Banner Advertiser

Thursday, September 4, 2014

[mukto-mona] জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ১৩ (সমাপ্ত) )



শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২১ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ৩  (সমাপ্ত) )
মুনতাসীর মামুন
(৩ সেপ্টেম্বরের পর)
জিয়া সাদরে ডালিমকে গ্রহণ করলেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, "আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখো। তিনি সবকিছু মঙ্গলের জন্যই করেন। এটি মাত্র শুরু, আরও, 'many more heads will roll.." তার পর যোগ করলেন,- "we must keep in tuch and you can count on me for every thing just as before. For any personal need my doors are always open to you." উত্তরে ধন্যবাদ জানিয়ে ডালিম বললেন, " But you must remain alert as you are out last hopes. Future will say what is there in our common destiny." [ পৃ. ৪৪৩] ভাগ্য তাদের আবার একত্রিত করেছিল। ডালিম অবশ্য সেদিন সন্ধ্যায়ই ৩২ নং গিয়েছিলেন। কর্নেল হুদাও সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হতেই হুদা তার পদত্যাগপত্রের একটি কপি তার সামনে রেখে বললেন, অফিসিয়াল চিঠি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তার কাছে পৌঁছে যাবে। বঙ্গবন্ধু বললেন, "তোমরা-সবকিছু একতরফাভাবে দেখ। আমার দিকটা একটু চিন্তা কর না। একদিকে আমার পার্টি অন্যদিকে ওরা। আমি কি করুম। পার্টির কাছে আমি বাধা, পার্টি ছাড়া তো আমার চলব না।" [পৃ.৪৪৪] চাকরি যাওয়ার পর ডালিম ব্যবসা শুরু করেন। এটি নিয়ে একটি অধ্যায় রচিত হয়েছে। এ অধ্যায়ে অনেক বক্তব্য আছে যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে, এ অধ্যায়ে একটি প্যার্টান পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ।
ডালিম যাদের নিয়ে কোম্পানি খুলেছিলেন তারা হচ্ছেন তার ছোট ভাই স্বপন, ক্যাপ্টেন নূর ও লে. কর্নেল আকবর হোসেন। তারা ভালই ব্যবসা করছিলেন। ডালিম যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন- কামরুজ্জামান, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মালেক উকিল, মনোরঞ্জন ধর, ফণিভূষণ মজুমদার, আব্দুল মান্নান, এ আর মল্লিক, এম আর সিদ্দিকী, ফরিদ গাজী, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং ভোলা মিয়া। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা ডালিম তা আজ আর জানা যাবে না। তবে এদের অধিকাংশ ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর কোন কোনভাবে খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ছিলেন।
তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়েছিল। তাজউদ্দিন নিজেই নাকি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন-এ তথ্য মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার ভার্সন অনুযায়ী, তাজউদ্দিনকে ডালিম বিস্তর লেকচার দিয়েছেন, প্রত্যুত্তরে দেখা যাবে তাজউদ্দিন তেমন ৎবংঢ়ড়হফ করছেন না। ডালিমের সন্দেহ হয়েছিল তিনি জাসদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু কর্নেল তাহের থেকে শাহজাহান সিরাজ সবাই একবাক্যে তা অস্বীকার করেছেন। ডালিমের মতে, "তার সাথে দু'দিনের আলোচনায় একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা গেল ভারত সম্পর্কে তার একটা বিশেষ দুর্বলতা কিংবা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যার বাইরে তিনি যেতে পারছেন না।" [পৃ. ৪৬৫] মুক্তিযুদ্ধের সময়ও 'একারণে' ডালিমরা তাজউদ্দিনকে পছন্দ করেননি যা আগেই উল্লেখ করেছি।
ভারত সোভিয়েতের প্রতি তাদের একটা শারীরিক ঘৃণা ছিল। সোভিয়েত নাবিকদের কর্ণফুলী থেকে মাইন অপসারণও তারা সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা যা ষড়যন্ত্র মনে করেছেন।
ডালিম একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন, সরকার তাদের ওপর নজর রাখছিল এবং ঢাকার এসপি. মাহবুব তাকে এ বিষয়ে সতর্কও করে দেন। ডালিমকে তিনবার হত্যার প্রচেষ্ট নেয়া হয়। ডালিমের মতে এটিই ছিল সরকারী প্রচেষ্টা।
