Banner Advertiser

Friday, September 5, 2014

[mukto-mona] ৭ মার্চের ভাষণটি আমি সরাসরি শুনেছি



শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২২ ভাদ্র ১৪২১
৭ মার্চের ভাষণটি আমি সরাসরি শুনেছি
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
একত্রিশ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কত হবে? এক লাখ, দুই লাখ না-কি আরও বেশি, আসলে তা নির্ণয় করা কঠিন। মাঠ ছিল কর্দমাক্ত। তারপরও ভরে গিয়েছিল। মাঠের বাইরে দোয়েল চত্বর থেকে শপথ চত্বর পর্যন্ত গায়ে গা লাগানো ভিড়, একটার পর একটা মিছিল আসছিল, হাঁটাচলার উপায় ছিল না। বেলা ১১টা থেকে ১টার পর একটা মিছিল মাঠে যাচ্ছিল। কয়েক হাজার ছাত্রের একটা বিরাট মিছিল, ব্যানার দেখে বোঝা গেল গফরগাঁওয়ের, তেমনি মাথায় কালো ব্যান্ড বেঁধে এসেছে ফরিদগঞ্জ থেকে। এমনি দেশের প্রতিটি জেলা, থানা থেকে এসেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। শোকের মাস আগস্ট ব্যাপী কর্মসূচীর সমাপ্তিতে এই মহাশোক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শোক-সমাবেশ বলে কোন সেøাগান, হাততালি ছিল না, সবার বুকে ছিল কালো ব্যাজ, অধিকাংশের গায়ে ছিল কালো পাঞ্জাবি। এত সুশৃঙ্খল ছিল যে, দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তারানা হালিম এমপি। প্যান্ডেলের সামনের দিকে বসার একটা অতিথি কার্ড পেয়েছিলাম। বেলা সাড়ে ৩টায় গেটে পৌঁছেও ভিড়ের কারণে ঢুকতে পারছিলাম না। ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ, লিমনের সহায়তায় প্যান্ডেলের কাছে গেলে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তারেক আমাকে সামনের দিকে নিয়ে বসান। 
আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা স্বাধীনতা-পূর্ব 'রেসকোর্স ময়দান' এক সময় এতে ঘোড়দৌড়-এর জুয়া খেলা হতো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর মদ-জুয়া-হাউজি নিষিদ্ধ করার সময় ঘোড়দৌড়ও বন্ধ করে দেন এবং রেসকোর্স নাম পরিবর্তন করে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে 'সোহরাওয়ার্দী উদ্যান' নামকরণ করেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এলে অতীত স্মৃতি মনে পড়ে, নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হবার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি দশ লাখ মানুষের করতালির মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পক্ষ থেকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। যোগ্য লোকের যোগ্য সম্মান। জাতির পক্ষে উপাধিটি ঘোষণা করেছিলেন ঊনসত্তরের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ও তৎকালীন ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সামরিক জান্তার কবল থেকে বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্নসাধ আপন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ৭ মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন, যে ভাষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক জরিপে আড়াই হাজার বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক ভাষণের একটি হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সামরিক জান্তা মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রশক্তির কাছে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করেছিল। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাভ্যন্তরের ফাঁসি কাষ্ঠ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলায় ফিরে আসেন এবং '৭২-এর ১০ জানুয়ারি জনতার প্রাণঢালা সংবর্ধনা গ্রহণ করেন। সেদিনও প্রায় ১২ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল। মঞ্চটি ছিল ঠিক যেখানে বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণটি দিয়েছিলেন। এই একই স্থানে আওয়ামী লীগের নৌকার আদলে সংবর্ধনা মঞ্চ বানিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রধান সুহৃদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাতৃসম ভারতের তৎকালীন মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে। যিনি প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা নামে পরিচিত ছিলেন, মঞ্চটির নামও দেয়া হয়েছিল ইন্দিরা মঞ্চ। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা যখন মিয়ানওয়ালি কারাগারে প্রহসনের বিচার করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে হত্যার চক্রান্ত করেছিল তখন ইন্দিরা গান্ধী বিশ্ব বিবেককে পক্ষে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষায় ভূমিকা রাখেন। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে আসার আগেই বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা অনুযায়ী মিত্রশক্তি ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। এই একই জায়গায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় খালাম্মা বেগম সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে (নেপথ্যে শক্তি জুগিয়েছিলেন সেদিনের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা) গণআদালত বসিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমের বিচার করা হয়েছিল এবং বিচারে তার ফাঁসির হুকুম দিয়ে (প্রতীকী) রায় দেয়া হয়েছিল। 
