জুবায়ের হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ 'নীতিহীন রাজনীতির'
প্রকাশ বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2015-02-08 16:52:43.0 BdST Updated: 2015-02-08 16:58:21.0 BdST
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জুবায়ের আহমেদের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতির আদর্শহীন চেহারা মেলে ধরেছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
আর এর ফলে যে সব পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের এক ধরনের অসহায়ত্বও ধরা পড়েছে আদালতের চোখে।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি নিজের ক্যাম্পাসে নিজের সংগঠনের এক পক্ষের হামলায় আহত জুবায়ের পরদিন মারা যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের এই ছাত্র ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন।
ওই হত্যামামলার রায়ে রোববার ঢাকার আদালত পাঁচ ছাত্রকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় ছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দণ্ডিতরা সবাই নিহত জুবায়েরের সঙ্গে একই বর্ষে বিভিন্ন বিভাগে পড়াশোনা করতেন।
আলোচিত এই মামলার রায়ে ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাতে বর্তমান ছাত্র তথা দেশের রাজনীতির সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে।
রায়ে বলা হয়েছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার গভীরে ঢুকে বর্তমান রাজনীতির চরম বিশৃঙ্খলা, নীতিহীন ও আর্দশচ্যুত চেহারাই উন্মোচিত করেছেন।
জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের পর মামলা হলে পুলিশ কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ চার মাসের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার দেওয়া অভিযোগপত্রের ওপর ভিত্তি করে বিচার শুরু হয়।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আশিকুল ইসলাম আশিক ও দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজুকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের সূত্র ধরে আদালত নীতিহীন রাজনীতির কথা বলে।
আশিকুল ও রাশেদুল ২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর করতেন ছাত্রদল। জুবায়েরও তখন ছাত্রদল করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর এরা সবাই ছাত্রলীগে যোগ দেন।
বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন (ফাইল ছবি)
এরপর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটও এসব প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় না। কারণ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।
বিচারক রায়ে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শেষ পরিণতি হচ্ছে জুবায়ের হত্যাকান্ড। আর অনুরূপ অহেতুক হত্যাকাণ্ড মানবতা ও নৈতিকতাকে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে। এতে ভুক্তভোগীর পরিবারের ওপর নেমে আসে শোকের ছায়া। এমনকি পারিবারিক, সামাজিকও আর্থিক নানারকম সমস্যাও পরিবারদের গ্রাস করে।
"বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশি শক্তির জোরে কোনো ধরনের সহিংসতা, নৃশংসতা, অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা শিক্ষার অনূকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যা কারও কাম্য হতে পারে না।"
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত কোনো হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার সাম্প্রতিক অতীতে না হওয়াটাও পরবর্তীতে একই ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত করছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ।
নিহত জুবায়ের আহমেদ
রায়ে বলা হয়েছে, এ রকম হত্যাকাণ্ডে ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিক কারণেই ছাত্র রাজনীতিকে করে কলঙ্কিত।
যে কোনো ধরনের হত্যা বা সন্ত্রাস প্রতিহত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন যুগোপযোগী আচরণবিধি তৈরি করে, সেই প্রত্যাশা করেছে আদালত।
বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরও সচেতনতার ওপরও জোর দিয়েছে আদালত।
গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশংসীয় ভূমিকার উল্লেখ করেই বিচারক বলেছেন, "কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতা কোনো কোনো সময় সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে, যা বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি করে।
"বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করে বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করে সংবাদ পরিবেশন বাঞ্ছনীয়।"
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article921865.bdnews
RELATED STORIES
জুবায়ের হত্যায় পাঁচ জনের ফাঁসি
2015-02-08 13:16:03.0
জুবায়ের হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
- নিজস্ব প্রতিবেদকফাইল ছবিজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। আজ রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় দেন।
- See more at: http://www.alokitobangladesh.com/latest-news/2015/02/08/122366#sthash.oMHYBzdl.dpuf
http://www.alokitobangladesh.com/latest-news/2015/02/08/122366
__._,_.___