দেশের বিবরণীতে, ১৯৪৭ সালের দুর্ভিক্ষের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন এবং সরকার দলের দুর্নীতি কথা বলেছেন সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও তার দলে ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা মানুষ গ্রহণ করতে পারেনি। আওয়ামী শাসন সম্পর্কে যেসব বিষোদগারই সাধারণত এখন বিএনপিরা করে থাকে সেসব বিষোদগার আছে। তবে, এর মধ্যে চোখ এড়িয়ে যায় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো জেনারেল শফিউল্লাহর মন্তব্য। ১৯৮৭ সালে লন্ডনের জনমত পত্রিকায় জেনারেল এই সাক্ষাতকারটি দিয়েছিলেন। 
সেখানে একটি প্রশ্ন ছিল-"শেখ মুজিবুর রহমান সামরিক বাহিনীর উন্নতির পক্ষে ছিলেন না, এ কথা কি সত্য?"
উত্তর: হ্যাঁ, "আমি বলব এ কথা সত্য।" [পৃ. ৪৫২]
এ কথা কতখানি সত্য পাঠকরাই বিবেচনা করবেন। কিন্তু মূল বিষয় যেটি বলতে চেয়েছি তা হলো, বাংলাদেশের সামরিক সদস্য তিনি বিভিন্ন দল বা মতাদর্শে বিশ্বাস হতে পারেন কিন্তু তাদের মনের গড়ন একই রকম। তারা মনের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুকে গ্রহণ করতে পারেন না।
ডালিম যে কারণে পরিচিতি অর্জন করেছেন অর্থাৎ হত্যাকাণ্ড তার বিবরণ দিয়েছেন বিংশ অধ্যায়ে।
আর বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের পটভূমিটা ডালিম তার লেখায় এভাবে তৈরি করেছেন-
১। শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' ও জাতির পিতা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি মহল 'বদ্ধপরিকর' হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। ৭১ সালে তিনি সংগ্রামে ছিলেন না। সেই সময় "এক অখ্যাত মেজরের ডাকে সাড়া দিয়ে" বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। "এ সত্যকে মিথ্যা বলে প্রমাণিত করা কখনোই সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অভাব ছিল শেখ মুজিবের। তারই ফলে জাতি যখন হয়ে উঠেছিল মুক্তিপাগল তখন শেখ মুজিব চরম সুবিধাবাদীর মতো আপোসরফায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে। জনগণের সব আশাকে নস্যাত করে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণের সাথে না থেকে কারাবরণ স্বাচ্ছন্দ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন পাকিস্তানে।" [ পৃ. ৪৮০] শুরু থেকেই এ অভিযোগ ডালিমরা করেছেন এবং এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মতামত ব্যক্ত করেছি। ডালিমরা ইচ্ছে করে ভুলে যান বঙ্গবন্ধু উপাধিটি দেয়া হয়েছিল ১৯৬৯ সালে আর ১৩ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণায় তাঁকেই স্বাধীনতার জনক বলা হয়েছে এবং সেটা মেনেই ডালিমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
২। বঙ্গবন্ধু "বাকশাল গঠন করে একনায়কত্ব কায়েমের সাথে সাথে প্রকাশ্য রাজনীতি ও সমস্ত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে গেল।" [পৃ. ৪৭৮]
৩। "শিকড় গেড়ে বসার আগেই একনায়কত্বের অবসান ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক মহল থেকে অনেকেই ইঙ্গিত দিলেন, সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অগ্রণীর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক হলেই সম্ভব হবে এই একনায়কত্ব ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে জাতিকে মুক্ত করা। তাদের এ ধরনের ইঙ্গিতের যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছিলাম আমরা।" ওসমানী মন্তব্য করেছিলেন, "মুজিব খানকে সরাতে হবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? [পৃ. ৪৭৮-৭৯]
৩. "শেখ মুজিবকে আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আগেই বিপ্লব ঘটিয়ে শেখ মুজিবের একনায়ত্ব ও বাকশালের পতন ঘটাতে হবে।" [পৃ. ৪৮১]
পরিকল্পনা এগিয়ে চলে। সেনা পরিষদের সঙ্গে মিটিং হয় লে. কর্নেল রশিদ ও ফারুকের। "তাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রশ্নে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।" [পৃ. ৪৮১] তারা সামরিক অভ্যুত্থানের প্রস্তাব দেয় এবং জানায় খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে তারা বিকল্প সরকার গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। আলাপ-আলোচনার পর স্থির হয় জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হবে এবং এ কে খন্দকারের বদলে এম.জি. তোয়াবকে বিমান বাহিনীর প্রধান করা হবে। খোন্দকার মোশতাক এসব বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন।