যে কারণে এখানে এসে নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। স্মৃতিরা চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্টুডেন্ট এবং মহসীন হলের সিনিয়র আবাসিক ছাত্র। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তির পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংবর্ধনা ও 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রধান, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ইন্দিরা গান্ধীর সংবর্ধনা এবং গোলাম আযমের বিচারের গণআদালতে সরাসরি অংশগ্রহণের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। কেবল ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার আত্মসমর্পণ এবং ১০ জানুয়ারি '৭২ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সংবর্ধনা মহাসমাবেশটিতে অংশ নিতে পারিনি, তখন মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও রণাঙ্গনে থাকতে হয়েছে। 
আমাদের এই নস্টালজিয়ার জায়গাটাকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার উত্তরসূরি মিলিটারি জিয়াউর রহমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তরাংশে শিশুপার্ক বা বাচ্চাদের বিনোদন পার্ক বানিয়েছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণস্থল, সংবর্ধনাস্থল বা ইন্দিরা মঞ্চের জায়গাটিতে স্থাপনা নির্মাণের সাহস পাননি। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্মৃতি এবং বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তুতি নেন ও কাজ শুরু করেন। ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হবার পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ১৪ দল নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর আবার নির্মাণ কাজ শুরু করেন ও শেষ করেন। আজ সেখানে ভূগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং স্বাধীনতা স্তম্ভ হিসেবে গগনচুম্বী গ্লাস টাওয়ার শোভা পাচ্ছে। সেদিনে ছাত্রলীগের মহাশোক-সমাবেশে গিয়ে গ্লাস টাওয়ারটি চোখে পড়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে একবার অন্তত গ্লাস টাওয়ারটি দেখি। বিশেষ করে রাতে এর লেসার রশ্মি আকাশ ছুঁয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়। আমাদের শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও গ্লাস টাওয়ার আমাদের জাতীয় গৌরবের স্মারক হয়ে আছে। থাকবে অনন্তকাল। 
কিন্তু এই গ্লাস টাওয়ার আমাদের শত শত সংবাদপত্র বা ডজন ডজন টিভি চ্যানেলের চোখে পড়ে না। ক্যামেরাম্যানরা নাম নিয়েছেন ফটোসাংবাদিক। তাদের ক্যামেরার চোখও কখনো গ্লাস টাওয়ারের দিকে পড়েছে বলে আমার চোখে পড়েনি। কতই তো ছবি ছাপা হয়, ফিচার-রিপোর্টিং হয়, এই একটি ব্যাপারে কার্পণ্য হয় মানতে চাই না। তবু হচ্ছে। সম্ভবত কারও কারও বিষয়টি ভাল্ললাগে না। কারণ এর লেসার রশ্মি যত উপরে উঠেছে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর ততই মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। 
আগেই বলেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩১ আগস্টের ছাত্রলীগের মহাসমাবেশ দেখে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছি। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলতেন 'ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস'। কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলেন। সেই ছাত্রলীগ অনেক দিন পর আশা জাগানিয়া একটি মহাশোক-সমাবেশ করল। আমাদের তো আশাবাদী হওয়ারই কথা। হয়েছিলামও। 
কিন্তু একদিন না যেতেই একটি কালো ছায়া আনন্দকে ঢেকে দিতে চাইল। সংবাদপত্রে (৩ সেপ্টেম্বর '১৪) দেখলাম মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর অধীনে উপ-প্রধান সেনাপতি বা বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার বীরউত্তম একখানা স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। নাম-১৯৭১ : ঘরে বাইরে। গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব হয়েছে ধানমণ্ডি বেঙ্গল গ্যালারিতে এবং এতে গ্রন্থের ওপর বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ প্রমুখ। পত্রিকার খবর অনুযায়ী গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো গ্রুপের প্রথমা প্রকাশনী এবং এর প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমেদ রাশেদের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ, অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ, লেখক মাইদুল হাসান, প্রকাশনা ব্যক্তিত্ব মহিউদ্দিন আহমেদ, সালেহ চৌধুরী প্রমুখ। গ্রন্থটি আমি এখনও সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে বুধবার অনুজপ্রতিম তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা সুভাষ সিংহ রায়ের কাছে দেখে এক নজর চোখ বুলিয়ে অন্তত ২টি আপত্তিকর তথ্য আমার কাছে ধরা পড়েছে :
এক : বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ মার্চের ভাষণটি নাকি 'জয় পাকিস্তান' বলে শেষ করেছিলেন। 
দুই : মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগের নাকি কোন প্রস্তুতিই ছিল না।
 
