গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, দুটি চক্রের মধ্যে একটির সদস্যরা ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বাসযাত্রীদের চেতনানাশক মেশানো আচার বা খাবার খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়।
আর অন্য চক্রের কয়েকজন সদস্য প্রতিবছর হজের সময় সৌদি আরবে লোক পাঠায় পকেট মারার জন্য।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই চক্রের সদস্যরা এবারও কয়েকজনকে সৌদি আরবে পাঠাতে ১২ লাখ টাকা 'ইনভেস্ট' করেছে; তাদের লক্ষ্য ছিল হজ মৌসুমে এক কোটি টাকা তুলে আনা।
ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে এ ধরনের প্রতারক চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ভাষায় এরা 'অজ্ঞান পার্টি' হিসাবে পরিচিত।
এদের খপ্পরে পড়ে চেতনানাশক ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। অনেকে আবার সর্বস্ব হারিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শারীরিক সমস্যায় ভুগেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে এমনই এক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান।
এরা হলেন- নুরুল আানোয়ার, সুজন খান, আবুল বশার, আবুল হাসান, আক্তার হোসেন ও আবুল কালাম।
তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক মেশানো আচারও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মনিরুল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার নুরুল আনোয়ার এই প্রতারক চক্রের নেতা। আর সুজন খান তার 'সেকেন্ড ইন কমান্ড'।
পুলিশের ভাষ্য, নুরুল আনোয়ার চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে আচার বানাতেন। বাসে ঘুরে ঘুরে ওই আচারের গুণাগুণ নিয়ে 'লেকচার' দিতেন আবুল বশার।
নির্ধারিত 'শিকার' ওষুধ মেশানো আচার খেয়ে সংজ্ঞা হারালে দলের অন্যরা তার সর্বস্ব হাতিয়ে নিত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
প্রথম দলটিকে ধরার ঘণ্টাখানেকের মাথায় দ্বিতীয় দলের ছয়জনকে মালিবাগ রেলগেইট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
এই ছয়জন হলেন- 'আলহাজ' মো. টুটুল বিশ্বাস ওরফে সুমন, কাজী সারোয়ার জামাল ওরফে নেতাজি, 'আলহাজ' মো. ইব্রাহিম, মনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম ওরফে বাচ্চু এবং মো. আব্দুল গফুর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আচার খাইয়ে বাসযাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি এই চক্রের কয়েকজন প্রতি বছর হজের সময় সৌদি আরবে যান। সেখানে হাজিদের 'পকেট মারাই' তাদের উদ্দেশ্য।
গফুর, টুটুল ও মো. রওশন নামের আরেকজনের হজের ভিসাসহ পাসপোর্ট পুলিশ জব্দ করতে পারলেও রওশনকে ধরা যায়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এই গ্রুপের গফুরসহ তিনজন এবার হজের সময় সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য গফুর ১২ লাখ টাকা ইনভেস্টও করেছিলেন। তাদের টার্গেট ছিল হজের মৌসুমে সেখানে থেকে এক কোটি টাকা আয় করা। এর মধ্যে গফুর ৫০ লাখ টাকা নেবেন বলে দলে চুক্তিও হয়েছিল।"
হজের সময়ের মধ্যে ওই 'টার্গেট' পূরণ না হলে আরও কিছুদিন তাদের সৌদি আরবে থেকে যাওয়ার 'পরিকল্পনা ছিল' বলে জানান ছানোয়ার।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গফুর পুলিশকে বলেছেন, হজের মৌসুমে তাদের মতো অনেক পকেটমার বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে যায়। তাদের মধ্যে নাইজেরিয়ার পকেটমারের সংখ্যাই বেশি।
আর ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের 'সাদাসিধে' মনে করা হয় বলে তাদের দিকে পকেটমারদের 'নজর' বেশি থাকে।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, "গ্রেপ্তার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গফুর আমাদের বলেছে, "পারলে নাইজেরিয়ান পকেটমারদের ধরেন। আমাদের ধরেন ক্যান স্যার? আমরা তো পকেট মারার টাকা দেশে আনি। এতে দেশেরই লাভ'।"
সৌদি আরবে পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়ে এই চক্রের কয়েকজন সেখানে জেলে আছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল বলেন, "পুলিশ জনস্বার্থে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হন- সেজন্য পুলিশ চেষ্টা করছে।"
- Also read:
- পকেট কাটতে হজযাত্রা! : প্রতারক দলের ১২ সদস্য আটক
- http://www.manobkantha.com/2015/08/21/59386.php
DhakaTribune
The Daily Star-15 hours ago
"The gang was preparing to send at least four pickpockets during this year's hajj spending Tk 12 lakh with a target to cashin Tk 1 crore," said ...
সৌদিতে কি যৌনদাসী সাপ্লাইয়ের টেন্ডার পেয়েছে বাংলাদেশ ?
মাঈনুল ইসলাম নাসিম | আপডেট: ২১:১৮, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৫, প্রকাশক- সাতকাহন