ডালিমদের মনে হয়েছিল, ওপরের দিকের অনেক নেতা মুজিব ও ভারতবিরোধী। মোশতাককে তারা নেতা বলে মানতে আপত্তি নেই তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সব নেতা বলেছিলেন, "নেতৃত্বে যোগ্যতার বিচারে খোন্দকার মোশতাকের স্থান শেখ মুজিবুর রহমানেরও ওপরে।" [পৃ. ৪৮৩]
১২ আগস্ট তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান সম্পর্কে। গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়Ñ শেখ মুজিব, শেখ ফজলুল হক মণি, মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান সেরনিয়াবত, সৈয়দ হোসেন, তাজউদ্দিন আহমেদ, তোফায়েল আহমদ ও আব্দুর রাজ্জাককে। ডালিমের ভাষা অনুযায়ী শেখ মুজিব, শেখ মণি ও সেরনিয়াবতের বাসা থেকে প্রথম গুলি হয় এবং তিন বিপ্লবী শহীদ হলেন।" এটি সর্বৈব মিথ্যা। তোফায়েল ও রাজ্জাক বেঁচে গেলেও পরে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন। কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল থেকে টেলিগ্রাম করে রাষ্ট্রপতির কাছে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
"অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কর্নেল তাহের, কর্নেল আকবর হোসেন, মেজর শাহজাহান ওমর, মেজর জিয়াউদ্দিন, মেজর রহমতউল্লাহ, ক্যাপ্টেন সাজেদ ও ক্যাপ্টেন মোস্তাক এবং সরাফত [সব অবসরপ্রাপ্ত] এসে হাজির হলো রেডিও বাংলাদেশে। ঘোষণা শুনেই এসেছে তারা বিপ্লবের প্রতি তাদের সমর্থন ও অভিনন্দন জানাতে। খবর হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর আমিন আহমদ চৌধুরী ইতোমধ্যেই সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পকে নিরস্ত্র করে তাদের সমর্থন অভিনন্দন জানাচ্ছে।" [পৃ. ৪৯২] অর্থাৎ এরা সবাই কমবেশি জড়িত ছিল ষড়যন্ত্রে। শফিউল্লাহ অভ্যুত্থান প্রতিরোধের জন্য নির্দেশ দেন শাফায়াত জামিলকে। তিনি সাড়া দেননি। অনুরোধ করেন খালেদ মোশাররফকে। তিনি জবাব দেন Bangabandhu is dead. The army has revolted and whole army has celebratedBangabandhu is dead. The army has revolted and whole army has celebrated." [পৃ. ৪৯৩]
এর পরের ঘটনাবলি সবার জানা। পুনরুক্তি করলাম না। ডালিমের মন্তব্য "১৫ আগস্টের বিপ্লব স্বতঃস্ফূর্ত গণসমর্থন পেয়ে একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।" [পৃ. ৪৯৮]
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ডালিমদের সাহায্যে জেনারেল জিয়া কিভাবে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করলেন তার বিবরণ আছে পরবর্তী অধ্যায়ে। ডালিমরা চেয়েছিলেন রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করতে এবং 'প্রপার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করতে। "সেনাবাহিনী থেকে বাকশালীপনা, দুর্নীতিপরায়ণ এবং উচ্চাভিলাষীদের বের করে দিতে হবে।"
ডালিম উল্লেখ করেছেন স্পষ্টভাবে- " সেনা পরিষদের পক্ষ থেকে এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। বিপ্লবের প্রতি পূর্ণ সমর্থনদানকারী জেনারেল ওসমানীকে নিয়োগ করা হয় প্রেসিডেন্ট মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা।" [পৃ. ৫০০] জিয়াউর রহমান, এর আগের বিবরণ থেকে দেখা যাচ্ছে ১৯৭৫ ঘটনার কথা জানতেন। এই উক্তির পর ধরে নেয়া যেতে পারে ডালিমদের প্রতি জোরালো সমর্থন ছিল তার এবং জেনারেল ওসমানী ছিলেন তাদের প্রশয়দাতা, পরোক্ষভাবে জড়িত।
জেনারেল জিয়া যে তার আসন দৃঢ় করতে চাচ্ছিলেন ডালিমদের ব্যবহার করে তার প্রমাণ পাই কিছুদিন পরই। তিনি তাদের জানাচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফায়াত জামিল তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। ডালিমের মতে, "শেখ মুজিবের প্রতি অন্ধ এই অফিসার কিছুতেই বাকশালী সরকারের পতনকে মেনে নিতে পারছিলেন না।" ডালিম জানাচ্ছেন, গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো থেকে জানা যাচ্ছিল, ভারত চাচ্ছে খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে পাল্টা অভ্যুত্থান করে তাজউদ্দিন আহমদকে দিয়ে সরকার গঠন করতে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জিয়া ডালিমদের চাকরিতে ফেরত এনে বিভিন্ন ইউনিটে প্রেরণের প্রয়াস পান। ডালিম জানাচ্ছেন দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের এক সভায় মেজর হাফিজ ও ক্যাপ্টেন ইকবাল "জিয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করল।" এই হাফিজ পরবর্তীকালে বিএনপির একজন নেতা হয়ে ওঠেন। ডালিমদের বন্ধু কর্নেল হুদা খালেদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারপর জানালেন ডালিমদের, "খালেদ ভীষণভাবে হতাশা করেছে আমাকে। ও কিছুতেই বুঝল না। জেনারেল জিয়ার ব্যাপারে কোন আপোস করতে রাজি নয় খালেদ। তার মতে জিয়া আগস্ট বিপ্লবের উদ্দেশ্যাবলীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেই ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করে চলেছে যেটা তোমরাও নাকি বুঝতে পারছ না।"
