Banner Advertiser

Thursday, October 23, 2014

[mukto-mona] পলাশী যুদ্ধ : ইতিহাসের সত্য-মিথ্যা



পলাশী যুদ্ধ : ইতিহাসের সত্য-মিথ্যা 
মযহারুল ইসলাম বাবলা

পলাশীর যুদ্ধের ১৩৯ বছর পর্যন্ত ইতিহাসে উদ্দেশ্যমূলক সত্য গোপন করে শঠতার পলাশীর যুদ্ধের অনুকরণে প্রহসন-প্রতারণা, মিথ্যাচারের ইতিহাস রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। সমস্তই সর্বৈব নির্ভেজাল মিথ্যাচারের ইতিহাস। সিরাজউদ্দৌলার প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারণা এবং ইংরেজ বেনিয়াদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের ভ্রান্ত ইতিহাস। ইতিহাসের প্রকৃত সত্য কখনো স্থায়ীরূপে চাপা দেয়া যায় না। কালক্রমে প্রকৃত সত্য উন্মোচন হবেই। বিজয়ীরা নিজেদের মহান ও মহৎরূপে প্রচারণায় ইতিহাস রচনায় তৎপর হয়। বিজিতদের বিরুদ্ধে অপবাদ-বিরূপ বিষোদগারে নিজেদের গুণকীর্তনের ইতিহাস রচনায় নানা উপায়ে মদদ জুগিয়ে থাকে। বিজয়ী এবং বিজিতদের ইতিহাস তাই ভিন্ন, পরস্পরবিরোধী এবং চরম বৈপরীত্য। বাংলার ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গদেশ দখলের পরই বেনিয়া ইংরেজ ভারতবর্ষ দখলের অভিপ্রায়ে উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে এবং লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রতিরোধ-প্রতিকূলতা পেরিয়ে ভারতবর্ষকে করতলগত করে। প্রবল প্রতিরোধে স্বদেশি বীরদের বীরত্বপূর্ণ অবদান-আত্মত্যাগের পাশাপাশি বিশ্বাসঘাতকদের দেশদ্রোহী নানা অপকীর্তিতে সহজ ও দ্রুত সম্ভব হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষ দখল অভিযান। 
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে পতন ঘটে বাংলার এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার। ১৭৫৬ সালে উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে বিবাদ-লড়াইয়ে আলিবর্দী খাঁ'র দৌহিত্র তরুণ সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। নবাবের খালা ঘসেটি বেগম, যোধপুরের ধনাঢ্য মাড়োয়ারী-মুর্শিদকুলি খাঁ যাকে "জগৎ শেঠ" উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, সেই জগৎ শেঠ এবং তার ভ্রাতা মহতব রাই ও স্বরূপ চাঁদ, রাজা জানকীরাম, রায়দুর্লভ, রাজা রামনারায়ণ, রাজা মানিক চাঁদ, নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, উমি চাঁদ, রাজা রাজবল্লভ প্রমুখ ষড়যন্ত্রকারীদের নানা প্রলোভনে বশ করে পলাশীর প্রহসন যুদ্ধে নবাবকে পরাজিত করে ইংরেজ বাহিনী। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় মাত্র তিন হাজার সৈন্যের ক্লাইভের বাহিনীর কাছে বিনা যুদ্ধে নবাবের ১৮ হাজার অশ্বারোহী ও ৫০ হাজার পদাতিক বিশাল বাহিনীর পরাজয় ঘটে। পলাশীর যুদ্ধে মীর মদন এবং মোহনলালের বীরত্বপূর্ণ অবদান স্মরণীয়। মীর জাফরকে বাংলার মসনদে নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করার প্রতিশ্র"তির বিনিময়ে ষড়যন্ত্রকারীদের তালুবন্দী করে প্রহসনের পলাশী যুদ্ধে ইংরেজ বেনিয়ারা জয়লাভ করেছিল। ইংরেজদের হাতের পুতুল নবাব মীর জাফরের নবাবি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অচিরেই তাকে পদচ্যুত করে তারই জামাতা মীর কাসিমকে নবাবের আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়। এজন্যে মীর কাসিম বাংলার গভর্নর ও কাউন্সিলকে দুই লক্ষ পাউন্ড এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রাম জেলা কোম্পানিকে হস্তান্তরে বাধ্য হন। স্বাধীনচেতা মীর কাসিম মূলত নবাবি ক্রয় করেছিলেন। ইংরেজদের ক্রীড়নকের বিপরীতে বঙ্গের প্রকৃত শাসক হতে চেয়েছেন, যেটা ইংরেজ বিরোধিতার শামিল। ইংরেজবিরোধীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ইংরেজবিরোধী সমর অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পরিণতিতে তাকে হারাতে হয় নবাবি এবং বক্সার যুদ্ধে পরাজয়ের পর দিল্লিতে পলায়ন করেন। বক্সার যুদ্ধের পর ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিরোধে নিম্ন গাঙ্গেয় উপত্যকায় আর কেউ ইংরেজবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এর পরের ইতিহাস ইংরেজদের শোষণ-লুণ্ঠন, অর্থ-সম্পদ, পণ্য ব্রিটেনে পাচারের ইতিহাস, যার মেয়াদকাল পৌনে দুইশত বছরের ইংরেজ সাম্রাজ্যের শাসনামল। 