আপাতত এই দুটি বিষয়ের ওপর দু'চারটি কথা বলে আজকের কলামটি শেষ করব। গ্রন্থটি হাতে এলে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে আছে। অবশ্য যদি আলোচনার দাবি রাখে। তাঁর প্রথম মন্তব্যটির জবাবে আমি সরাসরি নাকচ করে বলতে চাই, আমি তখন ছাত্রলীগের একজন মোটামুটি সিরিয়াস কর্মী ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-পূর্ব কলেজজীবন বাদ দিলেও ১৯৬৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্রবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের ৬+১১ দফাভিত্তিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। বয়সের দিক থেকেও পরিণত যুবক। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি মঞ্চের খুব কাছ থেকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছি। তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল জনতার মহাসমুদ্র আর চারদিকের রাস্তায় আর্মি গান ক্যারেজ টহল দিচ্ছিল, আকাশে উড়ছিল হেলিকপ্টার গানশিপ, এর মধ্যেও এতটুকু ভয় পাইনি। বরং ভাষণটির শেষ শব্দটি শুনে বেরিয়ে আসি। বঙ্গবন্ধু তার ১৯ মিনিটের এক্সটেম্পোর ১০৯৫ শব্দের ভাষণটি এভাবে শেষ করেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জ-য়-য় বাংলা। 'জয়' শব্দটি তিনি একটু দীর্ঘলয়ে উচ্চারণ করেন। এর বাইরে কোন সত্য নেই। একে খন্দকার সাহেব তখন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন, তিনি কোন আকাশ থেকে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' শব্দ শুনেছেন জানি না। তবে কিছুদিন আগে দু'একজন বিএনপি-রাজাকারপন্থী তথাকথিত সিভিল সদস্য কথাটি খাওয়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। একে খন্দকার এই তো সেদিনও শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, এখনও আওয়ামী লীগেই আছেন বলে জানি। তাঁর এই গ্রন্থটি বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা খুব সহজে ব্যবহার করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, একে খন্দকার সাহেব বলেছেন, "আওয়ামী লীগের কোন প্রস্তুতি ছিল না।" এটিও সত্য নয়। প্রস্তুতি না থাকলে এবং বেশি বিস্তারিত না বললেও সংক্ষেপে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি, কাজী আরেফ আহমেদকে দিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ কেন গঠন করেছিলেন, যা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস বলে চিহ্নিত করা হয়? কেন ৬ দফা দিয়েছিলেন? কেন অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন কিংবা কেন ৭ মার্চের ভাষণে "ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, ... তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে ... আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব ..." এমনিভাবে ভাষণটির ছত্রে ছত্রে কেন সামরিক ব্যক্তিত্ব না হয়েও গেরিলা ওয়ারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একে খন্দকার সাহেব সশস্ত্র বাহিনীর লোক, তাঁকে এসব বোঝানো আমার পক্ষে ধৃষ্টতা। তবু বলছি, যদি প্রস্তুতি না-ই থাকবে তবে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' থেকে 'পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা' 'তুমি কে আমি কে বাঙালী বাঙালী' 'সোনার বাংলা শ্মশান কেন- আয়ুব শাহী জবাব চাই; 'জয় বাংলা' '৬ দফা ১১ দফা মানতে হবে- নইলে এবার এক দফা হবে'; 'জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান- আজিমপুরের গোরস্তান' 'বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো-সোনার বাংলা স্বাধীন করো' এসব স্লোগানের পাশাপাশি কেনইবা পল্টনে ছাত্রলীগের সমাবেশে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন? এমন অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে। 
তবে হ্যাঁ, দৈনিক জনকণ্ঠ লিখেছে, খন্দকার সাহেবের গ্রন্থটি এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াত, বিশেষ করে শিবির তাদের ফেসবুকে চালাতে শুরু করেছে। কেবল তাই নয়, হয়ত দেখব বিদেশে বিশেষ করে পলাতক দুর্নীতি ও গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি খালেদাপুত্র তারেককেও তারা ব্যবহার করবে। এরই মধ্যে জামায়াত-শিবিরের তৈরি করা মিথ্যার বেসাতি নিয়ে তারেক একটা ঢোল পেটাচ্ছে। আমাদের প্রশ্নটি এখানেই। তাও যদি তথ্যভিত্তিক হতো এটি খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিনের কেক কাটার মতো ঘটনা নয়ত?

ঢাকা- ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪
প্রকাশ : লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক


Women Marching in the streets of Dhaka in early March 1971



__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___