খালেদ মোশাররফের অনুমানই সত্য ছিল। অন্যদিকে ডালিম জানিয়েছেন, কর্নেল তাহের বলেছিলেন, "এই মুহূর্তে জেনারেল জিয়ার বিরোধিতা করা দেশদ্রহিতার শামিল।" [পৃ. ৫১০] তিনি যে ভুল করেছিলেন তা বলাই বাহুল্য।
এর পর ডালিমের ভাষ্য অনুসারে খালেদ মোশাররফরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ফ্যাকশনের সঙ্গে ডালিমই কথাবার্তা বলছেন। এই হত্যাকণ্ডে যে তার ভূমিকা বড় সেটি দেখাবার চেষ্টা করেছেন। তবে, হত্যাকাণ্ডটি কিভাবে হলো, কিভাবে লাশ দাফন হলো এগুলোর কোন বিবরণ নেই। খালেদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবার ব্যবস্থা ডালিমরা নিয়েছিলেন এবং খালেদ পরবর্তীতে নিহত হন- সে বিবরণও অনুপস্থিত। তবে, খালেদ যখন ক্ষমতা সংহতকরণে এগোচ্ছিলেন তখন সেনা পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে " ঊীঢ়ড়ংবফ নেতারা কৌশলগত কারণে দেশ ত্যাগ" করবেন।
"এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কি করে খালেদ চক্রের পতন ঘটাতে হবে সেই বিষয়ে। জাতীয় বেইমান পরাজিত আওয়ামী বাকশালী গোষ্ঠী এবং তাদের মুরব্বি ভারতের হাতে ক্রীড়নক খালেদ চক্রকে উৎখাত করার জন্যে সেনাপরিষদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন গণবাহিনী এবং জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক অন্যান্য দল ও গ্রুপ ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে খালেদ চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার পর উপযুক্ত সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আর একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেটা ছিল প্রেসিডেন্ট মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের সম্পর্কে। সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদ চক্রের পতনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে তাকে আবার সেনাপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।....
আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নেতৃবৃন্দের যে অংশ ব্যাংককে অবস্থান করবে তার সঙ্গে প্রয়োজনমতো যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে সেনা পরিষদ। জরুরী বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টের ইউনিটগুলোকে জানিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। কর্নেল তাহেরও তখন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন।" [পৃ. ৫৪২]
এর পরের ঘটনা সবার জানা। ডালিমরা দেশ ত্যাগ করেন। খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়। সেনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। জিয়াউর রহমান আবার তাহেরকে বন্দী করে ফাঁসি দেয়ার বন্দোবস্ত করেন। তার পর ইনডেমনিটি পাস করে খুনীদের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করেন। এতে বোঝা যায়, কী গভীরভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন।
ডালিম নিজেকে সবসময় দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে শেষ আলোচনায় খালেদ নাকি বলেছিলেন- "ডালিম, একটা কথা আমরা জানি, তুমি, নূর, পাশা, শাহরিয়ার, হুদা, রাশেদ, মহিউদ্দিন ও অন্য সবাই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতা যুদ্ধ কাল থেকেই দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ধ্যান-ধারণাও প্রায় এক। আমাদের তরফ থেকে আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, কর্নেল রশিদ এবং কর্নেল ফারুক ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কোন অভিযোগ নেই। [পৃ. ৫৪০]
খুন করা যদি দেশপ্রেমিকের কাজ হয় তা হলে আমাদের আর বলার কিছুই নেই।


