Banner Advertiser

Saturday, January 17, 2015

[mukto-mona] 'দ্বন্দ্ব নিছক ক্ষমতার নয়, এখানে মৌলিক বিষয় যুক্ত'



প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০:০০আপডেট : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ২২:২১:৫৪
সাক্ষাৎকার : অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ
'দ্বন্দ্ব নিছক ক্ষমতার নয়, এখানে মৌলিক বিষয় যুক্ত'
হারুন-অর-রশিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রগুলো হলো বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন, ১৯৪৭-পূর্ব ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা-উত্তর বর্তমান সময় পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলা এবং বাংলাদেশের রাজনীতি, এর গতিধারা ও রাজনৈতিক উন্নয়ন। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শানজিদ অর্ণব
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রধান দুই দলের দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ

আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমানে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাজনীতিতে মুখোমুখি অবস্থানে আছে। বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণ কী বলে মনে করেন?


হারুন-অর-রশিদ : বাংলাদেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজনীতিতে মুখোমখি অবস্থানে আছে। এ মুখোমুখি অবস্থান কোনো গতানুগতিক ইস্যুভিত্তিক নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির কতকগুলো মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্র করেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন, জনসভা করতে না পারা- এগুলো উপলক্ষমাত্র। আমি সব সময় বলি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূল বিভাজন তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও আরও কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনককে হত্যা হচ্ছে মেজর ঘটনা। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা প্রচেষ্টা এবং অতিসম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতির জনক সম্পর্কে যেসব অসম্মানসূচক, দায়িত্বহীন এবং বিকৃত উক্তি করেছেন, এসবের মাধ্যমে দুই শিবিরের দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান মুখোমুখি অবস্থানকে বুঝতে হলে অমাদের একাত্তর এবং পঁচাত্তরকে বুঝতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের একদল সহযোগী জামায়াতে ইসলামী এবং পকিস্তানকেন্দ্রিক আরও কিছু দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছে এবং তাদের গণহত্যায় শামিল হয়েছে। অর্থাৎ তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, যুদ্ধাপরাধ করেছে। এ যুদ্ধাপরাধীদের কি বিচার হবে, না হবে না? তাদের নিয়ে রাজনীতি হবে, না তাদের বাইরে রেখে রাজনীতি হবে? যুদ্ধাপরাধীরা যখন মন্ত্রী হয়, তাদের গাড়িতে যখন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে, তখন এ দেশের মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অত্যন্ত আহত হন। একইসঙ্গে তারা ক্ষুব্ধ হন। যারা বাংলাদেশ চায়নি, পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছে, অন্য দলের ওপর ভরসা করে আজ তারা মন্ত্রী হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্মের ৪৩ বছর আগেকার এ ইতিহাস আমাদের স্মৃতিতে এখনও সজীব। মুক্তিযুদ্ধে অনেকে আপনজনকে হারিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাদের সন্তান বা নিকটজনরা কিন্তু এখনও জীবিত। এ জীবিতদের কষ্ট-বেদনা একটা দিক। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে এবং তাদের বিচার চলছে। অন্যদিকে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছে। বিএনপি ২০০২ সালে তাদের নিয়েই সরকার গঠন করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কখনও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অর্থাৎ বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে এবং তাদের বিচার চায় না এবং তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা দিন এবং রাতের মতোই পরিষ্কার।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পাকিস্তানি কায়দায় ঘুরিয়ে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী, হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিএনপি রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেছে। তাদের চাকরি দিয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এখন জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয়দাতাদের প্রতি তার অনুসারীদের অ্যাটিচ্যুড কেমন হবে? সেই জাতির জনকের কন্যাই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোটের নেত্রী। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে আমি কতটা সহাবস্থানে আসতে পারি- এটাও একটা দিক। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর বোমা হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে হত্যা করা। জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছে। এখন সুযোগ পেলে তার কনা্যকে, যিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির একটা প্রতীক, তাকেও কিন্তু পারলে হত্যা করা হবে। অতিসম্প্রতি পশ্চিম বাংলায় এক ঘটনায় আমরা দেখলাম, বাংলাদেশের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। অর্থাৎ বলা যায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার একটি চেষ্টা এখনও আছে। এদের সঙ্গে জামায়াতের সংযোগ থাকার কথা উঠে এসেছে। যারা একাত্তরে এদেশে গণহত্যা করেছে, পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যা করেছে, ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে এবং এ হত্যাকারীদের যারা আশ্রয় দিয়েছে, তাদের নিয়ে জোট করেছে এবং এখনও তাকে হত্যার চেষ্টা করছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতায় যাওয়ার বিষয়টি একটি মনস্তাত্তি্বক প্রশ্নও বটে।

