বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কুর্নিশ
হাতের কাছে বাংলা অভিধান আছে? নেই? না, ব্যস্ত হবেন না। 'সৌম্য' শব্দটার মানে বলেই দিচ্ছি। প্রশান্ত; ধীর; স্থির।
সাতক্ষীরার ২২ বছর বয়সী তরুণটির নাম সৌম্য কে রেখেছিলেন কে জানে। নামের মতোই সৌম্য সরকার আশ্চর্য রকমের প্রশান্তি ছড়ানো ব্যাটিং করেন। আশ্চর্য রকমের ধীর-স্থির। কিন্তু নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের বুকের ভেতরই লুকিয়ে থাকে প্রলয় নাচন। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিই ভেতরে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। মাত্রই দশম ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণটি নির্বিকারভাবে স্রেফ খুন করলেন পাকিস্তানের লজ্জা এড়ানোর স্বপ্নটাকে।
সাতক্ষীরার ২২ বছর বয়সী তরুণটির নাম সৌম্য কে রেখেছিলেন কে জানে। নামের মতোই সৌম্য সরকার আশ্চর্য রকমের প্রশান্তি ছড়ানো ব্যাটিং করেন। আশ্চর্য রকমের ধীর-স্থির। কিন্তু নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের বুকের ভেতরই লুকিয়ে থাকে প্রলয় নাচন। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিই ভেতরে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। মাত্রই দশম ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণটি নির্বিকারভাবে স্রেফ খুন করলেন পাকিস্তানের লজ্জা এড়ানোর স্বপ্নটাকে।
সৌম্যর ১৩টি চার ও ছয় ছক্কায় অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ৩-০তে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষকে করা দশম ধবলধোলাই। মাত্র কদিন আগে যে দলটার বিপক্ষে একটা জয় পেতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, ছয় দিনের মধ্যেই তাদের বিপক্ষে তিন তিনটা জয়!
তিন ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে জিতেছে বাংলাদেশ। আজকের জয়টাও বড় ব্যবধানে। কিন্তু আশ্চর্য, এর আগে কোনো উদ্যাপনই হয়নি। এবার কিছুটা হলো। জুনায়েদ খানকে চার মেরে, দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে ছুটে এসে মুশফিক জড়িয়ে ধরলেন সৌম্যকে। হৃদয় মিলল হৃদয়ে। হৃদয় হৃদয়ে মিলে এভাবেই এখন পুরো বাংলাদেশ একটা পরিবার।
তিন ম্যাচে মিল থাকল আরেকটি। সতীর্থদের অনেককেই ব্যাট করার সুযোগ পেল না আজও। তামিম ইকবাল, মুশফিক আর সৌম্য সরকারই শেষ করে দিয়েছেন সব। আজও তামিম করলেন ৬৪। টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটা ফসকে গেলেও রাশি রাশি রেকর্ড কিন্তু ঠিকই লেখা হলো তাঁর নামে। মিল আরেক জায়গায়। আজও শেষ হওয়ার আগেই ম্যাচ 'শেষ'। তামিম-সৌম্যর উদ্বোধনী জুটির ১৪৫ রানই নিশ্চিত করে দিল বাংলাওয়াশ। পাকিস্তানের ২৫০ রানের পুঁজি ৬৩ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সিরিজজুড়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ এতটাই ঝলমলে, বোলাররা পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকলেন। তিন ম্যাচেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের। আজ যেটা হাতে তুললেন সৌম্য। ম্যাচ রিপোর্টেও বোলারদের কথা আসছে শেষে। কিন্তু আজ বোলারদের কথাটা আগেভাগে বলাই উচিত। বোলাররাই তো আসলে সত্যিকার অর্থে ম্যাচ জেতালেন। আজহার আলীর যেন অহংয়ে লেগেছিল-বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাই! আজহারের সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে ঘুরেও দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান।
৩৮ ওভার শেষে ২ উইকেটে ২০২। শেষ ১২ ওভারে রানের ঝড় তুলে পাকিস্তানের স্কোরটা ৩৫০-এ পৌঁছায় কি না, এই আলোচনায় ব্যস্ত ভাষ্যকারেরা।
ভাষ্যকারদের ভবিষ্যদ্বাণী 'একটু' অন্যভাবে ফলল। শুধু '৩'-এর জায়গায় '২'। মাত্র ৪৭ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। সিন্ধু-বেলুচিস্তানের ভূমিকম্প যেন মিরপুরে ঘটিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আশ্চর্য, এই সিরিজে বহুবচনে 'বাংলাদেশের বোলাররা'ই লিখতে হয়েছে। গত ম্যাচে সাতজন বল করে পাঁচজনই উইকেট পেয়েছিলেন। আজ আটজন বল করে উইকেট পেলেন পাঁচজন।
এই ম্যাচের গুরুত্ব পাকিস্তানের কাছে ছিল অসীম। শুধু ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা এড়ানো নয়, সফরে এখনো তিন ম্যাচ বাকি। কর্পূরের মতো উবে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি কিছুটা হলেও কুড়িয়ে নেওয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই শিল্পীর তুলির আলতো ছোঁয়ার মতো সৌম্য চার মেরে বুঝিয়ে দিলেন, দিনটা আর যাই হোক, পাকিস্তানের নয়। দিনটা বাংলাদেশেরই। দিনটা তাঁর। সেই যে শুরু, আর থামলেন কই? অপরাজিত থেকেই ফিরলেন! ১১০ বলের ইনিংসটায় মাত্র দুবার একটু নড়বড়ে লেগেছে। একবার ইনসাইড এজ হলো, একবার ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে বল ফেললেন নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। দুবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন ক্যাচ দিয়ে। সোনায় একটু খাদ নাকি থাকেই!
