Date: Thu, 10 Apr 2014 11:27:59 +0600
Subject: Re: ছাত্রলীগ ভয়ঙ্কর
From: bdmailer@gmail.com
To:
মদ নিয়ে ছাত্রলীগের কোপাকোপি
মদ বিক্রিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়েছে ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপ। আহত মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মেহেদী হাসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর। http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTg1ODg=&s=MTA=
মদ বিক্রিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়েছে ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপ। আহত মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মেহেদী হাসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর। http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTg1ODg=&s=MTA=
2014-04-09 10:45 GMT+06:00 Isha Khan <bdmailer@gmail.com>:
ছাত্রলীগ ভয়ঙ্কর
দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে দলীয় ক্যাডারদের বেপরোয়া সহিংসতায় দেশের বেশ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে -
সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের যাত্রার শুরুতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারে দলীয় ক্যাডারদের বেপরোয়া সহিংসতায় দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। সংঘাত-সংঘর্ষের এই উত্তাপ দ্রুত চারদিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সহসাই এই ছাত্র সংগঠনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সারাদেশের শিক্ষাঙ্গন অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং এর ফলে সেশনজটের পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর ধস নামারও আশঙ্কা রয়েছে, যার ভয়াবহ খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও চরম ইমেজ সংকটে পড়বে।
এদিকে, ছাত্রলীগ আবারো সহিংস চেহারায় ফিরে আসায় ক্ষুব্ধ খোদ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের ভাষ্য, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছু ভালো পদক্ষেপ নেয়ায় সরকার যখন গা-ঝাড়া দিতে শুরু করেছে, ঠিক তখন ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকা- সরকারের এসব অর্জনকে মস্নান করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে ডুবানোর জন্য ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট_ এমন আলোচনা দলীয় হাই কমান্ডে চলছে। যে কোনো মূল্যে অতি দ্রুত বেপরোয়া ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলেও তারা মন্তব্য করেন।
ছাত্রলীগের আকস্মিক পুরনো ভয়ঙ্কর চেহারায় ফিরে আসার নেপথ্য কারণগুলো চিহ্নিত করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে। তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কর্মকা-ে নিষ্ক্রিয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অর্থলিপ্সায় পেয়ে বসেছে। বিগত টার্মের মতো এবারো তারা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ নানা রকম অপকর্মের মধ্য দিয়ে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়তে চাইছে। আর এজন্য তাদের কাছে ক্ষমতার আধিপত্য মুখ্য হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেয়াড়া হয়ে ওঠার জন্য র্যাব-পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন এবং দলীয় গডফাদারদের দায়ী করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ না হলে লাগাম টেনে ধরা সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। দলের নেতৃত্ব সশস্ত্র ক্যাডারদের হাতে তুলে দেয়া, সাংগঠনিক কর্মকা-ে স্থবিরতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করাকেও এজন্য দায়ী করেন গোয়েন্দারা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ছাত্রলীগ পুরোপুরি অভিভাবকহীন। তাদের অপকর্ম দেখার যেমন কেউ নেই, তেমনি সাংগঠনিক কার্যক্রমও মূল দলের কেন্দ্র থেকে যথাযথভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে না। অথচ রাজনৈতিক শক্তির মহড়ায় তারাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এ কারণেই ছাত্রলীগ ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তারা বর্তমানে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও রেহাই পাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের বেয়াড়াপনায় দলের অভ্যন্তরে যেভাবে দ্রুত কোন্দল ছড়াচ্ছে, তাতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসাইন যায়যায়দিনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলতে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসগুলোতে সেই অবস্থা বহাল নেই। ছাত্রলীগকর্মীরা একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থির করে তুলেছে। এতে বিদ্যাচর্চা তো বিঘি্নত হচ্ছেই, সেই সঙ্গে প্রশাসনিক দিক দিয়েও কর্তৃপক্ষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা তাদের আছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
নাসিম আখতার জানান, বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছিল। ছাত্রলীগের এই অপকর্ম দীর্ঘস্থায়ী হলে আবারো সেই অবস্থার পুনারাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি জানান, গুটিকয়েক উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রের কারণে এসব অপকর্ম ঘটছে। তাদের রুখতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সবাই একযোগে কাজ করলেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উচ্চমানের মতোই পরিচালনা করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ছাত্রলীগের অপকর্ম যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করার উদ্দেশ্যই ছাত্র সংগঠনটির জন্ম হয়েছে। এতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একদিকে যেমন অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে পুরো জাতি নেতৃত্বশূন্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উপাচার্যদের ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল ইসলাম জানান, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে উপাচার্যরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মাথাব্যথা হলে মাথা কাটা যাবে না; ব্যথার ওষুধ লাগাতে হবে।
তিনি আরো জানান, দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকে শুরু হওয়া এই তা-ব ক্রমান্বয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শুধু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায়ই ফাটল ধরা শুরু হবে।
ছাত্রলীগের কর্মকা- পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার ২৮ দিনের মাথায় সরকারকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করায় ছাত্রলীগ। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামালা চালায় তারা। এ ঘটনায় সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ফুঁসে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনার পরপরই যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনেকটা একই সুরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি যেসব ভয়ঙ্কর অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা গত ২ ফেব্রুয়ারি রাবিতে মহড়া দিয়েছিল, সেগুলো পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তিনজনকে বহিষ্কার করা হলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে এখনো কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ পরিস্থিতিতে রাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু তাও আমলে নেয়নি সরকার।
গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে এই অন্যায় হামলা চালায় তারা। ২২ ফেব্রুয়ারি খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ প্রাঙ্গণে সেখানকার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দল থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তাদেরই অন্তত ২২ জন কর্মী আহত হয়। এক কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ২৪ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
গত ২ মার্চ বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।
গত ৩১ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি ও জিনেটিক্স বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র সায়াদ ইবনে মোমতাজকে আশরাফুল হক হলের একটি কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে পেটায় ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। ১ এপ্রিল তিনি মারা যান। মোমতাজ আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
সায়াদ হত্যাকা-ে ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলে দাবি করলেও তার বড় ভাই মোয়াজ ইবনে মোমতাজ জানান, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সায়াদ তাকে টেলিফোনে জানিয়েছিল, ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে মেরেছে।
সায়াদের বন্ধুরা জানান, আসন্ন অনুষদীয় সহ-সভাপতি নির্বাচন এবং ক্লাস টেস্ট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সায়াদের সহপাঠী একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কু-ু ও রোকনুজ্জামানের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। এর জের ধরে তাকে হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রশিবিরকর্মী বলে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, সায়াদের হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা, আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় তাদের কয়েকদিন ধরেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এখন হল প্রশাসনও এতে বাধা দিচ্ছে।
গত ৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দকে কে বা কারা গুলি করে হত্যা করে। ছাত্রলীগ শুরু থেকেই এই খুনের দায় শিবিরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করলেও ওই হলের আবাসিক ছাত্ররা একই সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীর দিকে আঙুল তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, হলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে রুস্তম খুন হয়েছেন।
নতুন কমিটির পদ ভাগাভাগি এবং কলেজে চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের কর্তৃত্ব নিয়ে ৬ এপ্রিল বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দু'পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ নেতাকর্মীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। এর মধ্য ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, ছাত্রলীগের তা-বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৭ এপ্রিল মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগকর্মীরা প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর, ইয়াসির ও মাসুদকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ৩০ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক উপ-সম্পাদক দিদারুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগকর্মীরা লোহার রড, পাইপ এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল আমীন বর্ষণকে বেধড়ক মারধর করে।
গত ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন সমর্থিত উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক বশিরুল হকের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রায় ২৩ জন ছাত্রলীগকর্মী শহীদ মিনারের পাশে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে স্থাপন করা 'ঢাকা বিরিয়ানি হাউজ'-এ ৫ হাজার টাকার বিরিয়ানি খেয়ে ৫০০ টাকা পরিশোধ করে চলে যায়। শহীদ সালাম বরকত হলের ছাত্রলীগকর্মীরা এ ঘটনায় বাধা দিতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এ ঘটনার পরদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেনসহ ৪ নেতাকে বহিষ্কার করে। তবে ৪ এপ্রিল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায়ের বিরুদ্ধে মীর মশাররফ হোসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে নিয়ে রাত যাপনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মহিতোষকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বরিশালের স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দশম জাতীয় নির্বাচনের পরপরই আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বরিশাল ছাত্রলীগ। সেখানে দলের নেতাকর্মীরা হাসানাত ও হিরণ_ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে টেন্ডারবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে মুরবি্বয়ানা দেখাতে গিয়ে ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনীর হাতে মার খেয়েছেন যুবলীগের একজন নেতা। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছে ছাত্রদলের তিনজন কর্মী। গত ২১ জানুয়ারি শিবির সন্দেহে শেবাচিম শাখা ছাত্রলীগ একজন ছাত্রকে বেদম প্রহার করে পুলিশে তুলে দেয়। ১৮ জানুয়ারি শেবাচিম শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ দুই শিবিরকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে।
গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নাসির হায়দার বাবুলকে মারধর করার পর গলায় জুতার মালা পরিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আলমের স্মরণসভায় যোগ দেয়ার জন্য দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে পেঁৗছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপরই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য নাসির হায়দার বাবুল গাড়ি থেকে নামা মাত্রই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা তাকে ঘিরে ধরে এবং মারধর করে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এমন ঔদ্ধত্য প্রায় সব জায়গায়ই চলছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাই তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। তবে মান-মর্যাদার ভয়ে তাদের অনেকেই মার খেয়ে মার হজম করে নিয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ মুখোমুখি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=801&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=0&archiev=yes&arch_date=09-04-2014
__._,_.___