এরপর আসি দুটি পক্ষের স্টেক কী? আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রায় কার্যকর হয়। দেশের মানুষের আবেগ ও ন্যায়, সত্য, মানবাধিকারের স্বার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া দরকার। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একাত্তরের কিছু বিষয় এখনও অমীমাংসিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাকি রয়ে গেছে। একাত্তরে তো আমরা পাকিস্তানিদের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবতে পারিনি। পাকিস্তানিরা সরাসরি না থাকলেও তাদের প্রতিনিধিরা এখনও রয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ মুখোমুখি অবস্থান, টানাপড়েন চলতে থাকবে।

জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার প্রায় হয়ে গেছে। এ নিয়ে বিভক্তি এখন সাইডলাইনে গেছে বা দূর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেলে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে একটি নতুন অবস্থার দিকে যাবে, যেখানে সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চর্চা হয়তো হবে।

বর্তমানে যে লড়াই-দ্বন্দ্ব চলছে, সেটা নিছক ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে নয়; এখানে কিছু মৌলিক বিষয় যুক্ত। আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব ক্ষেত্রে বজায় রাখতে হলে তাদের ক্ষমতায় থাকা দরকার। আর সেটা না হলে ইতিহাস কীভাবে বিকৃত হয়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীরা কীভাবে মন্ত্রী হয়, সেটা আমরা চোখের সামনে দেখেছি। এটা বিদেশের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো স্রেফ ক্ষমতা কার হাতে যাবে সে প্রশ্ন নয়; এখানে যে আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এগুলো ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট যদি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। গত নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেনি, তাই তারা এখন সংসদের বাইরে। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে একদিকে হতাশা এবং অন্যদিকে সর্বাত্মক লড়াই করার মানসিকতা তৈরি হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট মনে করে, এভাবে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তারা মার্জিনাল হয়ে পড়বে। তাই তারা চেষ্টা করবে যে কোনো উপায়ে আওয়ামী লীগকে তাদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে।

আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমানে দেশে বিরাজমান সহিংস পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় দেখছেন কি?

হারুন-অর-রশিদ : সমঝোতার জন্য দুটো দলের মধ্যে স্পেস লাগে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি কোনো স্পেস দেখি না। স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন, সরকার গঠন হবে। সেটা যদি হতো, তাহলে একটা স্পেস থাকত। এখানে একটা দল যদি প্রগতিশীল, সেক্যুলার হতো, আরেকটি দল হতো রক্ষণশীল দল- সেরকমটা হতেই পারে। বিদেশে এমন অনেক নিদর্শন আছে। কিন্তু এদেশে যুক্ত হয়ে গেছে একাত্তর, পঁচাত্তর, গ্রেনেড হামলা, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা। এ অবস্থা ব্রেক করতে বিএনপির পলিসি রিশেপ করা দরকার। রিশেপ করা বলতে, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান কী, তারা কি যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে থাকবে? থাকতেই পারে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেলে একটা পর্যায় কিন্তু চলে যাবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নে এ বিষয়গুলো চলে আসে। এটা বাংলাদেশে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। দুটো পক্ষেরই এখন অবস্থা এমন, যেটা হবে সেটা একশ' ভাগ হতে হবে। আসলেই কিন্তু অবস্থা এখন সেখানে চলে গেছে।

আলোকিত বাংলাদেশ : বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বর্তমান আন্দোলনের ফল কেমন হতে পারে?

হারুন-অর-রশিদ : আমার ধারণা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করে বিএনপি একটা ঐতিহাসিক ভুল করেছে। তাদের ক্ষমতায় আসতে হলে নির্বাচন বা গণঅভ্যুত্থান করে আসতে হবে। গণঅভ্যুত্থান করতে গেলে তো জনসম্পৃক্ততা লাগবে। আমি তো সে রকম কিছু দেখি না। আজকে বেশ কয়েক দিন ধরে খালেদা জিয়া পার্টি অফিসে আছেন, কিন্তু হাজার হাজার জনগণ তো সেখানে গিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন না। সারা দেশে যেখানে বিএনপির অবস্থান ভালো সেখানে চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে, অন্যথায় কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। একটি গণভিত্তিক পার্টি যদি গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করতে চায়, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই কিন্তু আপনাকে চলতে হবে। আন্দোলন করতে হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা নকশালবাড়ি আন্দোলনের মতো চোরাগোপ্তা হামলা। চোরাগোপ্তা হামলা করলে কিন্তু মানুষ পার্টির দিকে না গিয়ে বিচ্ছিন্ন হবে। এখন বিএনপি তো অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধরনের করতে পারবে না। তাদের এ অবরোধ তুলে নিতে হবে। চোরাগোপ্তা হামলা বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে তারা আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। পরবর্তীকালে ইলেকশন পলিটিকসের সম্ভাবনাও দূরে চলে যাবে। সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনের যে ওপিনিয়ন পোল হলো তাতে দেখা গেল, ৭২ শতাংশ মনে করে, শেখ হাসিনা সঠিকভাবে দেশ চালাচ্ছেন। ৬২ শতাংশ মনে করে, কার্যকরী অপজিশন হিসেবে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে কিন্তু চিত্রটি ভিন্ন ছিল। আমার তো মনে হয়, অংশগ্রহণ করলে সে নির্বাচনে বিএনপির জয়যুক্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।

