Published in Bhorer Kagoj, a national daily in Dhaka also on 18th June 2015, see the link: http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2015/06/18/37723.php
Also at weekly Thikana in NY on Wednesday, June 17, 2015, print copy only.
Also at Dhakar News: http://dhakarnews.com/index.php/mukto/item/28191-2015-06-15-07-14-29
At NYBangla.Com: http://www.nybangla24.com/?p=9735
& at NJBdNews.com
---------- Forwarded message ----------
From: News | Dhakar News
Date: 2015-06-15 3:17 GMT-04:00
Subject: RE: প্রকাশের জন্যে-
To: Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com>
http://dhakarnews.com/index.php/mukto/item/28191-2015-06-15-07-14-29
সুধাংশু তোমায় যেতেই হবে..
১৯৪৭ সালে তদানিন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা ছিলো অন্যুন ২৯%; ১৯৭১ সালে ১৯.৬%। অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের পচিশ বছরে কমেছে প্রায় ১০%। বাংলাদেশ আমলে এখন বলা হচ্ছে হিন্দুর সংখ্যা ৯%। তাহলে চার দশকে কমেছে ১০%। এভাবে অঙ্ক কষলে দেখা যাবে ২০৫০-এর দিকে বাংলাদেশ হিন্দু শুন্য হয়ে যাবে। পাকিস্তান একটি সম্প্রিদায়িক রাষ্ট্র, তদুপরি পাক-ভারত জনসংখ্যা বিনিময়, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ইত্যাদি কারণে হিন্দু কমে যাওয়াটা তেমন বেমানান ছিলোনা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে হিন্দু কমার গ্রহনযোগ্য কোন কারণ নেই, অন্তত: থাকার কথা নয়, তবু অনবরত কমছে তো কমছেই। এর কোন ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক ব্যাখ্যা কারো কাছে নেই, যদিও অনেকে অনেক আবোল-তাবোল তথ্য দিতে পারেন।
ঢালাও ভাবে অনেকে বলে থাকেন যে, কোন মুসলমান দেশে অমুসলানরা থাকতে পারেনা। মুসলিম বিশ্বের দিকে তাকালে কথাটা তেমন অযৌক্তিক মনে হবেনা। কিন্তু বাংলাদেশের জন্যেও কি তা প্রযোজ্য হবে? নিউইয়র্কে জন্মভূমির সম্পাদক রতন তালুকদার প্রায়শ: বলে থাকেন, 'বাংলাদেশে যখন হিন্দু থাকবেনা, তখন মুসলমানরা পাকিস্তানের মত নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে।' কথাটা কিন্তু সত্য। ইরাক-সিরিয়া বা আফ্রিকার দিকে তাকালে তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। এমনিতে বিশ্বব্যাপী শিয়া-সুন্নী বিরোধ আগামী দিনগুলোতে জ্যামিতিক হারে বাড়বে। আহমদিয়ারাও বাদ যাবেনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিন্দুরা হলো 'ডিটারেন্ট ফ্যাক্টর' এবং হিন্দু না থাকলে নিজেদের মধ্যে ফাইট অনিবার্য। কারণ, মৌলবাদের ধর্মই হচ্ছে, বিভেদ সৃষ্টি করে অন্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধর্ম এক্ষেত্রে একটি চমত্কার উপাদান। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র এজন্যেই বিপদজনক।
আমাদের দেশের বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার চ্যাম্পিয়ান বলে দাবিদার, তারা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ-এ পরিনত করবেন। জঙ্গী সংগঠন জেএমবি বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে তারা বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিনত করবে। কোনটি হবার সম্ভবনা বেশি অথবা দু'টোই একসাথে হতে পারে কিনা বা দু'টোই শুধুমাত্র শ্লোগান কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশের হিন্দুরা ভাবে তারা শেষপর্যন্ত নিজদেশে থাকতে পারবেন না। 'জননী-জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী'-অর্থাৎ মা ও দেশ হিন্দুরা কাছে স্বর্গ-সমান হলেও চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি থেকে হিন্দু প্রতিনিয়ত বিতাড়িত। পাশের দেশ ভারত। তারাও জানে, হিন্দুরা থাকতে পারবেনা, চলে আসবে। এক্ষেত্রে বিজেপি ও কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি একই। বর্তমান বিজেপি সরকার তো হিন্দুদের গ্রহণ করার জন্যে অবারিত দ্বার, এবং এজন্যে তারা কিছু আইনও প্রনয়ন করছেন।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিস্টরা চান হিন্দুরা ভারত চলে যাক, ভারতের সংখ্যাগরিস্টরাও চায় বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতে চলে আসুক। দু' দেশের সংখ্যাগরিস্টদের মধ্যে কি চমত্কার মিল! যদিও দৃষ্টভঙ্গি ভিন্ন। একপক্ষ অসহায়দের আশ্রয়হীন করতে চাচ্ছে, অন্যপক্ষ আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছে। একজনের অনুদার ও অন্যজনের উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দু। অনেকেই মনে করেন, ভারত চাইলেই বাংলাদেশের হিন্দুরা নিজদেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কথাটার বাস্তবতা কতটা তা বলা মুশকিল, কিন্তু ভারত তা করবে না, যেমন করেনি অতীতে। এবার মোদীর আগমনে অনেকেই চেয়েছেন হিন্দু নির্যাতনের ব্যাপারে তিনি কিছু বলুন, তিনি বলেন নি, বলার কথাও না। কারণ, হিন্দুরা দয়ার পাত্র। ভিক্ষুকের জন্যে কেউ বন্ধুত্ব নস্ট করে?
বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান দিনে দিনে নস্ট হয়ে যাচ্ছে। যদিও 'শান্তিপূর্ণ সহবস্থান' একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত- বর্তমান উন্নত বিশ্ব এর প্রমান। হিন্দুরা না থাকলে সহবস্থান যেমন থাকবে না, শান্তিও থাকার কথা নয়। পাকিস্তানকে দেখেও আমাদের তা শেখার কথা ছিলো, আমরা শিখছি কোথায়! অবশ্য কিছু মানুষ আছেন, যারা অশান্তিতে থাকতেও রাজি, কিন্তু হিন্দুর সাথে থাকতে রাজি নন। তাদের কথা ভিন্ন, রাষ্ট্রযন্ত্রটি কি চায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। পাকিস্তান বা বংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্র কখনই চায়নি যে, হিন্দুরা এদেশের সন্তান, এদেশেই থাকবে। রাষ্ট্র না চাইলে হবেনা। রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর প্রয়োজন। রাষ্ট্র হবে ধর্ম নির্বিশেষে সবার। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি বেশির ভাগ সময় পরিচালিত হয়েছে পাকিস্তানী ধ্যান-ধারনায়। তাই এটি সব মানুষের ছিলোনা, ছিলো একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর। হিন্দুরা সেখানে অবহেলিত থেকেছেন। এবং এখনো তারা উপেক্ষিত।
তাহলে কি এ সমস্যার সমাধান নাই? আপাত:দৃষ্টিতে নাই। ভারতই হিন্দুর চূড়ান্ত গন্তব্য। তা কবি শামসুর রাহমান যতই 'সুধাংশু যাবেনা' কবিতা লিখুন না কেন! সুধাংশুদের যাওয়া ছাড়া রাস্তা নাই, সুধাংশু তোমায় যেতেই হবে, আজ নাহয় কাল। যদিনা আমীর হোসেনের মত উদারমনা মানুষ সাম্প্রদায়িকতা রুখতে নিজের জীবন বিসর্জন দেন। কিন্তু আমীর হোসেনরা তো হারিয়ে গেছেন! এই সেই দেশ যেখানে ৬৪-৬৫র দাঙ্গার সময় আমীর হোসেন হিন্দুদের রক্ষায় রান্কিন স্ট্রিটে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। এই সেই বাংলা যেখানে একদা কবি গাইতেন, 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম'। সেই দেশ আর নাই। কথায় বলে, 'সেইদিন নাইগো নাতি, খাবলাই খাবলাই চিড়া খাতি'। আসলেই সেই দিন নাই, কারণ রাষ্ট্র আমাদের মানুষ বানায়নি, বানিয়েছে হিন্দু বা মুসলমান। শুধুই কি নিরাশার কথা শুনালাম? না,
আরো একটি সমাধান অবশ্য আছে! সেটা হলো, হিন্দুরা ঘুম থেকে গা-ঝাড়া দিয়ে জেগে ওঠা। কারো দয়ার পাত্র না হওয়া। আর নজরুলের মত গেয়ে ওঠা, 'লাথি মার ভাঙ্গরে তালা'।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
১৩ই জুন ২০১৫। নিউইয়র্ক।
__._,_.___