সেই খাদটুকুর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন ছয় ছক্কায়। চতুর্থ ছক্কাটির কথা বলতে হবে আলাদা করে। আজহারকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। ভাবুন তো, ২২ বছরের এক তরুণ, এই সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এর আগে ঘরোয়া একদিনের ম্যাচেই যাঁর মাত্র একটা সেঞ্চুরি ছিল, সেই ছেলেটা ৯৫-এ অপরাজিত থাকার সময় কী অবলীলায় ডাউন দ্য উইকেটে নেমে এসে উড়িয়ে মারল! ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে সৌম্য যেন এই বার্তাই দিতে চাইলেন, নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে স্নায়ুচাপে ভোগার ছেলে তিনি নন। তাঁর ধাতটাই অন্য রকম। আরেকটি ছক্কা হাঁকালে এক ইনিংসে সাত ছক্কা হাঁকানোর বাংলাদেশি রেকর্ডটায় নাম লেখাতে পারতেন, তামিমের পাশে।
সেই তামিম, যিনি বাংলাদেশের রেকর্ড বই পেরিয়ে নাম লেখাতে ব্যস্ত বিশ্ব রেকর্ডেই। তিন ম্যাচের সিরিজে তিন সেঞ্চুরি-কুইন্টন ডি ককের অবিশ্বাস্য রেকর্ডটা তো মনে হচ্ছিল ধরেই ফেলবেন। তা না হলেও এক জায়গায় সবাইকে পেরিয়ে গেছেন। তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ ৪০টি চারের রেকর্ড এখন তাঁরই। তিনটি সেঞ্চুরি না হলেই দুই সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ছুঁয়েছেন ব্রেন্ডন টেলরের রেকর্ড। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজে ৩০০+ রান, ৩১২ রান দিয়ে সেই তালিকায় এখন তিনে।
ম্যাচের আগে মুখে যতই বলুন টানা তিন সেঞ্চুরির পরিকল্পনা নেই, আজ কিন্তু শুরু থেকে তামিমকে মনে হচ্ছিল দেখে দেখে পা ফেলছেন। ইনিংসের দশম ওভারে গিয়ে দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন, ভাবা যায়! সৌম্যর রান যখন ৩২, ওদিকে তামিম মাত্র ৭! দ্রুত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। ১৯তম ওভারের পরপর দুই বলে দুটো ঘটনা ঘটল। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করলেন সৌম্য, পরের বলে ওয়ানডেতে নিজের ৫০০তম চারটি মারলেন তামিম। ২৩তম ওভার শেষে তামিম ৫৭, সৌম্য ৫৯।
তামিম সৌম্যকে এই ছুঁয়ে ফেলেন ফেলেন, সৌম্য আবার এগিয়ে যান। দৃশ্যপটে পাকিস্তান নেই কেন? ওরাও তো তখন অগ্রজ আর অনুজের এই মিষ্টি লড়াইয়ের স্রেফ দর্শক! পাকিস্তানের বিপক্ষে এনামুল-ইমরুলের ১৫০ রানের জুটির রেকর্ডটা একটুর জন্য ভাঙল না তামিম আউট হওয়ায়। অবশ্য ৭৬ বলে ৮টি চার ও এক ছক্কার ইনিংসটাতেই বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন। আগের রেকর্ডটাও তাঁরই ছিল, কিন্তু সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৩০০। এবার তিন ম্যাচেই, ১৫৬ গড়ে! সেবার সিরিজ সেরা হয়েছিলেন, ২০০৯ সালের পর আবারও সিরিজ সেরা তামিম।
পেশাদার সাংবাদিকদের নির্মোহ থাকতে হয়। কিন্তু এবারের সিরিজে পাকিস্তানের হয়ে দু-একটা ভালো কথা লেখার কোনো উপলক্ষই মিলল না। ম্যাচ শেষে দুদলের হাত মেলানোর পরিচিত দৃশ্য, ক্রিকেটীয় কেতা। কিন্তু মনে হলো, পাকিস্তান যেন হাত মেলাচ্ছে না। বাংলাদেশকে কুর্নিশ করছে।
কুর্নিশ শব্দটার মানে জানেন নিশ্চয়ই। না জানলে, প্লিজ, অভিধান দেখে নেবেন!