বর্তমান সঙ্কট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাটবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ দুটি পক্ষের মধ্যে ব্যবধান এত বেশি, এত তিক্ত, স্টেক এত হাই যে, বিষয়টি শুধু সরকার গঠন নয়, এর সঙ্গে অন্য মৌলিক বিষয়ও যুক্ত হয়ে গেছে। এখন বিএনপিকে কোনো এঙ্টি খুঁজতে হবে, হয়তো একটা সমাবেশ বা অন্য কিছু করার মধ্য দিয়ে। আর অন্য উপায় হলো গণঅভ্যুত্থান। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না। কারণ বিএনপির চলমান অবরোধের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু দলীয় নেতাকর্মী দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করা যায় না। আরেকটি পথ হলো নির্বাচন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি বড় ভুল করেছে। এখন জনসম্পৃক্ততাহীন সহিংস কর্মকা- দিয়ে বিএনপি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না; বরং জনবিচ্ছিন্ন হবে। একটি মেজর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করতে চায়, তাহলে তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তারা সাময়িক আবেগ বা অ্যাডভেঞ্চারিজম দিয়ে কিছু করতে পারবে না। অতীতে অনেক দল এমন করেছে। প্রচুর সমর্থন এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- দিয়ে এগোতে পারেনি। সন্ত্রাসের কোনো স্থান এদেশে নেই। তাহলে বিএনপি কী করতে পারে? বিএনপিকে তাদের পলিসি আবার বিন্যস্ত করতে হবে। অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যাপক মানুষকে তারা সংযুক্ত করবে এবং জামায়াতের বিষয়ে অবস্থান নেবে। এটা তারা পারবে কিনা, সেটা একটা বিষয়। বিএনপি যদি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করত, যদি একটি সংসদীয় রাজনৈতিক লাইনকে গ্রহণ করত, জাতির জনক ও জাতীয় নেতাদের সম্পর্কে অশ্লীল বাক্য ব্যবহারে বিরত থাকত, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর সবকিছু ধীরে ধীরে একটা মডারেশনের দিকে যাবে, সহনশীল অবস্থার দিকে যাবে। অর্থাৎ আমি যেন বুঝতে পারি, ক্ষমতা হারালেও আমার জীবন বিপন্ন হবে না বা অন্যরা যদি বোঝেন, তারা হারলেও তাদের জীবন বিপন্ন হবে না, তাহলেই একটা রিল্যাঙ্ অবস্থা চলে আসবে। কিন্তু এখন পরাজিত হওয়া মানে জীবন বিপন্ন হওয়া। আদর্শ উল্টেপাল্টে যেতে পারে। তাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মধ্যবর্তী বা স্বল্প সময়ের মধ্যে কোনো নির্বাচনের সম্ভাবনা আমি দেখি না।

অবস্থা পরিবর্তনের জন্য বিএনপিকে চাপিয়ে দেয়া অবরোধ থেকে সরে আসতে হবে। জনসভার সুযোগ পাবে, তারা জনগণের কাছে যাবে এবং ২০১৯ সালের নির্বাচন ডিসাইড করবে পরবর্তী সময়ে কারা ক্ষমতায় আসবে। ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন, আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার সম্ভাবনা আমি দেখি না।

আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমানে সরকার বা আওয়ামী লীগের অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হারুন-অর-রশিদ : ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার নিজের অবস্থান অনেক শক্ত করেছে। বিদেশি শক্তিগুলো বুঝছে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছে, যেটা বিএনপি ক্ষমতায় এলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ এটা শুধু গণতন্ত্র, স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রশ্ন নয়, এখানে আরও মৌলিক বিষয় রয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বলছে, বাংলাদেশের সমস্যা দেশটির জনগণ এবং রাজনীতিবিদরাই সমাধান করবে। তারা কোনো পেসক্রিপশন চাপিয়ে দেবে না। তাদের অবস্থানও কিন্তু সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। কারণ এখানে সেটা হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার মনে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবস্থানও বদলেছে। রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এক দল অন্য দলকে কোণঠাসা করতে চায়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। বিএনপিকে সমর্থন করেন এমন একজন বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি একটি পত্রিকায় বলেছেন, শেখ হাসিনাকে রেখেও নির্বাচনে যাওয়া যায়। এটা তো ২০১৪ সালেই হয়েছিল। সে সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিএনপি মন্ত্রিসভায় যোগ দিক, কিন্তু নির্বাচন হোক। কিন্তু বিএনপি সেটা মিস করেছে। এটা তারা একটা বস্নান্ডার করেছে। এখন অপেক্ষা করে গঠনমূলক পদ্ধতিতে এগোলেই তারা জনসমর্থন পাবে। আজকে আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের সবকিছুই যে মানুষ পছন্দ করে, তা কিন্তু নয়। কিন্তু তার সমানে বিকল্প তো নেই। জনগণ বিএনপিকে বিকল্প হিসেবে চায় না; কারণ বিএনপির সঙ্গেই তারা যুদ্ধাপরাধীদের চেহারাগুলো দেখে; যে কারণে মানুষ থমকে দাঁড়ায়। অন্যদিকে এক বছরে সরকার তার অবস্থান শক্ত করেছে। আজকে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। এটা অনেক বড় একটি ঘটনা। আজকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে, অন্যান্য উন্নয়ন হচ্ছে। এগুলো মানুষ দেখতে পাচ্ছে। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি তো মানুষ দেখতে পাচ্ছে। মানুষ কখন বিক্ষুব্ধ হয়? যখন গণতান্ত্রিক অধিকার থাকে না, দ্রব্যমূল্য চরম বৃদ্ধি পায়, সমাজে অরাজকতা দেখা দেয়, কিন্তু সে ধরনের পরিবেশ তো বাংলাদেশে বিরাজ করছে না। বিএনপি এবং তাদের জোটকে নিজেদের প্রয়োজনেই বর্তমান কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ তারাই এঙ্টি খুঁজবে; হয়তো একটা জনসভা করে বেরিয়ে আসবে। আমার মনে হয়, নির্বাচনের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া স্বল্প সময়ে নির্বাচন বা গণঅভ্যুত্থান কোনোটারই সম্ভাবনা আমি দেখে না।

আলোকিত বাংলাদেশ : বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন?

হারুন-অর-রশিদ : বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বুঝতে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি ভারতের দিকে তাকলেও চলবে না। বাংলাদেশের সমাজ, এখানকার মানুষ এবং এখানকার সার্বিক বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখানের গণতন্ত্রকে বুঝতে হবে। বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের কাঠামো এবং চর্চা-পদ্ধতি ভিন্ন। ২০১৪ সালের নির্বাচন না হলে অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসত। তারা এলে একশ' ভাগই গণতন্ত্রের চর্চা থাকত না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যদি ৪০ শতাংশ ভোট ধরে নিই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন- এগুলো সবই সত্য। কিন্তু বিকল্প কী ছিল? নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। বিএনপি অংশ না নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার কী করতে পারত? সরকার তো নানাভাবে চেষ্টা করেছিল। বিএনপি আজ ভুল বুঝতে পেরেছে বলেই তো তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বলেন, শেখ হাসিনাকে রেখেই নির্বাচনে যাওয়া যায়। এটা সেদিন হলে তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। সে সময় একটা অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা নিত, না আওয়ামী লীগের মতো একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে- এ দুটো ছিল বিকল্প। সবচেয়ে ভালো হতো সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে। কিন্তু অবস্থার মুখে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছে, তার বিকল্প ছিল অগণতান্ত্রিক শক্তির ক্ষমতা দখল। সেটা থেকে তো দেশ রক্ষা পেয়েছে। দেশ তো এখনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে রয়েছে। সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় অনেক নির্বাচনে তো বিএনপি অংশ নিয়েছে। আমরা যদি বলি, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র সীমিত হয়ে গেছে- সেটারও ব্যাখ্যা আছে- কেন সীমিত হয়েছে, সেটা আমি বলেছি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য আমাদের আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা যদি এখন ভাবি, বাংলাদেশে ইউরোপ, জাপান বা যুক্তরাষ্ট্রের মডেলে গণতন্ত্রের চর্চা হবে, সেটা কিন্তু হবে না। এ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগোবে।

আলোকিত বাংলাদেশ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

হারুন-অর-রশিদ : আপনাদেরও ধন্যবাদ।

- See more at: http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2015/01/18/118458#sthash.2KejQyes.dpuf





__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___