পলাশী যুদ্ধ জয়ী ইংরেজ বেনিয়ারা তাঁবেদার লেখকদের দিয়ে ইতিহাস রচনায় অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে। নিজেদের গুণকীর্তন এবং সিরাজউদ্দৌলার প্রতি চরম বিদ্বেষপূর্ণ নানা অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। সে সকল ইতিহাসে লম্পট, মাতাল, চরিত্রহীন, নিষ্ঠুর, অপদার্থ, অর্বাচীন ইত্যাকার নেতিবাচক অভিধায় সিরাজউদ্দৌলাকে অভিহিত করা হয়েছিল। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ইংরেজ বেনিয়ারা বাধ্য হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে রক্ষা করেছিল বঙ্গভূমিকে। ইংরেজ তাঁবেদার-আজ্ঞাবহ লেখকদের রচনায় অমন কথাই প্রকাশ পেয়েছিল। ইংরেজ বন্দনায় লেখক তালিকা দীর্ঘ, উল্লেখযোগ্য ইউসুফ আলী রচিত 'তারিখ-ই-বাঙ্গলা-ই-মহব্বত জঙ্গী'। আমির গোলাম হোসেন খাঁ তাবাতাবাই রচিত 'সিয়ার-উল-মতাখেরিন' (শেষ শাসকবর্গের জীবনী)। ইংরেজ জর্জ উডনির নির্র্দেশে মুনশি গোলাম হোসেন সেলিম জইদপুরী রচিত 'রিয়াজ-উম-সালাতিন'। এ ধরনের ভারতীয় প্রচুর লেখক ফার্সি ভাষায় ইংরেজদের দেয়া নজরানার বিনিময়ে মিথ্যা, বিকৃত ইতিহাস রচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের রচনায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিষোদগার পলাশীর যুদ্ধের সকল দায় নবাবের ওপর চাপিয়ে ইংরেজ বেনিয়াদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ইংরেজরা উদার, বিশ্বস্ত, সহনীয় এবং সম্মানীত। তাদের মধ্যে শঠতা, প্রতারণা, মন্দ জ্ঞান নেই ইত্যাদি। 
পলাশীর যুদ্ধের অর্ধশতাব্দীর পরও বাংলা ভাষায় সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে কল্পিত নেতিবাচক সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার 'রাজাবলী' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, 'বিশিষ্ট লোকেদের ভার্যা, বধূ ও কন্যা প্রভৃতিকে জোর করিয়া আনাইয়া ও কৌতুক দেখিবার নিমিত্ত গর্ভিণী স্ত্রীদের উদর বিদারণ করানেতে ও লোকেতে ভরা লৌকা দেওয়ানেতে দিনে দিনে অধর্ম্ম বৃদ্ধি হইতে লাগিল।' এমন সর্বৈব মিথ্যাচারে সিরাজউদ্দৌলার চরিত্র হননের কল্পিত কাহিনী সমাজে সিরাজউদ্দৌলা বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি এবং সাম্প্রদায়িকতার পরিবেশ ক্ষুণেœর প্রাথমিক অপচেষ্টা। পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের বিভাজন সৃষ্টিতে চতুর ইংরেজ 'ভাগ কর-শোষণ কর' নীতির নিষ্ঠুর বাস্তবায়ন। পরিসমাপ্তিতে ১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তি-রক্তাক্ত দেশভাগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম দুই সম্প্রদায়ের রক্তাক্ত দাঙ্গা। চাটুকার-তাঁবেদার ইতিহাস রচয়িতা-লেখকেরা নির্জলা মিথ্যাচারে ইতিহাস বিকৃত করেছিল; ইংরেজদের আদেশ-নির্দেশে এবং ইচ্ছাপূরণে। বাংলার জনরোষ থেকে দখলদার ইংরেজদের ইমেজ রক্ষায় এবং প্রহসনের পলাশীর যুদ্ধের ঘৃণিত দায় থেকে ইংরেজদের অব্যাহতি লাভের অভিপ্রায়ে মিথ্যাচারের ইতিহাস রচনায় ইংরেজরা প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছিল। সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে এ সমস্ত ফরমায়েশি ইতিহাসে সীমাহীন মিথ্যাচারের পরও স্বয়ং ইংরেজদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সিংহাসনে আসীনের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা কখনো মদ্যপান করেননি। অথচ লম্পট, মদ্যপ ইত্যাদি কুখ্যাতির বোঝা তাকে যুগ-যুগান্তর বহন করতে হয়েছে। পলাশীর যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিকৃত ইতিহাস রচনায় ইংরেজ এবং তাদের এদেশীয় অনুসারীরা যে বার্তাটি দৃষ্টান্তরূপে স্থাপন করতে চেয়েছেন তার মূল কাঠামোটি ছিল বণিকবেশী ইংরেজদের আগ্রাসন