দরিদ্রদের সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট দিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে কম খরচে আবাসন প্রকল্পের আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য আবাসন প্রকল্পের অনুরোধ জানালে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত এ ব্যাপারে সাহায্যের কথা জানিয়েছে। এ খবর আনন্দের হলেও বিষাদের মাত্রাও বহুমুখী। প্রতিভাত হচ্ছে, বন্ধুপ্রতীম এবং বিশেষতঃ মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোর কাছে যথাযথভাবে পেশ করলে অনেক আগেই আরো বেশি সমৃদ্ধ হওয়া যেতো। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা বিশেষ মহলের কুপরামর্শ সরকারকে মুসলিম বিশ্ব থেকে কার্যতঃ ছিন্ন করে ফেলেছে। কারণ সংবিধানে বর্ণিত ২৫ (২) ধারা "রাষ্ট্র দ্বীন ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত সংরক্ষণ এবং জোরদার করতে সচেষ্ট হবেন।" সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের নামে এ ধারা অবলুপ্ত করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ) বলাবাহুল্য, সংবিধান থেকে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক ইসলামী সংহতি ও মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বাদ দেয়া কোনো মুসলিম দেশই ভালো চোখে দেখেনি। অথচ সরকার এ বিষয়টির গুরুত্বই বুঝেনি। উল্লেখ্য, বর্তমান মুসলিম দেশসমূহের সংখ্যা পঞ্চাশেরও অধিক। পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ মুসলমানদের কাছে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সম্মানিত ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে পররাষ্ট্র পরিচালনা করলে প্রতি মুসলমান দেশই সমৃদ্ধ ও সুসংহত হতে পারতো এবং সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দ্বার অবারিত হতে পারতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী নীতি নির্ধারকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় সরকার সে প্রবৃদ্ধির পথে যেতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ যে কত প্রশস্ত হতে পারতো তার প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কম খরচে আবাসন প্রকল্পের অনুরোধ জানানোর সাথে সাথে মালয়েশিয়া সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও আশ্বাস তা প্রতিপন্ন করেছে। তবে আমরা মনে করি, দরিদ্রদের সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট দিতে মালয়েশিয়ার সাহায্যের কোনোই দরকার নেই। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার লোক মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যারা প্রত্যেকেই শত কোটি থেকে সহস্র কোটি টাকার মালিক। কাজেই দুর্নীতিবাজদের ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এবং বিত্তশালীদেরকে বুঝিয়ে তাদের থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতার ভিত্তিতেই আবাসনের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয়া যেতো। মূলত, আবাসন সমস্যা দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সমস্যা হলেও এর সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ নেই। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আবাসন সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ থাকলেও সরকারি খাত ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা বহু ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতার অভাব থাকায় আবাসন সমস্যার সুপরিকল্পিত সমাধানের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। দেশের ২৭ শতাংশ মানুষের নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই। এ দেশে ৬২ শতাংশ মানুষ ভূমিহীন। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বাস করে আধাপাকা বা টিনের ঘরে বা পাটখড়ি ও মাটির দেয়ালের ঘরে কিংবা বস্তিতে। মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ পাকা বাড়িতে বাস করে। আর ঢাকা শহরে বাস করছে ষাট লাখেরও বেশি বস্তিবাসী। প্রধানমন্ত্রী ইতঃপূর্বে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ঢাকার চার পাশে চারটি স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা হবে। রাজউকের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এসব টাউনে সব নাগরিক সুবিধা থাকবে। এর মধ্যে পূর্বাচলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য ১ লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এ ধরনের পরিকল্পনা বিশেষ বিলম্বমূলক। মূলত, স্বাধীনতার পরপরই সব নাগরিকের জন্য আবাসনের প্রকল্প নেয়া উচিত ছিল। বর্ণিত প্রকল্পগুলো থেকে প্রতিভাত হয়- সরকার ইচ্ছা করলেই পারে। তবে সরকারকে শুধু উল্লেখিত ফ্ল্যাটগুলো করলেই চলবে না, গৃহহীন সব নাগরিকের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, সংবিধানের ১৫৩ ধারায় (ক) অনুচ্ছেদে খাদ্য, বস্ত্রের পরেই প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থানের কথা বলা হয়েছে। কাজেই প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য। মূলত, সরকার চাইলেই এ কর্তব্য পালন করতে পারে। কারণ সরকার এর আগে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কথিত আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কথা বলেছে এবং বর্তমানে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। যাতে লাভবান হবে মুষ্টিমেয় কিছু লোক। সে হিসেবে সরকারের সর্বাগ্রে নজর দেয়া উচিত- ঢাকা শহরের ৬০ লাখ বস্তিবাসীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতি। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বর্গফুট ১৬০০ টাকা খরচ হলে ৫০০ বর্গফুটের জন্য প্রয়োজন হয় মাত্র ৮ লক্ষ টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে আরো দু'লাখ টাকা ধরা হলে হয় দশ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ৬০ লাখ বস্তিবাসীর জন্য ব্যয় হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর এবং আড়িয়াল বিলে কথিত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা মোট ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে সারাদেশের ২ কোটি ৫২ লাখ গৃহহীনদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করাই সরকারের প্রধান কর্তব্য ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনে তিন বৎসরের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং পর্যায়ক্রমে সবার জন্যই সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। । |
__._,_.___