(সমাপ্ত)
প্রকাশ : শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২১ ভাদ্র ১৪২১
Related:

উনিশশ পঁচাত্তরের তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান: বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ :নাদির জুনাইদ 

http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/20388

​​
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ১
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বুধবার, ২০ আগষ্ট ২০১৪, ৫ ভাদ্র ১৪২১

জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ২                   
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : শুক্রবার, ২২ আগষ্ট ২০১৪, ৭ ভাদ্র ১৪২১

জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান -৩ 
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : শনিবার, ২৩ আগষ্ট ২০১৪, ৮ ভাদ্র ১৪২১

জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ৪ 
মুনতাসীর মামুন
 প্রকাশ : রবিবার, ২৪ আগষ্ট ২০১৪, ৯ ভাদ্র ১৪২১


সোমবার, ২৫ আগষ্ট ২০১৪, ১০ ভাদ্র ১৪২১

জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ৫ 
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ :  সোমবার, ২৫ আগষ্ট ২০১৪, ১০ ভাদ্র ১৪২১
 
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান -  
মুনতাসীর মামুন
(২৫ আগস্টের পর)
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৬ আগষ্ট ২০১৪, ১১ ভাদ্র ১৪২১

জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - 
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বুধবার, ২৭ আগষ্ট ২০১৪, ১২ ভাদ্র ১৪২১
 
শুক্রবার, ২৯ আগষ্ট ২০১৪, ১৪ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান -  
মুনতাসীর মামুন
(২৮ আগস্টের পর)    
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৯ আগষ্ট ২০১৪, ১৪ ভাদ্র ১৪২১

রবিবার, ৩১ আগষ্ট ২০১৪, ১৬ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান  ৯     
মুনতাসীর মামুন

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-08-31&ni=183836
প্রকাশ : রবিবার, ৩১ আগষ্ট ২০১৪, ১৬ ভাদ্র ১৪২১


সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৭ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - 
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৭ ভাদ্র ১৪২১


মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৮ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান -  ১
মুনতাসীর মামুন

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৮ ভাদ্র ১৪২১


বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৯ ভাদ্র ১৪২১
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান - ১২ 
মুনতাসীর মামুন

প্রকাশ : বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১৯ ভাদ্র ১৪২১
 

Read:
†hfv‡e †mbvcÖavb n‡jb †Rbv‡ij wRqv

Zia passively involved - The Daily Star

  1. Mar 15, 2011 - Zia decided to kill Taher as he wanted to appease the army officers ... was passively involved in the assassination of Bangabandhu Sheikh ...
  2. Videos:

Zia Involved in Taher Trial_ Lifschultz.flv

  1. Killer Rashid and Farook- Interview with Anthony Mascarenhas:

The killer duo Rashid and Farook tells Anthony Mascarenhas in an interview why they killed Mujib and the role of Zia and Mustaq and how they featured in their plan. The interview was taken in 1976 in London

ফিরে দেখা পঁচাত্তর: মুজিব হত্যা, খুনি মেজররা ও আমাদের দ্বিচারিতা

সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrabo3@dhaka.net



__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___