এবং মুর্শিদাবাদের প্রাসাদ চক্রান্তকে অবিচ্ছেদ্য করা। প্রাসাদ চক্রান্তের ঘটনা না ঘটলে ইংরেজদের পক্ষে সমর ও রাজশক্তিরূপে আবির্ভূত হবার প্রয়োজন হতো নাÑ এই নির্জলা মিথ্যাচার বিশ্বাস করার বিন্দুমাত্র যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। শুধু ভারতবর্ষ নয়, বিশ্বজুড়ে ইংরেজদের উপনিবেশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাই প্রমাণ করে ভারতবর্ষে বাণিজ্যের উছিলায় দেশ দখলই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। কার্ল মার্কস ১৮৫৩ সালে বলেছেন, 'ইউরোপের দুই জোটের উপনিবেশ ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিণত হয়েছে সমর ও রাজশক্তিরূপে।'
বণিকবেশে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল। এরপর ফরাসিদের অনুসরণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাজে ফরাসি সামরিক অফিসারদের অধীনে ভারতীয়দের যুক্ত করে গড়ে তুলেছিল সৈন্যবাহিনী। ফরাসি সৈন্যবাহিনীর রণনৈপুণ্যে ব্রিটিশরাও সেনাবাহিনী গঠন শুরু করে। ইউরোপের দুই পরাশক্তিই বণিকের ছদ্মবেশে ভারতবর্ষে এসেছিল। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। সৈন্যবাহিনী গঠনের মূলে ছিল সামরিক অভিযানে ভারতবর্ষ দখল এবং ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। ফরাসিরা নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বিবাদে ব্রিটিশদের পরাস্ত করতে পারেনি। অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার নিয়ে ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি-ব্রিটিশদের মধ্যকার যুদ্ধ ভারতবর্ষে অবস্থানরত ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। ভারতবর্ষে তারা পরস্পর যুদ্ধেও লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু ফরাসিরা ইংরেজদের কাছে অনেকগুলো যুদ্ধে পরাজয় বরণে এবং অর্থনৈতিক কারণে রণেভঙ্গ দিয়ে ভারতবর্ষ দখলের আশা ত্যাগ করে। শক্ত প্রতিপক্ষহীন সুযোগের মওকায় নানা যুদ্ধ-বিগ্রহে, শঠতায়-প্রতারণায় ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। একে একে গোটা ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীন হয়ে যায়। 
মৃত্যুশয্যায় নবাব আলিবর্দী খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজ বেনিয়াদের অশুভ তৎপরতা শক্ত হাতে দমন এবং মাতৃভূমি রক্ষার তাগিদ পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছিলেন। নবাব আলিবর্দী খাঁ'র নির্দেশ মোতাবেক নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে চেয়েছেন। পারেননি দরবারের গোপন শত্র" ষড়যন্ত্রী-বিশ্বাসঘাতক চক্রের কারণে। শুরুতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার নানা উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমিত্ব রক্ষার তাগিদে সিরাজউদ্দৌলা অতি অবাধ্য-বিপজ্জনক ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকার কারণেই কাশিমপুর কুঠির এবং কলকাতা অভিযানে (২০ জুন ১৭৫৬) বাধ্য হয়েছিলেন। মাদ্রাজ থেকে আগত ক্লাইভ পরিকল্পিতভাবেই নবাবের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নবাবের ঘনিষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারীদের নানা লোভ-লালসায় চতুর ক্লাইভ তাদের সমর্থন-সহযোগিতায় প্রহসনের পলাশীর যুদ্ধের নাটকটি সাজিয়ে ছিলেন। বণিক ছদ্মবেশী ইংরেজ বেনিয়ারা মীর জাফর গংয়ের ঘুষ প্রদান-জাল দলিল সম্পাদনে, জালিয়াতি-বিশ্বাসভঙ্গের পলাশীর প্রহসনের যুদ্ধে জয়ী হয়েই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম বিজয় অর্জনে ভারতবর্ষ দখল অভিযানে অগ্রসর হয়েছিল। 