তিন ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে জিতেছে বাংলাদেশ। আজকের জয়টাও বড় ব্যবধানে। কিন্তু আশ্চর্য, এর আগে কোনো উদ্যাপনই হয়নি। এবার কিছুটা হলো। জুনায়েদ খানকে চার মেরে, দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে ছুটে এসে মুশফিক জড়িয়ে ধরলেন সৌম্যকে। হৃদয় মিলল হৃদয়ে। হৃদয় হৃদয়ে মিলে এভাবেই এখন পুরো বাংলাদেশ একটা পরিবার।
তিন ম্যাচে মিল থাকল আরেকটি। সতীর্থদের অনেককেই ব্যাট করার সুযোগ পেল না আজও। তামিম ইকবাল, মুশফিক আর সৌম্য সরকারই শেষ করে দিয়েছেন সব। আজও তামিম করলেন ৬৪। টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটা ফসকে গেলেও রাশি রাশি রেকর্ড কিন্তু ঠিকই লেখা হলো তাঁর নামে। মিল আরেক জায়গায়। আজও শেষ হওয়ার আগেই ম্যাচ 'শেষ'। তামিম-সৌম্যর উদ্বোধনী জুটির ১৪৫ রানই নিশ্চিত করে দিল বাংলাওয়াশ। পাকিস্তানের ২৫০ রানের পুঁজি ৬৩ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সিরিজজুড়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ এতটাই ঝলমলে, বোলাররা পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকলেন। তিন ম্যাচেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানের। আজ যেটা হাতে তুললেন সৌম্য। ম্যাচ রিপোর্টেও বোলারদের কথা আসছে শেষে। কিন্তু আজ বোলারদের কথাটা আগেভাগে বলাই উচিত। বোলাররাই তো আসলে সত্যিকার অর্থে ম্যাচ জেতালেন। আজহার আলীর যেন অহংয়ে লেগেছিল-বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাই! আজহারের সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে ঘুরেও দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান।
৩৮ ওভার শেষে ২ উইকেটে ২০২। শেষ ১২ ওভারে রানের ঝড় তুলে পাকিস্তানের স্কোরটা ৩৫০-এ পৌঁছায় কি না, এই আলোচনায় ব্যস্ত ভাষ্যকারেরা।
ভাষ্যকারদের ভবিষ্যদ্বাণী 'একটু' অন্যভাবে ফলল। শুধু '৩'-এর জায়গায় '২'। মাত্র ৪৭ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। সিন্ধু-বেলুচিস্তানের ভূমিকম্প যেন মিরপুরে ঘটিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আশ্চর্য, এই সিরিজে বহুবচনে 'বাংলাদেশের বোলাররা'ই লিখতে হয়েছে। গত ম্যাচে সাতজন বল করে পাঁচজনই উইকেট পেয়েছিলেন। আজ আটজন বল করে উইকেট পেলেন পাঁচজন।
এই ম্যাচের গুরুত্ব পাকিস্তানের কাছে ছিল অসীম। শুধু ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা এড়ানো নয়, সফরে এখনো তিন ম্যাচ বাকি। কর্পূরের মতো উবে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি কিছুটা হলেও কুড়িয়ে নেওয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই শিল্পীর তুলির আলতো ছোঁয়ার মতো সৌম্য চার মেরে বুঝিয়ে দিলেন, দিনটা আর যাই হোক, পাকিস্তানের নয়। দিনটা বাংলাদেশেরই। দিনটা তাঁর। সেই যে শুরু, আর থামলেন কই? অপরাজিত থেকেই ফিরলেন! ১১০ বলের ইনিংসটায় মাত্র দুবার একটু নড়বড়ে লেগেছে। একবার ইনসাইড এজ হলো, একবার ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে বল ফেললেন নো-ম্যান্স ল্যান্ডে। দুবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন ক্যাচ দিয়ে। সোনায় একটু খাদ নাকি থাকেই!
