পোশাক শিল্পে এখন ধস নামতে শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- এ দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে শিল্পটি ঠিক পাটের মতো করুণ পরিণতি বরণ করবে। গত ৬ বছরে নিট, হোসিয়ারি, ওভেন গার্মেন্ট মিলে প্রায় ৬ হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর এসব বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এসব গার্মেন্ট মালিক পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছে। ঋণের দায় শোধ করতে না পেরে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চলতি ২০১৪ সালের মধ্যে অ্যালায়েন্স ৫০০ এবং অ্যাকর্ড ১৭০০ কারখানা পরিদর্শনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ'র বক্তব্য হলো, কমপ্ল্যায়েন্সের নামে দেশের পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। নিরাপত্তার নাম করে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে দেশের অনেক পোশাক শিল্প-কারখানা। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে অনেক শ্রমিক। এ বিষয়ে সরকার যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই শিল্প চরম হুমকির মুখে পড়বে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশী পোশাক ক্রেতারা। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, সে-ই যে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ রফতানি আদেশ ফিরিয়ে নিয়েছে বিদেশী ক্রেতারা তা এখনো বহাল। সেগুলো এখনকার পরিবেশেও আর ফিরে আসেনি। শুধু তাই নয়, বরং এখনো নিয়মিত অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর এগুলো চলে যাচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে। বাংলাদেশের ছোট ছোট অ্যাপারেলগুলোও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, শুধু ২০১৩ সালে পোশাক শিল্প খাতের ৫০০০ কোটি টাকার অর্ডার চলে গেছে ভারতে। এরই মধ্যে ভারত অতি চাতুরতার সাথে বাংলাদেশের এই শিল্প বাজার তাদের দেশের ভাগ্য উন্নয়নের কাজে লাগানোর জন্য বেশ কিছু অর্থপূর্ণ ও গুরত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে; যেমন- সে দেশের পোশাক শিল্প রপ্তানিকে বাংলাদেশের প্রতিযোগী করার জন্য তাদের সরকার এই শিল্পকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে বড় আকারের নগদ অনুদান অনুমোদন করেছে। অথচ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে মাত্র ০.২৫ শতাংশ হারে নগদ অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপরন্তু যেখানে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করা দরকার এবং একই সাথে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পণ্য পরিবহন ভাড়া যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে এই সহায়তা হাস্যস্পদ ও অতি নগণ্য। বিদ্যুৎ-গ্যাসের অপ্রতুলতা এবং অনিয়মিত সরবরাহ উৎপাদনকে দর্শনীয়ভাবে ব্যাহত করছে এবং একই সাথে বিদ্যুতের ভোল্টেজের ক্রমাগত উঠানামার ফলে শিল্পের যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং মারাত্মক ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিচ্ছে। ফলে দৈনিক উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। একই সাথে যন্ত্রপাতির জীবনকাল প্রচুর পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে- ফলে পোশাক মালিকদের ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এ খাত ধ্বংসে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের কতিপয় সদস্য। ২০১৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ করার পর থেকে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, শ্রমিকরা দাবি আদায়ের নামে আন্দোলন ধর্মঘট করে কারখানা বন্ধ রাখছে বা উৎপাদন ব্যাহত করছে। কিন্তু শ্রমিকদের বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। কারণ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকরা বর্তমান যে মজুরি পাচ্ছে তাও পাবে না এবং আরো বেশি না খেয়ে থাকবে। অপরদিকে সরকার শ্রমিকদের প্রতি আগ্রহ দেখালেও শ্রমিকদের কারখানার প্রতি নজর দিচ্ছে না। সরকার যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করে, বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন ও সস্তা করে, তাহলে গার্মেন্টস উৎপাদন খরচ কম পড়বে এবং তখন মালিকদের জন্য বেতন-ভাতা বাড়ানো ও নিয়মিত পরিশোধ সহজ হবে। সরকারি সহায়তা না থাকায় বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার অবসান দূরে থাক, আরো জটিল হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিদেশী সুযোগ সন্ধানীদের ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় ভালো অবস্থানে থাকা ভারতীয় কুচক্রীরা উঠেপড়ে লেগেছে এর বিরুদ্ধে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে একের পর এক নামকরা কারখানা তারা বন্ধ করে দিচ্ছে, আবার কৌশলে কিনেও নিচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ গ্যাস উৎপাদনের অগ্রগতির সাফাই গাইছে; কিন্তু গার্মেন্টস খাতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকারের এমন কোনো প্রস্তুতিও দেখা যাচ্ছে না যে, তারা পোশাক শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে অদূরভবিষ্যতে। পোশাক শিল্পবান্ধব একটি পরিবেশ গড়ে তোলা হবে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পাট শিল্পের ভাগ্যবরণ করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে পোশাক খাত। এ অবস্থায় মালিক, শ্রমিক ও নাগরিকদের দায়িত্ব এ শিল্প রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। এ শিল্প খাত রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। |
__._,_.___