রহমান, মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে মিছিল করে সেদিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসেছিলেন।
"চারদিক থেকে মিছিল আসার পর শেখ হাসিনা ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্য শেষ হবার আগেই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল, চারিদিকে আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে।"
এরই মধ্যে তিনি টের পান তার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে ঝড়ছে রক্ত। চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন, সবারই একই অবস্থা।
এরপর কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তা নিজেও জানেন না নাসিমা। অজ্ঞান অবস্থায় তাকেও তোলা হয় লাশের ট্রাকে।
কিন্তু নড়েচড়ে ওঠার পরে পুলিশ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফেলে রাখা হয়, হাসপাতালের করিডোরে।
একজন মানুষ এসে তার কাছে আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর চাইলে ছেলের নম্বর দেয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
সে সময় চিকিৎকরা জানান, নাসিমাকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে ১০ ব্যাগ রক্ত লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে ঘুরে ছেলে রক্তদাতাদের নিয়ে আসেন। রাতে কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।
পরদিন সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। শরীর থেকে কিছু স্প্লিন্টার বের করা হয়।
তবে কিছুদিন পর নাসিমার পায়ে পচন ধরে। আওয়ামী লীগের খরচে দিল্লি পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য, আড়াই মাস পর দেশে ফেরেন তিনি। এরপর আরো ৩ বার দিল্লি গেলেও পঙ্গুত্ব ঠেকাতে পারেননি।
এত যন্ত্রণার মাঝেও নাসিমার সান্ত্বনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পাওয়ায়। তবে এখনো আশা, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদেরও ফাঁসি হবে।
__._,_.___