সেই খাদটুকুর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন ছয় ছক্কায়। চতুর্থ ছক্কাটির কথা বলতে হবে আলাদা করে। আজহারকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। ভাবুন তো, ২২ বছরের এক তরুণ, এই সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এর আগে ঘরোয়া একদিনের ম্যাচেই যাঁর মাত্র একটা সেঞ্চুরি ছিল, সেই ছেলেটা ৯৫-এ অপরাজিত থাকার সময় কী অবলীলায় ডাউন দ্য উইকেটে নেমে এসে উড়িয়ে মারল! ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে সৌম্য যেন এই বার্তাই দিতে চাইলেন, নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে স্নায়ুচাপে ভোগার ছেলে তিনি নন। তাঁর ধাতটাই অন্য রকম। আরেকটি ছক্কা হাঁকালে এক ইনিংসে সাত ছক্কা হাঁকানোর বাংলাদেশি রেকর্ডটায় নাম লেখাতে পারতেন, তামিমের পাশে।
সেই তামিম, যিনি বাংলাদেশের রেকর্ড বই পেরিয়ে নাম লেখাতে ব্যস্ত বিশ্ব রেকর্ডেই। তিন ম্যাচের সিরিজে তিন সেঞ্চুরি-কুইন্টন ডি ককের অবিশ্বাস্য রেকর্ডটা তো মনে হচ্ছিল ধরেই ফেলবেন। তা না হলেও এক জায়গায় সবাইকে পেরিয়ে গেছেন। তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ ৪০টি চারের রেকর্ড এখন তাঁরই। তিনটি সেঞ্চুরি না হলেই দুই সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ছুঁয়েছেন ব্রেন্ডন টেলরের রেকর্ড। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজে ৩০০+ রান, ৩১২ রান দিয়ে সেই তালিকায় এখন তিনে।
ম্যাচের আগে মুখে যতই বলুন টানা তিন সেঞ্চুরির পরিকল্পনা নেই, আজ কিন্তু শুরু থেকে তামিমকে মনে হচ্ছিল দেখে দেখে পা ফেলছেন। ইনিংসের দশম ওভারে গিয়ে দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন, ভাবা যায়! সৌম্যর রান যখন ৩২, ওদিকে তামিম মাত্র ৭! দ্রুত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। ১৯তম ওভারের পরপর দুই বলে দুটো ঘটনা ঘটল। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করলেন সৌম্য, পরের বলে ওয়ানডেতে নিজের ৫০০তম চারটি মারলেন তামিম। ২৩তম ওভার শেষে তামিম ৫৭, সৌম্য ৫৯।
তামিম সৌম্যকে এই ছুঁয়ে ফেলেন ফেলেন, সৌম্য আবার এগিয়ে যান। দৃশ্যপটে পাকিস্তান নেই কেন? ওরাও তো তখন অগ্রজ আর অনুজের এই মিষ্টি লড়াইয়ের স্রেফ দর্শক! পাকিস্তানের বিপক্ষে এনামুল-ইমরুলের ১৫০ রানের জুটির রেকর্ডটা একটুর জন্য ভাঙল না তামিম আউট হওয়ায়। অবশ্য ৭৬ বলে ৮টি চার ও এক ছক্কার ইনিংসটাতেই বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন। আগের রেকর্ডটাও তাঁরই ছিল, কিন্তু সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৩০০। এবার তিন ম্যাচেই, ১৫৬ গড়ে! সেবার সিরিজ সেরা হয়েছিলেন, ২০০৯ সালের পর আবারও সিরিজ সেরা তামিম।
পেশাদার সাংবাদিকদের নির্মোহ থাকতে হয়। কিন্তু এবারের সিরিজে পাকিস্তানের হয়ে দু-একটা ভালো কথা লেখার কোনো উপলক্ষই মিলল না। ম্যাচ শেষে দুদলের হাত মেলানোর পরিচিত দৃশ্য, ক্রিকেটীয় কেতা। কিন্তু মনে হলো, পাকিস্তান যেন হাত মেলাচ্ছে না। বাংলাদেশকে কুর্নিশ করছে।
কুর্নিশ শব্দটার মানে জানেন নিশ্চয়ই। না জানলে, প্লিজ, অভিধান দেখে নেবেন!
বাংলাভাষি পাকিস্থানিদের (জামাত+বিএনপি) জন্য অত্যান্ত দুঃখের দিন আজ, তাদের সাধের পাকিস্থানকে বাংলার দমাল ছেলেদের "বাংলা দেলাই" দিয়ে দিয়েছে।
__._,_.___