শঠতার-প্রহসনের পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও হত্যার দায়মুক্তির জন্য অসংখ্য মিথ্যা-বিকৃত ইতিহাস রচনায় দেশবাসীকে ইংরেজরা বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধের ১৩৯ বছর পর (১৮৯৬-৯৭ খ্রিষ্টাব্দে) প্রকাশিত বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় অনন্য ইতিহাস রচনায় শুধু পলাশীর যুদ্ধের সত্যই উন্মোচন করেননি; নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ঔপনিবেশিক ইংরেজের বিরুদ্ধে আত্মদানকারী প্রথম বীর রূপেও গণ্য করেছেন। পলাশীর যুদ্ধের ১৩৯ বছর পর দেশবাসী প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় রচিত "সিরাজউদ্দৌলা" গ্রন্থে সর্বপ্রথম পলাশীর যুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে পূর্বেকার তাঁবেদার লেখকদের বিকৃত ইতিহাস দ্রুত আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় মিথ্যাচারের বানোয়াট ইতিহাসের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেছেন ইংরেজ সমর্থন-সহযোগিতায় রচিত পলাশীর যুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইংরেজ বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যায় দেশ দখল, অনাচার, শোষণ, লুণ্ঠন প্রমাণে অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং অপর ঐতিহাসিক নিখিল নাথ রায় প্রকৃত ইতিহাস রচনায় পলাশীর যুদ্ধের কলঙ্কের মূলে অপরাধী ইংরেজদের দায়ীরূপে প্রমাণে সক্ষম হয়েছিলেন। পাশাপাশি ইংরেজদের মূল উদ্দেশ্য যে ছিল রাজনৈতিক সেটিও উন্মোচন এবং প্রমাণ করেছিলেন। 
নবীন চন্দ্র সেন 'পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যে সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অযথা কলঙ্ক লেপনের জন্য ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তীক্ষè ভাষায় নবীন চন্দ্র সেনকে ভর্ৎসনা করেছেন। পলাশীর যুদ্ধ জয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজনৈতিক অভিলাষ এবং আধিপত্য বিস্তারে ক্রমেই ভারতবর্ষকে অভিন্ন প্রক্রিয়ায় করতলগত করেছিল। খ্যাতিবান ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থেও পলাশীর যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশ পেয়েছে। 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা দ্বিধাহীন চিত্তে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব রক্ষা করতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন। 'ইংরেজ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে তাঁকে প্রথম ভারতীয় বীররূপে গণ্য করতে হবে।' অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তার গ্রন্থে উপরোক্ত কথাগুলো জোরের সঙ্গেই বলেছেন। কথাগুলো মোটেও মিথ্যে নয়, নির্ভেজাল সত্য; সেটা পৌনে দুইশত বছরের ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে প্রমাণিত হয়েছে।
 বিজয়ীমাত্রই ক্ষমতার আনুকূল্যে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদের বীররূপে প্রকাশ করে । অন্যদিকে দেশপ্রেমিক বীর নায়ককে খলনায়কে পরিণত করে। পলাশী যুদ্ধের ১৩৯ বছর প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে পেরেছিল ইংরেজ শাসকেরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পলাশী যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ১৩৯ বছর পরে ইংরেজ শাসনামলেই প্রকাশ পেয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব, স্থায়ীরূপে সম্ভব নয়। ইতিহাস থেকে বিজয়ীরা শিক্ষা গ্রহণ করে না। সে কারণে ক্ষমতার আনুকূল্যে নিজেদের বিজয়গাথা রচনায় প্রতিটি বিজয়ী শাসক ইতিহাস বিকৃতির অপকীর্তি করে থাকে। সিরাজউদ্দৌলাকে যোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পূর্বশর্ত; সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম। এই সংগ্রাম ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও সংগ্রাম। সঠিক ইতিহাস চর্চার সংগ্রামও নিশ্চয়। 

mibabla71@gmail.com

http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9659
Logo

Watch the videos:

Nawab Siraj-Ud-Doula (Complete Drama)

https://www.youtube.com/watch?v=ed2zjqjET94

বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি 





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___